গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড)/টীকাটিপ্পনী/গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস (যোগীর পুঁথি)

গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস

প্রথমে বন্দিল সিদ্ধা ইত্যাদি—মুসলমান কবি কর্ত্তৃক হিন্দু দেবদেবীর বন্দনা লক্ষণীয়।
গোরেক হরিহর—শিবাবতার গোবক্ষনাথ।

পৃষ্ঠা ৩৯৮

যবন—পুরাকালে যবন শব্দে উত্তর-পশ্চিমসীমান্তবাসী যে কোন জাতিকে বুঝাইত। যবনগণ কাম্বোজ, শক, পারদ, পহ্লব ও কিরাতগণের সহিত পতিত ক্ষত্রিয় মধ্যে গণ্য হইত (মনু ১০।৪৪)। সগর রাজা কতকগুলি প্রজাকে বিশেষ অপরাধে তাহাদিগের মস্তক মুণ্ডন করিয়া ভারতবর্ষ হইতে বাহির করিয়া দেন। তাহারাই যবন নামে প্রসিদ্ধ হয় (বিষ্ণুপুরাণ)। পরবর্ত্তীকালে গ্রীক, য়িহুদা, তুর্কী প্রভৃতি বহু জাতি যবন বলিয়া আখ্যাত হইয়াছে। অধুনা অর্থ সঙ্কীর্ণতা ঘটিয়াছে। হিব্রু য ৱ ন্‌, আ° য়ু না ন্।
এক রাত্রি না বঞ্চিল ইত্যাদি—শ্রেষ্ঠ পুরুষগণের জন্ম এইরূপই রহস্যময়।
মুনির—ময়নামতীর।
উজালা—আলোকময়, উজ্জ্বল।
ষষ্ঠী আচার—জন্মের ষষ্ঠ রাত্রে শিশুর কল্যাণ কামনায় যে পূজা হয়।

পৃষ্ঠা ৩৯৯

কর্ণের ছেদন—কর্ণবেধ।
গুণবর্তী দাই—পূর্ব্বে সোনা দাই (পৃ° ৪৯)।
জোশে—√জু ষ্ সেবনে।
গুফা—গুহা। ও° গু ম্ফা।

পৃষ্ঠা ৪০০

পাতিল ডুবাইবে—বিবাহের পূর্ব্বে অনুষ্ঠেয় লৌকিক আচার ভেদ।
তৎকাল—তৎপর অর্থে।

পৃষ্ঠা ৪০১

হেথা—প্রা° এ ত্থ (অত্র)।

পৃষ্ঠা ৪০৩

মুরারি—মাধুরী।

পৃষ্ঠা ৪০৪

অতি যোগ—অতিশয় জনতা।
সম্ভোগ—আনন্দোৎসব।
ধাঙসা—বড় দামামা।
জোড়খাই—আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্র-বিশেষ।
কাড়া—(কটাহের আকৃতি) আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্র।
টিকারা—দুন্দুভি।
ভেউড়—শিঙ্গাভেদ।
তরঙ্গ বাজনা—তুমুল বাদ্যোদ্যম বা ‘জলতরঙ্গ’।
নয়—না।
পাখয়াজ—প্রা° প ক্ খা উ জ্জ (পক্ষাতোদ্য); ফা° প খ্ ৱা জ্।
মন্দিরা—মন্দিরাকৃতি বলিয়া।
মোহন মুরারী—মোহন বাঁশী।
সারিন্দা—স° সারঙ্গ।
পড়া—স° পটহ।
কপিনাস—বাদ্যযন্ত্রভেদ।
মুচঙ্গ—বাদ্যযন্ত্রভেদ।
তানপুরা—তম্বুরা।

পৃষ্ঠা ৪০৫

আলম—ঝাণ্ডা, পতাকা। আ° অ ল ম।
পাইল—পালি, দোয়ার, গানের যাহারা ধুআ ধরে।
উপটন—অনুলেপন, Cosmetic। মৎসম্পাদিত মনসামঙ্গলে ‘উবটন’। প্রা° উ ব্ ব ট ণ (উ দ্ব র্ত্ত ন)।
বৈরাতি—বরযাত্রী।
মগ্ন হয়—বিমোহিত হয়।
জলপথে মান্য দিল ইত্যাদি—ইহা হইতে অনুমান হয় ঘটনাস্থল নদীবহুল।

পৃষ্ঠা ৪০৬

সদাই পান তামাক খায়—স্ত্রীলোকের ধূমপান লক্ষণীয়।
কানু—অপ° প্রা° কা হ্নু।
ছোট কন্যা পদুনা ইত্যাদি—গোপীচন্দ্রের গানে ‘রদুনাক বিবাও কৈল্লে পদুনাক পাইল দানে।’ (পৃ° ৫৩) এবং গোবিন্দচন্দ্র গীতে ‘উদুনা করিয়া বিভা পুদুনা পাইল দান।’ (পৃ° ৫৮)।

পৃষ্ঠা ৪০৭

হাটকুর বলিবি—‘হাটকুর বলাবি’ বোধ হয়। পূর্ব্বে ‘আট কুড়া’।
এথা—প্রা° এ ত্থ (অত্র)।
চিন্তন—চিন্তাযুক্ত।
এহিমনে—এইরূপে, এমতাবস্থায়।
মুনিকে আনি ইত্যাদি—পাঠান্তর ‘মুনিখে আনিঞা রাজার কর বিশর্জ্জ্যন।’
বিসর্জ্জন—(এখানে) অগ্নিসাৎ।

পৃষ্ঠা ৪০৯

শুভাচার—কুশল।
ষোল রাজ্যের ঈশ্বর—১৬ প্রদেশের শাসনকর্তা।
ভুলি—প্রা° ডো লি আ (দোলিকা), ডো লা; প্রাচ্য হি°, সি° ডো লী।

পৃষ্ঠা ৪১০

ভিজা—√ভি জ্ (স° অভি-√অ ন্ জ্)।
উদরে—সামীপ্য অর্থে।
ফান্দ—হি° ফ ন্দা।
গুরু সেব নাম জপ—গুরু-প্রশংসা।
করতার—কর্ত্তার, ঈশ্বর।
অমর হয় কন্ধ—দীর্ঘজীবী হয়।

পৃষ্ঠা ৪১১

ফুলবাড়ী—প্রা° * ফু ল্ল ৱা ড়ি আ (ফুল্লৱাটিকা); হি° ফু ল ৱা রী।

পৃষ্ঠা ৪১২

চৌষটি—প্রা° চ উ স ট্‌ ঠি (চতুঃষষ্টি)।

পৃষ্ঠা ৪১৪

ননীয়া নন্দনগরে ইত্যাদি—ইহা হইতে কবিকে চৈতন্যদেবের পরবর্ত্তী বলিয়াই মনে হয়।
নৌ লাখ—নয় লক্ষ।

পৃষ্ঠা ৪১৫

নাথ—নাথ-সম্প্রদায়ভুক্ত সাধক।

পৃষ্ঠা ৪১৬

বিহান—প্রা° বি হা ণ (বিভাত)।
চোমুড়া—চারিদিক্ বেড়িয়া। প্রা° চ উ এবং মুড়া (স° √মু র্ বেষ্টনে)।
কওন—কথন>কহন>কওন।
বেলদার—কোদালিয়া, খনক। হি° বেল, কোদাল এবং ফা° দার।
খন্দক—গর্ত্ত। ফা°।
পূর্ব্বে শাপ দিয়াছিলেন ইত্যাদি—শাপ বৃত্তান্ত গোরক্ষবিজয়ে দ্রষ্টব্য (পৃ° ১৬-২১)।

পৃষ্ঠা ৪১৭

চোরাশী—প্রা° চ উ রা সী (চতুরশীতি)।

পৃষ্ঠা ৪১৮

গড়—‘গঢ়ো দুগ্‌গে’ (গঢ়ো দুর্গম্)—দেশীনামালা।
হন্তে—হইতে। প্রা° হিং ত পঞ্চমীর বহুবচনের চিহ্ন; আর্যপ্রাকৃত ও অর্দ্ধমাগধীতে ৫ মীর ১ বচনেও ‘হিং ত’ হয়।
যোগ পাটা—যজ্ঞকালে ধারণীয় উত্তরীয়। স্বর্গীয় মহামহোপাধ্যায় সুধাকর দ্বিবেদী মহাশয় জোগোটা অর্থে ‘যোগ কো সাফ করনেবালা বা যোগ কা আধার’ লিখিয়াছেন।

পৃষ্ঠা ৪১৯

হাতে মাথে কান্দে—অত্যন্ত খেদান্বিত হইল; idiom।
বিজয় গমন—বিজয় শব্দও গমনার্থক।
হাড়িয়া চামর—হারিয়া ছোঁহর দ্র°।

পৃষ্ঠা ৪২০

সত্বরিয়া—‘সঙরিয়া’ হইবে বোধ হয়।

পৃষ্ঠা ৪২১

তুরিত—প্রা° ও পা°।
ফাফর—কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ়। হি° ফে ফ র (স্তম্ভিত)।

পৃষ্ঠা ৪২২

ঝুল—দোল।
ছাই—প্রা° ছা হী। (ছায়া); হি° ছাঁ হ।
ডাল কোমর—ডাল-কুমড়া এক প্রকার কৃত্যা।

পৃষ্ঠা ৪২৩

খুজিনু—আ° খা ও য হইতে।

পৃষ্ঠা ৪২৫

আউট হাত কেশ—সাড়ে তিন হাত কেশ। মাধব কন্দলিকৃত সুন্দরা কাণ্ডে ‘আ উ ঠ হাতের কেশ এক গোটা বেণী’, শ্রীকৃষ্ণ বিজয়ে ‘আ উ ট হাত প্রমাণ আমার কলেবরে’।
উভ—প্রা° উ ব্ ভ (উর্দ্ধ)।
সঞ্চে—সন্ধিতে।

পৃষ্ঠা ৪২৬

কুলী—প্রা° কো ই ল।

পৃষ্ঠা ৪২৭

বিয়াখিত—প্রশংসা।

পৃষ্ঠা ৪২৯

চুল—অঞ্জলি। স° চু লু ক; হি° চু ল্লু।
পিতে—পান করিতে।
সোনার—স্বর্ণকার। প্রা° সো ণা র (সুবর্ণকার); প্রাচ্য হি° সো না র।

পৃষ্ঠা ৪৩১

ধুতুরা—* প্রা° ধু ত্থু র।

পৃষ্ঠা ৪৩৪

ভুসন—ভস্ম। পূর্ব্বে ‘ভুসঙ্গ’।
খেলার সখি গেছে ইত্যাদি—ভবানী দাসের পাঁচালীতে ‘আর সাক্ষী আছে রাজা সাউধ লক্ষ্মীর।’ (পৃ° ৩৫০)।
পতুকা—বস্ত্রখণ্ড, উত্তরীয়।
অষ্টাঙ্গ—পায়ের দুই বৃদ্ধাঙ্গুলি, ২ হাঁটু, ২ হাত, বক্ষ ও নাসিকা।
দাগা—পীড়া, ব্যথা। ফা° দ গা, প্রতারণা।
ফন্দ—ফাঁশ। ফা°।
অন্যের মায়ে বলে ইত্যাদি—ভবানী দাসের পাঁচালীতে,—

আরের মাহে বেটা চাহে রাখিবাবে ঘরে।
তুমি মাত্র কহ মোরে যোগী হইবারে।
আর মাএ পুত্র দেখি দুগ্ধ ভাত খিলাএ
নাতি পুতি লৈয়া হবে আনন্দে গোঁয়াএ।

(পৃ ৩৪০)

পৃষ্ঠা ৪৩৭

কতি—বিদ্যা°, চৈ° ভা° প্রভৃতিতে; কৃ° কী°এ ‘কতী’; শূ° পু°’এ ‘কথি’। প্রা° কু ত্থ (কুত্র)।
নিদ্রাআলি—নিদ্রার অধিষ্ঠাত্রী দেবী।

পৃষ্ঠা ৪৩৮

সহস্র কোটা রত্ন ইত্যাদি—মহারস (শুক্র) সহস্র কোটা রত্ন সদৃশ মূল্যবান।
সিংহের আকার ইত্যাদি—‘দিন কী মোহিনী রাত কী বাঘিনী’ ইত্যাদি দোঁহা তুল°।
বেছোন—বীজ ধান্য। যশোহরে বে চ ন।
লোহা দিয়া বান্ধে ইত্যাদি—পাঁচালীতে ‘নাঙ্গল গড়াএ জে মাটিএ জাএ খএ।’ (পৃ ৩৪০)।
কাঁচা—কঞ্চি (ফা° ক ম্ চী) হইতে। [?]
আট হাত বৃক্ষ—সাড়ে তিন হাত পরিমিত দেহ যষ্টি। আট<আ উ ট<আ হু ঠ; হি° হোঁ টা (বিরল প্রযুক্ত); অন্য আর্য্য-ভাষায়ও আছে। স° অর্ধ-চতুর্থ > * অ ড্ ঢ-চ তু ট্‌ ঠ, * অ ড্ ঢ-জ দু ট্ ঠ, * অ ড্ ঢ-অ উ ট্ ঠ, অ ড্ ঢু ট্ ঠ (জৈন প্রাকৃত)> আ ঢু ঠ।
[ডা° সুনীতিকুমার চট্টো°]
যোড়ামুটি ফল—পীবর কুচ যুগল। প্রা° মু ট্‌ ঠি।
ভক্ষণ নয়—ভক্ষা নয় অথাৎ উপভোগের অযোগ্য।
সেই ধন—মহারস।
আধার—আধেয় অর্থে।
ভুঞ্জিলে—ব্যয়িত হইলে।

পৃষ্ঠা ৪৩৯

ঠাণ্ডা—প্রা° ঠ ড ঢ (স্তব্ধ)।
পিয়ে—প্রা° পি অ ই, পি য় ই (পিরতি)।
কুকধরণী—গর্ভধারিণী; পূর্ব্বে ‘কু কি ধ ন্নি’।
জিয়ে—প্রা° জি অ ই (জীবতি)।
ষোল বঙ্গের রাজাই—তদানীন্তন বঙ্গের ১৬ টি বিভাগের অধিকার। ময়নাবুড়ীর পূজার মন্ত্রে ‘থান মধ্যে বন্দোঁ মা গৌর সোল থান’।
ব্রহ্মগুণে—ব্রহ্মতেজে বা দৈব শক্তির বলে।

পৃষ্ঠা ৪৪০

রাম রাম—ঘৃণায়।
মুখের তাম্বূল ইত্যাদি—অবজ্ঞায়।
আর নাহি মূল—(মর্ম্মার্থ) একবারে মজিলাম, আর শ্রেয়ঃ নাই।
কামার—প্রা° ক ম্মা র, ক ম্ম আ র।
অসম্ভবে—অবর্ত্তমানে।
মারিল কপালে—কপালে করাঘাত আক্ষেপে।
বান্ধিয়াছে চূড়া—শীর্ষ-স্থান অধিকার করিয়াছে।

পৃষ্ঠা ৪৪১

কপালের ফলে—সৌভাগ্য-বশে।
অনাদ্যের ঘাম হৈতে ইত্যাদি—গোরক্ষ বিজয়ে সিদ্ধাগণের উৎপত্তি ভিন্নরূপ।

পৃষ্ঠা ৪৪২

প্রজাপতি—‘পালয়িত’ অর্থে।
হরি—হর অর্থে।

পৃষ্ঠা ৪৪৩

সায়—অভিপ্রায়, ইচ্ছা।
গোর্খনাথ হইল শিবমুণ্ডে ইত্যাদি—গোরক্ষ-বিজয় দ্র°।

পৃষ্ঠা ৪৪৪

হাদিছ—মুসলমান স্মৃতি। আ° হ দি স্।
পড়িবার দিল ইত্যাদি—বালিকার বিদ্যাশিক্ষা।

পৃষ্ঠা ৪৪৫

বালক—বালিকা অর্থে; বালকার্থক বা লা শব্দ লক্ষণীয়।
নাম খিয়াতিক রাখিব—তুল° ‘এই নাও পাড়াবো’।
পুরুন আছিল ইত্যাদি—গুরু গোরক্ষনাথের পরনে ধাতুময় কৌপীন ও কানে মোতি-(কুণ্ডল) দেখিলাম। মোতি—প্রা° মো ত্তি অ (মৌক্তিক) হি° ম° প্রভৃতিতে মো তী।
বগলী—বাটুয়া। ফা° ব গ্ লী।

পৃষ্ঠা ৪৪৬

ফুল টঙ্গি—তুল° নিকুঞ্জ-মন্দির।
খোয়া—ঘন ক্ষীর ৷ হি°।

পৃষ্ঠা ৪৪৭

স্থানে স্থানে—একটু আধটু।
চোদ্দ বেদ—ঋক্, সাম, যজুঃ, অথর্ব্ব চারি বেদ; শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দঃ, জ্যোতিষ ছয় বেদাঙ্গ এবং ধর্ম্মশাস্ত্র, পুরাণ, মীমাংলা ও তর্ক এই চতুর্দ্দশ বিদ্যা।

অঙ্গানি বেদশ্চত্বারো মীমাংসা ন্যায়বিস্তরঃ।
ধর্ম্মশাস্ত্রং পুরাণঞ্চ বিদ্যা হ্যেতাশ্চতুর্দ্দশঃ॥

চতুর্থ ভুবন—ভূঃ ভুবঃ, স্বঃ, মহঃ, জন, তপ, সত্য সপ্ত স্বর্গ এবং অতল, সুতল, বিতল, তলাতল, মহাতল, রসাতল ও পাতল সপ্ত পাতল।

পৃষ্ঠা ৪৪৮

শৃঙ্গার স্বামী বিনে ইত্যাদি—ধাতুসম্বন্ধ ব্যতীত গর্ভসঞ্চার হইবে এবং তাহাতেই গোপীচন্দ্রের জন্ম হইবে। [মহাপুরুষগণের উদ্ভবও ঐরূপে হইয়া থাকে।]

পৃষ্ঠা ৪৪৯

রাজাপুত্র সুত—‘রাজপুত্র’-ই যথেষ্ট।
চার যুগ বেড়াই—অমর হইয়া চারি যুগ বিচরণ করি।

পৃষ্ঠা ৪৫০

পরতেক—প্রত্যক্ষ।
যোগবলে রাখিয়াছিলাম ইত্যাদি—যোগবলে দীর্ঘজীবন লাভ। ঋগ্বেদে মানুষের আয়ুর পরিমাণ শত বৎসর ২।২৭।১০, ৩।৩৬।১০, ৫।৫৪।১৫, ৭।১০।১৬, ১০।১৬১।৪; কিন্ত পুরাণাদিতে সহস্র বৎসরেও কুলায় না।
স্ত্রীর সেবক হয় ইত্যাদি—পত্নীকে গুরু করিলে পুরুষ প্রত্যবায়-ভাগী হয় (পৃষ্ঠা ৩৪৭)।

পৃষ্ঠা ৪৫১

বাইন—তক্তার জোড়মুখ, joining in planks।
খাকের খাটী মাটী ইত্যাদি—যোগের ভাষা, বুঝা গেল না।
চোহুড়—চৈর, লগি, ধ্বজী। প্রবাদে ‘আগে জলের ছিটা পরে চইরের গুতা।’; রঘুনাথ চক্রবর্ত্তী কৃত অমরের টীকায় ‘নৌকাদণ্ডেতি। দ্বয়ং চৌড় ইতি খ্যাতে।’
মনুরা—মন ৷ মুসলমানী বাঙ্গালা; আ° ম ন ব রা।
হৃদয় সবায়ে—সর্ব্বান্তঃকরণে।
জিটে—যে স্থানে।
নিরাঞ্জন বদলে ইত্যাদি—(মর্ম্মার্থ) ধর্ম্মের পরিবর্ত্তে যে গুরুকে ভজনা করে [সে সদ্গতি লাভ করে]; গুরু ব্যতীত কি ধর্ম্ম-লাভ সম্বব? অর্থাৎ কখনই না।
দেহের মধ্যে গয়া গঙ্গা ইত্যাদি—সাধকরঞ্জনে,—

মেরুদণ্ড পাশে উজ্জ্বল প্রকাশে
রবি শশী দুই জনা।
ইড়া বাম স্থানে পিঙ্গলা দক্ষিণে
মধ্যে নাড়ী সুষুমনা॥
বামে ভাগীরথী মধ্যে সরস্বতী
দক্ষিণে যমুনা বয়।
মূলাধারে গিয়ে একত্র হইয়ে
ত্রিবেণী তাহারে কয়॥

মতান্তরে,—

ইড়ায়াং যমুনা দেবী পিঙ্গলায়াং সরস্বতী।
সুষুম্নায়াং বসেদ্‌গঙ্গা তাসাং যোগো দ্বিধা ভবেৎ॥
সঙ্গতা ধ্বজমূলেচ বিমুক্তা ভ্রূবিয়োগতঃ।
ত্রিবেণীযোগঃ সা প্রোক্তা তত্র স্নানং মহাফলম্॥

খরিদ—ফা° খ রী দ্।
অজপা নাম—স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস দ্বারা সাধ্য ‘হং সঃ’ মন্ত্র।
পাঁচ মাণিক আছে ইত্যাদি—যোগ শাস্ত্রের ভাষা।

পৃষ্ঠা ৪৫২

যমে দিবে হানা—যম আসিয়া চড়াও হইবে।
চিন দিবা রাতি—প্রকৃত রহস্য বুঝ।
আব আতশ থাক ইত্যাদি—(মর্ম্মার্থ) শীতাতপ সহ্য কর, (সমান ভাবনা কর); গৃহবাস ত্যাগ করিয়া বৃক্ষতল আশ্রয় কর। আব—জল। ফা°। আতশ—অগ্নি। ফা°। থাক—‘খাক’ হইবে; অর্থ—মৃত্তিকা। বাদ—বাত, বায়ু ৷ নিশি—নিশাকর।
মনে কিছু নাই—নিঃসন্দেহ।
কন্যা বিহনে—পত্নী ত্যাগ করিয়া।

পৃষ্ঠা ৪৫৩

শিথের সেন্দুর—পতি। সেন্দূর—প্রা°।
সরম না করে ইত্যাদি—কেশ বেশ সম্বরণ করে না।
নয়নের কাজল—পরমাত্মীয়, পতি।

পৃষ্ঠা ৪৫৪

কন্যা বাদলা লিবে তব—‘কন্যা বাদ না লিবে তবে’ হইবে বোধ হয়।
হয়রান—সারা, শ্রান্ত। আ°।
হেকমত লাগিল মন—কৌশলটি মনে ধরিল। হেকমত—আ°।
খেতুক মান্য দিল চারি চারি—খেতুকে চারি রাণী চারি প্রকার পুরস্কার করিল।
থর—গুচ্ছ। স° স্ত র।
বিয়ানি—বেণী।
মনঝুরী—খোঁপার নাম হইতে পারে।
আগরী কস্তুরী গুল—অগুরু কস্তুরীর ব্যবহার অতি প্রাচীন। গুল—গুগ্‌গুল অথবা গোলাপ ফুল।
ঝাপা—কেশে লম্বিত পুষ্পগুচ্ছ।
সেন্দুরে উদিত দিনকর—তুল° ‘শিশত সিন্দূর শোভে উয়ে যেন সূর’ কৃ° কী°।

পৃষ্ঠা ৪৫৫

বেশর—অর্দ্ধচন্দ্রকার নাসালঙ্কার।
গজমতি—গজকুম্ভজাত মোতি। আট প্রকার মুক্তার মধ্যে গজমুক্তাই উৎকৃষ্ট।
মতি—প্রা° মো ত্তী।
শারিন্দার লীলা—সারঙ্গ (ত্রিতন্ত্রী বাদ্যযন্ত্রভেদ) সদৃশ।

পৃষ্ঠা ৪৫৬

গহুরি—পদাভরণ-ভেদ।
অতিকুল করতাল ইত্যাদি—করতল অতিশয় সুন্দর, (সৌন্দর্য্যে) শতদলও হারি মানে।
সিংহ ডম্বু জিনি ইত্যাদি—তুল° ‘মাজা যে ডম্বরু সিংহিনী আকার নিতম্ব বিমান চাক’। ডম্বু—ডমরু?
খুন্দুরু কন পরিল হাতলী—বিকৃত পাঠ মনে হয়।
পরিল লঙ্কার সাড়ী ইত্যাদি—লঙ্কাজাত শাড়ী পরিধান করায় (বস্ত্রাবৃত) কণকগিরির শোভা ধারণ করিল। কুম্ভ—শতকুম্ভ, সুবর্ণগিরি।

চুলটী,
উছটী,
পাসলী

পদাঙ্গুলি-ভূষণ


পৃষ্ঠা ৪৫৭

শৃঙ্গার—বেশভূষা।
হুরে—সুরে। [?]
আট বার বৎসরের—‘আট চার বৎসরের’ হইবে।
তের—প্রা° তে র হ.

পৃষ্ঠা ৪৫৮

মলিন—দুঃখ।
গুমান—গৌরব, গর্ব্ব। ফা°।
পৌষ৷ আন্ধারি—পৌষ মাসের মেঘবাদল। আন্ধারি—বাত্যা। হি° অঁ ধা রী।
মহা ভারি—দুঃসহ।
লিয়ালি—ভারি লেপ। গো° বি°’এ নে হা লি।
আভরণ—আবরণ।
উড়ন—‘ওড়ন’ দ্র°।
ফাগুন—প্রা° ফ গ্ গু ণ।
সোহাগিনী—‘অনাথিনী,’ ‘চতুরিণী,’ ‘রজকিনী,’ ‘গোপিনী,’ প্রভৃতি পদ তুল°।
ডহ ডহ—ধক্‌ধক্ করিয়া পূড়িতেছে; সন্তপ্ত।
ঘরণী—প্রা°।
অগণি—প্রা° অ গ ণী।
ইন্দ্রা—‘ইন্দারা’ শব্দ দ্র°।
হুখান—শুষ্ক।

পৃষ্ঠা ৪৬০

যমুনার তরঙ্গ—ভরা গাঙ্।
মহাকাল—মাকাল ফল যেমন অভক্ষ্য সেইরূপ অর্থাৎ ব্যর্থ।
তরল সাঁতার—স্রোতমুখে টানা সাঁতার এবং সেইহেতু বিপদ-সঙ্কুল।
চতুর্ভুজা—দুই হাতের স্থানে চারি হাত সৌভাগোর লক্ষণ।
কাচুলি—প্রা° ক ঞ্চু লি আ।
ধুতুরার ফুল—শিবপূজা ব্যতীত বড় একটা অন্য কাজে লাগে না।
তাঁতির বাড়ীর কাপড় নয় ইত্যাদি—‘ধান চাউল বসন নহে’ ইত্যাদি কয় পঙ্‌ক্তি তুল° (পৃ° ৩৩৭)। তাঁতি—স° স° ত ন্ত্রি। ধান—সিন্দুর-বিক্রেতা হইতে পারে।

পৃষ্ঠা ৪৬১

মোহর বান্ধিব—মুদ্রাঙ্কিত কবিয়া রাখিব; পূর্ব্বে ‘মোহর মারিমু’ (পৃ° ৩৩৭)।
কাবাই—কাপাই দ্র°।
ভাটিয়া সরিবে—ঢলিয়া পড়িবে।

পৃষ্ঠা ৪৬৩

সাদা—ভিক্ষা-পাত্র।
নাহিন্—প্রা° না হিং (নহি)।
দামিড়া—ঘরের দাওয়া। [?]

পৃষ্ঠা ৪৬৪

যমের স্ত্রীর সঙ্গে ইত্যাদি—‘জেই যমের ডরে’ ইত্যাদি ৮ পঙ্‌ক্তি তুল° (পৃ° ৩৭৯)।
সয়ালি পাতাব—সখী-সম্বন্ধ হাপন করিব।
মালই—মালাই চাকি, rotula।
সেবায় মানাব—সেবা দ্বারা সন্তুষ্ট করিব।
টুণ্ডা—হস্তহীন। দেশী প্রা° টুং ট।

পৃষ্ঠা ৪৬৫

দাড়ুকা—পায়ের বেড়ী।
বেগর—ব্যতীত। ফা° ব গ এ র।
জিঞ্জির—শৃঙ্খল। ফা° জ ন্‌ জী র।
দশান্তরে যাবে প্রভু ইত্যাদি—‘জে দেশে জাইবা প্রিয়া’ ইত্যাদি কয় পঙ্‌ক্তি তুল°।
মাগুয়া যুগী—স্ত্রী সহ যাহারা যোগপথ অবলম্বন করে অর্থাৎ ভণ্ড যোগী।

পৃষ্ঠা ৪৬৭

ত্রিশ কোটী দেবতা—বৈদিক দেবতা দ্যুলোকে ১১, ভূলোকে ১১, অন্তরীক্ষে ১১, সাকল্যে ৩৩। তাহাই পুরাণে ৩৩ কোটী। [বেদবাণী বিশ্বদের প্রবন্ধ দ্র°।]
দুম্মন—শত্রু। ফা° দু ষ্ ম ন্।

পৃষ্ঠা ৪৬৯

খির—ক্ষীর, স্তন্য। প্রা° খী র।
বিড়া—পানের খিলি। * প্রা° ভি ড়ী, প্রা° বি ড়ি আ।
অঝুরেতে ঝরে—অজস্র ধারায় অশ্রু বর্ষণ করে।

পৃষ্ঠা ৪৭০

সরদার—প্রধান। ফা°।

পৃষ্ঠা ৪৭১

থোড়া—অল্প। প্রা° থো অ ড়ং (স্তোকম্)।
ঘড়া—স° ঘ ট।
বকশীস—পুরস্কার। ফা° ব খ্ শী শ্ (দান)।
সাধ—প্রা° স দ্ধা (শ্রদ্ধা)।

পৃষ্ঠা ৪৭৩

সীসের সেন্দুর—সিঁথার সিন্দুর অর্থাৎ স্বামী। প্রা° সী স্।
তালাই—চেটা; তালপত্রে নির্ম্মিত বলিয়া কি?
জড়িয়া—জড়াইয়া।
ঢেকা—ধাক্কা।

পৃষ্ঠা ৪৭৪

সিদ্ধির ঘোটনা—ভাঙ্গ-চুর্ণ।

পৃষ্ঠা ৪৭৫

পদুমিনী—প্রা° প দু মিণী (পদ্মিনী)।
মাসী—প্রা° মা উ সি আ (মাতুঃ স্বসৃ)।

পৃষ্ঠা ৪৭৬

ঘাত—আঘাত, দুঃখ।
চুকরি—এক প্রকার অম্ল আস্বাদ বিশিষ্ট লাল ফল। ঢাকায় চুকুর, নদীয়ায় চোকরি।
নাচ—প্রা° ণ চ্চ, ন চ্চ (নৃত্য)।
চেড়ী—চেটিকা, দাসী। প্রা°।
চকমকী—অগ্নি উৎপাদক কঠিন পাথর! ঋগ্বেদে অগ্নিকে প্রস্তরের পুত্র বলা হইয়াছে (১০।২০।৭)। তুর্কী চ ক্ ম ক্ অর্থে আলো জ্বালা।

পৃষ্ঠা ৪৭৭

দিবসে জুড়ায় বাতি ইত্যাদি—(মর্ম্মার্থ) হঠাৎ দিনের আলো মরিয়া গেলে ঘোর আঁধার চারিদিক্ ঢাকিয়া ফেলে। অমানিশায় আকাশের তারা কি অলো দিতে পারে?
মাহুর বিষ—তীব্র বিষ, মারাত্মক বিষ; পূর্ব্বে ‘হলাহল হরিনা বিষ’। ফা° মু হ ব (ঝলক)?
সুসার—প্রতুল।

পৃষ্ঠা ৪৭৮

অনুরাগ—বিরাগ অর্থে।
আনা—১৬ ভাগের ভাগ। প্রা° আ ণ অ; অর্ব্বাচীন স° আ ন ক।
গণ্ডা—৪ কড়ায় ১ গণ্ডা। অর্ব্বাচীন স° গ ণ্ডা ক।
পোনে—সিকি কম। প্রা° পা ও ণ (পাদোন); প্রাচ্য হি° প উ নে, ম° পা উ ণ।
আলিম উদ্দিন—ইনি কোন পাঠশালার গুরুমহাশয় হইবেন।
বয়ান—বিবরণ, ব্যাখ্যান। আ°। প্রা° ব য় ণ শব্দ তুল°।
নাপিত আনিয়া রাজার ইত্যাদি—তুল°—

তজা রাজ রাজা ভা জোগী।
অউ কিঁগরী কর গহেউ বিওগী॥
তন বিসঁভর মন বাউর লটা।
উরুঝা পেম পরী সির জটা॥
চন্দ-বদন অউ চন্দন দেহা।
ভসম চঢ়াই কীন্‌হ তন খেহা॥
মেখল সীঁগী চকর ধধাঁরী।
জোগোটা রুদরাছ অধারী॥
কন্থা পহিরি ডণ্ড কর গহা।
সিক হোই কহঁ গোরখ কহা॥
মুঁদরা স্রবন কণ্ঠ জপ-মালা।
কর উদপান কাঁধ বঘ- ছালা॥
পাবরি পায় লীন্‌হ সির ছাতা।
খপ্‌পর লীন্‌হ ভেস কই রাতা॥

—পদুমাবতি, জোগী-খণ্ড। ১২।
নাদ—উর্ণাসূত্রগ্রথিত কৃষ্ণবর্ণ বস্তুবিশেষ।
মুঞ্জ—শর-তৃণ।
মেখলি—কটিবন্ধ।
খপরী—ভিক্ষাপাত্র। প্রা° খ প্ প র (কর্পর)।
মুদ্রা—স্ফটিক বা হাতীর দাঁতের কুণ্ডল।
ষোল বৎসরের রাজা—পূর্ব্বে ‘ষোল বঙ্গের রাজাই’ (পৃ° ৪৩৯)।

পৃষ্ঠা ৪৭৯

একুশ—প্রা° এ ক্ ক বী সা।

পৃষ্ঠা ৪৮০

এলাং ঢুকার খাটা—বুঝা গেল না।
তুমি চন্দ্র তুমি ব্রহ্মা ইত্যাদি—হনুমানের উক্তি।
হাতে মাথে আইনু ধায়া—ব্যস্ত সমস্ত হইয়া দৌড়িয়া আসিলাম।
খাড়া—শীঘ্র। হি° খ ড়া।
পিন্দন ধড়া—পরিহিত বস্ত্র।
কেন মারে—পাছাতে আঘাত বা পাছা দ্বারা আঘাত করে।

পৃষ্ঠা ৪৮১

ডাহিন—প্রা° দা হি ণ।
ছড়া ঝাড়ি—প্রাতে প্রাঙ্গনাদিতে গোবরজল ছিটাইয়া ঝাড়ু দেওয়া।
খুরি—কটোরা।
নাচনী—প্রা° ণ চ্চ ণী (নর্ত্তনী)।

পৃষ্ঠা ৪৮২

দ্বিতীয় অতি নির্ম্মাণ—অদ্বিতীয় নির্ম্মাণ।
কন্নি উপধর—বুঝা গেল না।
কেওয়া—প্রা° কে অ অ (কেতক)।
চটক—ছটা।
সলে—সকলে।

পৃষ্ঠা ৪৮৪

নকুল—মাদকদ্রব্য সেবনের চাট।

পৃষ্ঠা ৪৮৬

মনে কিছু নাই—নিঃসংশয়ে।
নকর—ফা° ন ও ক র্।

পৃষ্ঠা ৪৮৭

মুদি—চাউল-দাইল-বিক্রেতা, a grocer। হি° মো দী।
কামেশ্বরের নাড়ু—মোদকভেদ।
গহনা—হি°।

পৃষ্ঠা ৪৮৮

বিজলী—প্রা° বি জ্জু লী।
মন্ত্র পড়ি তৈল ইত্যাদি—বশীকরণ।
তাড়ফলী—তাটঙ্ক!
লক্ষমূল—লক্ষ টাকা মূল্যের। মূল—প্রা° মু ল্ল।
কড়ি—মদন-কড়ী বা মাক্‌ড়ী।
বাঁক পাতা মল—সংক্ষেপে বাঁক-মল।

পৃষ্ঠা ৪৮৯

তিলোত্তমা—ব্রহ্মা-কর্ত্তৃক সুন্দ-উপসুন্দ নামক অসুরদ্বয়ের বধের নিমিত্ত সমুদায় রত্নের তিল তিল সৌন্দর্য্য লইয়া নির্ম্মিত বলিয়া তিলোত্তমা এই নাম।
ফুলগিরি—ফুলদার। ফা° গ রী।
কোরা—নব বস্ত্র।
বধুঁ—প্রণয়ী। অর্থ সংকীর্ণতা ঘটিয়াছে।
তোসক—ফা° তো শ ক্।
মশারি—কৃত্তিবাসী লঙ্কাকাণ্ডের পুঁথিতে ‘সুবর্ণ খট্টাতে নেতের তুলি জে মা শূ রী।’

পৃষ্ঠা ৪৯১

বোকা—?
নেউড়ী—নেঙ্গড়া, খঞ্জ।

পৃষ্ঠা ৪৯২

বিপত্য—বিপরীত।

পৃষ্ঠা ৪৯৩

কানাই—ঠাকুর, প্রভু ৷ প্রা° ক ণ্ হ।
সুদ্ধি—সন্ধি।
দড়—দৃঢ়। প্রা° দ ঢ়।

পৃষ্ঠা ৪৯৫

সতের—প্রা° স ত্ত র হ (সপ্তদশ)।

পৃষ্ঠা ৪৯৭

কলপিল—গলিয়া গেল।

পৃষ্ঠা ৫০০

নাচার—নিরুপায়। ফা° ন-চা র্ হ।

পৃষ্ঠা ৫০১

পনর—প্রা° প ণ্ণ র হ।

ভৌগোলিক সংস্থান

কলিঙ্কাবন্দর (পৃ° ৬৬, ৯৮, ২২৬)—রাজমহেন্দ্রীর সন্নিহিত।
করতোয়া (পৃ° ২৬১)—কথিত আছে, গৌরীর বিবাহ কালে হরের হস্ত-ক্ষরিত জল হইতে এই নদী উৎপন্ন। ইহার জল অতি পবিত্র, বর্ষাকালেও অশুচি হয় না। পূর্ব্বে করতোয়া বঙ্গ ও কামরূপের মধ্যে প্রবাহিত থাকিয়া উভয় দেশের সীমা নির্দ্দেশ করিত। অধুনা এই নদীর গতি সম্পূর্ণ পরিবর্ত্তিত দেখা যায়। এখন ইহা জলপাইগুড়ির পশ্চিমে বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল হইতে বাহির হইয়া রংপুর অতিক্রম করিয়া বগুড়া জেলার দক্ষিণে হলহলিয়া নদীর সহিত মিলিয়াছে। এইখান হইতে ফুলঝর নামে পরিচিত হইয়া আত্রাই (আত্রেয়ী) নদীতে গিয়া পড়িয়াছে। অনেকের মতে এই ফুলঝরই প্রাচীন করতোয়া। অপরে বলেন, মহানদী ও তিস্তা (ত্রিস্রোতা) মধ্যবর্তী ‘করতো’ নদীই করতোয়া।
মেচ পাড়ার দেশ পৃ° ২৬৭)—কুচবিহার অঞ্চলে হইতে পারে।
নএয়ান গর (পৃ° ৩২৫)—ত্রিপুরা জেলার নুর্ণশর পরগনার নয়ানপুর (A. B. R.)। ‘গর’ (গড়) পুরে পরিণত হইয়া থাকিবে।
গৌড়র সহর—(পৃ° ৩২৫)—প্রাচীন শ্রীহট্টের অপর নাম গৌড়; উহা উত্তর বঙ্গের রাজধানী নহে। তৎকালে শ্রীহট্ট প্রদেশ তিনটি স্বতন্ত্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল— (১) গৌড় বা শ্রীহট্ট, (২) লাউড়, (৩) জয়ন্তী।[১] নারায়ণদেবের পদ্মাপুরাণে শ্রীহট্ট-গৌড়ের উল্লেখ আছে।
কমলাক নগর (পৃ°৩২৫)—প্রাচীন কমলাঙ্ক বর্ত্তমান কুমিল্লা।[২] কমলাঙ্ক পেগু নহে। কুমিল্লার পশ্চিমে পাটিকারা নামক স্থানে কমলাঙ্ক রাজ্যের রাজধানী ছিল।[৩] গোবিন্দচন্দ্র গীতে উহা পাটিকানগর, কিন্তু স্বর্গীয় শরচ্চন্দ্র দাস মহাশয়ের প্রবন্ধে চাটিগ্রাম।
তরপের দেশ (পৃ° ৩৪৩)—তরপ পরগনা শ্রীহট্টে।
সঙ্কছরা মাটী (পৃ° ৩৪৬)—শঙ্খ ছাইল, ত্রিপুরা জেলার লৌহগড় পরগনায়।
কদলীর দেস (পৃ° ৩৬৯)—কামরূপ ও তৎসন্নিহিত ভূভাগ। মহাভারত বনপর্ব্বে ও যোগিনীতন্ত্রের উত্তর-খণ্ডে কদলী বনের উল্লেখ আছে।
ডাড়ার সহর (পৃ° ৩৬৯)—রাঢ় দেশের কোন শহর। রাঢ় বর্ত্তমান বাঙ্গালা দেশের পশ্চিমাংশ। খ্রীষ্টপূর্ব্ব ২য় শতকে মাগধী ভাষায় রচিত জৈন অঙ্গ মধ্যে ‘রাঢ়’ দেশের উল্লেখ আছে। খ্রীষ্টীয় ৫ম শতাব্দে রচিত সিংহলের পালি মহাবংশে উহা ‘লার’ এবং তিরুমলয়ের শিলালিপিতে ‘লাড়’ নামে অভিহিত হইয়াছে। ১২শ শতকের প্রবোধচন্দ্রোদয় নাটকে উহাই ‘রাঢ়া’। সাঁওতালী ভাষায় ‘রাঢ়ো’ অর্থে প্রস্তরময় ভূমি। রাঢ়ো হইতে রাঢ়া বা রাঢ় হওয়া অসম্ভব নয়। কেহ কেহ স° রাষ্ট্র হইতে রাঢ় শব্দের উৎপত্তি কল্পনা করেন।
  1. রাজমালা পৃ° ২৮৭; গৌড়ের ইতিহাস, ২য় খণ্ড, পৃ° ৫৬ পাদটীকা।
  2. Cunningham’s Ancient Goography of India, p 503; রাজকৃষ্ণ বাবুর বাঙ্গালার ইতিহাস, পৃ. ১. পাদটীকা।
  3. রাজমালা, পৃ° ৪।