কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/সন্ধ্যা-সঙ্গীত/পরিত্যক্ত
পরিত্যক্ত
চলে গেল—তার কিছু নাই কহিবার।
চলে গেল—তার কিছু নাই গাহিবার।
শুধু গাহিতেছে আর শুধু কাঁদিতেছে
দীনহীন হৃদয় আমার,
শুধু বলিতেছে
“চলে গেল, সকলেই চলে গেল গো!”
বুক শুধু ভেঙে গেল দলে' গেল গো!
বসন্ত চলিয়া গেলে বর্ষা কেঁদে কেঁদে বলে-
“ফুল গেল, পার্থী গেল
আমি শুধু রহিলাম, সবি গেল গো।”
দিবস ফুরালে রাতি স্তব্ধ হয়ে রহে,
শুধু কেঁদে কহে—
“দিন গেল, আলো গেল—রবি গেল গো,
কেবল একেলা আমি——সবি গেল গো।”
উত্তর বায়ুর সম প্রাণের বিজনে মম
কে যেন কাঁদিছে শুধু
“চলে গেল চলে গেল
সকলেই চলে গেল গো!”
উৎসব ফুরায়ে গেলে ছিন্ন শুষ্ক মালা
পড়ে থাকে হেথায় হোথায়—
তৈলহীন শিখাহীন ভগ্ন দীপগুলি
ধূলায় লুটায়—
একবার ফিরে কেহ দেখেনাক ভুলি
সবে চলে যায়।
পুরানো মলিন ছিন্ন বসনের মত
মোরে ফেলে গেল,
কাতর নয়নে চেয়ে রহিলাম কত
সাথে না লইল।
তাই প্রাণ গাহে শুধু—কাঁদে শুধু—কহে শুধু—
“মোরে ফেলে গেল—
সকলেই মোরে ফেলে গেল
সকলেই চলে গেল গো”
একবার ফিরে তার চেয়েছিল কি?
বুঝি চেয়েছিল!
একবার ভুলে তারা কেঁদেছিল কি?
বুঝি কেঁদেছিল!
তার পরে? তার পরে!
চলে গেল!
তার পরে? তার পরে!
ফুল গেল, পার্থী গেল, আলো গেল, রবি গেল
সবি গেল—সবি গেল গো—
হৃদয় নিশ্বাস ছাড়ি কাঁদিয়া কহিল
“সকলেই চলে গেল গো!
আমারেই ফেলে গেল গো!”