কবিতাকুসুমাঞ্জলি/নবীন ও বিপিনের সায়ংকালীন ভ্রমণ

নবীন ও বিপিনের সায়ৎকালীন ভ্রমণ।

কি কর নবীন ভাই! বসিয়া এখন,
চল যাই করিবারে প্রান্তরে ভ্রমণ।
তথায় প্রকৃতি নামে আছে এক নারী,
পাইবে পরম সুখ তাহারে নেহারি।
নিরুপম রূপ তাঁর হেরে যেই জন,
জগদীশ-প্রেমরসে মজে তার মন।
সামান্য কামিনীসমা নয় সে রমণী,
যখন হেরিবে, সুখী হইবে তখনি।
কাঞ্চনভূষণে তার নাহি শোভে কায়,
অলক্তকরাগ নাহি শোভা পায় পায়;

রতনে জড়িত রম্য অম্বর না পরে,
কনক কুসুম কভু অলকে না ধরে।
কাঞ্চীদেশে কাঞ্চনের কাঞ্চী নাই তাঁর;
শোভে না হৃদয়ে তাঁর মুক্তাময় হার;
কত যে বয়স তাঁর বলা নাহি যায়,
বালক তরুণ বৃদ্ধ সকলে ভুলায়;
অন্য নারী হেরি রসে কুরসে মানস,
এঁরে হেরে সমুদিত হয় শান্তরস।
ইহা শুনে দুই জনে মিলিয়া তখন,
সকৌতুকে চলে সুখে করিতে ভ্রমণ,
ক্রমে নগরের সীমা করি অতিক্রম,
প্রবেশ করিল মাঠে অতিমনোরম।
বিশুদ্ধ-মলয়ানিল-প্রবাহ বহিছে,
পক্ষিকুল কলরবে কূজন করছে।
স্থানে স্থানে গুল্ম আর বৃতির উপরে,
বিকসিত সিত ফুল কত শোভা ধরে।
তরুণ শস্যের কিবা হরিত বরণ,
সুচিক্কণ সুশোভন প্রিয়দরশন।
এরূপ সুরম্য দেশে বসি দুই জন,
অবাক্‌ হইল হেরি সে শোভা তখন।

নয়নরঞ্জন, অতি সুশোভন সাজে,
সাজিয়া প্রকৃতি দেবী তথায় বিরাজে।
রাঙ্গাররি হেম ফুল জলদ কুন্তলে,
কে হেরেছে হেন শোভা এমহীমণ্ডলে।
কপালবিস্তার তাঁর প্রশন্তগগন,
লোহিত জলদ তাহে সিন্দূর ভূষণ।
গিরিপয়োধরোপরি গিরিনদী যত
মুক্তাহারাবলীরূপে বিরাজে নিয়ত।
সন্ততদিগন্ত তাঁর হরিত অম্বর,
নীরধি রসনা হয় অতি শোভাকর;
অশোক বান্ধুলি ফুল আর কোকনদে
অলক্তক রূপে শোভে মনোহর পদে।
কোকিল কাকলী তাঁর সুমধুর ভাষ,
সুরভি শীতল বায়ু সুগন্ধি নিশ্বাস।
এমন সুষমাময়ী রমণী যে জন
না হেরেছে, বৃথা তার নয়ন ধারণ।
দেখিয়া দোঁহার মন মোহিত হইল,
পরাৎপর পরমেশে ভক্তি উপজিল।
বিপিন বলিছে ভাই! সুধাই তোমায়,
কে সৃজিল এ সকল, তিনি বা কোথায়।

কি রূপ তাঁহার রূপ, কোথা তাঁর ধাম,
কত বা শকতি তাঁর কিবা তাঁর নাম;
কোথা গেলে নিরখিব সেই শিল্পিবরে,
বল হে বিলম্ব আর সহে না অন্তরে।
নবীন বলিছে ভাই। শুনহ বচন,
কোথায় করিবে বল তাঁর অন্বেষণ।
সর্ব্বদেশে তিনি সদা বিদ্যমান হন,
জ্ঞাননেত্রে দেখ হৃদে পাবে দরশন।
চিদানন্দময় রূপ অসীম শকতি,
দয়াময় নাম তাঁর ব্রহ্মাণ্ড বসতি।
এই ষে সম্মুখে শোভে অপার সংসার,
নিশ্চয় জানিবে ভাই রচনা তাঁহার।
সর্ব্বভূতময় সেই দয়ার সাগরে
স্মরিলে কলুবভয় না রয় অন্তরে।
তাই বলি! ভক্তিভাবে ভাব তাঁরে মনে,
ভ্রমণ করিরে যদি আনন্দকাননে।