খৃষ্ট/পূজালয়ের অন্তরে ও বাহিরে
পূজালয়ের অন্তরে ও বাহিরে
গির্জাঘরের ভিতরটি স্নিগ্ধ,
সেখানে বিরাজ করে স্তব্ধতা,
রঙিন কাচের ভিতর দিয়ে সেখানে প্রবাহিত রমণীয় আলো।
এইখানে আমাদের প্রভুকে দেখি তাঁর ন্যায়াসনে,
মুখশ্রীতে বিষাদ-দুঃখ,
বিচারকের বিরাট মহিমায় তিনি মুকুটিত।
তিনি যেন বলছেন,
“তোমরা যারা চলে যাচ্ছ,
তোমাদের কাছে এ কি কিছুই নয়?
তাকাও দেখি, বলল দেখি,
কোনো দুঃখ কি আছে আমার দুঃখের তুল্য?”
পুণ্য দীক্ষা অনুষ্ঠান শেষ হল।
মনে জাগল তাঁর প্রেমের গৌরব, তাঁর আশ্বাসবাণী—
“এসো আমার কাছে, যারা কর্মক্লিষ্ট,
এসো যারা ভারাক্রান্ত,
আমি তোমাদের বিরাম দেব।”
এই বাক্যে শান্তি এবং আনন্দ আনল আমাদের মনে,
ক্ষণকালের জন্য সঙ্গ পেলুম তাঁর স্বর্গলোকে।
শুনলুম, “উর্ধ্বে তোলো তোমার হৃদয়কে।”
উত্তর দিলুম, “প্রভু, আমরা হৃদয় তুলে ধরেছি তোমারই দিকে।”
চলে এলুম বাইরে।
গির্জাঘর থেকে ফেরবার পথে
দেখা গেল সেই দীর্ঘ জনশ্রেণী।
তারা দেহকে পীড়ন ক’রে চলেছে
ক্লান্ত আক্রান্ত গুরুভারে,
তাদের জন্যে নেই স্বর্গ, নেই হৃদয়কে উর্ধ্বে উদ্বাহন,
ঈশ্বরের সুন্দর সৃষ্টিতে নেই তাদের রোমাঞ্চিত আনন্দ,
নেই তাদের শান্তি, নেই বিশ্রাম।
কেবল আরামহীন পরিশ্রম দিনের পর দিন,
ক্ষুধিত তৃষার্ত তারা, ছিন্ন বসন, জীর্ণ আবাস,
পরিপোষণহীন দেহ।
এ দিকে তাঁর বিষন্ন দুঃখাভিভূত মুখশ্রী,
উদার বিচারের মহিমায় তিনি মুকুটিত।
গম্ভীর অভিযোগে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন—
“আমার এই ভাইদের মধ্যে তুচ্ছতমের প্রতি যে নির্মমতা
সে আমারই প্রতি।”
২২ এপ্রিল ১৯৪০ মংপু। দার্জিলিং