বসন্ত

সুখের আলয়  আমার ধাম,
সুখের বসন্ত  আমার নাম,
যা কিছু সুখের  সকলেই আজ
এনেছি এনেছি  আমি ঋতুরাজ;

পরত ধরণী  সহাস সাজ,
উঠত চন্দ্রমা  হাসিয়া আজ,
ভাঙ্গিয়া বিরহ  ব্যথিত প্রাণ
গাওত কোকিল  পঞ্চমে গান;
কুসুম সুরভি  ছড়ায়ে আজ
বহত মলয়  পবন-রাজ!

বীর বন-ভূমে,  আশ্রমে মুনি,
বিপুল বিভবে  প্রাসাদে ধনী,
প্রবল প্রতাপ  বুঝুক মোর,
ঘুচুক সবার  নেশার ঘোর!

কি করে বীরত্ব   কি করে জ্ঞান,
কি করে তন্মদ   ধনের মান?
বসন্ত লইয়া   নানানুরাগ
যেথায় জাগায়   বাসনা যাগ,

অতি দূরদেশ   হিমগিরি যেথা,
ছুঁইয়া গগন ছাইয়া আছে।
পর-পর-পর   সকল ঋতুর
সুখের আবাস ফেলিয়া পাছে;
তুষারমণ্ডিত   উচ্চ শৃঙ্গদেশে
শীতের আলয় ছাড়ায়ে আর,
স্বরগের কাছে   স্বরগের সম
আমার আলয় সবার সার।

মুঞ্জর রে তরু  মুঞ্জর লতা।
গিয়াছে শিশির  গিয়াছে ব্যথা:
আমার উৎসবে  মাতায়ে প্রাণ
ধরত পাপিয়া ঝঙ্কার তান;
ফুটত রে সুখে  কুসুম-কলি,
গাও ত কোকিল  গুঞ্জর আলি;

সুরুচি আপন  ভুলিয়া যাক্।
হৃদিহীন প্রাণী  অবাকে থাক।
ভাঙ্গিলে রে ঘুম  স্বপন যায়,
স্বপনের নিধি  জেগে কে পায়।
আচার বিচার    সকলি মিছার
জ্ঞানের কুহক বিষম ভ্রম,
বিচারে যে চায়   সুখ যে রে তায়
শুধুই কেবল আশার ক্রম।
অন্ধ পরাণে দেখা যা যায়
বিচারে আনিয়া কি ফল তায়?
প্রাণ আছে কি না   জানিবার আশে
প্রাণময়ী ছবি ছিঁড়িয়া ফেলে,
পিশাচের মত   শূন্য প্রাণ দেখে
কার প্রাণে সুখ কবে রে মেলে?

ভাল বেসে প্রাণে যাহারে চায়,
স্বজন প্রেমিক মিলয়ে তায়;

পেয়ে কেন দিন হারাও হেলে?
জনম যে যায় লহমা গেলে!

চুম্বিয়া চাঁদেরে তটিনীর বারি
মিছা কিরে ঢালে সুধার ধারা,
মিছা কি তটিনী হৃদয়ে চাঁদের
ধরে শত রূপ পাগল পারা?
মিছা কি মিছা কি প্রাণের রে হাসি
প্রাণ দিয়া পরে আপনা খুঁজে,
সুখ কি পরাণে যদি না পরাণ
আপনায় ভুলে অপরে মজে।


ভাল বেসে প্রাণে     রেখ না খেদ,
স্বরগে মরতে   কর না ভেদ;
প্রেমের জগতে   সবাই সম,
মিছা কুল শীল   মোহের তম!
ভাল বেসে প্রাণে   হয়ে যে সুখী
মরতের ফুল,   সূরযমুখী
আকাশের রবি   আকাশে হায়!
দোঁহা পানে দোঁহা   চাহিয়া রয়।
দিনে দিনে দিনে   গুণিয়া তারা
কে আছ কোথায়   কাঁদিয়া সারা,
কহত আমায়   কেবা কি ছলে