কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/ছবি ও গান/পাগল
পাগল
আপন মনে বেড়ায় গান গেয়ে,
গান কেউ শোনে, কেউ শোনে না।
ঘুরে বেড়ায় জগৎ-পানে চেয়ে
তারে কেউ দেখে, কেউ দেখে না।
সে যেন গানের মত প্রাণের মত শুধু
সৌরভের মত উড়্ছে বাতাসেতে,
আপনারে ত আপ্নি সে জানে না,
তবু আপ্নাতে সে আপনি আছে মেতে।
লতা তার গায়ে পড়ে,
ফুল তার পায়ে পড়ে,
নদীর মুখে কুলু কুলু রা’।
গায়ের কাছে বাতাস করে বা’।
যেখেন দিয়ে যায় সে চলে সেথায় যেন ঢেউ খেলে যায়,
বাতাস যেন আকুল হয়ে ওঠে,
ধরা যেন চরণ ছুঁয়ে শিউরে ওঠে শ্যামল দেহে
লতায় যেন কুসুম ফোটে-ফোটে।
বসন্ত তার সাড়া পেয়ে সখা বলে আসে ধেয়ে,
বনে যেন দুইটি বসন্ত,
দুই সখাতে ভেসে চলে যৌবন-সাগরের জলে
কোথাও যেন নাহিরে তার অন্ত।
আকাশ বলে এস এস, কানন বলে বস বস,
সবাই যেন নাম ধরে তার ডাকে।
হেসে যখন কয় সে কথা মূর্চ্ছা যায়রে বনের লতা,
লুটিয়ে ভূঁয়ে চুপ করে সে থাকে।
বনের হরিণ কাছে আসে সাথে সাথে ফিরে পাশে
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায় দেহছায়।
পায়ের কাছে পড়ে লুটি, বড় বড় নয়ন দুটি
তুলে তুলে মুখের পানে চায়।
আপ্না-ভোলা সরল হাসি, ঝরে পড়চে রাশি রাশি,
আপ্নি যেন জান্তে নাহি পায়।
লতা তারে আট্কে রেখে তারি কাছে হাস্তে শেখে,
হাসি যেন কুসুম হয়ে যায়।
গান গায় সে সাঁঝের বেলা মেঘগুলি তাই ভুলে খেলা
নেমে আস্তে চায়রে ধরাপানে,
একে একে সাঁঝের তারা গান শুনে তার অবাক্-পারা
আর সবারে ডেকে ডেকে আনে।