কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/সন্ধ্যা-সঙ্গীত/আশার নৈরাশ্য



আশার নৈরাশ্য

ওরে আশা, কেন তোর হেন দীন বেশ?
নিরাশারি মত যেন বিষন্ন বদন কেন?
যেন অতি সঙ্গোপনে,
যেন অতি সন্তর্পণে
অতি ভয়ে ভয়ে প্রাণে করিস প্রবেশ!
ফিরিবি কি প্রবেশিবি ভাবিয়া না পাস,
কেন, আশা, কেন, তোর কিসের তরাস?
বহুদিন, আসিস্ নি প্রাণের ভিতর,
তাই কি সঙ্কোচ এত তোর?

আজ আসিয়াছ দিতে যে স্থখ-আশ্বাস,
নিজে তাহা কর না বিশ্বাস।
তাই মুখ ম্লান অতি, তাই হেন মৃদু-গতি,
তাই উঠিতেছে ধীরে দুখের নিশ্বাস।
বসিয়া মবম-স্থলে কহিছ চোখের জলে—
“বুঝি, হেন দিন রহিবে না।
আজ যাবে, আসিবে ত কাল
দুঃখ যাবে ঘুচিবে যাতনা।”
কেন, আশা, মোরে কেন হেন প্রতারণা?



দুঃখক্লেশে আমি কি ডরাই?
আমি কি তাদের চিনি নাই?
তারা সবে আমারি কি নয়?
তবে, আশা, কেন এত ভয়?
তবে কেন বসি মোর পাশ
মোরে, আশা, দিতেছ আশ্বাস?

বল, আশা, বসি মোর চিতে,
“আরো দুঃখ হইবে বহিতে,
হৃদয়ের যে প্রদেশ হয়েছিল ভস্মশেষ
আর যারে হ’ত না সহিতে
আবার নূতন প্রাণ পেয়ে
সেও পুন থাকিবে দহিতে।”
আরো কি সহিতে আছে একে একে মোর কাছে
খুলে বল, করিও না ভয়।
দুঃখ জ্বালা আমারি কি নয়?
তবে কেন হেন ম্লান মুখ?
তবে কেন হেন দীনবেশ?
তবে কেন এত ভয়ে ভয়ে
এ হৃদয়ে করিস্ প্রবেশ?