সন্ধ্যাতারা

বড় আপনার
এ ধরা তোমার— তাই বুঝি বার বার
প্রাণের ও আলোটুকু, বক্ষমাঝে তার
নিঃশেষে দিতেছ ঢালি, ওগো সন্ধ্যাতারা!

ধরার ভবনে
জ্বেলেছিলে সন্ধ্যাদীপ কোন্ সে লগনে—
পড়ে তাহাদেরি মুখ একে একে মনে,
তোমারে আপন করি পেয়েছিল যারা।

স্নেহের উচ্ছাসে
ছাপিয়া পরাণ তব, কচি বাহু-পাশে
বাঁধিত তোমারে যারা— আকাশে বাতাসে
ভাসে যেন তাহাদেরি অঙ্গের সৌরভ!

চোখে ছিল জল
বুকে ছিল ব্যথারাশি, অমৃত, গরল,
পেয়েছিল সমভাবে তবু সে সকল
রেখেছিল পূর্ণ করি কি এক গৌরব!

পুষ্পিত যৌবনে
যারে বেসেছিলে ভাল— ধরার জীবনে
কোথা সে আরাধ্য তব? যে দু’টি চরণে
ঢেলেছিলে পরাণের সবটুকু মধু৷

আজি আত্মহারা
আপনার চারিপাশে রচি’ স্বপ্ন-কারা,
কোথা সেই খেলাঘর— কোথা আজ তারা,
ছিলে তুমি যাহাদের কল্যাণীয়া বঁধু?

কোজাগরী রাতে
এঁকেছিলে আলিপনা সখীদের সাথে,
গেঁথেছিলে মালাখানি বসন্ত-প্রভাতে
পরা’তে প্রিয়ের কণ্ঠে ফুলদল দিয়া।

জানি না সে ক’বে
প্রাণভরা আলো নিয়ে, পুণ্যের গৌরবে,
পথিকে দেখা’তে পথ, আকাশে নীরবে
ধ্রুবতারা রূপে তুমি উঠিলে ফুটিয়া।

আগুনের লেখা
হয়ে আছে প্রাণে তব সেই স্মৃতি-রেখা—
খুঁজিছ ধরার পানে, কোথা পাবে দেখা—
তাহারা কি মনে আজো রেখেছে তোমারে?

একি আকর্ষণ?
রচিছে মিলন-সেতু তোমার কিরণ,
এক হয়ে গেছে আজ গগন, ভুবন,
উজল জীবন-স্বপ্ন জীবনের পারে।