কবিতাকুসুমাঞ্জলি/বৃদ্ধ
বৃদ্ধ।
স্থবির! কি ভাব বলি, তোমার সুখের শশী,
একেবারে অস্ত গেল, আর দেখা পাবে না,
সুখোপায় যত ছিল, ক্রমে সব পলাইল,
তথাচ বিষয়-ভোগলালসা কি যাবে না?
কোথা গেল শ্যামকেশ, কোথা বা মোহনবেশ,
একে একে হল শেষ, অনুরোধে রবে না,
যৌবনের গত সুখ, মনে করি কর দুখ,
মাথা কুটে মর যদি, তবু তাহা হবে না,
অন্যের যৌবনধনে, দেখে দুখ কর মনে,
হতাশ হইয়া ভাব, আর তাহা হবে না,
বয়স হতেছে যত, বাড়িছে বাসনা তত,
জান না কি এসংসারে, চিরদিন রবে না,
ধবল হইল কেশ, কুব্জ তব পৃষ্ঠদেশ,
ভেঙ্গে গেছে কটিদেশ, আর সোজা হয় না,
কপালে ত্রিবলী মালা, বদনে ঝরিছে লালা,
কম্পমান কলেবর, ক্ষণ স্থির রয় না।
বিগলিত দন্ত সব, প্রভাহীন নেত্র তব
দুর্ব্বল হয়েছে পদ চলিবারে চায় না,
সঙ্কুচিত সর্ব্বকায়, করতত্বচের প্রায়,
ঘূণীয় তাহার পানে, কেহ ফিরে চায় না।
শৈশবের বন্ধুগণ, করিয়াছে পলায়ন,
মনের কথাটা কও, হেন জন পাও না,
বেত্রমাত্র সহচর, হইয়াছ হতাদর,
ঘরে বশি থাক সদা, কোন স্থানে যাওনা,
বালক বালিকা যত, ব্যঙ্গ করে নানা মত,
যষ্টি লয়ে চলে যায়, ভয়ে কাছে যায় না,
মাথায় আঘাত কর, ক্রোধভরে জ্বলেমর,
করুণ নয়নে কেহ তোমা পানে চায় না।
খাতির না করে দাসে, পরিজন কটু ভাষে,
ডাকিলে না কাছে আসে, ভাল কথা কয় না,
পূর্ব্বকৃত উপকার, কেবা করে অঙ্গীকার,
দেখিয়া তোমার দুখ মম প্রাণে সয় না।
বাটীর বাহিরে বাস, পরিধান মোটা বাস,
ধরিয়াছে শ্বাস কাশ, তবু চক্ষু ফুটে না,
জর জীর্ণ হল কায়, বলবুদ্ধি নাহি তায়,
তথাপি তোমার হায়, মোহনিদ্রা ছুটে না,
দেহ হোল জর জর, হইয়াছ মর মর,
তথাচ মৃত্যুর কথা তুমি ভাল বাস না,
ভেবেছ অমর হয়ে, রবে তুমি এ আলয়ে,
যাইবে শমনে লয়ে, তবু এত বাসনা!
চিন্তা করে গেল কাল, চিন্তিলে না পরকাল,
আসিছে করাল কাল, সে ভয় কি কর না?
আমার বচন ধর, কেন ঘুরে ঘুরে মর,
যিনি কালভয়হর, তাঁরে কেন স্মর না।