কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/সন্ধ্যা-সঙ্গীত/সমাপন
সমাপন
ভুলে গেছি কবে তুমি ছেলেবেলা একদিন
মরমের কাছে এয়েছিলে,
স্নেহময়, ছায়াময়, সন্ধ্যাময় আঁখি মেলি
একবার শুধু চেয়েছিলে।
বুঝি গো সন্ধ্যার কাছে শিখেছে সন্ধ্যার মায়া
ওই আঁখি দুটি,—
চাহিলে হৃদয়পানে মরমেতে পড়ে ছায়া
তারা উঠে ফুটি।
আগে কে জানিত বল কত কি লুকানো ছিল
হৃদয়-নিভূতে,
তোমার নয়ন দিয়া আমার নিজের হিয়া
পাইনু দেখিতে।
কখনো গাওনি তুমি, কেবল নীরবে রহি
শিখায়েছ গান,
স্বপ্নময় শান্তিময় পূরবী রাগিণী-তানে
বাঁধিয়াছ প্রাণ।
আকাশের পানে চাই— সেই সুরে গান গাই
একেলা বসিয়া।
একে একে সুরগুলি, অন্তরে হারায়ে যায়
আঁধারে পশিয়া!
বল দেখি কত দিন আসনি এ শূন্য প্রাণে,
বল দেখি কত দিন চাওনি হৃদয়পানে,—
বল দেখি কত দিন শোননি এ মোর গান,
তবে সখি গান-গাওয়া হল বুঝি অবসান।
বল মোরে বল দেখি, এ আমার গানগুলি
কেন আর ভালো নাহি লাগে,
প্রাণের রাগিণী শুনি নয়নে জাগে না আভা
কেন সখি কিসের বিরাগে?
যে রাগ শিখায়েছিলে সে কি আমি গেছি ভুলে?
তার সাথে মিলিছে না সুর?
তাই কি আসন প্রাণে, তাই কি শোননা গান,
তাই সখি, রয়েছ কি দূর?
ভালো সখি, আবার শিখাও,—
আরবার মুখপানে চাও,
একবার ফেল অশ্রুজল
আঁখিপানে দুটি আঁখি তুলি;
তা হলে পুরানো সুর আবার পড়িবে মনে,
আর কভু যাইব না ভুলি।
সেই পুরাতন চোখে মাঝে মাঝে চেয়ো সখি
উজলিয়া স্মৃতির মন্দির,
এই পুরাতন প্রাণে মাঝে মাঝে এসো সখি
শূন্য আছে প্রাণের কুটীর।
নহিলে আঁধার মেঘরাশি
হৃদয়ের আলোক নিভাবে,
একে একে ভুলে যাব সুর,
গান গাওয়া সাঙ্গ হয়ে যাবে।