কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/ছবি ও গান/যোগী
যোগী
পশ্চিমে ডুবেছে ইন্দু, সম্মুখে উদার সিন্ধু
শিরোপরি অনন্ত আকাশ,
লম্বমান জটাজূটে, যোগিবর করপুটে।
দেখিছেন সূর্য্যের প্রকাশ।
উলঙ্গ সুদীর্ঘকায়, বিশাল ললাট ভায়
মুখে তাঁর শান্তির বিকাশ,
শূন্যে আঁখি চেয়ে আছে, উদার বুকের কাছে
খেলা করে সমুদ্র-বাতাস।
মহা স্তব্ধ সব ঠাঁই, বিশ্বে আর শব্দ নাই
কেবল সিন্ধুর মহাতান,
যেন সিন্ধু ভক্তিভরে, জলদগম্ভীর স্বরে
তপনের করে স্তবগান।
আজি সমুদ্রের কূলে, নীরবে সমুদ্র দুলে
হৃদয়ের অতল গভীরে,
অনন্ত সে পারাবার, ডুবাইছে চারিধার
ঢেউ লাগে জগতের তীরে।
যোগী যেন চিত্রে লিখা, উঠিছে রবির শিখা
মুখে তারি পড়িছে কিরণ,
পশ্চাতে ব্যাপিয়া দিশি, তামসী তাপসী নিশি
ধ্যান করে মুদিয়া নয়ন।
শিবের জটার ’পরে যথা সুরধুনী ঝরে
তারাচুর্ণ রজতের স্রোতে,
তেমনি কিরণ লুটে সন্ন্যাসীর জটাজূটে
পূরব-আকাশ-সীমা হতে।
বিমল আলোক হেন ব্রহ্মলোক হতে যেন
ঝরে তাঁর ললাটের কাছে,
মর্ত্যের তামসী নিশি, পশ্চাতে যেতেছে মিশি
নীরবে নিস্তব্ধ চেয়ে আছে।
সুদূর সমুদ্র-নীরে, অসীম আঁধার তীরে
একটুকু কনকের রেখা,
কি মহা রহস্যময়, সমুদ্রে অরুণোদয়
আভাসের মত যায় দেখা।
চরাচর ব্যগ্র প্রাণে, পূরবের পথপানে
নেহারিছে সমুদ্র অতল,
দেখ চেয়ে মরি মরি, কিরণ-মৃণালপরি
জ্যোতির্ম্ময় কনক কমল।