কবিতাবলী (হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৮৭১)/লজ্জাবতীলতা
ছুঁইও না ছুঁইও না উটি লজ্জাবতীলতা।
একান্ত সঙ্কোচ করে, এক ধারে আছে সরে,
ছুঁইও না উহার দেহ, রাখ মোর কথা।
তরু লতা যত আর, চেয়ে দেখ চারি ধার,
ঘেরে আছে অহঙ্কারে—উটি আছে কোথা!
আহা অই খানে থাক, দিও না ক ব্যথা।
ছুঁইলে নখের কোণে, বিষম বাজিবে প্রাণে,
যেইও না উহার কাছে খাও মোর মাথা;
ছুঁইও না ছুঁইও না উটি লজ্জাবতীলতা।
লজ্জাবতীলতা উটি অতি মনোহর।
যদিও সুন্দর শোভা নাহি তত মনোলোভা,
তবুও মলিন বেশ মরি কি সুন্দর।
যায় না কাহার পাশেমান মর্যাদার আশে,
থাকে কাঙ্গালির বেশে এক নিরন্তর—
লজ্জাবতী লতা উটি মরি কি সুন্দর!
নিশ্বাস লাগিলে গায়, অমনি শুকায়ে যায়,
না জানি কতই ওর কোমল অন্তর।
এ হেন লতার হয়, কে জানে আদর!
হায় এই ভূমণ্ডলে, কত শত জন,
দণ্ডে দণ্ডে ফুটে উঠে, অবনী মণ্ডল লুঠে,
শুনায় কতই রূপ যশের কীর্ত্তন!
কিন্তু হেন ম্রিয়মাণ, সদা সঙ্কুচিত প্রাণ,
পুরুষ রমণী হেরে কে করে যতন?
স্বভাব মৃদুল ধীর, প্রকৃতিটী সুগম্ভীর,
বিরলে মধুরভাষী মানসরঞ্জন;
কে জিজ্ঞাসি তাহাদের করে সম্ভাষণ?
সমাজের প্রান্ত ভাগে তাপিত অন্তরে জাগে,
মেঘে ঢাকা আভাহীন নক্ষত্র যেমন।
ছুঁইও না উহার দেহ করি নিবারণ;
লজ্জাবতী লতা উটি মানসরঞ্জন।