কথামালা (১৯৪৪)/হরিণ

হরিণ।

এক হরিণ খালে জলপান করিতে গিয়াছিল। জলপান করিবার সময়ে, জলে তাহার শরীরের প্রতিবিম্ব পড়িয়াছিল। সেই প্রতিবিম্বে দৃষ্টিপাত করিয়া, হরিণ বলিল, আমার শৃঙ্গ যেমন দৃঢ়, তেমনই সুন্দর; কিন্তু আমার পা দেখিতে অতি কদর্য্য ও অকর্মণ্য। হরিণ এইরূপে আপন অবয়বের দোষ ও গুণের বিবেচনা করিতেছে, এমন সময়ে ব্যাধেরা আসিয়া তাড়া করিল। সে, প্রাণভযে এত বেগে পলাইতে লাগিল যে, ব্যাধেরা অনেক পশ্চাতে পড়িল। কিন্তু জঙ্গলে প্রবেশ করিবামাত্র, তাহার শৃঙ্গ লতায় এমন জড়াইয়া গেল যে, আর সে পলায়ন করিতে পারিল না। তখন ব্যাধেরা আসি তাহার প্রাণবধ করিল। হরিণ এই বলিয়া প্রাণত্যাগ করিল যে, আমি যে অবয়বকে কদর্য্য ও অকর্মণ্য স্থির করি অসন্তুষ্ট হইযাছিলাম, উহা আমায় শত্রুহস্ত হইতে বাঁচাইয়াছিল; কিন্তু যে অবয়বকে দৃঢ় ও সুন্দর বোধ করিয় সন্তুষ্ট হইযাছিলাম, তাহাই আমার প্রাণনাশের হেতু হইল।


প্রতিবিম্ব—ছায়া।
অকর্ম্মণ্য—কাজের অযোগ্য।
সন্তুষ্ট—আনন্দিত।


কদর্য—খারাপ, বিশ্রী।
শত্রুহস্ত হইতে—বিপক্ষদেব হাত থেকে।
প্রাণনাশের—জীবন-নাশের।