কথামালা (১৯৪৪)/সর্প ও কৃষক

শীতকালে এক কৃষক, অতি প্রত্যুষে ক্ষেত্রে কর্ম্ম করিতে যাইতেছিল। সে দেখিতে পাইল, একটী সর্প হিমে আচ্ছন্ন ও মৃত প্রায় হইয়া, পথের ধারে পড়িয়া আছে; দেখিয়া তাহার অন্তঃকরণে দয়ার উদয় হইল। তখন সে ঐ সর্পকে উঠাইয়া লইল, এবং বাটীতে আনিয়া, আগুনে সেঁকিয়া কিছু আহার দিয়া, তাহাকে সজীব করিল। সর্প, এইরূপে সজীব হইয়া উঠিয়া, পুনরায় আপন স্বভাব প্রাপ্ত হইল, এবং কৃষকের শিশু সন্তানকে সম্মুখে পাইয়া, দংশন করিতে উদ্যত হইল।

 কৃষক দেখিয়া, অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া, সর্পকে বলিল, অরে ক্রুর, তুই অতি কৃতঘ্ন। তোর প্রাণ নষ্ট হইতেছিল দেখিয়া, দয়া করিয়া, গৃহে অনিয়া, আমি তোর প্রাণরক্ষা করিলাম; তুই সে সকল, ভুলিয়া গিয়া, আমার পুত্রকে দংশন করিতে উদ্যত হইলি! বুঝিলাম, যাহার যে স্বভাব, কিছুতেই তাহার অন্যথা হয় না। যাহা হউক, তোর যেমন কর্ম্ম, তার উপযুক্ত ফল পা। এই বলিয়া, কুপিত কৃষক, হস্তস্থিত কুঠার দ্বারা সর্পের মস্তকে এমন প্রহার করিল যে, এক আঘাতেই তাহার প্রাণত্যাগ হইল।

সর্প—সাপ।
প্রত্যুষে-ভােরবেলায়, সকালে।
হিমে—শিশিরে।
মৃতপ্রায়-মৃতবৎ, মরার মত।

কৃষক-চাষা, যে চাষেব কাজ করে।
ক্ষেত্রে-মাঠে, ময়দানে।
আচ্ছন্ন-আবৃত, ঢাকা।
অন্তঃকরণে-মনে।





উদয়-আবির্ভাব, উপস্থিতি।
স্বভাব-প্রকৃতি।
উদ্যত-উদ্যোগী, সচেষ্ট।
ক্রূর-নিষ্ঠুর, নির্দ্দয়, খল।
দয়—কৃপা, অনুগ্রহ।
ফল—শাস্তি, প্রতিশোধ।
হস্তস্থিত—যাহা হাতে ছিল।
আঘাতেই—প্রহরেই।

সজীব—জীবিত।
দংশন করিতে-কামড়াইতে।
ক্রুদ্ধ-কুপিত।
কৃতঘ্ন—নিমকহারাম।
উপযুক্ত—উচিত, যোগ্য, অনুরূপ
কুপিত-ক্রুদ্ধ, কষ্ট।
কুঠার—কুড়ুল।
প্রাণত্যাগ—মৃত্যু, মরণ।