কল্পনা (১৯৫২)
প্রকাশ: ২৩ বৈশাখ ১৩০৭
পুনর্মুদ্রণ: চৈত্র ১৩৩৪
নূতন সংস্করণ: আষাঢ় ১৩৪৯
পুনর্মুদ্রণ: চৈত্র ১৩৫২, ভাদ্র ১৩৫৫, শ্রাবণ ১৩৫৬
শ্রাবণ ১৩৫৯
প্রকাশক শ্রীপুলিনবিহারী সেন
বিশ্বভারতী। ৬।৩ দ্বারকানাথ ঠাকুর লেন। কলিকাতা
মুদ্রাকর শ্রীসূর্যনারায়ণ ভট্টাচার্য
তাপসী প্রেস। ৩০ কর্নওআলিস স্ট্রীট। কলিকাতা
উৎসর্গ
শ্রীযুক্ত শ্রীশচন্দ্র মজুমদার
সুহৃৎকরকমলে
গ্রন্থপরিচয়
কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী, শ্রীযুক্ত অমলচন্দ্র হোম, শ্রীযুক্ত সমীরচন্দ্র মজুমদার, ইঁহাদের সৌজন্যে কল্পনার অনেক গুলি কবিতার পাণ্ডুলিপি দেখিবার সুযোগ পাওয়া গিয়াছে, এবং ওই-সকল পাণ্ডুলিপি মিলাইয়া কল্পনার নূতন সংস্করণে অনেক কবিতা-রচনার স্থানকাল নির্দেশ করা বা তৎসম্পর্কিত দু-একটি ভ্রম সংশোধন করা সম্ভব হইয়াছে।
‘ভিক্ষায়াং নৈব নৈব চ’ কবিতাটি কল্পনা হইতে বাদ পড়িয়াছিল। উহা নূতন সংস্করণে পুনঃসন্নিবিষ্ট হইল।
‘আমার ধর্ম’ প্রবন্ধে ‘অশেষ’ ও ‘বর্ষশেষ’ কবিতা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছেন—
এর [‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতা রচনার] পর থেকে বিরাটচিত্তের সঙ্গে মানবচিত্তের ঘাত-প্রতিঘাতের কথা ক্ষণে ক্ষণে আমার কবিতার মধ্যে দেখা দিতে লাগল। দুইয়ের এই সংঘাত যে কেবল আরামের, কেবল মাধুর্যের, তা নয়। অশেষের দিক থেকে যে আহ্বান এসে পৌঁছয় সে তো বাঁশির ললিত সুরে নয়।··· এ আহ্বান এ তো শক্তিকেই আহ্বান, কর্মক্ষেত্রেই এর ডাক; রসসম্ভোগের কুঞ্জকাননে নয়।··
এমনি করে ক্রমে ক্রমে জীবনের মধ্যে ধর্মকে স্পষ্ট করে স্বীকার করবার অবস্থা এসে পৌঁছল। যতই এটা এগিয়ে চলল ততই পূর্বজীবনের সঙ্গে আসন্ন জীবনের একটা বিচ্ছেদ দেখা দিতে লাগল। অনন্ত আকাশে বিশ্বপ্রকৃতির যে শান্তিময় মাধুর্য-আসনটা পাতা ছিল সেটাকে হঠাৎ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে বিরোধবিক্ষুব্ধ মানবলোকে রুদ্রবেশে কে দেখা দিল! এখন থেকে দ্বন্দের দুঃখ, বিপ্লবের আলোড়ন। সেই নূতন বোধের অভ্যুদয় যে কিরকম ঝড়ের বেশে দেখা দিয়েছিল, এই সময়কার ‘বর্ষশেষ’ কবিতার মধ্যে সেই কথাটি আছে।
‘বর্ষশেষ’ কবিতা সম্বন্ধে কবি অন্যত্র বলিয়াছেন—
১৩০৫ সালে বর্ষশেষ ও দিনশেষের মুহূর্তে একটা প্রকাণ্ড ঝড় দেখেছি। এই ঝড়ে আমার কাছে রুদ্রের আহ্বান এসেছিল। যা-কিছু পুরাতন ও জীর্ণ তার আসক্তি ত্যাগ করতে হবে— ঝড় এসে শুকনো পাতা উড়িয়ে দিয়ে সেই ডাক দিয়ে গেল। এমনিভাবে চিরনবীন যিনি তিনি প্রলয়কে পাঠিয়েছিলেন মোহের আবরণ উড়িয়ে দেবার জন্যে। তিনি জীর্ণতার আড়াল সরিয়ে দিয়ে আপনাকে প্রকাশ করলেন। ঝড় থামল। বললুম— অভ্যস্ত কর্ম নিয়ে এই-যে এত দিন কাটালুম, এতে তো চিত্ত প্রসন্ন হল না। যে আশ্রয় জীর্ণ হয়ে যায় তাকেও নিজের হাতে ভাঙতে মমতায় বাধা দেয়। ঝড় এসে আমার মনের ভিতরে তার ভিতকে নাড়া দিয়ে গেল, আমি বুঝলুম বেরিয়ে আসতে হবে।
‘বৈশাখ’ কবিতা সম্বন্ধে চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের পত্রের উত্তরে, ৪ কার্তিক ১৩৩৯ তারিখে, কবি তাঁহাকে লিখিয়াছেন—
এক জাতের কবিতা আছে যা লেখা হয় বাইরের দরজা বন্ধ ক’রে। সেগুলো হয়তো অতীতের স্মৃতি বা অনাগতের প্রত্যাশা, বাসনার অতৃপ্তি বা আকাঙ্ক্ষার আবেগ, কিম্বা রূপরচনার আগ্রহের উপর প্রতিষ্ঠিত। আবার এক জাতের কবিতা আছে যা মুক্তদ্বার অন্তরের সামগ্রী, বাইরের সমস্ত-কিছুকে আপনার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে। তুমি আমার ‘বৈশাখ’ কবিতা সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছ। বলা বাহুল্য, এটা শেষজাতীয় কবিতা। এর সঙ্গে জড়িত আছে রচনাকালের সমস্ত-কিছু·· ‘বৈশাখ’ কবিতার মধ্যে মিশিয়ে আছে শান্তিনিকেতনের রুদ্র মধ্যাহ্নের দীপ্তি। যেদিন লিখেছিলুম সেদিন চারি দিক থেকে বৈশাখের যে তপ্ত রূপ আমার মনকে আবিষ্ট করেছিল সেইটেই ওই কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে। সেই দিনটিকে যদি ভূমিকারূপে ওই কবিতার সঙ্গে তোমাদের চোখের সামনে ধরতে পারতুম তা হলে কোনো প্রশ্ন তোমাদের মনে উঠত না।
তোমার প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে নীচের দুটি লাইন নিয়ে—
ছায়ামূর্তি যত অনুচর
দগ্ধতাম্র দিগন্তের কোন্ ছিদ্র হতে ছুটে আসে!
খোলা জানালায় বসে ওই ছায়ামূর্তি অনুচরদের স্বচক্ষে দেখেছি, শুস্ক রিক্ত দিগন্ত প্রসারিত মাঠের উপর দিয়ে প্রেতের মতো হু হু করে ছুটে আসছে ঘূর্ণানৃত্যে, ধুলোবালি শুকনো পাতা উড়িয়ে দিয়ে। পরবর্তী শ্লোকেই ভৈরবের অনুচর এই প্রেতগুলোর বর্ণনা আরো স্পষ্ট করেছি, পড়ে দেখো।
তার পরে এক জায়গায় আছে—
সকরুণ তব মন্ত্র-সাথে
মর্মভেদী যত দুঃখ বিস্তারিয়া যাক বিশ্ব-’পরে।
এই দুটো লাইনেরও ব্যাখ্যা চেয়েছ। সেদিনকার বৈশাখমধ্যাহ্নের সকরুণতা আমার মনে বেজেছিল ব’লেই ওটা লিখতে পেরেছি। ধু ধু করছে মাঠ, ঝাঁ ঝাঁ করছে রোদ্দুর, কাছে আমলকী গাছগুলোর পাতা ঝিল্মিল্ করছে, ঝাউ উঠছে নিশ্বসিত হয়ে, ঘুঘু ডাকছে স্নিগ্ধ সুরে— গাছের মর্মর, পাখিদের কাকলি, দুর আকাশে চিলের ডাক, রাঙা মাটির ছায়াশূন্য রাস্তা দিয়ে মন্থরগমন ক্লান্ত গোরুর গাড়ির চাকার আর্ত স্বর, সমস্তটা জড়িয়ে মিলিয়ে যে-একটি বিশ্বব্যাপী করুণার সুর উঠতে থাকে, নিঃসঙ্গ বাতায়নে বসে সেটি শুনেছি, অনুভব করেছি, আর তাই লিখেছি।
বৈশাখের অনুচরীর যে ছায়ানৃত্য দেখি সেটা অদৃশ্য নয় তো কী? নৃত্যের ভঙ্গি দেখি, ভাব দেখি, কিন্তু নটী কোথায়? কেবল একটা আভাস মাঠের উপর দিয়ে ঘুরে যায়। তুমি বলছ, তুমি তার ধ্বনি শুনেছ। কিন্তু যে দিগন্তে আমি তার ঘূর্ণিগতিটাকে দেখেছি সেখান থেকে কোনো শব্দই পাই নি। বৃহৎ ভূমিকার মধ্যে তরুরিক্ত বিশাল প্রান্তরে যে চঞ্চল আবির্ভাব ধূসর আবর্তনে দেখা যায়, তার রূপ নয়, তার গতিই অনুভব করি; তার শব্দ তো শুনিই নে। এ স্থলে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বাইরে যাবার জো নেই।
প্রথম ছত্রের সূচী
| ||
অযুত বৎসর আগে হে বসন্ত, প্রথম ফাল্গুনে | ১১১ | |
অয়ি ভুবনমনোমোহিনী | ৭৬ | |
আজি উন্মাদ মধুনিশি, ওগো | ২৮ | |
আজি এই আকুল আশ্বিনে | ১০৫ | |
আজি কী তোমার মধুর মুরতি | ৪৪ | |
আজি মগ্ন হয়েছিনু ব্রহ্মাণ্ড-মাঝারে | ১২১ | |
আমি কেবলি স্বপন করেছি বপন | ৬৯ | |
আমি চাহিতে এসেছি শুধু একখানি মালা | ৭৩ | |
আমি তো চাহি নি কিছু | ৩১ | |
আবার আহ্বান | ৯০ | |
ঈশানের পুঞ্জমেঘ অন্ধ বেগে ধেয়ে চলে আসে | ৯৮ | |
একদা তুমি অঙ্গ ধরি ফিরিতে নব ভুবনে | ২১ | |
এ কি তবে সবই সত্য | ৩৯ | |
এ জীবনসূর্য যবে অস্তে গেল চলি | ৪১ | |
এবার চলিনু তবে | ৬৪ | |
ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে | ১২ | |
ওগো কাঙাল, আমারে কাঙাল করেছ | ৬০ | |
ওগো পসারিনি, দেখি আয় | ৩৪ | |
ওগো পুরবাসী, আমি পরবাসী | ৮১ | |
ওগো প্রিয়তম, আমি তোমারে যে ভালোবেসেছি | ২৬ | |
ওগো সুন্দর চোর | ১৫ | |
কহিলা হবু, শুন গো গোবুরায় | ৫৩ | |
কিসের তরে অশ্র ঝরে, কিসের তরে দীর্ঘশ্বাস | ৫০ | |
কে এসে যায় ফিরে ফিরে | ৫৮ | |
কেন বাজাও কাঁকন কনকন, কত | ৬৬ | |
ক্ষমা করো, ধৈর্য ধরো | ৯৫ | |
জানি হে যবে প্রভাত হবে, তোমার কৃপা-তরণী | ১২৪ | |
তুমি সন্ধ্যার মেঘ শান্তসুদূর | ৭০ | |
তোমার মাঠের মাঝে তব নদীতীরে | ৪২ | |
দুইটি হৃদয়ে একটি আসন | ৭৫ | |
দূরে বহুদূরে | ১৮ | |
পঞ্চশরে দগ্ধ করে করেছ এ কী, সন্ন্যাসী | ২৪ | |
বন্ধু, কিসের তরে অশ্রু ঝরে, কিসের তরে দীর্ঘশ্বাস | ৫০ | |
বারেক তোমার দুয়ারে দাঁড়ায়ে | ৪৭ | |
বিজ্ঞানলক্ষ্মীর প্রিয় পশ্চিমমন্দিরে | ৫৯ | |
ভয় হতে তব অভয়-মাঝারে | ১২২ | |
ভাঙা দেউলের দেবতা | ১১৪ | |
ভালোবেসে সখী, নিভৃতে যতনে | ৬২ | |
মোরে করো সভাকবি ধ্যানমৌন তোমার সভায় | ১১৯ | |
যদি বারণ কর, তবে গাহিব না | ৭২ | |
যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে | ৯ | |
যামিনী না যেতে জাগালে না কেন | ৬৮ | |
যে তোমারে দূরে রাখি নিত্য ঘৃণা করে | ৪৯ | |
শয়নশিয়রে প্রদীপ নিবেছে সবে | ৩৭ | |
সখী, প্রতিদিন হায় এসে ফিরে যায় কে | ৭৪ | |
সংসারে মন দিয়েছিনু, তুমি | ১২৩ | |
সে আসি কহিল, প্রিয়ে, মুখ তুলে চাও | ২৯ | |
হয়েছে কি তবে সিংহদুয়ার বন্ধ রে | ১০৮ | |
হাজার হাজার বছর কেটেছে, কেহ তো কহে নি কথা | ৭৭ | |
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ | ১১৬ | |
হেরিয়া শ্যামল ঘন নীল গগনে | ৬৭ |
এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।