সেই রূপ।

অতি অপরূপ আহা সেই রূপ
দেখা হতে আমি বেসেছিনু ভাল।
যাহা কিছু তার— প্রিয়ার আমার—
কি যেন কেমন ছিল সব ভাল।

যেমন সুন্দর বুকের ভিতর
দুঃখে সুখ আশা, যেমন সুন্দর
রূপেতে অতুল বনে বন-ফুল
আলো করে রয় বিজন-অন্তর।

দুর্জ্জনের হ’তে বহি দূর পথে
দুঃখিনী সে দুঃখে বেড়ি চারি ধার,
গ্রাম হতে দূরে বিজন কুটীরে
ছিল করে আলো সে যেন আমার।


অপূর্ব্ব সুন্দরী অপরূপ নারী,
দেব কি মানব দুয়ের সে প্রিয়;
ভাবে ঘোর ঘোর সদা ছিল ভোর
চেয়ে যেন ঊষা আর কমনীয়।

অতি মনোহর যেন সুধাকর
কমল সুন্দর মুখে হাসি তার,
ছিল যেন হাসি হাসিতে প্রকাশি
ফুল্ল ফুলে মরি ফুল্ল চন্দ্রিকার।

অতি অপরূপ আহা সেই রূপ
দেখা হতে আমি বেসেছিনু ভাল।
যাহা কিছু তার— প্রিয়ার আমার—
কি যেন কেমন ছিল সব ভাল।

ঘুমে জেগে হায় যথায় তথায়
যথা রূপ রত্ন প্রকাশের আগে।
সুখের বিভাষ পূরব আভাষ
চলে আগে তার নানা অনুরাগে।


অতি চমৎকার কান্তি সে তাহার
কি যেন কেমন ঘুমে ঢুলে ঢুলে
প্রতি পদে পদে জীবন্ত আমোদে
চলিতে সে তার আগে যেত চলে।

গানের মতন কি যেন কেমন
কথা গুলি তার থামিলেও কানে।
বিহঙ্গ ঝঙ্কার চাহি যেন আর
মধুরে বাজিত আকুল পরাণে।

নিতু অভিনব ছিল তার সব
চেয়ে রূপ সেই বারে বারে বার।
দেখে না মিটিত আশা না ফুরাত
দেখিতে সে তারে দেখিতুঁ আবার।

স্বভাব সুন্দর মরুভূর সর
নিদাঘের ফুল মতন প্রিয়ার।
ছিল না বিলাস সুখ অভিলাষ
স্বভাবে সে ছিল সব রূপ তার।


তুলিত না ফুল, বাঁধিত না চুল,
চিকুর চিকনে সদা এলাইয়ে;
ছিল বড় সুখে সেই চাঁদ মুখে
নীল নভে যেন চন্দ্রমা বেড়িয়ে।

অতি অপরূপ আহা সেই রূপ
দেখা হতে আমি বেসেছিনু ভাল;
যাহা কিছু তার— প্রিয়ার আমার—
কি যেন কেমন ছিল সব ভাল।

স্নেহের নিঝর প্রেম সরোবর
দুই রূপে মিশি সেই একাকার।
নির্ম্মল সরসী স্বভাব-আরসী
মত মরি আহা হৃদিখানি তার।

ভারের হাওয়ায় ভাঙ্গি শতধায়
দেখাতাম কত কত শত বার।
বানে উছলিতে দু’ কূল হানিতে
বুকে লয়ে ভরা প্রেমের জোয়ার।


দুঃখের পরাণে হতাশ তাড়নে
আশাময়ী যেন সকল সুখের।
ডুবিতে মিহির ধ্রুব চিরস্থির
তারা রূপে যেন দীপ সে সাঁজের।

দুঃখের আরম্ভে নিশার প্রারম্ভে
আসি সারা নিশি দুঃখে ঘুরে ঘুরে।
নিশাশেষ সুখে ঊষার সে বুকে
মিশে গেছে চিরসুখের সে ক্রোড়ে!