পত্র।

শ্রীমতী ইন্দিরা। প্রাণাধিকাসু।
     নাসিক।


আমার এ গান, মাগাে, শুধু কি, নিমেষে
মিলাইবে হৃদয়ের কাছাকাছি এসে?
 আমার প্রাণের কথা
 নিদ্রাহীন আকুলতা
শুধু নিশ্বাসের মত যাবে কি মা ভেসে!

এ গান তােমারে সদা ঘিরে যেন রাখে,
সত্যের পথের পরে নাম ধ’রে ডাকে।
 সংসারের সুখে দুখে
 চেয়ে থাকে তাের মুখে,
চির আশীর্ব্বাদ সম কাছে কাছে থাকে।

বিজনে সঙ্গীর মত করে যেন বাস!
অনুক্ষণ শোনে তাের হৃদয়ের আশ।

 পড়িয়া সংসার ঘোরে
 কাঁদিতে হেরিলে তােরে
ভাগ করে নেয় যেন দুখের নিশ্বাস!

সংসারের প্রলােভন যবে আসি হানে
মধুমাখা বিষবাণী দুর্ব্বল পরাণে,
 এ গান আপন সুরে
 মন তাের রাখে পূরে,
ইষ্টমন্ত্র সম সদা বাজে তাের কানে!

আমার এ গান যদি সুদীর্ঘ জীবন
তােমার বসন হয় তােমার ভূষণ!
 পৃথিবীর ধূলিজাল
 করে দেয় অন্তরাল,
তােমারে করিয়া রাখে সুন্দর শােভন!

আমার এ গান যদি নাহি মানে মানা
উদার বাতাস হ’য়ে এলাইয়া ডানা

 সৌরভের মত তােরে
 নিয়ে যায় চুরি কোরে,
খুঁজিয়া দেখাতে যায় স্বর্গের সীমানা!

এ গান যদিরে হয় তাের ধ্রুব তারা,
অন্ধকারে অনিমেষে নিশি করে সারা!
 তােমার মুখের পরে
 জেগে থাকে স্নেহভরে
অকূলে নয়ন মেলি দেখায় কিনারা!

আমার এ গান যদি পশি তাের কানে
মিলায়ে মিশায়ে যায় সমস্ত পরাণে।
 তপ্ত শােণিতের মত
 বহে শিরে অবিরত,
অনন্দে নাচিয়া উঠে মহত্বে গানে!

এ গান বাঁচিয়া থাকে যদি তাের মাঝে!
আঁখিতারা হয়ে তাের আঁখিতে বিরাজে!

এ যেনরে করে দান
সতত নূতন প্রাণ,
এ যেন জীবন পায় জীবনের কাজে!

যদি যাই, মৃত্যু যদি নিয়ে যায় ডাকি,
এই গানে রেখে যাব মোর স্নেহ আঁখি।
যবে হায় সব গান
হয়ে যাবে অবসান,
এ গানের মাঝে আমি যদি বেঁচে থাকি!