৩০৩

আমি  নিশি নিশি কত রচিব শয়ন  আকুলনয়ন রে।
কত নিতি নিতি বনে করিব যতনে  কুসুমচয়ন রে।
কত  শারদ যামিনী হইবে বিফল,  বসন্ত যাবে চলিয়া।
কত  উদিবে তপন, আশায় স্বপন  প্রভাতে যাইবে ছলিয়া।
এই  যৌবন কত রাখিব বাঁধিয়া,  মরিব কঁদিয়া রে।
সেই  চরণ পাইলে মরণ মাগিব  সাধিয়া সাধিয়া রে।
আমি  কার পথ চাহি এ জনম বাহি,  কার দরশন যাচি রে।
যেন  আসিবে বলিয়া কে গেছে চলিয়া,  তাই আমি বসে আছি রে!
তাই  মালাটি গাঁথিয়া পরেছি মাথায়,  নীলবাসে তনু ঢাকিয়া।
তাই  বিজন আলয়ে প্রদীপ জ্বালায়ে  একেলা রয়েছি জাগিয়া।

ওগো  তাই কত নিশি চাঁদ ওঠে হাসি,  তাই কেঁদে যায় প্রভাতে।
ওগো  তাই ফুলবনে মধুসমীরণে  ফুটে ফুল কত শোভাতে।
ওই  বাঁশিস্বর তার আসে বারবার,  সেই শুধু কেন আসে না।
এই  হৃদয়-আসন শূন্য পড়ে থাকে,  কেঁদে মরে শুধু বাসনা।
মিছে  পরশিয়া কায় বায়ু বহে যায়,  বহে যমুনার লহরী।
কেন  কুহু কুহু পিক কুহরিয়া ওঠে,  যামিনী যে ওঠে শিহরি।
ওগো,  যদি নিশিশেষে আসে হেসে হেসে  মোর হাসি আর রবে কি
এই  জাগরণে-ক্ষীণ বদনমলিন  আমারে হেরিয়া কবে কী।
আমি  সারা রজনীর গাঁথা ফুলমালা  প্রভাতে চরণে ঝরিব—
ওগো,  আছে সুশীতল যমুনার জল,  দেখে তারে আমি মরিব।