কবিতাবলী (হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৮৭১)/কোন একটি পাখীর প্রতি
ডাক্ রে আবার, পাখি, ডাক্ রে মধুর!
শুনিয়ে জুড়াক প্রাণ, তোর সুললিত গান
অমৃতের ধারা সম পড়িছে প্রচুর।
আবার ডাক্ রে পাখি, ডাক্ রে মধুর!
বলিয়ে বদন তুলে, বসিয়ে রসালমূলে,
দেখিনু উপরে চেয়ে আশায় আতুর।
ডাক্ রে আবার ডাক্ সুমধুর সুর।
কোথায় লুকায়ে ছিল নিবিড় পাতায়;
চকিত চঞ্চল আঁখি, না পাই দেখিতে পাখী,
আবার শুনিতে পাই সঙ্গীত শুনায়,
মনের আনন্দে বসে তরুর শাখায়।
কে তোরে শিখালে বল, এ সঙ্গীত নিরমল?
আমার মনের কথা জানিলি কোথায়?
ডাক্ রে আবার ডাক্ পরাণ জুড়ায়।
অমনি কোমল স্বরে সেও রে ডাকিত,
কখন আদর করেকভু অভিমান ভরে
অমনি ঝঙ্কার করে লুকায়ে থাকিত।
কি জানিবি পাখী তুই, কত সে জানিত!
নব অনুরাগে যবে, ডাকিত প্রাণবল্লভে,
কেড়ে নিত প্রাণ মন পাগল করিত;
কি জানিবি পাখী তুই কত সে জানিত।
ধিক্ মোরে ভাবি তারে আবার এখন!
ভুলিয়ে সে নব রাগ, ভুলে গিয়ে প্রেমযাগ,
আমারে ফকীর করে আছে সে যখন;
ধিক্ মোরে ভাবি তারে আবার এখন।
ভুলিব ভুলিব করি, তবু কি ভুলিতে পারি,
না জানি নারীর প্রেম মধুর কেমন,
তবে কেন সে আমারে ভাবে না এখন?
ডাক্ রে বিহগ তুই ডাক্ রে চতুর;
ত্যজে সুধু সেই নাম, পূরা তোর মনস্কাম,
শিখেছিস্ আর যত বল সুমধুর।
ডাক্ রে আবার ডাক্ মনোহর সুর!
না শুনে আমার কথা, ত্যজে কুসুমিত লতা,
উড়িল গগন-পথে বিহগ চতুর;—
কে আর শুনবে মোরে সে নাম মধুর।