খোঁজে/ভুল ভাঙ্গা
ভুল ভাঙ্গা
মনে পড়ে সেই স্বপন সুদূর
জীবনের উপকূলে,
ভিড়েছিল তার তরী খানি কবে
লহরে লহরে দুলে।
আনমনে আমি ছিনু গৃহকাযে
চাহি নি তাহার পানে,
তরী ভরা দান মিছে হল সে যে
ফিরে গেল অভিমানে।
তাহারি ব্যথায় জীবনের পথে
ঊষার সোনালী রেখা,
এঁকেছিল সেই বিমল প্রভাতে
কালো কাজলের লেখা
তার পর এক উজল দিবসে
প্রখর রবির আলো,
ফুটিল তখন দুয়ারের ফাঁকে
আঁখি তারা দুটী কালো;
ভুলেছিনু আমি ধূলির খেলায়
আসন দিই নি তারে,
দুটী হাত ভরা হীরামণি নিয়ে
ফিরে গেল বারে বারে।
সেদিনো আকাশে গরজিল মেঘ
আঁধারে ভরিল দিশি;
দেখি নি চাহিয়া তারি আঁখি জল
বাদলে গিয়াছে মিশি।
ফিরে ফিরে যায় কতবার সে যে
আমারি আঙ্গিনা দিয়া,
আমি বসে থাকি সারাদিন মোর
মায়ার খেলাটী নিয়া।
ভুল শুধু ভুল বুঝি নি কো হায়
আমারে চাহে না কেহ,
অবহেলা করি যারে আমি শুধু
সেই করে মোরে স্নেহ।
বেলা শেষে এক দেখিনু চাহিয়া
দূর আকাশের গায়,
শোণিতে রাঙ্গানো বেদনা তাহার
মেঘে মেঘে মুরছায়।
পড়ে তরুশিরে তাহারি আভাস
নদী জলে কাঁপে ধীরে,
সুগভীর স্নেহে করে পরশন
আমারি কুটীরটিরে,
চাহিয়া চাহিয়া দেখিনু অদূরে
লতায় পাতায় ঘাসে,
রতন মাণিক ঢেলে দিয়ে গেছে
আমারি পথের পাশে।
কতদিন গেল আর তো তাহার
শুনি নি চরণ ধ্বনি
জানে না কি আজ তাহারি আশায়
আমি যে দিবস গণি?
প্রাণে জাগে আজ সে দিনের সেই
না শোনা মধুর বাণী,
ভেঙ্গে যায় ভুল টুটে যায় ধীরে
মায়ার বাঁধন খানি।
আজি এ নিবিড় ঘন বরষায়
ভরা ভাদরের সাঁঝে,
ওকি ওকি! বুঝি সুদূরের পথে
তাহারি বাঁশরী বাজে!
এস এস ওগো দয়িত আমার
ভাঙা কুটীরের দ্বারে,
বড় সাধ আজ ও দুটী চরণ
পূজিব ব্যথার ভারে।