কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/সন্ধ্যা-সঙ্গীত/তারকার আত্মহত্যা



তারকার আত্মহত্যা


জ্যোতির্ম্ময় তীর হতে আঁধার সাগরে
ঝাঁপায়ে পড়িল এক তারা,
একেবারে উন্মাদের পারা।
চৌদিকে অসংখ্য তারা রহিল চাহিয়া
অবাক্-হইয়া-
এই যে জ্যোতির বিন্দু আছিল তাহাদের মাঝে
মুহুর্ত্তে সে গেল মিশাইয়া।
যে সমুদ্র-তলে
মনোদুঃখে আত্মঘাতী
চির-নির্ব্বাপিত ভাতি-
শত মৃত তারকার
মৃত দেহ রয়েছে শয়ান,
সেথায় সে করেছে পয়ান।

কেন গো কি হয়েছিল তার?
একবার শুধালে না কেহ?
কি লাগি সে তেয়াগিল দেহ?



যদি কেহ শুধাইত
আমি জানি কি যে সে কহিত।
যতদিন বেঁচে ছিল
আমি জানি কি তারে দহিত।

সে কেবল হাসির যন্ত্রণা,
আর কিছু না।
জলন্ত অঙ্গার যেন লুকাতে কালিমা তার
অনিবার হাসিতেই রহে,
যত হাসে ততই সে দহে।

তেমনি-—তেমনি তারে হাসির অনল
দারুণ উজ্জ্বল—
দহিত—দহিত তারে—দহিত কেবল।
জ্যোতির্ম্ময় তারা-পূর্ণ বিজন তেয়াগি
তাই আজ ছুটেছে সে নিতান্ত মনের ক্লেশে
আঁধারের তারাহীন বিজনের লাগি।

তবে গো তোমরা কেন সহস্ৰ সহস্র তারা
উপহাস করি তারে হাসিছ আমন ধারা?
কহিতেছ—“আমাদের কি হয়েছে ক্ষতি?
যেমন আছিল আগে তেমনি রয়েছে জ্যোতি।'



সে কি কভু ভেবেছিল মনে-
(এত গর্ব্ব আছিল কি তার)
আপনারে নিভাইয়া তোমাদের করিবে আঁধার?

গেল, গেল, ডুবে গেল, তারা এক ডুবে গেল,
আঁধার সাগরে——
গভীর নিশীথে,
অতল আকাশে।
হৃদয়, হৃদয় মোর, সাধ কিরে যায় তোর
ঘুমাইতে ওই মৃত তারাটির পাশে,
ওই আঁধার সাগরে,
এই গভীর নিশীথে,
ওই অতল আকাশে?