কল্পনা (১৯৫২)/ভ্রষ্ট লগ্ন
ভ্রষ্ট লগ্ন
শয়নশিয়রে প্রদীপ নিবেছে সবে,
জাগিয়া উঠেছি ভােরের কোকিলরবে।
অলসরণে বসি বাতায়নে এসে
নূতন মালিকা পরেছি শিথিল কেশে।
এমন সময়ে অরুণধূসর পথে
তরুণ পথিক দেখা দিল রাজরথে।
সােনার মুকুটে পড়েছে উষার আলো,
মুকুতার মালা গলায় সেজেছে ভালাে।
শুধালো কাতরে ‘সে কোথায়’ ‘সে কোথায়’
ব্যগ্রচরণে আমারি দুয়ারে নামি—
শরমে মরিয়া বলিতে নারিনু হায়,
‘নবীন পথিক, সে যে আমি, সেই আমি।’
গােধূলিবেলায় তখনাে জ্বলে নি দীপ,
পরিতেছিলাম কপালে সােনার টিপ,
কনকমুকুর হাতে লয়ে বাতায়নে
বাঁধিতেছিলাম কবরী আপন মনে।
হেনকালে এল সন্ধ্যাধূসর পথে
করুণনয়ন তরুণ পধিক রথে।
ফেনায় ঘর্মে আকুল অশ্বগুলি
বসনে ভূষণে ভরিয়া গিয়াছে ধূলি।
শুধালো কাতরে ‘সে কোথায়’ ‘সে কোথায়’
ক্লান্তচরণে অমারি দুয়ারে নামি—
শরমে মরিয়া বলিতে নারিনু হায়,
‘শ্রান্ত পথিক, সে যে আমি, সেই আমি।’
ফাগুনযামিনী, প্রদীপ জ্বলিছে ঘরে,
দখিন-বাতাস মরিছে বুকের ’পরে।
সোনার খাঁচায় ঘুমায় মুখরা শারী,
দুয়ারসমুখে ঘুমায়ে পড়েছে দ্বারী।
ধূপের ধোঁয়ায় ধূসর বাসরগেহ,
অগুরুগন্ধে আকুল সকল দেহ।
ময়ুরকণ্ঠী পরেছি কাঁচলখানি
দূর্বাশ্যামল আঁচল বক্ষে টানি।
রয়েছি বিজন রাজপথ-পানে চাহি,
বাতায়নতলে বসেছি ধুলায় নামি—
ত্রিযামা যামিনী একা বসে গান গাহি,
‘হতাশ পথিক, সে যে আমি, সেই আমি।’