এতদ্দেশীয় স্ত্রীলোকদিগের পূর্ব্বাবস্থা/আর্য্য রাজ্য

এতদ্দেশীয় স্ত্রীলোকদিগের
পূর্ব্বাবস্থা।

আর্য্য রাজ্য।

 আর্য্যেরা উত্তর পশ্চিম হইতে পঞ্জাবে আসিয়া বাস করিলেন। বিন্ধ্যাচল ও হিমালয় পর্ব্বতের মধ্যবর্ত্তী দেশ আর্য্যাবর্ত্ত বলিয়া বিখ্যাত হইল। ক্রমশঃ দেশ, গ্রাম, ও নগরে বিভক্ত হইল ও রাজ্য রক্ষার্থে গ্রাম ও দেশ অধিকার নিযুক্ত হইল। রাজা কতিপয় মন্ত্রী লইয়া প্রত্যেক গ্রামের ও রাজ্যের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া কার্য্য করিতে লাগিলেন। যেরূপ রাজ্য বিস্তীর্ণ হইতে লাগিল, সেইরূপ কৃষি ও বাণিজ্য সর্ব্ব স্থানে প্রকাশিত হইল। রাস্তা ঘাট নির্ম্মিত হইল ও শকট, নৌকা ও জাহাজের দ্বারা এক স্থানের বিক্রেয় দ্রব্যাদি অন্য স্থানে প্রেরিত হইতে লাগিল। অধিকাংশ লোক পার্থিব কার্য্যে কালযাপন করিত। যে সকল আর্য্য সরস্বতী-তীরে বাস করিতেন, তাঁহারাই জ্ঞান প্রকাশক হইলেন, তাঁহারা কেবল ঈশ্বর ও আত্মা চিন্তা করিতেন। সকলের গৃহে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকিত। তাঁহারা পরিবার লইয়া প্রতিদিন তিন বার সংস্কৃত ভাষায় উপাসনা করিতেন। এই সকল উপাসনা একত্রিত হইয়া ঋগ্বেদ নামে বিখ্যাত হয়। অনন্তর যজুঃ, সাম ও অথর্ব্ব বেদ বিরচিত হয়। বেদ ছন্দস্ মন্ত্র অথবা সংহিতা ব্রাহ্মণ্যে ও সূত্রে বেদাঙ্গতে বিভক্ত। ব্রাহ্মণের শেষাংশ আরণ্যক বলে, কারণ তাহা অরণ্যে পঠিত হইত। যাহা বেদের শেষাংশ তাহাকে উপনিষদ বলে, কারণ আচার্য্যের নিকট বসিয়া পাঠ করিতে হইত। যদিও বেদে এক অদ্বিতীয় ঈশ্বর সংস্থাপিত, কিন্তু উপনিষদে ঈশ্বর ও আত্মা যে অশেষ যত্নপূর্ব্বক চিন্তিত ও নিদিধ্যাসিত হইয়াছিল, তাহা বিলক্ষণ বোধ হইতেছে। ঋগ্বেদ ও যজুর্ব্বেদের উপদেশ এই—একই ঈশ্বর, তাঁহাকে জান, তাঁহারি উপাসনা কর। আত্মার অমরত্ব লক্ষণ সংস্থাপিত; কিন্তু জীবের পুনর্জন্ম-জন্মান্তরের কিছুই উল্লেখ নাই। পূর্ব্বে জাতি ছিল না—পুরোহিত ছিল না—প্রকাশ্য উপাসনার স্থান ছিল না—মন্দির ছিল না— প্রতিমা ছিল না। গৃহস্থ স্বয়ং পরিবারকে লইয়া উপাসনা করিতেন। যে সকল স্তোত্র উপাসনা কালে পাঠিত হইত, তাহা হয়তো পূর্ব্বে রচিত হইত অথবা তৎকালে বিনা চিন্তনে সঙ্গীত হইত। যদি কোন বন্ধনে স্ত্রী পুরুষের ও পরিবারদের সকলের মধ্যে শুদ্ধ প্রেমের বৃদ্ধি হয়, সে বন্ধন একত্র ঈশ্বর উপাসনা করা, তখন সকলের আত্মা আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলে বদ্ধ হইতে থাকে। অসভ্য দেশে পুরুষ স্ত্রীলোককে সমতুল্য জ্ঞান করে না—হয় তো কিঙ্করী নয় তো গৃহ বস্তুর স্বরূপ বোধ করে এবং আজ্ঞানুবর্ত্তিনী না হইলে প্রহারিত অথবা দূরীকৃত হয়। আর্য্যেরা স্ত্রীকে সমতুল্য অর্দ্ধশরীর ও অর্দ্ধ জীবন জ্ঞান করিতেন। স্ত্রী ভিন্ন ঈশ্বর উপাসনা, ধর্ম্ম কার্য্য ও পারলৌকিক ধন সঞ্চয় উত্তম রূপে হইত না। ঋগ্বেদের এক শ্লোকে লেখে, স্ত্রীই পুরুষের গৃহ—স্ত্রীই পুরুষের বাটী। মনুও বলেন স্ত্রী গৃহ উজ্জ্বল করেন।