গোপীচন্দ্রের গান (প্রথম খণ্ড)/পণ্ডিত খণ্ড

পণ্ডিত খণ্ড

মএনার পরিক্‌খা গ্যাল উত্তরিয়া।
এখন পণ্ডিত খণ্ড গান পড়িল আসিয়া॥
আ’জকার মনে জাইছি মা ঠাকুরবাড়ি নাগিয়া।
কা’ল প্রাতকে সন্ন্যাস হব গননা শুনিয়া॥
জ্যানকালে মহারাজা একথা বলিল।
রদুনা পদুনা রানি কন্নে শুনিল॥[১]
করুনা করিয়া দোন বইনে কান্দিতে নাগিল॥
রদুনা বোলে শুন দিদি পদুনা নাইওর দিদি।
আর গৃহে না রয় দিদি সোআমি নিজপতি॥[২]
কি বুদ্ধি করি দিদি কিবা চরিত্তর।১০
কড়াটিকের বুদ্ধি নাই শরিলের ভিতব॥
একনা বুদ্ধি আছে দিদি শরিলের ভিতর।

পাশ্‌শ টাকা দেই বান্দির আঞ্চলে বান্দিয়া।
খোসা দিয়া আসুক ঠাকুরের মহলতে জাএয়া॥
এই কিনা বুদ্ধি নিলে জুকতি করিয়া।১৫
বান্দিক ডাকায় রদুনা রানি কান্দিয়া কাটিয়া॥[৩]
পাশ্‌শ টাকা ধরি জাও পণ্ডিতের মহলক নাগিয়া॥
পাশ্‌শ টাকা[৪] খোসা দ্যাও পণ্ডিতের বরাবর।
সত্য কথা জ্যান পণ্ডিত রাখে গোপন করিয়া।২০
মিথ্যা কথা কউক পণ্ডিত রাজ দরবার জাইয়া॥
এই কথা কহিবে পণ্ডিত রাজ দরবার জাইয়া।
ওহে রাজা ওহে রাজা বিলাতের নাগর।
এও সমএ ধম্মিরাজা না পাইলাম কুশল॥
আমার পাঞ্জি রাখিবার কহে এ বার বৎসর॥[৫]২৫
তোমার পাকুক চুল দাড়ি অদুনার মাথার ক্যাশ।
ছোট রানির অবশ্যাসে হয়েন পরদ্যাশ॥
এই কথা জাইয়া বলিস বান্দি পণ্ডিতের বরাবর॥
রানির বাক্য বান্দি দাসি ব্রথা না করিল।
সাজ সাজ বলি বান্দি দাসি সাজিতে নাগিল॥৩০
পাশ্‌শ টাকা নিলে বান্দি রাঞ্চলে বান্দিয়া।
পণ্ডিতের মহলক নাগি জাএছে চলিয়া॥
কতদুরে জাএয়া বান্দি কতেক পন্ত পাইল।
পণ্ডিতের মহলে জাএয়া বান্দি খাড়া হৈল॥
পণ্ডিত ঠাকুর বলিয়া তাঁয় ডাকাইতে নাগিল॥৩৫

পণ্ডিত পণ্ডিত বলিয়া বান্দি তুলিয়া কৈল্ল রাও।
চমৎকার হইল পণ্ডিতের সব্ব গাও॥
জখন পণ্ডিত মুনি রাজার বান্দি দাসিক দেখিল।
হাতে মাতে পণ্ডিত ঠাকুর চমকিয়া উঠিল॥
এক খান পাটি আনি বান্দিক বসিত দিল॥৪০[৬]
করফুর তাম্বুলো দিল বান্দিক সাজাএয়া।
মধুর বচনে বান্দিক দ্যাএছে বলিয়া॥
এত দিন না আইস মা মোর মহল চলিয়া।
আইজ ক্যানে আইছেন মা মহল সাজিয়া॥
বান্দি ঠাকুরক বলছে—ওগো ঠাকুর—৪৫
গননা গুনিবার বাদে খেতুক রাজা দ্যাএছে পাঠাইয়া।
গননা শুনি জাইবে রাজা সন্ন্যাসক নাগিয়া॥
এই কারনে রানি মা মোক দিলে পাঠাইয়া।
এক দুই করি পাশ্‌শ টাকা ন্যাও আরও গনিয়া॥
মিছা গননা গনবেন রাজার দরবারত জাএয়া॥৫০
জখন বান্দি দাসি এ কথা বলিল।
ক্রোদ্দমান হৈয়া ঠাকুর ক্রোদ্দে জলিয়া গ্যাল॥
বান্দির তরে কথা বলিতে নাগিল॥
তোর টাকার চাইতে বান্দি মোর টাকা বিস্তর।
নিয়া জা তোর টাকা কড়ি ফিরিয়া জা তুই ঘর॥৫৫
সাইবানি সকল মা’রতে পারে একঝন দুইঝন।
ধস্মি রাজা এই কথা শুনলে না থুইবে আমার বিচিতে বাইগন॥
জখন ব্রাম্মন টাকা ফেরৎ দেবার চাইল।
ঘর হইতে ব্রাম্মনি চটকিয়া ব্যারাইল॥

পণ্ডিতের চাইতে পণ্ডিতানি সিয়ান।৬০
আকাশে পাতালে বেটি ধইরাছে ধিয়ান॥[৭]
কোন দ্যাশে থাক ঠাকুর কোন দ্যাশে তোর ঘর।
কোন দরিয়ার জল খাএয়া সব্বাঙ্গে পাতল॥
দিনান্তরে ব্যাড়াও ঠাকুর পাঞ্জি পুস্তক নিয়া।
চাউল মুষ্টি কাচা কলা না পাও খুঁজিয়া॥৬৫
আপনে আসিল পাশ্‌শ টাকা তোমার দরজাএ সাজিয়া।
এইগুলা টাকা জোলা ঠাকুর দেইস আরো ফিরিয়া॥
ন্যাও ন্যাও ঠাকুর মশায় টাকা ন্যাও গনিয়া।
কত নাগে মিত্থা গননা আমি দেই নেখিয়া॥
পণ্ডিতর জাইত আমরা দৈবক চূড়ামনি।৭০
দশটা ছাচা দশটা মিছা এয়াক কবার পারি॥
ইয়াতে জদি ধম্মিরাজ মন্দ বল্‌বে তাত।
না থাকিম ওঁয়ার দ্যাশে অন্য দ্যাশে জাব॥
ওগুলা টাকা দিয়া ঠাকুর গরস্তি করি খাব॥
সুবুদ্ধ ছিল ঠাকুরের কুবোধ নাগাল পাইল।৭৫
ব্রাম্মনির বুদ্ধিতে টাকা হাত করিল॥
হাচি জেটি বাধা গিলা পড়িতে নাগিল।
তবু আরো দৈবক ঠাকুর টাকা হাত করিল॥
টাকা দিয়া বান্দি দাসি মহল চলি গ্যাল॥
আক দরজাএ খেতু ডাকাএছে আসিয়া।৮০
পণ্ডিত পণ্ডিত বলি খেতু ডাকাইবার নাগিল॥
হারে পণ্ডিত হারে পণ্ডিত তুই বড় সুকিয়া।
মাতার উপর সোয়া পহর ব্যালা তুই আছিস শুইয়া॥

মহারাজা সন্ন্যাস হয় রাজ্যের ঈশ্বর।
গনাপাড়া করিতে ঠাকুর তোমার তলপ॥[৮]৯৫
জখন পণ্ডিত এ সংবাদ শুনিল।
সাজোঁ সাজোঁ বলি পণ্ডিত সাজিবার নাগিল॥[৯]
ধবল বস্ত্র নিল ঠাকুর পরিধান করিয়া।
পাঞ্জি পুস্তক নিলে ঠাকুর ঝোলোঙ্গা ভরিয়া॥

দৈবক মুনি জাত্রা করিল কানি নঙ্গুল সুঙ্গিয়া॥[১০]৯০
কানি নঙ্গুল চক্‌খে নাগি গ্যাল উলটিয়া।
ফির জাত্রা কইল্ল ঠাকুর ছাইলাক পুছ করিয়া॥
পালঙ্গ হতে উঠতে ঠাকুরের ধুতি গেইল ফাড়িয়া॥
ও ব্যালকা জাত্রা ঠাকুরের না দেখিলাম ভাল।
পালঙ্গ হইতে দাড়াইতে মাথাএ ঠেকিল চাল॥৯৫
তবু আরো দৈবক ঠাকুর জাত্রা করিল।
খালি কলসি ম্যালা চুল দুআরে দেখিল॥
চন্দন বিরিখের ডালোত কাগা আছেত পড়িয়া।
কুসাইত দেখি নিসেধ করে ঠাকুরক নাগিয়া॥
আইজকার মোনে থাক ঠাকুর ধৈরন ধরিয়া।
কাইল জাত্রা করেন ধরম স্মহরিয়া॥১০০
ধরম জানি বনের কাগা নিসেধ করিল।
ক্রোদ্দ হৈয়া দৈবক মুনি ক্রোদ্দে জলি গ্যাল॥

হাতে ছিল গুলাল বাটইল কাগাক মারিল।
ডালে থাকি বনের কাগা রভিশাপ দিল॥
জাত্ত জাও দৈবক ঠাকুর মোগ মাল্লু বাটুল।১০৫
রাজ দরবারে গেইলে তোমার ভাবনা করব চুল॥
তবু আরো দৈবক ঠাকুর গমন করিল।
রাজ দরবারে জাএয়া রুপস্থিত হইল॥[১১]

জ্যানকালে ধম্মিরাজা ঠাকুরক দেখিল।১১০
আপনার পালঙ্গ ঠাকুরক আগায়ে দিল॥

আইস আইস ঠাকুর মশায় পালঙ্গে বৈসসিয়া।
আমার সন্ন্যাসের গননা শুনান ত বসিয়া॥[১২]

কোন দিনা ধম্মি রাজা সিলাব ঝুলি ক্যাঁথা।
কোন দিনা ধম্মি রাজা আমি মুড়িজাব মাথা॥১১৫
কোন দিনা ধম্মি রাজা ডোর কপিনি পরিব।
কোন দিনা ধম্মি রাজা বোনবাস হব॥[১৩]

শুব শুব করিয়া ঠাকুর পাঞ্জি বেইর কইল টানিয়া।
আপনে ধর্ম্মের পাঞ্জি[১৪] বোলে রাও দিয়া॥
প্রথমে গুনিল ঠাকুর সরগের জত তারা।১২০
তার পচ্ছাত গুনিলেক পাতালের বালা॥
তার পচ্ছাত গুনিলেক বিরিখের পাত।
অবশেষে গুনিলে ঠাকুর ভরন হাড়ির ভাত।
গনিতে গণিতে ঠাকুর এক দুপর করিল।
খোসা দ্যাওয়া বাড়ির কথা মনতে পড়িল॥১২৫
ও পাত আখিয়া ঠাকুর আর এক পাত নিল।
রাজাক তরে কথা বলিতে নাগিল॥
সত্য কথা থুইলে পণ্ডিত একতার করিয়া।
মিত্থা গননা রাজার পণ্ডিত দ্যাএছে গনিয়া॥
পণ্ডিত বলে শুন রাজা বিলাতের নাগর।১৩০
এওবার কার সমএ আমি না পাইলাম কুশল॥
আমার পাঞ্জি রাখিবার কহে এ বার বৎসর॥
তোমার পাকুক চুল দাড়ি অদুনার মাথার ক্যাশ।
ছোট রানির অবশ্যাসে হয়েন পরদ্যাশ॥[১৫]
জ্যান কালে দৈবক ঠাকুর একথা বলিল।১৩৫
হাতে মাতে ধম্মিরাজ চমকিয়া উঠিল॥
মাও আমাক সন্ন্যাস করায় এই শুকুরবারে।
এ বেটা থাকিবার ব’ল্ল এ বার বচ্ছরে॥

কিবা কর ভাই খেতুআ নিছন্তে বসিয়া।
আমার বাপকালিয়া পাঞ্জি পুস্তক জোগাও ত আনিয়া॥১৪০
ক্যামন গননা গনিল ঠাকুর আমি নিজে গনি বসিয়া॥[১৬]
আপনার পাঞ্জি রাজা বেইর কৈলে টানিয়া।
আপনে ধন্মের পাঞ্জি বোলে রাও দিয়া॥
গনিতে গনিতে রাজা এক দুপর করিল।
পাশ্‌শ টাকার খোসা দিছে পণ্ডিতক পুস্তকে ধরা পাইল॥১৪৫
রাজা বোলে শোনেক ভাই খেতুআ লঙ্কেশ্বর।
পাশ্‌শ টাকা খোসা দিছে আমার সাইবানি সক্কল॥
খোসা খাএয়া মিছা গনিল রাজার দরবার॥
তেমনিয়া ধম্মিরাজ এ নাওঁ পাড়াব।
চণ্ডি দ্বারে নিগি ব্রাম্মনক বলি দিব॥১৫০
ওরে খেতুআ,—কিবা কর ভাই খেতুআ নিছন্তে বসিয়া।
চণ্ডি কালির মণ্ডব ন্যাও পরিস্কার করিয়া॥
ত্যালে খইলে ন্যাও ঠাকুরক ছিনান করাএঞা।
মইসকাডা মইসাসুরা নেইস আগিনাএ গাড়িয়া॥
মইসাসুরাএ ঠাকুরের গদ্দানা রাখিয়া।১৫৫

হরিবোল বলিয়া খিল মারিস ঠোকিয়া॥
জখন ধন্মিরাজ হুকুম জানাইল।
গঙ্গার জলে দৈবক ঠাকুরক ছিনান করাইল॥
চণ্ডি মাতার ঘরখানি নিলে পরিস্কার করিয়া।[১৭]
মইসকাডা মইসাসুরাতে গদ্দানা রাখিয়া।১৬০
করুনা করি কান্দে ঠাকুর চণ্ডি মাও বলিয়া॥
হাত ধরোঁ চণ্ডি মাও পাও ধরোঁ তোক।
তোমার ধম্মের দোহাই নাগে আমার প্রান অক্‌খা কর॥[১৮]
চণ্ডি চণ্ডি বলিয়া ব্রাম্মন কান্দিতে নাগিল।
ব্রাম্মনের কান্দন দেখি চণ্ডির দয়া হৈল॥১৬৫
চণ্ডি বলে হারে বিধি মোর করমের ফল।

এর ঘরে পুজা খাইলাম এ বার বচ্ছর॥
স্ত্রীর কথাএ প্রান হারায় পণ্ডিত রাজদরবার॥
মুনি-মন্ত্র গিয়ান নিল চণ্ডি মা রিদএ জপিয়া।
শেত মাছি হৈল চণ্ডি কায়া বদলিয়া॥১৭০
উড়াও দিয়া পৈল ঠাকুরের কন্নতে জাএয়া॥
কন্নে পড়িয়া চণ্ডি সুবুদ্ধি দিল।
নানা শব্দ বলি মাছি কথা বলিবার নাগিল॥
ওগো ঠাকুর, জখন খেতুআ আনিবেক খাড়া ধরিয়া।
রাজার দোহাই দিয়া উঠিস কাতরাএ থাকিয়া॥১৭৫
দোহাই রাজার দোহাই বাস্‌সার রাজ রাজেশ্বর।
খবরদার আমাক কাটতে পারবি না খেতুআ লঙ্কেশ্বর॥
কাইল পণ্ডিত চলি গেছিনু ছচি নোকের ঘর।
অবোধ ছাওআলে ক’চ্ছে পাঞ্জি এ হেটাউছল।
ছিনান করিয়া গনিব রাজার দরবার॥১৮০
তৈলপাটের খাড়া নিয়া খেতু আইসে দৌড়িয়া।
দোহাই দিয়া উঠে ঠাকুর কাতরাএ থাকিয়া॥
দোহাই রাজার দোহাই বাস্‌সার রাজ রাজেশ্বর।
খবরদার আমাক কাটতে না পারবি খেতুআ লঙ্কেশ্বর॥
কাইল পণ্ডিত চলি গেছিনু ছচি নোকের ঘর।১৮৫
অবোধ ছাওআলে ক’চ্ছে পাঞ্জি এ হেটাউছল।[১৯]
ছিনান করিয়া গনিব রাজার দরবার॥
তুলসি জল দিব পাঞ্জিত ছিটাইয়া।
ফির বার গনন করিব রাজদরবার জাইয়া।

কাতরাএ থাকি ঠাকুর দোহাই ফিরাইল।
তৈলপাটের খাড়া খেতু পাক দিয়া ফ্যালাইল॥[২০]

কাতরা হতে দৈবক ঠাকুরক তু’ল্লে টান দিয়া।
ঠাকুর সহিতে জাএছে খেতু রাজার দরবারক নাগিয়া॥
জখন ধম্মিরাজ ঠাকুরক দেখিল।
কপালে মারিয়া চড় কান্দিতে নাগিল॥১৯৫
রাজা বলে ওরে খেতুআ—
জখনে আছিলাম আমি আজ্যের ঈশ্বর।
আমার হুকুমে নরবলি কাটেছে বিস্তর॥
এখন হবার চাই কপিনপিন্দা কোড়াকের ভিকারি।
আমার হুকুমে কাটা না জায় পণ্ডিত অধিকারি॥[২১]২০০
খেতুআ বলে শুন দাদা ধর্ম্ম অবতার[২২]
তৈলপাটের খাড়া নিয়া জাই দৌড়িয়া।
আপনার দোহাই দিয়া উঠে ঠাকুর কাতরাএ থাকিয়া॥
ক্যামন বোলে চলি গেছিল ছচি নোকের ঘর।
অবোধ ছাওআলে পাঞ্জি ক’চ্ছে বোলে এ হেটাউছল।২০৫
ফের গনিবার চাইলে ঠাকুর দরবার উপর॥

জখনে ধম্মি রাজা একথা শুনিল।
হাউক দাউক করিয়া দৈবক ঠাকুরক পালঙ্গ আনি দিল॥
আইস আইস ঠাকুর মশায় পালঙ্গে বৈসসিয়া।
সত্যরু গননা আমাক শুনান বসিয়া॥২১০
কোন দিনা ধন্মি রাজা সিলাই করিব ঝুলি ক্যাঁথা।
কোন দিনা ধম্মি রাজা মুড়াইয়া জাব মাথা॥
কোন দিনা ধম্মি রাজা ডোর কপ্নি পরিব।
কোন দিন। ধন্মি রাজা বোনবাস হব॥
জখন পণ্ডিত এ সংবাদ শুনিল।২১৫
জয় কল্যান বলি ঠাকুর মৃত্তিঙ্গাএ বসিল॥
কানি নৌক দিয়া তিনটা মৃত্তিঙ্গাএ আক দিল।
লঘ্ন থির করি পণ্ডিত ভিড়িয়া বসিল॥
আস্তে আস্তে পাঞ্জি খুলিবার নাগিল॥
ঘনে নাড়ে পাঞ্জি পুথি ঘনে নাড়ে মাতা।২২০
ঘনে নাড়ে মাতা পণ্ডিত ঘনে কয় কথা॥
রাজার জত দেওআন পাত্র নাজির উজির সভা করি বসিল।
সন্ন্যাসের গননা ঠাকুর মশায় গুনিতে নাগিল॥
শনিবারে দিনা হইবে শূন্যে মহাস্থিতি।
অবিবারক দিনা ভাণ্ডের অধোগতি॥২২৫
সোমবারক দিনে তোমার মুড়িয়া জাবে মাথা।
মঙ্গলবার দিনে তোমার সিলাবে ঝুলি ক্যাঁথা॥
বুধবার দিনে গোরেকনাথ হরিনাম মন্ত্র দিবে।
বিশ্‌শইদবার দিনে তোমার ডোর কপিন ফাড়িবে॥
শুকুরবারে দুই পর সমএ সন্ন্যাস সাজাইবে॥[২৩]২৩০

জখন ধম্মিরাজ সন্ন্যাসের গননা শুনিল।
লৈক্‌খ টাকার কণ্টমালা ঠাকুরক ফ্যালেয়া দিল॥
কিবা কর খেতুআ ভাই নিছন্তে বসিয়া।
পাশ্‌শ টাকা ভিক্‌খা দে তুই ঠাকুরক নিজাএঞা॥
পাচ গায়ের কাগজ দে তুই ব্রহ্মত্তোর নিখিয়া।২৩৫
একনা কানপায়ি ঘোড়া দে নিঠাকুরক নিজাএঞা।
এই সগ্‌গল দিয়া দিনি বিদায় করিয়া॥[২৪]

রাজবাক্য খেতুআ ব্রথা না করিল।
জেই দিবার কৈল সেই ধন দিল॥

ধন দৌলত পাএয়া ঠাকুর বড় খুসি হৈল।
আপনার মহলক নাগি গমন করিল॥

  1. পাঠান্তর -দরবারে থাকিয়া রাজার হরসিত মন।
    দয়ার ভাই খেতুআ বলি ডাকে ঘনে ঘন॥
    কি কর ভাই খেতু কার প্রানে চাও।
    শিঘ্রগতি পণ্ডিত আনিয়া জোগাও॥
    গনাপাড়া করি আমি জাইব সন্ন্যাস হএয়া॥
    রাজায় খেতু কহিলে কথা দরবারের উপর।
    অদুনা পদুনা জানি পাইলে আপনার মহল॥

  2. এক পাঠের অতিরিক্ত অংশঃ—

    পণ্ডিত আনিবার পাঠাইলে খেতুআ অধিকারি।
    গনাপাড়া করিলে রাজা হবে ভিক্‌খাধারি॥

  3. কোন মতে ইহার পর—কিবা কর চাপাই বান্দি নিছন্তে বসিয়া।
  4. পাঠান্তর—‘পাশ্‌শ টাকা’ স্থলে ‘একশত টাকা’ এবং ‘খোসা’ স্থলে ‘ঘুস’।
  5. পাঠান্তর:—

    একনা বছর থাকের কয় জ্যান ধৈরন ধরিয়া।
    এক ছাওআলের বাপ হৈয়া জায় জ্যান সন্ন্যাস নাগিয়া॥

  6. পাঠান্তরে—

    বান্দিকে বসিতে দিল দিব্ব সিঙ্গাসন।

  7. কোন পাঠের অতিরিক্ত অংশঃ—

    দুই হস্ত পণ্ডিতের ধরিল চিপিয়া।
    দুই গালে চারি চওড় মারিলে তুলিয়া॥

  8. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠঃ—

    তোক বলোঁ পণ্ডিত ঠাকুর বাক্য মোর ধর।
    রাজা তলব করে নহলর ভিতর॥
    সীঘ্র গতি চলিয়া যাও রাজ দরবার॥

  9. একটী পাঠের অতিরিক্ত অংশঃ—

    এক ডণ্ড দুই ডণ্ড তিন ডণ্ড হৈল।
    পঞ্চ নোটা গঙ্গার জলে বামনি ছিনান করিল॥
    ছিনান করিয়া বামনি রাহ্নিক করিল।
    রাহ্নিক করিয়া বামনি রন্ধন করিল॥
    এক ভাত পঞ্চাশ ব্যাঞ্জন অন্ধন করিয়া।
    সোবন্নের থালাতে রন্ন দিল পারশ করিয়া॥
    আইস আইস ঠাকুর মশায় রন্ন খাও আসিয়া॥
    জখন দৈবক ঠাকুর রন্নের নাম শুনিল।
    পঞ্চ নোটা গঙ্গার জলে ছিনান করিল॥
    ছিনান করিয়া ঠাকুর রাহ্নিক করিল।
    এক ভাত পঞ্চাশ ব্যাঞ্জন ভক্‌খন করিল॥
    রন্ন খাএয়া দৈবক মুনি মুখে দিল গুআ।
    বামন বামনি কয় কথা পাঞ্জারের শুয়া॥
    আমার বুদ্ধিতে ঠাকুর গনিয়া নিলু টাকা।
    আগে আমাক কিনিয়া দে দশ টাকার শাখা॥
    এলকার মোনে থাক ব্রাম্মনি ধৈরন ধরিয়া।
    শুবে শুবে দরবার হৈতে আইসঁ ফিরিয়া॥
    শ্যাখার বদল দিব সোনার কাঙ্গন বানাএয়া॥

  10. পাঠান্তরঃ—

    শালকিরানি ধুতি নইলে গোড়া ছেচুরিয়া।
    শালবন পেটুকা নিলে কমরে বান্দিয়া॥
    চাল্লিশ পাগড়ি বান্দে পাক্‌মোড়া দিয়া।
    ডাইন হস্তে বাজুবন্দ বাম হস্তে কোড়া।
    গলাএ তুলিয়া দিলে সোবন্নের কণ্ঠমালা॥
    ভাল মানুসে জাত্রা করে দিন বার গনিয়া।
    পণ্ডিত বেটা করে জাত্রা পণ্ডিতানিক পুছিয়া॥
    ভাল মানুসে করে জাত্রা নাগারা টুকিয়া।
    পণ্ডিত বেটা করে জাত্রা কানি নৌক সুঙ্গিয়া॥


    গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠঃ—

    চটক ধুতি মঠক ধুতি পরিধান করিয়া।
    জোড় জোড় পৈতা দিলে গলায় তুলিয়া॥
    পঞ্জিকার দফ্‌তর নইল বগলে ডাবিয়া।
    রাজ দরবারক লাগিয়া চলিল হাঁটিয়া॥

  11. পাঠান্তর:—

    জখন কানি নৌকটা নাসিকার কাছে গ্যাল।
    মাঝা নৌক চক্‌খুতে নাগি উলটিয়া পড়িল॥
    সেও জাত্রা পণ্ডিতের ভঙ্গ হএ গ্যাল॥
    কিছু পরে পণ্ডিত জাত্রা করি চায়।
    উঠিল পণ্ডিত গামোড়া দিয়া।
    চালের উয়া মাতাএ নাগিল হুট্‌টুস করিয়া॥
    পণ্ডিতানি কহে কথা তোমার মাতাত নাগিল চাল।
    নিশ্চয় করিয়া জানা গ্যাল তোমার জাত্রা হইল ভাল॥
    সেও কথা ফ্যালেয়া পণ্ডিত বারে দিল পাও।
    মাতার উপরে কাল জিটি করে সব্ব রাও॥
    সেও বাদা নিলে পণ্ডিত পাউচান করিয়া—
    পরে গণ্ডিত জাত্রা করি চায়।
    আগে ডাকে পিছে ডাকে ছাইলায় ডাকায়॥
    সেও বাদা পাউচান করিয়া—
    পরে পণ্ডিত জাত্রা করি চায়।
    শুকান ডালে পড়িয়া কাগায় চ্যাঁচায়॥
    হস্ততে ছিল পণ্ডিতের গুলাল মারিল বাটুল।
    কাগা বলে হারে পণ্ডিত কি মার বাটুল।
    রাজ দরবারে গেইলে তোর ভাবনার করিম চুর॥
    জ্যামন বাটুল পড়িল মোর গর্দানক নাগিয়া।
    নোহার খাড়া পড়বে তোর গর্দানের উপর দিয়া॥

    সেও বাদা নিলে পণ্ডিত পাউচান করিয়া॥

    কিছু পরে আরও পণ্ডিত জাত্রা করি চায়।
    ডাইনে আছিল শৃগাল বামে চলি জায়॥
    সেও জাত্রা পণ্ডিতের ভঙ্গ হইয়া গ্যাল॥
    ফির ভালা পণ্ডিত জাত্রা করি চায়।
    খালি কলস ম্যালা চুল পথে নাগাল পায়॥
    সেও জাত্রা নিলে পণ্ডিত পাউচান করিয়া।
    হয় নানে খালি কলস জদিচ জল ভরে।
    হয় নানে ম্যালা চুল জদি চুল বান্দে।
    তখনি পণ্ডিতের জাত্রা ভাল হবে॥
    আগে খেতু ছোড়া জাত্রছে চলিয়া।
    কত্ত দুর জায় খেতু কত্ত পন্ত পায়।
    আর কতেক দুর জাএয়া মনে করি চায়॥
    খেতু বলে শুন ঠাকুর করি নিবেদন।
    মহারাজা জাএছে আমার সন্ন্যাসক নাগিয়া।
    আমি রাজা হব কি না হব পাটোত বসিয়া॥
    এক শত রানি ছাড়ে রাজা মহলের ভিতর।
    রানি গিলা পাব কি না পাব আমি খেতু লঙ্কেশ্বর
    আমার গনা গন রাস্তাএ বসিয়া॥
    আমি জদি হই রাজা পাটের উপর।
    আমি রাজা হইলে ঠাকুর তোক করিব পাত্তর॥
    দুইজনে রাজ্য লুটি খাব রাজ্যের উপর॥
    জখন পণ্ডিত এ সংবাদ শুনিল।
    জয় কল্যান বলিয়া মৃত্তিঙ্গাএ বসিল॥
    মৃত্তিঙ্গাএ বসিয়া পণ্ডিত তিনটা আক দিল॥
    ঘনে নাড়ে পাঞ্জি পুথি ঘনে নাড়ে মাতা।
    খনে কয় কথা॥
    বাদ বেরন গনে বিরিক্‌খের পাতা।
    আকাশের তারা গনে পাতালের বালা॥

    একটা একটা করি গনে ভরন হাড়ির ভাত।
    রান্দার রাত্রিতে গনে পণ্ডিত তেতুলের পাত॥
    একে একে গনিয়া আনে জত নদি নালা॥
    তিন কোন পৃথিবির গনোন ঠাঞতে গনি বইসে।
    গব্তের ভিতর স্ত্রীপুরুস তার গনন গনে॥
    শুভ শুভ বলি পাঞ্জি বাহির করিলে টানিয়া।
    আপনে ধম্মের পাঞ্জি বলে রাও দিয়া॥
    ঘনে নাড়ে পাঞ্জি পুথি বনে নাড়ে মাতা।
    ঘনে নাড়ে মাতা পণ্ডিত খনে কয় কথা॥
    পণ্ডিত বলে শুন খেতু করি নিবেদন।
    এবারকার সমএ আমি না পাইলাম কুশল॥
    মহারাজা তোমার জাইবেক সন্ন্যাসক নাগিয়া।
    তুইতো রাজা হবি খেতু পাটোত বসিয়া।
    অদুনা পদুনা রহিবে মহাসতি হএয়া॥
    স্ত্রীরাজ। স্ত্রীবাদসা স্ত্রী লঙ্কেশ্বর।
    স্ত্রী বই পুরুস নাহি রবে মহলের ভিতর॥
    তুই খেতু রহিবু বাহিরের দখল॥
    জখন খেতু ছোড়া এ সংবাদ শুনিল।
    থর থর করি খেতু কাপিতে নাগিল॥
    জেই রানির জন্য আমার দৌড়া দৌড়ি।
    সেই রানি না পাওঁ আমি খেতু অধিকারি॥
    হস্ত ধরি পণ্ডিতক তুলিলে টানিয়া।
    গর্দানা ধরি পণ্ডিতক কিল পঞ্চাশেক দিল।
    রাজার দরবারক নাগি গমন করিল॥

  12. পাঠান্তর—

    দরবারে জাইয়া পণ্ডিত কুরসিত জানাইল।
    কুলের দেবতা বলি রাজা প্রনাম জানাইল॥
    ভাইয়া ঠাকুর বলি পণ্ডিতক পালঙ্কে বসাইল॥

    পণ্ডিতক বসিবার দিল দিব্ব সিঙ্গাসন।
    করফুর তাম্বুল দিয়া জিগ্‌গাসে বচন॥
    এই জন্য ডাকিলাম ঠাকুর তোর বরাবর।
    মা আমাক রহিবার না দ্যায় মহলের ভিতর॥
    এই শব্দ জাইয়া পইল সুন্দরির বরাবর।
    এক শত রানি জখন সাজিয়া বাহির হৈল।
    আসিয়া সকল রানি পণ্ডিতক ঘিরিয়া ধরিল॥
    রানি সকলকে দেখিয়া পণ্ডিত ভয়ঙ্কর হৈল॥
    রাজা বলে হারে ঠাকুর কার প্রানে চাও।
    শিঘ্র করি আমার গনন দ্যাও আরও গনিয়া।
    গনাপাড়া করি আমি জাই সন্ন্যাস হৈয়া॥
    গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠ—
    ভর কাছারি রাজা করে ডাম্বা ডৌল।
    হেন সময় খাড়া হইল পণ্ডিতর কুমর॥
    ধর্ম্মাবতার বলিয়া প্রনাম জানাইল।
    কুলর দেবতা বলিয়া মহারাজ প্রনাম জানাইল॥

  13. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠ—

    ও ঠাকুর ও ঠাকুর দৈবক চুড়ামনি॥
    কোন দিনা রাজার বেটা সিলাইবে ঝুলি কাঁথা।
    কোন দিনা রাজার বেটা মুড়াইবে মাথা॥
    কোন দিনা মহারাজ ভুসঙ্গ মাথিবে।
    কোন দিনা ধর্মী রাজ দুই কর্ণ ছেদিবে॥
    কোন দিনা ধর্মী রাজ ডোড় কপিন পড়িবে!
    কোন দিনা দিমু মোর হাতত দোয়াদস॥
    কোন দিনা হবে আমার বিদেস গমন।
    এই গনা গনিয়া দেও আমার বরাবর॥

  14. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠে—

    ‘ধম্মের পাঞ্জি’ স্থলে ‘সিদ্ধান্তর পঞ্জিকা’।

  15. পাঠান্তরঃ—

    এবারকার সন্ন্যাস তোমার না পাইলাম কুশল।
    এ বছর থাক মহারাজ ধৈরন ধরিয়া।
    এক ছাওমালের বাপ হৈয়া জাও সন্ন্যাস নাগিয়া॥

  16. পাঠান্তর:—

    জখন ধম্মি রাজা একথা শুনিল।
    দয়ার ভাই খেতু বলি ডাকিতে নাগিল॥
    কি কর ভাই থেতু কার প্রানে চাও।
    মা আমাক রহিবার না হ্যায় মহলের ভিতর।
    এর পাঞ্জি রাখিবার কয় এ বার বৎসর॥
    চণ্ডির দ্বারতে পণ্ডিতক ফ্যালাও কাটিয়া।
    ব্রাম্মন বদ্দ করি জাব সন্ন্যাসক নাগিয়া॥
    জখন খেতু ছোড়া এ কথা শুনিল।
    হস্ত গলা পণ্ডিতের ফ্যালাইলে বান্দিয়া।
    চণ্ডি মাতার দরজার নাগিয়া নইয়া গ্যাল ধরিয়া॥

  17. পাঠান্তর:—

    পাচ নোটা কুআর জলে থেতু স্নান করিয়া।
    চণ্ডি মাতার ঘরখানি নিলে পরিস্কার করিয়া॥
    মৈসকাটা মৈসুরা দরজাএ গাড়িয়া।
    তুলসি জল দিলে পণ্ডিতের মস্তকে ছিটাইয়া॥
    সোল জনে ধরিলে পণ্ডিতক মরিম বলিয়া।
    ধরি নিয়া জায় চণ্ডির দরজাএ নাগিয়া॥
    মৈসুরার ভিতর পণ্ডিতের গর্ধনা রাখিয়া।
    হেট্‌ খিলা উপর খিলা মারিলে তুলিয়া॥
    সোল জনে ধরিলে পণ্ডিতক জোর করিয়া॥
    ওখানে থাকি খেতুর হরসিত মন।
    শিতল মন্দির ঘরে জাইয়া দিল দিরশন॥
    মৈসকাটা খাড়া নৈলে বাড়ে করিয়া।
    মার মার বলি থেতু আইসে চলিয়া॥

  18. পাঠান্তর:—

    এইবার চণ্ডি মা উদ্ধার কর মাতা।
    বাড়ি জাইবার সমএ আমি দিয়া জাব তোক লৈক্‌খ গণ্ডা পাঠা॥

  19. পাঠান্তর:—

    নাবালক পুত্র আছে আমার মহলের ভিতর॥
    সেই ছাইলায় পাঞ্জি করিয়াছে হেটাউছল॥

  20. একটা পাঠে অতিরিক্ত অংশ:—
    জখন খেতু ছোড়া এ সংবাদ শুনিল।

    খেতু বলে শুন ঠাকুর বাক্য আমার ন্যাও।
    আমার গনন দ্যাও আরও গনিয়া।
    তবনিসে ধরি জাব তোক দরবারক নাগিয়া॥
    পণ্ডিত বলে হারে খেতু এই তোর ব্যাবহার।
    মৈসুরার মাঝে রহিল আমার গর্ধনা পড়িয়া।
    ক্যামন করিয়া তোর গননা দ্যাওঁ আরও গনিয়া॥
    জখন খেতু ছোড়া এ সংবাদ শুনিল।
    হস্ত ধরি পণ্ডিতের টানিয়া তুলিল॥
    চণ্ডি বলে হারে পণ্ডিত কার প্রানে চাও।
    মিত্থা মিত্থা গনি যাও খেতুর বরাবর।
    সত্য গননা গনি দ্যাও বাজার দরবার॥
    এই কথা বলিস খেতুর বরাবর।
    এ সমএ আমি পাইলাম কুশল॥
    মহারাজা জাবে আমার সন্ন্যাসক নাগিয়া।
    তুই রাজা হবু খেতু পাটে বসিয়া॥
    এও সকল পাবু রাজার শঙ্খ চক্র মোড়া।
    তাজি টাঙ্গন পাবু নওশ হাজার ঘোড়া॥
    বাড়ি মধ্যে পাবু রাজার দেউল ফুলের বাড়ি।
    অন্ন খাইতে পাবু রাজার সুবন্নের থালি॥
    জল খাইতে পাবু রাজার মানিকের ঝাড়ি।
    পাটরানি পাবু রাজার হরিচন্দ্রের বেটি॥
    শয়ন করিতে পাবু কুসুমের পালঙ্কি॥
    জখন খেতু ছোড়া এ সংবাদ শুনিল।
    পণ্ডিতের চরনে প্রনাম করিল॥

    আমি খেতু জদি রাজা হই পাটের উপর।

    আমি রাজা হইলে তোক করিব পাত্তর।
    দুই জনে রাজ্য লুটি থাব কার বাবার ডর॥

  21. পাঠান্তর :—আমার হুকুমে মানুস কাটিতে না পারিস।

  22. পাঠান্তর :—‘ধর্ম্ম’ অবতার হলে ‘রাজ্যের ঈশ্বর' এবং তৎপরে
    আপনার দোহাই ফিরায় খেতুর বরাবর।
    ক্যামন করি খেতু ছোড়া ধরিয়া করিম বল॥
    নাবালক পুত্ত্র পণ্ডিতের মহলের ভিতর।
    সেই ছাইলা পাঞ্জি করিয়াছে হেটাউছল॥
    তুলসি জল দিলাম আমি পাঞ্জিত ছিটাইয়া।
    ক্যামন গনন গনে পণ্ডিত ন্যাওত গনিয়া॥
    রাজা বলে শুন পণ্ডিত বলি নিবেদন।
    এমন স্যামন গনন তোর করে নাই শুনি।
    ভাল করি গন তবে হামরা শুনি॥

  23. পাঠান্তর:—

    সোমবারে দিনা সিলাও ঝুলি ক্যাঁথা।

    মঙ্গলবারে দিনা মুড়ি জাও মাথা॥

    বুধবারের দিনা রাজা ডোর কপ্নি পরিও।
    বৃস্পতিবারের দিনা রাজা বোনবাস হইও॥

  24. পাঠান্তরঃ—
    জখন ধম্মি রাজা এ সংবাদ শুনিল।

    পণ্ডিতের চরনে প্রনাম করিল॥
    দয়ার ভাই খেতু বলি ডাকিবার নাগিল॥
    কি কর ভাই থেতুআ কার প্রানে চাও।
    পাচখান তালুক পণ্ডিতক ব্রম্মত্তর দ্যাও।
    পাচটা ঘোড়া দ্যাও পণ্ডিতের বরাবর।
    পাচখানা কাপড় দ্যাও পাণ্ডতের বরাবর॥
    পাচ শত টাকা দ্যাও পণ্ডিতের হস্তের উপর॥
    আশিব্বাদ করি জাইবে পণ্ডিত আপনার মহল।
    শুভে শুভে ধম্মি রাজা ছাড়ি বাড়ি ঘর॥
    দান দক্‌খিনা পাইলে পণ্ডিত বিস্তর করিয়া।
    সালকিরানি ধুতি পরে গোড়া ছেঁচুরিয়া॥
    জোড়া পিরান নইলে গাএ মধ্যে দিয়া।
    রসের পাছেড়া নইলে ঘাড়ে ফ্যালাইল॥
    টাকা গুন নইলে ধুতির কিনারে বান্দিয়া।
    চারি ঘোড়া নইলে কোতল সাজাইয়া॥
    একটা ঘোড়ার উপর পণ্ডিত আসোয়ার হইয়া।
    চণ্ডি মাতার দরজা বলি দিল ঘোড়া দাবড়াইয়া॥

    চণ্ডি বলে হারে বিধি মোর করমের ফল।

    কাটির ব্যালা বেটা নানি গ্যাল পাঠা।
    দান দক্‌খিনা পাইয়া ভুলি জাইস মোর কথা॥
    তবুনিয়া চণ্ডি এ নাম পাড়াব।
    তবিলের ঘোড়া তহবিলে বান্দিব॥
    গালে চওড় দিয়া বেটার টাকা কাড়ি নিব॥
    ন্যাদেয়া গুড়িয়া তোর ভূমি ছিনি নিব।
    একগুন শাস্তি তোর ত্রিগুন করিব॥
    ওরূপ থুইলে চণ্ডি একতার করিয়া।
    বৃদ্ধ ব্রাহ্মনি হইল কায়া বদলাইয়া॥
    পাঞ্জি পুথি নইলে কত বগলে করিয়া।
    তেপথা আন্তায় রহিল ধিয়ান ধরিয়া॥
    আগ পাচ কথা পণ্ডিত কিছুই না ভাবিল।
    ঐ দিয়া পণ্ডিত ঘোড়া মারি দিল॥
    মিনতি করি কথা বামনি বলিবার নাগিল॥
    ব্রাম্মনি বলে হারে পণ্ডিত কার গ্রানে চাও।
    কোথায় গিয়াছিলু গনাপাড়া করিতে।
    বহুত বহুত দান দক্‌খিনা দেখি তোর হস্তের উপর।
    কি কি দান পাইয়াছ হস্তের উপর তার সংবাদ বল আমার বরাবর॥
    পণ্ডিত বলে ব্রাম্মনি কার প্রানে চাও।
    মহারাজা সন্ন্যাস হএছে রাজ্যের ঈশ্বর।
    গনা পাড়া করিতে গিয়াছি রাজ দরবার॥
    পাচখান তালুক দিয়াছে হামার বরাবর।
    পাচটা ঘোড়া দিয়াছে হামার বরাবর॥
    পাচ শত টাকা দিয়াছে হস্তের উপর।
    পাচখান কাপড় দিয়াছে আমার বরাবর॥
    আশিব্বাদ করি জাব আপনার মহল॥
    ব্রাম্মনি বলে হারে পণ্ডিত কার প্রানে চাও।

    ভালুক ভূমি পাইছিস সাধি পাড়ি যাব।
    ঘোড়া পাচটা পাইছিস চড়িয়া ব্যাড়াব॥
    টাকা গুন পাইছিস ভাঙ্গাইয়া খাব।
    কাপড় গালা পাইছিল পিন্দিয়া ব্যাড়াব॥
    কল্য আমি গিয়াছি রাজার ভিত্তিরা মহল।
    একশত রানি ছাড়ে রাজা মহলের ভিতর॥
    ছোট রানি খুইছে বোলে পণ্ডিতের কারন।
    এই কথা জাইয়া বল রাজ দরবার॥
    ওহে রাজা ওহে রাজা বিলাতের নাগর।
    একশত রানি ছাড়ও মহলের ভিতর॥
    আমার ঘরে ব্রাহ্মনি আছে সে বড় গ্যাদর।
    রান্নাবাড়ার ভাস নাই চলনের পবিস্তর॥
    শিশুআ রানিটাকে পণ্ডিতক দান কর।
    রান্দুনি করিয়া রাখি এ বার বৎসর॥
    চণ্ডি মাতার কথা পণ্ডিত ব্রথা না করিল।
    রাজার দরবারে ঘোড়া দাবড়াইল॥
    জখন খেতু ছোড়া পণ্ডিতক দেখিল।
    মিনতি করি কথা কহিতে নাগিল॥
    খেতু বলে শুন ঠাকুর বাক্য আমার ন্যাও।
    কি কি দান নাহি পাও হস্তের উপর।
    তার সংবাদ বল আমার বরাবর॥
    পণ্ডিত বলে হারে খেতু কার প্রানে চাও।
    রাজার চাকর তুই রাজার নফর।
    গোলাম হইয়া দিতে পার দানের সম্মল॥
    জে জে দান দিয়াছেন সকলি পাইছি।
    আপন হুকুমে দান আমি রাজার কাছে খুজি॥
    ওহে রাজা ওহে রাজা বিলাতের নাগর।
    একশত রানি ছাড়েছেন মহলের ভিতর॥

    শিশুআ রানিকে পণ্ডিতক দান কর।
    রান্দুনি করি রাখিব এ বার বৎসর॥
    জখন ধম্মি রাজা এ সংবাদ শুনিল।
    দয়ার ভাই খেতু বলি ডাকিতে নাগিল॥
    কি কর ভাই খেতু কার প্রানে চাও।
    জে দিয়াছেন দান দক্‌খিনা সেও ফেরত ন্যাও॥
    তহবিলের ঘোড়া বান্দ তহবিলে নিগিয়া।
    গালে চওড় দিয়া টাকা কাড়ি ন্যাও।
    নাথি মারি বেটার ভূমি ছিনি ন্যাও॥
    একগুন শাস্তি পণ্ডিতের ত্রিগুন করাও॥
    খেতু বলে হারে পণ্ডিত কার প্রানে চাও।
    জে রানির জন্য আমার দৌড়াদৌড়ি।
    সেই রানির জন্য আসিয়াছ পণ্ডিত অধিকারি॥
    জে দিয়াছে দান দক্‌খিনা সকলি ফেরত নইল।
    ঘাড়ে হাত দিয়া পণ্ডিতক দরবার হইতে বাহির করি দিল॥
    পণ্ডিতের চাইতে পণ্ডিতানি সিয়ান।
    আকাশে পাতালে বেটি ধরিয়াছে ধিয়ান॥
    বাড়ি হইতে নিয়া গ্যাল পণ্ডিতক বুদ্ধি ভরসা দিয়া।
    এত ক্যান মাইর পিট করে পণ্ডিতক দরবারে নিগিয়া॥
    রাজদরবারে পণ্ডিতানি দরশন দিল।
    খেতুআর তরে কথা বলিবার নাগিল।
    পণ্ডিতানি কহে কথা হারে খেতু এই তোর ব্যাবহার।
    বাড়ি হইতে আ’নলেন ঠাকুরক বুদ্ধি ভরসা দিয়া।
    এত ক্যান অপমান কর দরবারে অনিয়া॥
    খেতু বলে শুন পণ্ডিতানি বাক্য আমার ন্যাও।
    জে রানির জন্য আমার দৌড়াদৌড়ি।
    সেই রানির জন্য আইসাছে তোর পণ্ডিত অধিকারি॥
    জখন পণ্ডিতানি একথা শুনিল।
    খেতুআর তরে কথা বলিবার নাগিল।
    উত্তি সরেক খেতু ছোড়া উত্তি সরেক তুই।
    ক্যামন রানি চাবার আ’স্‌ছে অক রানি দ্যাওছোঁ মুই॥

    জরে খাইলে কাল মোর আছাড়ে ভাঙ্গিল দাত।
    ছোট রানির চাইতে মুই আছুনু ভাল॥
    ছোট রানির পৈরানা জদিছ মুই ব্রাম্মনি পাওঁ।
    উহার থাকি উজ্জল আমাক দেখিতে পাও॥
    ওদিগে জারে খেতু ছোড়া ওদিগে জারে তুই।
    ক্যামন রানি চাহিবার আইসাছে রানি দ্যাওছোঁ মুই॥
    দুই হস্ত ধরিলে পণ্ডিতের পণ্ডিতানি জোর করিয়া।
    দুই গালে দুই চওড় মারিলে পণ্ডিতের পণ্ডিতানি জোর করিয়া॥
    পাও ধরোঁ পণ্ডিতানি হস্ত ধরোঁ তোর।
    অধিক করি না মারিস আমার গালের উপর॥
    মুখের জবাবে হারাইলাম ঘোড়া আর কাপড়॥
    পণ্ডিতানি বলে পণ্ডিত কার প্রানে চাও।
    তখনি পণ্ডিতানি এ নাম পাড়াব।
    জে দিয়াছে দান দক্‌খিনা সকলি ফেরত নইব॥
    পণ্ডিতের হস্ত পণ্ডিতানি ধরিল চিপিয়া।
    রাজ দরবারে নাগি গ্যাল চলিয়া॥
    মহারাজ—ব্রাম্মনে গননা করে ব্রাম্মনি তিথি চায়।
    ইহার দান দক্‌খিনা ফেরত নইলে মহাপাপ হয়॥
    জখন ধম্মি রাজা পাপের নাম শুনিল।
    রাধা কৃষ্ণ বলি ধম্মি রাজা কন্নে হস্ত দিল॥
    দয়ার ভাই খেতু বলি ডাকিতে নাগিল॥
    রাজা বলে হারে খেতু কার প্রানে চাও।
    জে দিয়াছেন দান দক্‌খিনা সকলি ফেরত দ্যাও॥
    পণ্ডিতানি আইল জখন দরবারে বলি।
    বেশি করি পাচ টাকা দ্যাও পণ্ডিতানিক হস্তে তুলিয়া॥
    দান দক্‌খিনা পাইলে পণ্ডিত বিস্তর করিয়া।
    আপনার মহলক নাগি পণ্ডিত চলিল হাটিয়া॥