ঊষা।

বসে থাকি আমি  চোখের কাছে
দেখি যেন ঊষা  দাঁড়ায়ে আছে!
কিবা সে সুন্দরী
আহা মরি মরি!
সে রূপ সম্ভব  মানবে নয়;
দেবেও তেমন  বুঝি না হয়!
মনোহর স্থান  কানন কাছে
বয়ে যায় নদী  সমুখে নেচে;
বসে থাকি আমি  কেবল একা
অদূরেতে গিরি  যাইলে দেখা;
প্রভাত পবন  মৃদুল চলে
গাছ পাতাগুলি  ঈষত তুলে,
ভাঙ্গি দিলে ঘুম  পাখীর সব
ধরিলে রে তারা  মধুরে রব—

গৈরিক বসন  গায়েতে ঢেকে
প্রেমময়ী যেন  অনুরাগে থেকে,
হেসে আসে ঊষা  কানন মাঝে
মনোহর তার  ফুলের সাজে!

তরু লতা নানা কাননে আছে,
ঊষা আসে আগে তাদের কাছে—
কারে ঢেলে বারি জীবন দিয়ে
কার মুখে বা সে চুমটি খেয়ে
কাননে সে নিতি হাসিতে থাকে;
সবে সুখী হয় তাহার সুখে।

ঊষা সে বনের দেবতা যেন;
না হলে না হলে না হলে কেন
তরুগুলি দোলে
লতা পড়ে ঢলে
কেন বা তাহারে তাহারে দেখে,
ফুল ফল সব পূজায় রেখে?

মুগধ পবন মৃদুল বায়.
কানন ছাড়িতে আর না চায়;
 ঝুর ঝুর ঝুরে
 চুপু চুপু স্বরে
সুখের কথায় পাতাটী নেড়ে
কেবল কাননে বেড়ায় ঘুরে!

শশি-অপগমে উদিলে রবি,
ঊষা মোর সেই স্বভাব ছবি;
 প্রশান্ত গভীর
 সেই সে নদীর
উজান বারির ধারার মত,
আপনার সুখে নয় সে রত,
পরে সেই ছবি হৃদয়ে ধরে
পরের সে সুখে সোহাগ করে।
সুখতারা মত সুখের বাসে
নিতি নিতি ঊষা কাননে আসে;
কাননের কাজ ফুরালে তার
হেসে উষা বসে নদীর ধার;–

গানের মতন।
কথায় যখন
চেয়ে চেয়ে সেই নদীর দিকে
এক মনে ঊষা বলিতে থাকে,—
সুখ চেয়ে সুখ দেখিতে ভাল,
চাঁদ চেয়ে ভাল চাঁদের আলো;
তার চেয়ে ভাল সুখটি হায়
পরে ধরে যবে প্রকাশ পায়!
সরল পরাণে
সে সুখের তানে।
ভুলে গিয়া আমি মনের খেদ,
ভুলে গিয়া আমি কালের ভেদ,
কিশোর যৌবন
নিশার স্বপন
মনে হয় যেন সে মধু রবে;
ঊষাময় হেরি যা কিছু সবে।
নিতি নিতি চেয়ে নদীর দিকে
ঊষা সনে বলি বড়ই সুখে,—
এক রবি শশী আকাশে থাকে
নদী ধরে তায় শতেক দেখে!