কথামালা (১৮৭৭)/কচ্ছপ ও ঈগল পক্ষী

কচ্ছপ ও ঈগল পক্ষী

পক্ষীরা অনায়াসে আকাশে উড়িয়া বেড়ায়, কিন্তু আমি পারি না, ইহা ভাবিয়া, এক কচ্ছপ অত্যন্ত দুঃখিত হইল, এবং মনে মনে অনেক আন্দোলন করিয়া, স্থির করিল, যদি কেহ আমায় এক বার আকাশে উঠাইয়া দেয়, তাহা হইলে, আমি, পক্ষীদের মত, সচ্ছন্দে উড়িয়া বেড়াইতে পারি। অনন্তর, সে এক ঈগল পক্ষীর নিকটে গিয়া কহিল, ভাই! যদি তুমি, অনুগ্রহ করিয়া, আমায় একটি বার আকাশে উঠাইয়া দাও, তাহা হইলে, সমুদ্রের গর্ভে যত রত্ন আছে, সমুদয় উদ্ধৃত করিয়া তোমায় দি। আমার, আকাশে উড়িয়া বেড়াইতে, বড় ইচ্ছা হইয়াছে।

 ঈগল, কচ্ছপের অভিলাষ ও প্রার্থনা শুনিয়া, কহিল, শুন কচ্ছপ! তুমি যে মানস করিয়াছ, তাহা সিদ্ধ হওয়া অসম্ভব। ভূচর জন্তু কখনও, খেচরের ন্যায়, আকাশে উড়িতে পারে না। তুমি এ বাসনা পরিত্যাগ কর। আমি যদি তোমায় আকাশে উঠাইয়া দি, তুমি তৎক্ষণাৎ পড়িয়া যাইবে এবং হয় ত ঐ পড়াতেই তোমার প্রাণত্যাগ হইবে। কচ্ছপ ক্ষান্ত হইল না, অত্যন্ত পীড়াপীড়ি করিতে লাগিল। তখন ঈগল, ঈষৎ হাস্য করিয়া, কচ্ছপকে লইয়া, অনেক ঊর্দ্ধে উঠিল, এবং, তবে তুমি উড়িতে আরম্ভ কর, এই বলিয়া উহাকে ছাড়িয়া দিল। ছাড়িয়া দিবা মাত্র, কচ্ছপ এক পাহাড়ের উপর পড়িল এবং তাহার সর্ব্ব শরীর চূর্ণ হইয়া গেল।


অহঙ্কার করিলেই পড়িতে হয়।
নাহঙ্কারাৎ পরো রিপুঃ।