কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/সন্ধ্যা-সঙ্গীত/সংগ্রাম সঙ্গীত



সংগ্রাম-সঙ্গীত


হৃদয়ের সাথে আজি
করিব রে করিব সংগ্রাম!
এত দিন কিছু না করিনু,
এত দিন বসে রহিলাম,
আজি এই হৃদয়ের সাথে
একবার করিব সংগ্রাম।

বিদ্রোহী এ হৃদয় আমার
জগৎ করিছে ছারখার।
গ্রাসিছে চাঁদের কায়া ফেলিয়া আঁধার ছায়া
সুবিশাল রাহুর আকার।
মেলিয়া আঁধার গ্রাস দিনেরে দিতেছে ত্রাস,
মলিন করিছে মুখ তার।

উষার মুখের হাসি লয়েছে কাড়িয়া,
গভীর বিরামময় সন্ধ্যার প্রাণের মাঝে
দুরন্ত অশান্তি-কীট দিয়াছে ছাড়িয়া।
প্রাণ হতে মুছিতেছে অরুণের রাগ,
দিতেছে প্রাণের মাঝে কলঙ্কের দাগ।

প্রাণের পাখীর গান দিয়াছে থামায়ে,
বেড়াত যে সাধগুলি মেঘের দোলায় দুলি,
তাদের দিয়েছে হায় ভূতলে নামায়ে।
ক্রমশই বিছাইছে অন্ধকার-পাখা,
আঁখি হতে সব কিছু পড়িতেছে ঢাকা।
ফুল ফুটে, আমি আর দেখিতে না পাই,
পার্থী গাহে, মোর কাছে গাহে না সে আর।
দিন হল, আলো হল, তবু দিন নাই,
আমি শুধু নেহারি পাখার অন্ধকার।

মিছা বসে রহিব না আর
চরাচর হারায় আমার।
রাজ্যহারা ভিখারীর সাজে,
দগ্ধ, ধ্বংস ভস্ম’পরি ভ্রমিব কি হাহা করি
জগতের মরুভূমি মাঝে?
আজি তবে হৃদয়ের সাথে
একবার করিব সংগ্রাম।
ফিরে নেব, কেড়ে নেব আমি
এতদিন যাহা হারিলাম।
ফিরে নেব সন্ধ্য আর উষা,
পৃথিবীর শ্যামল যৌবন,
কাননের ফুলময় ভূষা।

ফিরে নেব হারানো সঙ্গীত,
ফিরে নেব মৃতের জীবন,
জগতের ললাট হইতে
আঁধার করিব প্রক্ষালন।
আমি হব গ্রামে বিজয়ী,
হৃদয়ের হবে পরাজয়
জগতের দূর হবে ভয়।
হৃদয়েরে রেখে দেব বেঁধে,
বিরলে মরিব কেঁদে কেঁদে।
দুঃখে বিঁধি কষ্টে বিধি জর্জ্জর করিব হৃদি
বন্দী হয়ে কাটাবে দিবস,
অবশেষে হইবে সে বশ,
জগতে রটিবে মোর যশ।
বিশ্বচরাচরময়  উচ্ছ্বসিবে জয় জয়
উল্লাসে পূরিবে চারিধার,
গাবে রবি, গাবে শশী, গাবে তারা শূন্যে বসি
গাবে বায়ু শত শত বার।
চারিদিকে দিবে হুলুধ্বনি,
বরষিবে কুসুম-আসার,
বেঁধে দেব বিজয়ের মালা
শান্তিময় ললাটে আমার।