কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/ছবি ও গান/পূর্ণিমায়
পূর্ণিমায়
যাই—যাই—ডুবে যাই—
আরো—আরো ডুবে যাই—
বিহবল অবশ অচেতন—
কোন্ খানে, কোন্ দূরে,
নিশীথের কোন্ মাঝে,
কোথা হয়ে যাই নিমগন!
হে ধরণী, পদতলে
দিও না দিও না বাধা
দাও মোরে দাও ছেড়ে দাও—
অনন্ত দিবস নিশি,
এমনি ডুবিতে থাকি
তোমরা সুদূরে চলে চাও —
এ কি রে উদার জ্যোৎস্না,
এ কি রে গভীর নিশি,
দিশে দিশে স্তব্ধতা বিস্তারি।
আঁখি দুটি মুদে গেছে
কোথা আছি কোথা নামি
কিছু যেন বুঝিতে না পারি
দেখি দেখি আরো দেখি
অসীম উদার শূন্যে
আরো দূরে—আরো দূরে যাই-
দেখি আজি এ অনন্তে
আপন হারায়ে ফেলে
আর যেন খুজিয়া না পাই।—
তোমরা চাহিয়া থাক
জোছনা-অমৃত পানে
বিহবল বিলীন তারাগুলি।
অপার দিগন্ত ওগো,
থাক এ মাথার পরে
দুই দিকে দুই পাখা তুলি।
গান নাই কথা নাই
শব্দ নাই স্পর্শ নাই
নাই ঘুম নাই জাগরণ। —
কোথা কিছু নাহি জাগে
সর্ব্বাঙ্গে জোছনা লাগে
সর্ববাঙ্গ পুলকে অচেতন।
অসীমে সুনীলে শূন্যে
বিশ্ব কোথা ভেসে গেছে
তারে যেন দেখা নাহি যায়—
নিশীথের মাঝে শুধু
মহান্ একাকী আমি
অতলেতে ডুবিরে কোথায়।
গাও বিশ্ব গাও তুমি
সুদূর অদৃশ্য হতে
গাও তব নাবিকের গান—
শত লক্ষ যাত্রী লয়ে
কোথায় যেতেছ তুমি
তাই ভাবি মুদিয়া নয়ান।
অনন্ত রজনী শুধু
ডুবে যাই নিভে যাই
মরে যাই অসীম মধুরে,
বিন্দু হতে বিন্দু হয়ে
মিশায়ে মিলায়ে যাই
অনন্তের সুদূর সুদূরে।