স্বাস্থ্য।

 জ্ঞান ধর্ম্মের উন্নতি সহকারে প্রকৃত মনুষ্যত্বলাভ করাই যে মনুষ্য জীবনের উদ্দেশ্য, তাহা তোমরা বুঝিয়াছ। যেমন আহার ব্যায়াম প্রভৃতি দ্বারা শারীরিক স্বাস্থ্য লাভ হয়, সেইরূপ জ্ঞান ধর্ম্মে মানসিক, আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যবিকাশিত হয়। বিদ্যানুশীলন আমাদের জ্ঞান-ধর্ম্ম লাভের বিশেষ সহায়তা করে।

 যদিও আমাদের দেশে অধুনা ধনোপার্জ্জনের জন্যই সাধারণত বিদ্যার আদর—মাতাপিতা বালকদিগকে অতি শিশুকাল হইতে বলিয়া থাকেন—“লেখা পড়া করে যেই, গাড়ী ঘোড় চড়ে সেই”। কিন্তু বস্তুতঃ কেবল ধনোপার্জ্জন নহে, বিদ্যা শিক্ষা দ্বারা জীবনের গুরুতর উদ্দেশ্য সকলও সাধিত হয়। বিদ্যায় আমাদের অজ্ঞানতার লাঘব হয়, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য সকলও বহুপরিমাণে আমরা বুঝিতে সমর্থ হই, এবং আমাদের কর্ত্তব্যপথও আমাদের নিকট উদ্ঘাটিত হয়; সুতরাং সকল বালকেরই বিদ্যাশিক্ষার প্রতি বিশেষ মনোযোগী হওয়া কর্ত্তব্য। কিন্তু লেখা পড়া করিতে গিয়া শরীরের স্বাস্থ্যের প্রতি তোমাদের যেন আস্থার অভাব না হয়। যেমন খাদ্যাদি পরিপাকের যন্ত্র পাকস্থলী, সেইরূপ বিদ্যা পরিপাকের অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তি চালনার যন্ত্র মস্তিষ্ক। স্বাস্থ্যের হানি হইলে মস্তিষ্ক হীনবল হইয়া পড়ে, সুতরাং সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যা শিক্ষারও হানি হয়। যদিই বা স্বাস্থ্যের নিয়মভঙ্গ করিয়াহাতে হাতে ফল প্রাপ্ত না হওয়া যায় কিন্তু ভবিষ্যতে তাহার ফলভোগ অনিবার্য্য। এই কারণে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ভাল ভাল ছাত্রকে দুর্ব্বল ও রুগ্নকায় দেখা যায়। কিন্তু ধন, মান, বিদ্যা পারিবারিক সুখ সত্বেও ভগ্নস্বাস্থ্য ব্যক্তির সুখ নাই, আর একবার স্বাস্থ্যভঙ্গ হইলে পূর্ব্ববৎ তাহা ফিরিয়া পাওয়াও সহজ নহে।

 পূর্ব্বতন ঋষিগণ স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম উত্তমরূপে জানিতেন এবং তাহা পালন করিয়া চলিতেন। সেই জন্যই তাঁহারা দীর্ঘায়ু লাভ করিয়া জ্ঞানধর্ম্মে উন্নত হইয়া জনসাধারণের উপকারে জীবন যাপন করিতে পারিতেন।

 কৃতবিদ্য বাঙ্গালীদিগের মধ্যেও যে অধুনা মঙ্গলকার্য্যে উদ্যম ও উৎসাহের অভাব দেখা যায় শারীরিক পূর্ণ স্বাস্থ্যের অভাব তাহার একটি প্রধান কারণ। শরীরের সহিত মনের এমনি ঘনিষ্ট সম্বন্ধ যে শরীরে স্ফূর্ত্তি না থাকিলে মানসিক শক্তিরও সম্যক স্ফূর্ত্তি হইতে পারে না। এই সকল কারণে বিদ্যা শিক্ষার ন্যায় স্বাস্থ্যরক্ষার প্রতিও বাল্যকাল হইতেই সকলের বিশেষ মনোযোগী হওয়া কর্ত্তব্য। মানসিক স্বাস্থ্য কিরূপে রক্ষা হয় অর্থাৎ মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য কিরূপে সাধিত হয় তাহা পুস্তকের আরম্ভেই বলা হইয়াছে— এইবার শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষা সম্বন্ধে তোমাদিগকে কিছু বলিব।

 বিশুদ্ধ জল বাতাস, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টিকর আহার ও ব্যায়াম স্বাস্থ্যের পক্ষে বিশেষ অনুকূল।