খুন না চুরি?/অষ্টম পরিচ্ছেদ
অষ্টম পরিচ্ছেদ।
পূর্ব্বোক্ত পরিচ্ছেদে বর্ণিত কার্য্যগুলি শেষ করিতে সন্ধ্যা হইয়া গেল। আমি নির্জ্জনে বসিয়া এই অদ্ভুত রহস্যের বিষয় চিন্তা করিতে লাগিলাম। ভাবিলাম, তবে কি সত্য সত্যই সন্ন্যাসীগণ রূপসীকে হত্যা করিয়াছে? কামিনী যখন ঐ সন্ন্যাসীকে সনাক্ত করিল, যে ভাবে কামিনী তাহার কথা ব্যক্ত করিল, তাহাতে তাহার কথা মিথ্যা বলা যায় না। অথচ সন্ন্যাসী আমাকে যাহা বলিলেন, তাহাতে তাঁহার কথাতেও অবিশ্বাস হয় না। তবে একজন সাধু সচ্চরিত্র সদাশয় ব্যক্তি, অপরা বেশ্যাতপস্বিনী। কামিনীর কথা মিথ্যা হইতে পারে, কিন্তু সে যে পুলিসের লোকের নিকট এমন সাজান কথা বলিয়া পরিত্রাণ পাইবে, তাহা বোধ হয় না। সন্ন্যাসী মিথ্যা বলিবে কেন? সন্ন্যাসীর মৃত্যুরই বা ভয় কি? যাঁহার সংসার-বন্ধন শিথিল হইয়া গিয়াছে, এ জগতে যাঁহার আপনার বলিতে কেহ নাই, তিনি সামান্য প্রাণের জন্য, তুচ্ছ জীবনের জন্য পারত্রিক সুখ নষ্ট করিবেন কেন? সন্ন্যাসী নিশ্চয়ই নির্দ্দোষী।
কিন্তু কেমন করিয়া তাঁহাকে নির্দ্দোষী বলিয়া প্রমাণ করিব। শেষে প্রমাণাভাবে কি একজন নিরপরাধ ব্রাহ্মণ-সন্তানকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলাইয়া দিব। কামিনী নিশ্চয়ই মিথ্যা বলিতেছে। সে যখন শোভন সিংএর রক্ষিতা বেশ্যা ছিল, সে যখন এক-সময়ে শোভন সিংএর পয়সা খাইয়াছে, তখন সে কখনও শোভন সিংএর অনিষ্ট করিতে পারে না। রূপসী শোভনের কন্যা—বাল্যকালে সে যে কামিনীর বাড়ীতে যাইত, তাহা স্পষ্টই জানা যায়। সুতরাং কামিনী যে রূপসীকে ভালবাসিবে, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। সে যে রূপসীকে চুরি করিবে, বিশেষতঃ একজন সামান্য সন্ন্যাসীর কথায় রূপসীকে হত্যা করিবার জন্য তাহার হস্তে অর্পন করিবে, ইহা সম্পূর্ণ অসম্ভব। রমণীর প্রতিহিংসা-বৃত্তি ভয়ানক প্রবল। রমণী যদি কাহারও উপর রাগান্বিত হয়, তাহা হইলে সে যে কোন রূপেই হউক, যতদিন পরেই হউক, তাহার উপর প্রতিশোধ লইবেই লইবে। কিন্তু কামিনীর কোন কারণ ঘটে নাই। লাল সিংএর মুখে শুনিলাম, কামিনী এখনও শোভনের নিকট হইতে কিছু কিছু পাইয়া থাকে।
এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে হঠাৎ একটা উপায় মনে পড়িল। লাল সিং তখনও থানায় ছিলেন। আমি তাঁহাকে নিকটে ডাকিলাম। তিনি আসিলে জিজ্ঞাসা করিলাম, শোভনের ভগ্নী ছাড়া আর কোন আত্মীয় আছে কিনা? কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া লাল সিং উত্তর করিলেন,—“আজ্ঞে না—শোভনের দুইটী ভগ্নী ছিল। একটা ছোট বেলায় মারা পড়ে, অপরটী এখনও বিদ্যমান।”
আ। শোভনের এই ভগ্নীর স্বভাব কেমন?
লা। অতি কুৎসিত। তাঁহার মত খল আর নাই বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। সেই ভগ্নীই যত অনিষ্টের মূল। শোভনের ইচ্ছা থাকিলেও কেবল ঐ ভগ্নীর কথায় সে রূপসীর সহিত আমার বিবাহ দিতে নারাজ ছিলেন।
আ। ভগ্নীর পুত্রাদি আছে?
লা। একটী কন্যা ছাড়া আর কোন সন্তান হয় নাই।
আ। বাড়ী কোথায়?
লা। সিয়ালদহের নিকট, আমি সে বাড়ী জানি।
আ। শোভনের ভগ্নী ত এখন তাঁহারই বাড়ীতে আছেন। শুনিয়াছি, রূপসীর বিবাহ উপলক্ষে তিনি ভ্রাতার বাড়ীতে গিয়াছিলেন, সম্ভবতঃ এখনও ফিরিয়া আইসেন নাই।
লাল সিং আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া বলিলেন,—”কে বলিল; শোভনের ভগ্নী তাঁহারই বাড়ীতে আছে? আমার বিশ্বাস, তিনি বিবাহের দিন প্রাতেই নিজ বাড়ীতে গিয়াছেন।”
আমিও বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম,—“সে কি! রাত্রে ভাইঝির বিবাহ—আর প্রাতে তিনি নিজ বাড়ীতে ফিরিয়া গেলেন? এ কি নূতন রহস্যের কথা বলিতেছেন?”
লা। আজ্ঞে—রহস্যই বটে। তিনি রূপসীর বিবাহ দেখিতে আসিলেন—অথচ বিবাহের দিন প্রাতেই নিজ বাড়ীতে ফিরিয়া গেলেন কেন, তাহা বুঝিতে পারিলাম না।
আ। শোভন সিংএর মুখে ত সে কথা শুনিলাম না। তাঁহার ভগ্নী যে সেইদিন প্রাতেই নিজ বাড়ীতে গিয়াছেন, এ কথা ত তিনি বলিলেন না। বরং এমন কথা বলিয়াছিলেন, যাহাতে আমি বুঝিয়াছিলাম যে, তিনি তখনও সেই বাড়ীতে বাস করিতেছেন, এমন কি, তিনি তাঁহার ভগ্নীপতিকে পর্য্যন্ত দেখাইয়াছিলেন।
লা। তাঁহার ভগ্নীপতি এখনও আছেন বটে কিন্তু ভগ্নী নাই।
আ। কেন তিনি নিজ বাড়ীতে গিয়াছেন, বলিতে পারেন?
লা। আজ্ঞে না। সে কথা বলিতে পারিলাম না।
কিছুক্ষণ চিন্তার পর আমি লাল সিংকে বলিলাম—“আপনাকে এখন একটা কাজ করিতে হইবে। আমি একবার শোভনের ভগ্নীর বাড়ী যাইতে চাই। আপনাকে দূর হইতে বাড়ীধানি দেখাইয়আ দিতে হইবে।”
লাল সিং সম্মত হইলেন। আমি পুনরায় ছদ্মবেশ পরিধান করিয়া লাল সিংএর সঙ্গে সঙ্গে সিয়ালদহ অভিমুখে গমন করিলাম। রাত্রি আটটার পর লাল সিং একখানি বাড়ী দেখাইয়া দিলেন। আমি তাঁহাকে থানায় ফিরিয়া যাইতে আদেশ করিয়া অতি ধীরে ধীরে সেই বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করলিলাম।
বাড়ীখানি ক্ষুদ্র হইলেও দ্বিতল। বহির্ব্বাটী বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সদর দরজা পার হইয়া উভয়দিকে দুইটী ঘর দেখিতে পাইলাম। কিন্ত দুইখানি ঘরের দরজাতেই চাবি দেওয়া।
সদর দরজা অতিক্রম করিয়া কিছুদূর গমন করিরার পর আর একটী দরজা দেখিতে পাইলাম। কিন্তু সেটীও ভিতর দিক হইতে আবদ্ধ। ভিতরে প্রবেশ করিতে না পারিয়া আমি সেই দরজার নিকটে দাঁড়াইয়া কড়া নাড়িতে লাগিলাম।
অনেকক্ষণ কেহ কোন সাড়া দিল না, আমি প্রায় অর্দ্ধঘণ্টা ধরিয়া সেই কড়া নাড়িতে লাগিলাম। অবশেষে বিরক্ত হইয়া চীৎকার করিলাম। কিছুক্ষণ এই প্রকার চীৎকার করিবার পর ভিতর হইতে একজন স্ত্রীলোক উত্তর দিল, “কে গো, দরজা ষে ভেঙ্গে গেল।”
আমার বড় রাগ হইল। আমি বলিলাম, “সে কি আমার দোষ—এক ঘণ্টা ডাকাডাকি করেও সাড়া পাই নাই কেন?”
আমার কথা শেষ হইতে না হইতে দরজাটী ভিতর হইতে খুলিয়া গেল। একটা বুড়ী দাসী একটা আলোক হস্তে লইয়া আমার দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি কি চান?”
কোন প্রকার গৌরচন্দ্রিকা না করিয়া আমি একেবারে বলিয়া উঠিলাম, “রূপসীকে শীঘ্র আমার কাছে এনে দাও। এখানে রাখা ঠিক নয়, পুলিসের লোকে জান্তে পার্লে বাড়ী শুদ্ধ সকলকে এখনই বেঁধে নিয়ে যাবে। গুনেছি,তিনজন সন্ন্যাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। যতদিন না বিচার হয়, ততদিন রূপসীকে সাবধানে রাখ্তে হবে।”
আমার কথা শুনিয়া দাসী আমার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল, কোন উত্তর করিল না। রূপসী আছে, কি না, সে বিষয়েও কোন কথা বলিল না। তাহার মুখের ভাব দেখিয়া বোধ হইল, রূপসী সেখানেই আছে, কিন্তু সে কথা সাহস করিয়া বলিতে পারিতেছে না। আমি নিশ্চয় জানিতাম না যে, রূপসী সেখানেই আছে, আন্দাজ করিরাছিলাম মাত্র। বিশেষতঃ যখন লাল সিংএর মুখে শুনিলাম যে, বিবাহের দিন প্রাতে শোভন সিংএর ভগ্নী তাহার বাড়ীতে প্রস্থান করিয়াছেন তখন তিনি যে রূপসীকে লইয়াই আসিয়াছিলেন, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ ছিল না। সেই জন্যই আমি রূপসী সেখানে আছে কি না, জিজ্ঞাসা না করিয়া তাহাকে আমার নিকট আনিয়া দিবার কথা বলিলম।
দাসীর মনোগত অভিপ্রায় বুঝিতে পারিলাম, সে যে আমার উপর অবিশ্বাস করিতেছে, তাহাও জানিতে পারিলাম। আমি যখন তাহার সম্পূর্ণ অপরিচিত, তখন তাহার এরূপ অবিশ্বাস জন্মিতে পারে বিবেচনা করিয়া, পূর্ব্ব হইতেই প্রস্তুত ছিলাম। তখনই পকেট হইতে একখানি পত্র বাহির করিয়া বলিলাম, “আমার কথায় বিশ্বাস না হয়, এই পত্র লও। শোভন সিং আমাকে এই পত্র দিয়াছেন। যাও, আর বিলম্ব করিও না। এখন আমাদের পদে পদে বিপদ ঘটিতে পারে।”
এই বলিয়া পত্রখানি দাসীর হস্তে প্রদান করিলাম। দাসী উহা গ্রহণ করিয়া বলিল, “না মহাশয়, আপনাকে আমাদের অবিশ্বাস নাই। তবে কি, এ কাজ খুব গোপনে করাই ভাল। আমি পূর্ব্বে আপনাকে আর কখনও দেখি নাই। সেই জন্যই চিনিতে পারিতেছি না। একজন পরিচিত লোক পাঠান শোভনের উচ্চিত ছিল।”
আমি ঈষৎ হাসিয়া বলিলাম, “আজ রাত্রেই রূপসীকে কোন্ গোপনীয় স্থানে সরাইয়া ফেলিতে হইবে। এত তাড়াতাড়ি পরিচিত বিশ্বাসী লোক কোথায় পাইবেন? আমি যদিও তোমাদের পরিচিত নই বটে কিন্তু শোভন সিং আমাকে বাল্যকাল হইতেই চেনে। আমার মত বিশ্বাসী লোক এত শীঘ্র পাইবেন না বলিয়াই কোন পরিচিত লোককে পাঠাইতে পারেন নাই। সে যাহা হউক, তুমি পত্রখানি ভিতরে লইয়া যাও, ও শোভন সিংএর ভগ্মির হস্তে প্রদান কর। তাঁহার পাঠ হইলে তিনি যেরূপ হুকুম দিবেন, সেইমত কার্য্য করিব।”
দাসী হাসিয়া বলিল, “পাঠ করিবেন কেমন করিয়া—তিনি লেখাপড়া জানেন না।”
আ। তা আমি জানি। কিন্তু শোভন বলিলেন,—তাঁহার ভগ্নীর চাকর পড়াশুনা জানে এবং সেই তাঁহার ভগ্নীপতির অবর্ত্তমানে এ বাড়ীর অনেক চিঠি পত্র পড়িয়া থাকে।
দা। সে চাকরটা ত তাঁহাদের বাড়ীতেই আছে।
আমি বিষম ফাঁপরে পড়িলাম। মনে হইল, এইবার বুঝি বা ধরা পড়িলাম। কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছায় সে যাত্রা পরিত্রাণ পাইলাম। তখনই আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া বলিলাম, “সে কি! শোভন সিং যে আমার সাক্ষাতে তাহাকে এখানে আসিতে বলিলেন। সেকি এখনও সেখান হইতে ফিরিয়া আইসে নাই?”
দা। কই, এখনও ত আসে নাই।
আ। শীঘ্রই আসিবে বটে কিন্তু আমি ত ততক্ষণ বিলম্ব করিতে পারিব না। কে জানে,হয় ত ইহার মধ্যেই পুলিসের লোক এখানে আসিতে পারে।
দা। এখানে আসিলে কিছু করিতে পারিবে না, তবে যদি—
দাসী আর কোন কথা বলিতে সাহস করিল না দেখিয়া আমি বলিলাম, “তবে যদি কি? আমার নিকট কোন কথা বলিতে ভয় করিও না। আমার দ্বারা উপকার ভিন্ন কোন প্রকার অপকারের সন্তাবনা নাই।”
দাসী বলিল, “আপনাকে কোন অবিশ্বাস নাই, আপনাকে সকল কথাই বলিতে পারি, কিন্ত কি জানি, যদি আর কোন লোক আমাদের এ সকল কথা শোনে, সেই জন্যই সাবধান হইতেছি।”
আ। এখানে আপাততঃ আর কোন লোক নাই, তুমি স্বচ্ছন্দে সকল কথাই বলিতে পার। এখন কি বলিতেছিলে বল?
দা। বলছিলাম, যদি রূপসী কোন প্রকার চীৎকার করিয়া পাঁচজনকে জানাইয়া দেয়, তাহা হইলেই সর্ব্বনাশ! মেয়েটা বড় দুষ্ঠু।
আ। কেন?
দা। সে না কি সেই বুড়োকে বিবাহ কর্তে পাগল হয়েছে।
আ। বুড়ো কে?
দ। কেন—যার সঙ্গে তার বিয়ের কথা।
আ। সে বুড়ো নাকি? আমি ত একবার মাত্র তাকে দেখেছিলাম।
দা। দেখ্তে বুড়ো না হ’লেও তার বয়স হয়েছে। তাহার প্রথম পক্ষের ছেলেটী থাকলে এতদিন দশ বছরের হ’ত। যার ছেলের বয়স দশ বছর, তার আবার বিয়ে করা কেন?
আ। তাঁহার ছেলেটী এখন কোথার?
দা। মারা গেছে।
আ। রূপসীর তবে এ বিবাহে অমত নাই?
দা। না—এত বয়স হ’লো, এখনও বিয়ে হয় না—বাপের চেষ্টাও নাই। কাজেই এখন যার তার সঙ্গে বিয়ে হ’লেই হ’ল।
আন্তরিক সন্তুষ্ট হইয়া আমি বলিলাম, “সে কথা পরে হইবে, এখন রূপসীকে নিয়ে এস। আমি তাকে এখান থেকে নিয়ে যাব। আজই কোন দূরদেশে রওনা না হইলে শোভনের রক্ষা নাই। শুনিয়াছি, সে ভাবী জামাইয়ের নিকট হইতে আট শত টাকা আদায় করিয়াছে।”
দাসী আর দ্বিরুক্তি না করিয়া বাড়ীর ভিতর গেল এবং কিছুক্ষণ পরে রূপসীকে লইয়া পুনরায় সেখানে ফিরিয়া আসিল।
পুর্ব্বে আমি রূপসীকে দেখি নাই। মনে করিয়াছিলাম, সে বালিকা মাত্র। কিন্তু এখন যাহা দেখিলাম, তাহাতে স্তম্ভিত হইলাম। রূপসীর বয়স প্রায় পনের বৎসর বলিয়া বোধ হইল। তাহার শরীরে যৌবনের সমস্ত চিহ্নগুলি পরিস্ফুট হইয়াছে। সে আমার মুখের দিকে সাহস করিয়া চাহিতে পারিল না।
রূপসী সুন্দরী ও যুবতী। তাহার জন্য লাল সিং যে অনায়াসে আটশত টাকা দিবে তাহাতে আর আশ্চর্য্য কি?
দাসীর সহিত রূপসীকে দেখিয়া আমি বলিলাম, “মা! তোমার বাপের ইচ্ছা নয় যে, তুমি আর এখানে থাক। তোমাকে এখনই আমার সঙ্গে যাইতে হইবে।”
ভিতর হইতে আর একজন রমণী উত্তর করিলেন, “দাদার যেমন বুদ্ধি। আমাদের এখানে থাকিলে কোন প্রকার গোলযোগের সম্ভাবনা নাই। কেন তিনি রূপসীকে এখান হইতে সরাইতেছেন বলিতে পারি না। যাহাই হউক, দাদার কথামত রূপসীকে আপনার সঙ্গে পাঠাইলাম। দেখিবেন, যেন কোন প্রকার বিপদে পড়িতে না হয়।”
আমিও উদ্দেশে উত্তর করিলাম, “আপনি সে ভয় করিবেন না। বিশেষ না জানিয়া শুনিয়া শোভন সিং আমার উপর এ কার্য্যের ভার দেন নাই, বরং রূপসী এখানে থাকিলে আপনাদের বিপদের সম্ভাবনা হইতে পারে, আমার সহিত যাইলে সেরূপ কোন ভয়ের কারণ নাই। আপনি পত্রধানি রাখিয়া দিন। উহাতে আমার নাম ধাম সমস্তই আছে। প্রয়োজন হইলে আমায় সংবাদ দিতে পারিবেন। তবে এই পর্য্যন্ত জানিয়া রাখুন যে, আমি আজই রাত্রি সাড়ে দশটার সময় কলিকাতা ত্যাগ করিব।”
রাত্রি নয়টা বাজিয়া গেল। আমি আর বিলম্ব করিতে পারিলাম না। রূপসীকে লইয়া একখানি গাড়ীতে উঠিলাম এবং আধ ঘণ্টার মধ্যেই থানায় ফিরিয়া আসিলাম।