কবিতা/পুরাণ কথা
কথা পুরাতন,
তবু সে আমার এখনো তেমনি
নূতন আছে।
আঁখিটী মুদিলে
হিয়ার মাঝারে সে যেন আমার
যায় রে নেচে॥
বসে একদিন
সুখ অনুকূল মধুর মৃদুল
মলয় বায়।
কি যেন কেমন
উদাস পরাণে চেয়ে চেয়ে চাঁদে
গগন গায়।
সে সুখ বসন্তে
সে সুখ সময় তমালের তলে
তটিনী তীরে।
বহু দিন হল
জেগে জেগে যেন দেখেছিনু তায়
স্বপন ঘোরে॥
কথা পুরাতন,
তবু সে আমার এখনো তেমনি
নূতন আছে।
আঁখিটী মুদিলে
হিয়ার মাঝারে সে যেন আমার
যায় রে নেচে।
মানস মোহিনী
ভুবন ভুলানী সে রূপের আমি
কি কব কথা।
সে রূপমাধুরী
সাঁজের বেলায় কুমুদ কাননে
চন্দ্রিক যথা।
দেখিতে দেখিতে
হৃদয় ছাইল ভুবন ভরিল
সে রূপ পেয়ে।
যেখানে চাহিনু
দেখিনু সে যেন সুখের আলোকে
রয়েছে চেয়ে॥
কথা পুরাতন,
তবু সে আমার এখনো তেমনি
নূতন আছে।
আঁখিটী মুদিলে
হিয়ার মাঝারে সে যেন আমার
যায় রে নেচে।৷
কোথা হতে যেন
কত যে সোহাগ কত অনুরাগ
সুখের ঘোর।
বিহ্বলে আমায়
সহস আইল হৃদয় ছাইল
করিয়া ভোর॥
সখারে সে দিন
কি বলিব আমি সুখের সে কথা
যা হল হায়!
করিতে প্রকাশ
মনে মনে গাঁথা মনের রে কথা
কে পারে কায়?
আপন হারানু।
ছুইতে যাইনু ছুইতে নারিনু
উহু কি খেদ!
সহসা দেখিনু
তাহাতে আমাতে কি যেন কি যেন
কি যেন ভেদ।
আমার মনের
কথাটি যে শুধু মনেই রহিল
মুখে না এল।
স্বরূপ মানসে
সেরূপ আমার ক্রেমে ক্রমে যেন
মলিন হল।
কি দুঃখ কি দুঃখ!
নিঝুম প্রকৃতি চারিধার ময়
দেখিনু চেয়ে,
পুরিয়া জগৎ
বিকট আকারে কি যেন আঁধারে
আসিছে ছেয়ে।
ভয়ে ভয়ে দুলে
নিবিড় আঁধারে তরুমূল ছাড়ি
তটিনী-তীরে
সুখ জ্যোৎস্না
আকুলে পড়িয়া যেন কাল জলে
মিশিছে ধীরে।
সহসা কাঁদিয়া
গগনের গায় দেখিলু চাঁদিমা
পড়িছে ঢলে;
মনেতে করিনু
যেন যেতে তায় করি নিবারণ
দাঁড়াও বলে।
আমার মনের
কথাটিরে শুধু মনেই রহিল
মুখে না এল!
গগন হইতে
গাছের আড়ালে ঢলে পড়ি চাঁদ
চলিয়া গেল!
হারানু প্রণয়,
হারানু পরাণ, হারানুরে আলো
হারায়ে তায়,
ডুবিয়া আঁধারে
নীরবে কাঁদিনু তমালের তলে
তমাল প্রায়।