কলিকাল—চারিযুগের অন্যতম; বর্ষ-পরিমাণ ৪,৩২,০০০। এক্ষণে উহার ৫০২৪ বৎসর অতীত হইয়াছে। পুরাণাদিতে কলির নিন্দাপ্রশংস। উভয়ই পাওয়া যায়। [গোপীচন্দ্রের গানে কলিকালকে মন্দ বলা হইয়াছে। পৃ° ৬৯] পাপের প্রাবল্য হেতু উহার নিন্দা এবং অল্পায়াসে মোক্ষ বা মুক্তির সম্ভাবনা বলিয়া উহার প্রশংসা। পাপ ও পুণ্য পরস্পরের প্রতিক্রিয়া মাত্র। অতিবৃদ্ধিতে অন্যের উৎপত্তি। সেই জন্য শাস্ত্রকারেরা ক্রমান্বয়ে চারি যুগের আবির্ভাব ও তিরোভাব কহেন। কলি ও কাল শব্দ তৎসম। কাল—পঞ্জাবী ক ল।
না রহিব—থাকিবে না। ক্রিয়ার পূর্ব্বে নেতিবাচক (negative)-এর উদাহরণ। স° √র হ ত্যাগে বা বর্জ্জনে; র হ তি, র হ য় তি। রহিত—জ্ঞান-রহিত। ‘রহয়ত্যাপদুপেতমায়তি’—কিরাত, ২।১৪। [আয়তি অর্থাৎ ভাগ্যলক্ষ্মী আপদ গ্রস্তকে ত্যাগ করেন।] শ্রীযুক্ত যোগেশ বাবু ‘শব্দকোষ’এ লিখিয়াছেন, অ-স্থানে র’ ও স-স্থানে হ’ করিয়া √অ স>√র হ উদ্ভূত। ভাষাতত্ত্বে এরূপ কল্পনা সমীচীন নহে। স° √র হ সকর্ম্মক, বাঙ্গালায় তাহা অকর্ম্মক। অর্থও একটু বিভিন্ন। Sayce—‘Words change their signification according to their use as active or passive, as subjects or as objects.’ Cf. ‘The sight of a thing’ and ‘The enjoyment of sight.’ [বস্তু বিশেষ দর্শন ও দৃষ্টি জন্য আনন্দ।] স° √র হ’রও ক্রমে অকর্ম্মকত্ব প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে অর্থ পরিবর্ত্তন ঘটিয়াছে। প্রাকৃত পৈঙ্গলে,
‘সুরসরি সিরমহ রহই’ (১।১১১), [সুরসরিৎ শিরোমধ্যে বসতি]; ‘সুপুরুস গুণেণ বদ্ধা থির রহই কিত্তি সুদ্ধা’ (২।৮৫), [সুপুরুষগুণেনবদ্ধা স্থিরাবতিষ্ঠতে কীর্ত্তিঃ শুদ্ধা]। এই অর্থই বাঙ্গায় আসিয়াছে। একটা কথা মনে রাখিতে হইবে—√র হ অসম্পূর্ণ ধাতু। যেমন √আছ বা স° √অ স্ বা ইংরাজি to be verb’ এর সর্ব্বকালে রূপ পাওয়া যায় না, ইহারও সেই প্রকার ‘রহিয়াছিলাম’, ‘রহিতেছিলাম’, ‘রহিতে থাকিব’ প্রভৃতি রূপ হয় না। ‘রহিবে’ স্থানে ‘ররিব’ প্রাচীন ব্যালার রূপ। পূর্ব্বে বঙ্গের গ্রাম্য ভাষায় এখনও এইরূপ প্রচলিত।
প্রথম পঙ্ক্তি খণ্ডিত; ‘কলিকালে না রহিব ধর্ম্ম ধরা মাঝ।’ এইরূপ কিছু ছিল।
কহিব—স° ক থ স্থানে প্রাকৃতে ক হ আদেশ হয়। ভবিষ্যতে ই ব বা ব’। প্রাচীন রূপ ক হি বোঁ।
পাচালী—তান-লয় যোগে গান করিবার উপযোগী রচনা। স° পঞ্চালী অর্থে a system of singing। প্রকৃতেও প ঞ্চা ল ছন্দ ছিল। প্রাচীন ও মধ্য যুগের বাঙ্গালা সাহিত্যে ‘পাঁচলি প্রবন্ধ’, ‘পাঁচালির ছন্দ, পাঁচালির গাথা,’ ‘পাঁচালির কথা’ এবং ‘পাঞ্চালী’, ‘পাঞ্চালিকা’ ও ‘পাঁচালী’র প্রয়োগ অবিরল। শূন্য পুরাণে,—
শ্রীজুত রামাই রচিত পাঁচালী সঙ্গীত॥
(পৃ° 8০)
গোরক্ষবিজয়ে,—
গৌর্খের বিজয় কথা কবিন্দ্র রচিল।
সঙ্গিত পাচলা করি প্রচারিয়া দিল॥
(পৃ° ১৫৩)
কেহ কেহ মনে করেন, পাঁচজ়নে মিলিয়া যাহা গান করা যায় তাহাই পাঁচালী। বিশ্বকোষ এই মতের সমর্থক। অপরে কহেন গান, সাজ-বাজান, ছড়া-কাটান, গানের লড়াই এবং নাচ এই পঞ্চাঙ্গবিশিষ্ট গীতি-কৌতুক পাঁচালীর বাচ্য। অবশ্য ১৯শ শতাব্দীর পাঁচালীই উহা দ্বারা লক্ষিত।
এক সময়ে এদেশের সর্ব্বত্র ‘পুতলো নাচ’ প্রচলিত ছিল; এখনও কোথাও কোথাও আছে। পুতলো-নাচে পুত্তলির সাহায্যে প্রধানতঃ পৌরাণিক উপাখ্যান বিশেষের অভিনয় দেখান হয়, এবং বিষয়ের অনুরূপ গীত ও তৎসহ বাদ্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রকার গানের পরিণতি পা ঞ্চা লী বা পাঁ চা লী হইতে পারে। চৈতন্য-ভাগবতের ‘পুত্তলি করয়ে কেহ দিয়া বহু ধনে॥’ উক্তি যেন তাহাই সূচিত করে।
তোহ্মার—কুমারপালচরিতে তু ম্ হা র (যুষ্মদীয়), ৮।৭৪। অপভ্রংশ ভাষায় যুষ্মদাদি শব্দের উত্তর ভা র আদেশ হয়; ‘যুষ্মদাদেরীয়স্য ডারঃ’ সিদ্ধহেম° ৮|৪|৪৩৪। প্রাকৃত ম্ হ স্থানে বাঙ্গালা সাহিত্যে হ্ম’ পরিদৃষ্ট হয়। প্রাকৃত পৈঙ্গলে তু হ্মা ণ (বেঙ্গল এসিয়াটিক সোসাইটির সংস্করণ,
গতি—(১) গমন, (২) উপায়, (৩) লক্ষ্য। এখানে গমন-কার্য্য বা গমনের ভাব অর্থ নহে। অর্থ—চরম-লক্ষ্য (abstract for concrete, part for whole) অথবা ভর-পারের উপায়। শেষের অর্থ গ্রহণ করিলে চরণ শব্দের লক্ষ্যার্থ ‘চরণে আশ্রয়’ করিতে হয়। কিন্তু ঐ চরণই একান্ত আরাধ্য, লক্ষ্য, সর্ব্বশেষ উদ্দেশ্য Summum bonum এইরূপ অর্থই ভাল; কবির উদ্দেশ্য যাহাই হউক।
দিব্যজ্ঞান—[দিবি ভবং দিব্যং], দিব্ শব্দের অর্থ দীপ্তিমান্ আকাশ; আমরা উহাকেই স্বর্গ অথবা দেবতাদিগের দেশ বলিয়া কল্পনা করিয়া লইয়াছি। তাই দেবতাদিগের নাম দিবিস(ষ)দ, দিবৌকস্ (সঃ), দিবোকস্, দিবিজ, দিবিষ্ঠ, দিবিস্থ ইত্যাদি। দিব্য—স্বর্গীয়, অতি-প্রাকৃত, উজ্জ্বল। জ্ঞান—philosophy which teaches a man how to understand his own nature and how he may be re-united with the Supreme Spirit: Cf জ্ঞান-যোগ। এখানে philosophy নহে, মন্ত্র বিশেষ। অথর্ব্ববেদের মন্ত্র, ভূত-প্রেত-সিদ্ধি এই ধর্ম্মের অঙ্গ; ‘আড়াই অক্ষর জ্ঞান রাখ ধড়ের ভিতর॥’ (পৃ° ৩৪৬)। দিব্যজ্ঞান—অ-মর্ত্ত্য-সম্ভব অতি দুর্ল্লভ জ্ঞান-মন্ত্র, যাহার সহায়তায় ভব-পারে যাওয়া যায়, যমকে ফাঁকি দেওয়া যায়।
সাক্ষাতে—প্রত্যক্ষে, সম্মুখে। আবার সাক্ষাতে পদটিকে পোতা পদের বিশেষণ করিলে সাক্ষাৎ পোতা, ‘মূর্ত্তিমান্, প্রত্যক্ষীভূত’ অর্থ হয়; যেমন ‘সাক্ষাৎ যম’, ‘সাক্ষাৎ ধর্ম্ম’ ইত্যাদি।
পোতা—পারের তরণী। স° পোত; পোতা শব্দের অন্ত্য আকার একটি লুপ্ত
ক-কারের জ্ঞাপক। কবিকঙ্কণে ‘পো তা মাঝি’। পোতা শব্দের অপরাপর অর্থ, (১) ভিটা, ঘরের মেজে, (২) পৌত্র, (৩) মুষ্ক (ফা° ফোতা), (৪) প্রাচীন সাহিত্যে পুস্তক অর্থে পোতা, পোথা।
পুত্র—‘পুন্নামো নরকাদ্ যস্মাৎ ত্রায়তে পিতরং সুতঃ। তুস্মাৎ পুত্র ইতি প্রোক্তঃ স্বয়মেব স্বয়ম্ভূবা॥’ বংশরক্ষা বা সংসার বন্ধনের পবিত্র কারণ। প্রকৃতির নিয়মে এইরূপ জ্ঞানকে instinct for the preservation of the species বলা হয়। এই জ্ঞান সর্ব্ব জীবেই সমান। ইহার অভাবে সৃষ্টি নাম।
গুবিচন্দ্র—প্রাচীন বাঙ্গালায় ও-কার স্থানে উ-কার এবং প-কার স্থানে ব-কার বিরল নহে।
যোগ—[চিত্তবৃত্তির নিরোধ। ‘সতী সতী যোগবিসৃষ্টদেহা’—কুমার, ১।২১; ‘যোগেনাস্তে তনুত্যজাম্’--রঘু, ১।৮।] এখানে মুক্তির উপায় বা তদ্বিষয়ক ধ্যান।
কর মন—যুক্ত ক্রিয়া, comp. verb। মনোযোগ কর, মন দাও। বাঙ্গালাভাষায় মন শব্দ সকারান্ত বা বিসর্গান্ত নহে। সুতরাং মনান্তর, মনাগুন, মনানন্দ, মনাতঙ্ক মন-গড়া প্রভৃতি যে সকল শব্দ এতকাল বাঙ্গালা ভাষার সম্পত্তিরূপে প্রতিষ্ঠালাভ করিয়া আসিয়াছে, সংস্কারের ধুয়ায় তাহাদিগের ত্যাগ করা অনুচিত। তাহাতে আমাদের ক্ষতি ভিন্ন লাভ নাই। মনোযোগ মনোভিনিবেশ, মনশ্চক্ষু প্রভৃতি সংস্কৃত সমাসনিস্পন্ন শব্দ সংস্কৃত হইতে গৃহীত হইয়াছে। এ উপায়েও ভাষার সম্পদ এ বাড়িয়াছে।
ধর্ম্মরাজ—ধার্ম্মিক রাজা। এখানে মাতা ধর্ম্মরাজ সম্বোধনে পুত্রের সৎপ্রবৃত্তি জাগাইতেছেন।
শুনহ—প্রা° সু ণ হ (শৃণুস্ব)।
ব্রহ্মজ্ঞান—আত্মতত্ত্ব জ্ঞান, ‘এই সমস্ত জগৎ ব্রহ্ম বা ব্রহ্মময়’ এই জ্ঞান। এখানে মন্ত্র-মাত্র (যোগের অঙ্গ বিশেষ)।
হইবার—হইবারে, হইবার নিমিত্ত। এইরূপ নিমিত্তার্থ কৃৎ প্রত্যয়ের বহু দৃষ্টান্ত এই গ্রন্থে এবং প্রাচীন বাঙ্গালা সাহিত্যে পাওয়া যায়।
নাহিক—ক্রিয়ার উত্তরেও এককালে স্বার্থে প্রত্যয়ের ছড়াছড়ি হইয়াছিল। তাহার ফলে অনুজ্ঞার্থক দিউক, যাউক, প্রভৃতিতে ক আসিয়াছে। ইহাদের প্রাকৃতরূপ ক-বিহীন। বাঁকুড়া-মেদিনীপুরের ভাষায় ভবিষ্যৎ কালেও ক-প্রত্যয়ের ব্যবহার আছে। বিদ্যাসাগরী বাঙ্গালার ইহা একটি বিশিষ্টতা। নাহিক মরণ—মৃত্যু হইবে না। প্রা° √ম র (স° মৃ)।
পৃষ্ঠা ৩১৪
বাপু—পুত্রার্থে বাপ শব্দের প্রয়োগ আদরে; তুল° স° তাত। উ-প্রতায়ও আদরে। হি°, ম°, গু° প্রভৃতি ভাষাতেও বাপ। প্রা° ব প্ প (বপ্র); Cf. Eng. papa।
सऺवल, পথের খাদ্য; provisions for a journey। গৌণ অর্থ (secondary meanings) —পথ-খরচা, পাথেয়; পুঁজি, মূল-ধন। সাধারণ ব্যবহার ‘পথের
সম্বল’। জীবিকা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ঘরে এক কড়ার সম্বল নাই। নিঃস্বম্বল, স্বরলহীন।
ধন—অর্থ, মূল্যবান বস্তু, সঞ্চয়। স° সম।
রাখিবা—সঞ্চয় করিবে। অন্তে আকার প্রাচীন। প্রা° √র ক্ খ। জ্ঞান-মন্ত্রের উপদেশ লইয়া যোগী না হইলে তুমি যমের হাত এড়াইবে কি করিয়া?
রতন—রত্ন, সার পদার্থ; এখানে রেত বোধ হয়। সৎনামী সম্প্রদায়ের মধ্যে কএকটি সাঙ্কেতিক শব্দের ব্যবহার আছে। ‘মণি’ তাহার একটি; অর্থ—শুক্র। ত্ন’ এই যুক্ত বর্ণের বিপ্রকর্ষণ ও আকারাগম স্বরভক্তি।
হারাইবা প্রাণ—স° √হৃ-ণিচ্ হারয়তি, প্রা° হা রে দি (ই), বা° হারায়। এখানে ণ্যন্ত অর্থ নহে। প্রয়োজক কর্ত্তার অজ্ঞাতসারে এ কাজটি হইয়া থাকে; rather passive (neuter)। প্রাণ শব্দে হৃদয়স্থ বায়ু; লক্ষ্যার্থ জীবন।
পলিও—স° √পা-ণিচ্ পালয়তি; অর্থ রক্ষা করা, to preserve। এখানে কিন্তু অর্থ ‘মানা’, to observe। প্রা° পা লি হ>বা° পা লি অ, পা লি ও। পূর্ণিমা—কর্ম্মকারক; বিভক্তি-চিহ্নের অভাব।
ভহৃচে [মাপা]—রাশিচক্রে সুনির্দ্দিষ্ট। ভহৃচ, বু রু চ, প্রভৃতি আ° বু র্জ (sign of the Zodiac) শব্দের বিকার।
ঘাগহৃ, ঘাগরি—যাগরা।
উন্না, উনা—উল্লা। ফরিদপুর-পাবনা অঞ্চলে খুলিয়া ফেলা অর্থে উ দ্ লা শব্দ প্রচলিত।
দণ্ডেক—ক্ষণেক, বারেক, জনেক দিনেক, অর্দ্ধেক প্রভৃতি বাঙ্গালা সন্ধি। পালি ও প্রাকৃতের ন্যায় বাঙ্গালা-সন্ধিতে সন্নিহিত স্বরঘরের একটির লোপ ও একটির প্রতিষ্ঠা হয়। অকার সাধারণতঃ লোপ পায়, কারণ ইহার উচ্চারণ আমরা করি না।
পৃষ্ঠা ৩১৫
অখন—এখন, এক্ষণে।
না বুঝ—যদি না বুঝ, সংযত না হও। Mark the Bengali idiom that না can not here (subjunctive) be used after the verb। প্রা° √বু জ্ ঝ (স° √বু ধ্)।
ডুবাইলা—পালি ভাষায় √ম স্ জ স্থানে ডু বব্ব আদেশ হয়।
ভরম—ভ্রম, ভ্রান্তি। বিপ্রকর্ষণ।
টলমল—অস্থিরতা, অর্থাৎ ক্ষণস্থায়িতা প্রকাশক।
তেনমতে—কৃ° কী°’এ তেহ্ন মতেঁ।
যৌবন সকল—সমগ্র যৌবন। No idea of plurality but of locality। Note the সকল is now invariably used with plural nouns। কচু পাতার জল যেমন চঞ্চল তোমার যৌবন সেইরূপ; Cf ‘নলিনীদলগত জলমতি তরলং তদ্বজ্জীবন মতিশয় চপলং’।
নল খাগ—নল ও খাগ (খাগড়া), শূন্যগর্ভ তৃণভেদ।
পড়ে—প্রা° প ড় ই (পততি); হি° প ড়ৈ।
নল খাগ কাটিলে ইত্যাদি—খাগড়ার পর্ব্বে পর্ব্বে জল সঞ্চিত থাকে। কাটিলে জল পড়িয়া যায় ও নলটি এক দিনেই শুকাইয়া যায়। যৌবনের অপব্যবহার করিলে তাহাও শীঘ্র বিনষ্ট হয়। এই কয় পঙক্তির বাচ্যার্থ অপেক্ষা বঙ্গ্যার্থের চমৎকারিত্ব। ইহাকে উত্তম কাব্য বলে।
বধু—পত্নী। সমাস ভিন্ন অন্যত্র বধূ শব্দের পত্নী অর্থে প্রয়োগ সংস্কৃতে দেখা যায় না। সমাসে মৃগবধূ, ব্যাধবধূ, গোপবধূ ইত্যাদি।
রূপ—সৌন্দর্য্য, গঠন-সৌন্দর্য্য।
দেখি—প্রা° দে ক্ খি অ।
রোল—মৌলিক অর্থ কোলাহল। বিক্ষোভ, চাঞ্চল্য।
হলদির ফুল—অ-ফল-প্রসবী কুসুম। সেই হেতু অশুভশংসী ও বৃথা। রমণীর রূপও তদ্রূপ।
কলা—হাব-ভাব, ঠাট-ঠমক।
ভটরি—জাদু, সম্মোহন। হি° ভ ড় রী।
দেখন্তি—দেখ বা দেখিতেছ অর্থে।
কুমারের কাটারি—কামারের কাটারিই অধিকতর সঙ্গত মনে হয়।
কেন্দা ফল—স° কাকেন্দু, a species of ebony (Diospyros melanoxylon)।
দণ্ডবত—উপমাগর্ভ অর্থ। দণ্ড বা যষ্টি সদৃশ সরল হইয়া পতন। অর্থ সংকীর্ণতা ব্যবহারে।
মাএর—প্রা° মা আ (মাতৃ); এ র বিভক্তি চিহ্ন।
জিয়া থাক—বাঁচিয়া থাক।
চারি বধূর দুগ্ধ ইত্যাদি—পত্নী চতুষ্টয়কে মাতৃজ্ঞানে সংসার ত্যাগ কর। গোরক্ষপন্থী সম্প্রদায়ে প্রবেশ-কালে বিবাহিত ব্যক্তিকে গুরুর নির্দ্দেশ মত মাতৃসম্বোধনে স্বীয় পত্নীর নিকট ভিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা ছিল। খাএ্যা—প্রা° খা ই অ (খাদিত্বা); পান অর্থে বাঙ্গালা ভাষায় √খা’র প্রয়োগ লক্ষণীয়।
ঘোষা—ধুআ, ধ্রুবপদ, chorus of a song। মাধবাচার্য্যের জাগরণে ধুয়ার পরিবর্ত্তে ‘বিষ্ণুপদ’ ও ‘গোপীভাব’ এই দুইটি শব্দ পাওয়া যায়। বাসু ঘোষের গৌরাঙ্গ চরিতে ‘ঠাট’। অসমীয়াতে ঘো ষা শব্দ প্রচলিত।
অগ—ওগো। দেশী প্রা° আ গ।
মাএ পুত্রে কথা কৈতে ইত্যাদি—মাতা ও পুত্রে উত্তর-প্রত্যুত্তর দোষাবহ নহে। তুমি দশ মাস দশ দিন আমায় গর্ভে স্থান দিয়াছ, সুতরাং তোমায় আমায় বড় অধিক
পার্থক্য নাই। মাএ পুত্রে—দ্বন্দ সমাসের দুই দুই পদেও বিভক্তি থাকিতে পারে; যথা—আগে-পাছে, বুকে-পিঠে, কোলে-কাঁখে, চোখে-মুখে, ঘরে-বাহিরে ইত্যাদি। [যোগেশ বাবুর ব্যকরণ, পৃ° ২১৪] এখানে সহার্থ পরিস্ফুট।
কথাতে—কোন স্থানে। The suffix তে’ is altogether redundent।
প্রদীপ নিবিলে ইত্যাদি—প্রদীপ নিবিয়া গেলে স্নেহ পদার্থ আলোক দান করিতে পারে না। জীবন না থাকিলে রক্তরসাদি পদার্থ বৃথা। দৃষ্টান্ত অনেক--জমির জল নিষ্কাশনের পর আলি বন্ধনে কি লাভ? মুলচ্ছেদন করিলে বৃক্ষ বিনষ্ট হয়। বিনা জলে মৎস্য জীবিত থাকে না। গোরক্ষ বিজয়ে,—
প্রদিব নিবিলে বাপু কি করিব তৈলে।
কি কাজ বান্ধিলে য়াইল জল না থাকিলে।
শিখড় কাটিলে তবে পড়ে গাছ।
বিনি জ্বলে কথাতে জিএ মাছ।
(পৃ ১০৮)
তুল° ‘নির্ব্বাণ দীপে কিমু তৈল দানম্’ ইত্যাদি।
রাজা নহে আপনা ইত্যাদি—রাজা, রাজকর্ম্মচারী কেহই আত্মীয় নহে। পত্নীও সদা আত্মসুখে রত। চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রচলিত প্রবাদ,—
রাজা নহে আঅনা কোট্টাল নয় মিতা।
ঘরর স্তিরী আঅনা নয়......।
স্তিহৃ—অপ্রচলিত রূপ; aspiration and vowel augmentation।
আপনসুক্য—আত্মসুখী।
ছিরি—শ্রী। প্রা° সি রী, সি রি।
নারী সবে—সব শব্দের যোগে বহুবচন; দৃষ্টান্ত—
কছবি সবে বাপে পুত্রে শৃঙ্গার মাগিব।
(পৃ° ৩২৩)
মহা মহা সতী সব হৈব মিথ্যাকার।
(ঐ)
অকুমারী নারী সবে মাগিব শৃঙ্গার।
(ঐ)
এহি সব এড়ি জাবে আপনে জানিয়া।
(পৃ° ৩২৫)
এরূপ যৌবন সব চারি গুন হেরি।
পৃ ৩৩৮)
ইত্যাদি।
তোই—অসম্ভ্রমে; তুই শব্দ দ্র°।
হএ—হয়। বা° √হ; এই এ’ প্রত্যয় প্রা° হ স এ, ক র এ, প ঢ় এ প্রভৃতি ন্যায় (প্রা° প্র°, ৭।৫ ও সিদ্ধ হেম°, ৮।৩।১৪৫)।
নিত্যএ—নিত্যই, প্রত্যহ।
বিকল—অবিকল, অবিমিশ্র।
কপাল তুলিয়া—মাথা তুলিয়া বা ভ্রূকুটি করিয়া।
আএউ—আয়ু।
টুটি জাএ—কমিয়া যায়, হ্রাস হয়। √টু ট্ (স° ত্রু ট্) ভঙ্গে।
হস্তিয়া—হস্তিতুল্য ধীর (গমন)। হস্তী শব্দের উত্তর ঈয় প্রত্যয়।
জানেন্ত—জানে, মনে করে। প্রা° জা ণ ত্তি (জানন্তি)। প্রাচীন বাঙ্গালায় এই ন্ত-ভাগান্ত ক্রিয়া পদের প্রচুর প্রয়োগ দৃষ্ট হয়।
জে—পাদপূরণে। প্রা°।
দন্দ—দন্দ্ব, বিবাদ, কলহ।
নিত্য প্রতি—নিয়ত, সতত।
হস্তিনী নারী সবের ইত্যাদি—হস্তিনী রমণীর (স্থূল দেহ হেতু) গতি হস্তিসদৃশ মবথর। সে পতি সেবার সুখ না পাইয়া পরপুরুষ কামনা করে। এবং সে কলহপ্রিয়া।
নরক—মৃত্যুর পর যে স্থানে যাইয়া দুষ্কৃতি জন্য শাস্তি ভোগ করিতে হয়। মন্বাদিতে নরক-সংখ্যা একবিংশ; যথা—তামিস্র, অন্ধতামিস্র, মহারৌরব, নরক, কালসূত্র, মহানরক, সঞ্জীবন প্রভৃতি। নরকের নাম ও সংখ্যা লইয়া শাস্ত্রকারগণের মধ্যে মতভেদ দৃষ্ট হয়। [বিস্তৃত বিবরণ ভাগবত, ৫ম স্ক° ২৬ শ অ° ও ব্রহ্মবৈবর্ত্ত প্রকৃতি খণ্ড ২৭-২৮ শ অ° দ্র°।] খ্রীষ্ট ধর্ম্মাবলম্বীদের জে হে ন্না (Gehenna) এবং মুসলমানগণের জা হা ন্ন ম্।
সেই সে—সেই-ই। সেহি হি (হি অবধারণে)>সেহি সি>সেই সে; সেই<সহি। সে’ is due to attempt at corrections। Cf. ‘তুমি সে শ্যামের সরবস ধন শ্যাম সে তোমার প্রাণ।’; ‘যাকে যার অভিরুচি সেসি তারে ভায়।’ (কবিশেখরের গোপাল-বিজয়); ‘সিসি ধন্য সিসি শুদ্ধ সেহি-সে পণ্ডিত।’ (কীর্ত্তন ঘোষা)। অন্যথা সে শব্দ অনর্থক।
প্রাণ—প্রাণ-সমা।
আহ্মি—প্রা° অ ম্ হি (অহম্)।
তুহ্মি যারে চিন্ত ইত্যাদি—‘ভাল কোন চাই’ বলিরা প্রশ্ন করা হইরাছিল, চারি জাতীয় রমণীর মধ্যে কে উত্তমা। তদুত্তরে এখানে চিত্রাণী নারীর প্রশংসা করিয়া বলা হইতেছে গোবিন্দচন্দ্র চিত্রাণীতে অনুরক্ত তাহা ময়নামতীর অবিদিত নাই। ইহার অব্যবহিত পূর্ব্বে পদ্মিনীর শ্রেষ্ঠত্ব সূচিত হইয়াছে।
হরিব—অপহরণ করিবে। বলপূর্ব্বক বা গোপনে সহবাস করিবে; sematology।
হিংসিব—হিংসা করিবে, will be jealous of। হিংসা—হননেচ্ছা; sematology।
বাদ পরিবাদ—বাদ-প্রতিবাদ, বিবাদবিসম্বাদ।
অকুমারী—কুমারী, অবিবাহিত কন্যা। অঘোর, অমন্দ প্রভৃতি শব্দ তুল°। আবার অমূল্য, মূল্যের অধিক; অপর্য্যাপ্ত, পর্য্যাপ্তের অতিরিক্ত। সেইরূপ অকুমারী, কুমারী অপেক্ষা অল্প পক্ষে অধিক বয়স্কা।
মাগিব—চাহিবে, প্রার্থনা করিবে।
ভক্তিএ মাঙ্গিব ইত্যাদি—লোকে সম্মান পাইবার লোভে শ্রদ্ধাযুক্ত হইয়া (স্পৃহা সহকারে:) কদাচার, খুঁজিবে অথবা লোকে ভক্তি ও মান্য চাহিবে, কিন্তু পাইবে না। লোভবশতঃ কদাচার অনুষ্ঠিত হইবে।
পৃষ্ঠা ৩২৪
তার অধিক নাই—সেটা আর বেশী কথা কি? idiom।
আমি রাজা যোগী ইত্যাদি—মাতার কথায় অসম্মত হইতে না পরিয়া গোপীচাঁদ নানা আপত্তি উত্থাপন করিতেছেন। বলিতেছেন, আমার অতুল সম্পত্তি কাহার নিকট দিয়া যাইব? এ বিরাট রাজ্যভার কে গ্রহণ করিবে? তরুণী পত্নী চতুষ্টয়ের দশা কি হইবে? বিদেশে আমার সোশুশ্রূষা কে করিবে? যদি প্রত্যয় না হয়
তবে আমার প্রতাপ প্রত্যক্ষ কর। এই বলিয়া তিনি সাজ-সাজ আদেশ করিবা মাত্র অপার বাহিনী মাতা-পুত্রের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল।
কি বুলি জোয়াব ইত্যাদি—প্রভু অর্থাৎ ধর্ম্মের নিকট কি কৈফিয়ৎ দিবে।
লেঙ্গটা—লংগোট (প্রা° লিং গ ব ট্ট) আছে যার সে লংগোটিয়া বা লেঙ্গটা; প্রায় নগ্ন।
জাবা শূন্য—শুধু হাতে আসিয়াছ শুধু হাতে ফিরিবে। পাপ পুণ্য ভিন্ন অন্য কোন সম্পদ সঙ্গে যাইবে না। তুল° ‘ভল মন্দ দুই সঙ্গ চলি যায়র পর উপকার সে লাভ।’ বিদ্যা°।
সাচানি—সত্যই না? [প্রা° স চ্চ, স চ্চ অ এবং ণ (ননু)।] নি’ অবধারণে বা প্রশ্নে।
লোহাএ বান্ধিবে পুনি—যমের ন্যায় ভয়ঙ্কর শত্রুর হাত এড়াইবার উপায় এইরূপই কল্পনায় আসে। লখিন্দরের লোহার বাসর মনে পড়ে। বাসর—শোবার ঘর, শয়ন গৃহ। এখন যে ঘরে বর-বধূ সর্ব্ব প্রথম শয়ন করে; sematology ‘গর্ভাগারদ্বয়মীশ্বরাণাং ৱাসহর ইতি খ্যাতে। দেবস্থান ইতি কেচিৎ। বাসস্য শয়নস্য গৃহং বাসগৃহং।’—টী° স°। বাসঘর>বাসহর>বাসঅর>বাসর।
জাতনি—জাফরি।
পশর—প্রহরী।
মুহি—মুই।
পৃষ্ঠা ৩২৯
রূয়া—উয়া দ্র°, পৃ° ১৩৭।
শাল—শল্য অথবা শূল। প্রা° স ল্ল।
জমেতে—যম হইতে।
পাই ভাহঙ্কার—ভয় পাইয়া।
অনদেখা—অদৃশ্য।
সাচন রূপে জাএ—শয়চান সদৃশ বেগে ফিরিয়া যায়।
সামাএ—প্রবেশ করে। চর্য্যাপদ ও বিদ্যাপতিতে স মা য়, কৃ° কী°’এ সা ম্বা এ, কৃত্তিবাসী উত্তরাকাণ্ডে সা ম্ভা ই, কবিকঙ্কণে স ম্ভা য়। স° √স ম্ব্ অথবা √সা ম্ব্ গমনে।
তাহাতে—তাহা সত্ত্বে, inspite of that।
ভৈন—বৈন দ্র°, পৃ° ৩১।
পৃষ্ঠা ৩৩০
হিন্দুগণ—মেরুতন্ত্রে ‘হীনঞ্চ দূষয়ত্যেব হিন্দুরিত্যুচ্যতে’ (one who does not appreciate the acts of the base)। হিব্রু হ ন দ (গৌরবান্বিত রাজ্য) <আবেস্তা হি ন্দ অ। হেন্দুস্থানি দ্র°।
করে খাটী আর পাটি—খড়-কাঠ দিয়া জ্বালাইয়া ফেলে।
মাটী দেএ—সমাধি দেয়।
আর্জ্যনিয়া—অর্জ্জন-ক্ষম, উপার্জ্জনশীল।
বেইলের আড়াই পহর—আড়াই প্রহর বেলা পর্য্যন্ত অর্থাৎ স্নানাহারের সময় পর্য্যন্ত। বেইল—প্রাচীন বাঙ্গালায় বে লি।
লোকের আস পাস—লোক-দেখানী [একটু আধটু কাঁদিবে]।
শঙ্খ সোনা সাড়ি ইত্যাদি—যে রমণীকে পুরুষ কত উপহার দিয়া বিবাহ করে সে যদি স্নেহপরায়ণা হয় তবে চারি দিন পর্য্যন্ত কাঁদিবে। [স্নানাহার বর্জ্জন পূর্ব্বক?] বড় দয়ার—অতি সহৃদয়হৃদয়া।
ফিরি বর লএ—বিধবা-বিবাহ। পূর্ব্বে ‘এছিলা গাবুবাক দেখি খসম পাকড়িবে!’ (পৃ° ৭২)। ভারতীয় আর্য্যগণও বিধবাবিবাহ অনুমোদন করিতেন বলিয়া মনে হয়। অথর্ব্ববেদে একটি মন্ত্র আছে তাহার অর্থ,—‘হে মর্ত্য, তুমি মৃত। পতিলোক প্রার্থিনী হইয়া এই নারী পুরাতন ধর্ম্ম পালন করিবার জন্য তোমার পার্শ্বে শয়ন করিয়াছে। তুমি ইহলোকে ইহাকে সন্তান এবং ধন প্রদান কর।’ [১৮।৩।১] বিধবার সন্তান ও ধন-প্রাপ্তি কিরূপে হইবে? তাৎপুর্য্য—বিধবা পুনরায় পরিণীতা হউক। পরবর্ত্তী মন্ত্র আরও সুস্পষ্ট, ‘হে নারি, জীবলোকের অভিমুখে (অর্থাৎ জীবিত মানবগণের মধ্যে) আইস। তুমি যাহার পার্শ্বে শয়ন করিয়াছ, সে গতাসু। যে তোমার হস্তগ্রহণ করিতেছে, সে তোমার দ্বিতীয় স্বামী, তাহার সহিত আইস; তাহার সহিত পতিপত্নী সম্বন্ধ হইয়াছে।’ [১৮৩।২] ‘নষ্টে মৃতে প্রবজিতে’ প্রভৃতি স্মৃতিবাক্যে বিধবার পত্যন্তর গ্রহণের ব্যবস্থা পাওয়া যায়। আর্য্যেতর সমাজে বিধবা বিবাহের দৃষ্টান্ত লক্ষণীয়।
প্রাণি—প্রাণ, জীবন।
উচ খোচ—উঁচু-নীচু। তুল° গুলিঘুঁজি।
নাল—নালা, জল নিকাশের পথ; drain।
সে—সি; কি (নিশ্চয় বা অবধারনার্থক অব্যয়)। Popular attempt at correction।
বেদন—বেদনা, দরদ; স্নেহ।
গর্ব্ভের সাল—গর্ভশল্য, গর্ভযন্ত্রণা। গর্ভে পুত্রকে ধারণ করিয়া মাতা যে কষ্ট সহ্য করেন তাহার ফলে তাঁহার পুত্রস্নেহ গভীরতা প্রাপ্ত হয়। এতটা অন্য কাহারও হইতে পারে না।
পুত্র, কন্যা নাই ইত্যাদি—গোপীচন্দ্র ময়নামতীর একমাত্র সন্তান। অন্যত্র ‘বড় ভাই আছে মোর মাধাই তাম্বরী।’ (পৃ° ৩৫৩)। মাধবচন্দ্র গোপীচন্দ্রের বৈমাত্রেয় ভাই হইবেন।
পৃষ্ঠা ৩৩১
খুড়া—প্রা° খু ল্ল অ (ক্ষুদ্রক)।
জেঠা—প্রা° জে ট্ ঠ অ (জোষ্ঠক)।
কথ সা—কত মত। তুল° হি° কি ত্তা সা, কে তা সা। In Hindi সা means like, resembling (most commonly by way of adjunet; like the English ish), as Kala-sa, blackish; an adjunet the meaning of which is at times scarcely perceptible, though often it seems to give intensity to the preceding word as bahut-sa, much, many, very much।
মাণিকচান্দ গোসাই—No case-suflix, apposition with পিতাকে; idiom।
আলাপ—পরামর্শ, পাত্রমিত্র সহ মন্ত্রণা।
তে কারণে—সেইজন্য।
তবে কেনে বালক কালে ইত্যাদি—বাল্যবিবাহ। তুল° ‘তুমি সাত আমি পাচ এমত কালের বিয়া।’ (পৃ° ৩৩৪)।
চান্দে—গোপীচন্দ্র। মাএর সাক্ষাতে ইত্যাদি পঙ্ক্তি অতিরিক্ত।
এক বিভা করাইলা ইত্যাদি—বহু-বিবাহ।
আর বিভা ইত্যাদি—কন্যাপক্ষকে প্রহারাদি করিয়া বলপূর্ব্বক কন্যা হরণকে স্মৃতিতে রাক্ষস-বিবাহ বলে। খাণ্ডাএ—অস্ত্রে।
উরয়া রাজার—উড়িষ্যার রাজার। হইতে পারে রাজেন্দ্র চোলকে লক্ষ্য করা হইয়াছে।
লড়াই—স° √ল ড্ বিবাদে।
পৃষ্ঠা ৩৩২
মহিম—যুদ্ধ। আ° মু হি ম, a dangerous enterprise।
এ চারি সুন্দরী বধূ ইত্যাদি—পুরীর মধ্যে চারি বধূকে রাখিয়া একা আমাকে দেশান্তরে বিদায় করিবে।
পয়ার ছন্দ—দুই চরণের চতুর্দ্দশ অক্ষরে মিলযুক্ত পদবন্ধ ছন্দ। প্রা° প অ (পদ) শব্দের উত্তর আ ল বা আ র প্রত্যয়।
গাব—প্রা° গ ব্ভ।
মেদিনী যায় চির—পৃথিবী দু-ফাঁক হয়।
পৃষ্ঠা ৩৩৩
জে দেশে জাইবা ইত্যাদি—অদুনা প্রমুখ রাণীদিগের উক্তি।
প্রিয়া—অন্ত্য আকার লুপ্ত ককারের প্রভাব।
সঙ্গতি—সংহতি।
সে—অবধারণে।
সে পন্থে বাঘের ভয় ইত্যাদি—রামচন্দ্র এক দিন বনপথ শ্বাপদসঙ্কুল বলিয়া সীতাকে ঐরূপ ভয় দেখাইয়াছিলেন।
খাউক—অপ° খা উ।
মোহর—আমার। প্রা° ম হা র।
চুলে ধরি মারিবারে ইত্যাদি—রাজপরিবারে এরূপ আচরণ অসঙ্গত। কবি আপন সময়ের লোকব্যবহার লক্ষ্য করিয়া এ কথা লিখিয়া থাকিবেন।
মেঘনাল সাড়ি—অভ্রখচিত শাড়ী, (মেঘের ন্যায় না রঙ্গের বা লাল মেঘের বর্ণ বিশিষ্ট শাড়ী নহে)। অভ্রের অপর নাম মেঘনাল বা মেঘলাল। লৌকিক বিশ্বাস মেঘ পাহাড়ে পালা (পাতা) খাইতে আইসে, এবং পত্র-ভক্ষণ-কালে উহার মুখ হইতে
প্রচুর লালা নির্গত হয়। ঐ লালাই অভ্র। কবিকঙ্কণে ‘মেঘ ডম্বরু কাপড়’।
নেপুর—গুজরাটীতেও।
ঝামুর জুমুর—ধ্বন্যাত্মক শব্দ।
কাম সিন্দুর—উদ্দীপক সিন্দুর-বিন্দু। কৃ° কী°’এ ‘শিশত শোভএ তোর কাম সিন্দুর।’ (পৃ° ৬৮), বিজয় গুপ্তেব পদ্মাপুরাণে ‘আর এক আইও বলে আপন কপাল নিন্দ। কাম-সিন্দুর হয় লখাই কপাল ভরিয়া পিন্ধ॥’ (পৃ° ১৭৭)। হিন্দুসমাজে সধবা স্ত্রীলোকদিগের সীমন্তে সিন্দুর ধারণ একটি প্রাচীন প্রথা। গোভিলগৃহ্যসূত্র ও সংস্কার তত্ত্বাদিতে উহার উল্লেখ আছে। পতিব্রতা ভর্ভতার আয়ু ইচ্ছা করিলে সিন্দুর, করভূষণ প্রভৃতি কখন ত্যাগ করিবে না।
জোড় মন্দির ঘর—পূর্ব্বে ‘জোড় বাঙ্গালা’ (পৃ° ৬৭, ২৪৯, ২৫২)।
রূপ রঙ্গ—রূপের লীলাবৈচিত্র বা সুরতশোভা।
দয়ার বন্ধু—সোহাগের স্বামী।
তোমার আমার—আমাদের তোমায়।
তার—তারে, তাহাকে।
প্রভু নিরঞ্জন—‘নিরঞ্জন’ শব্দ বৌদ্ধ ত্রিরত্নের অন্যতম ধর্ম্মের তথা শিবেরও দ্যোতক।
আহে—সম্ভাষণে।
পরাণি—প্রাণ, জীবন; বিপ্রকর্ষ।
চরা করে—বিচরণ করে, ঘাস খায়।
হরিণা—প্রা° হ রি ণ অ।
পাসরএ—প্রা° প স্ স র ই (প্রস্মরতি)।
সেই পশুর বুদ্ধি ইত্যাদি—তুমি রাজা, কিন্তু তোমার পশুর ন্যায় বুদ্ধিও নাই। ভর্ৎসনা।
এতবারে—পুনঃ পুন।
আঠার বৎসর হল ইত্যাদি—এখানে রাজা ও রাণীদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছয় বৎসর; কিন্তু ‘তুমি সাত আমি পাচ’ ইত্যাদি চরণে মাত্র দুই বৎসরের তফাৎ হয়।
বিমশিল—বিচার করিল, চিন্তা করিল।
পৃষ্ঠা ৩৩৬
অদুনাএ বোলে বৈন গ ইত্যাদি—ভগিনি পদুনা সুন্দরি, ভাবনা কি? আমি কম বুদ্ধিমতী নহি। কায়স্থ জাতি বুদ্ধিজীবী বলিয়া প্রসিদ্ধ, কিন্তু তুলনায় তাহাদের প্রতিভাও আমার নিকট হারি মানে।
কায়স্থ-জাতি সম্বন্ধে নানা কথাই পাওয়া যায়। তাহার মধ্যে অল্প কএকটি এই:—‘রাজ সভায় রাজা কর্ত্তৃক নিযুক্ত কায়স্থ দ্বারা লিখিত এবং প্রাড়্ বিবাকের কর চিহ্নিত অথবা রাজমুদ্রাঙ্কিত যে লেখা তাহাই রাজসাক্ষিক।’[১] চাট, তস্কর, দুর্বৃত্ত, মহাসাহিক, বিশেষতঃ কায়স্থদিগের হস্ত হইতে রাজা পীড্যমান্ প্রজাদিগকে রক্ষা করিবেন।’[২] ১১শ শতকে রচিত বিজ্ঞানেশ্বরের যাজ্ঞবল্ক্য-টীকায় লিখিত হইয়াছে, ‘গণক ও লেখকগণই কায়স্থ। তাহারা রাজবল্লভ, অতিশয় মায়াবী ও দুর্নিবার বলিয়া তাহাদের কবল হইতে উৎপীড়িত প্রজাবৃন্দকে বিশেষভাবে রক্ষা করিবেন।’[৩]‘অপরাদিত্য কৃত যাজ্ঞবল্ক্য ভাষ্যে কায়স্থগণকে করাধিকারী (Revenue officer) বলা হইয়াছে।[৪] শূল্পাণির দীপকলিকাতে ‘রাজবল্লভ প্রযুক্ত কায়স্থ প্রভাবশালী।’[৫]
পদ্মপুরাণ পাতাল খণ্ডে পথিবীতে ব্যবহারোপজীবী অনেক ক্ষত্রিয় আছে, অক্ষরোপজীবী কায়স্থ তাহার অন্তর্গত এইরূপ উক্ত হইয়াছে।
অশোক-অনুশাসনে ‘রাজূক’-গণ শাসন ও রাজস্ব বিভাগের শ্রেষ্ঠাধিকারী। মৌর্য্যসম্রাট্ কর্ত্তৃক ইঁহারা ‘ধর্ম্মমহামাত্র’ পদেও প্রতিষ্ঠিত হইতেন। প্রসিদ্ধ প্রত্নতত্ত্ববিদ্ ডাক্তার বুল্হার (Dr. Bülhler) ‘রাজূক’ শব্দে কায়স্থ বুঝিয়াছেন। আবার কেহ কেহ যাজ্ঞবল্ক্যের ‘রাষ্ট্রাধিকৃত’ (১।৩৮) এবং ‘রাজূক’ ও ‘রাজবল্লভ’ একই অর্থে প্রযুক্ত মনে করেন।
সান্ধিবিগ্রহিক (Minister of War & Peace) পদ যে এক সময়ে কেবল কায়স্থ দ্বারা পূর্ণ হইত তাহা ‘সন্ধিবিগ্রহলেখক’ (অপরার্ক ৩।৮৬, বীরমিত্রোদয় ও কেশববৈজয়ন্তী অ° ৬), ‘সন্ধিবিগ্রহকায়স্থ’ (কথাসরিৎসাগর ৪২।৯১) প্রভৃতি পারিভাষিক সংজ্ঞাতে সুব্যক্ত।
রাজতরঙ্গিণীতে লেখক ও গণকেরা ‘দিবির’ নামে পরিচিত (৮।১৩১)। কাশ্মীর-কবি ক্ষেমেন্দ্র কৃত লোক-প্রকাশে আয়ব্যয় লেখকের পারিভাষিক আখ্যা ‘দিবির’ (৩য় প্র°); এবং তাঁহারা কায়স্থ।
তাম্রশাসনাদিতে ‘সন্ধবিগ্রহাধিকরণাধিকৃত দিবিরপতি’, ‘জেষ্ঠকায়স্থমহামহত্তরদশ গ্রামিকাদিবিষয়ব্যবহারিক’, ‘জেষ্ঠ কায়স্থ······· প্রমুখমধিকরণ’, ‘মহাকায়স্থ’ এই প্রকার উল্লেখ বিরল নহে।
কায়স্থের মধ্যে ‘রাজধানা’ (রাজস্থানীয়), ‘রাজু’ (রাজূক) প্রভৃতি শ্রেণী-বিভাগ আছে। এবং রাজে, বায়, চৌধুরী, রায় চৌধুরী, পাত্র, মহাপাত্র, মুন্শী চাকি, শিকদার প্রভৃতি পদবী যাহা এখন বংশগত হইয়া পড়িয়াছে, তাহারও ইয়ত্তা নাই।
গুণ-কর্ম্ম-ভেদ যদি জাতি-বিভাগের মূল কারণ হয় তাহা হইলে এখন নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে যে, এক্ষণকার কায়স্থ নামধারী অক্ষরোপজীবিগণের পূর্ব্বপুরুষেরা সামান্য লেখকের কর্ম্ম হইতে রাজপ্রতিনিধিত্ব পর্য্যন্ত করিয়া গিয়াছেন।
২২৫ বৎসরের উপর কাশ্মীর-রাজ্য কায়স্থ রাজগণের শাসন কর্ত্তৃত্বে ছিল। আবুল ফজল বলেন, সুবে বাঙ্গালার ভূস্বামী প্রায় সকলেই কায়স্থ। মুসলমান আগমনের বহু পূর্ব্ব হইতে এই প্রদেশ বিভিন্ন কায়স্থরাজবংশের শাসনাধীনে ছিল।
কায়স্থের বিদ্যা চর্চ্চা লোক-প্রসিদ্ধ। তাঁহাদের ‘মহাসিদ্ধাচার্য্য,’ উপাধ্যায়’, ‘মহামহোপাধ্যায়’ প্রভৃতি উপাধিও ছিল।
[কায়স্থ-সম্বন্ধে যাহা কিছু লিখিত হইল তাহার অধিকাংশেই ‘বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস’ হইতে গৃহীত।]
নানা বর্ণে—বর্ণ-প্রিয়তা।
সহহৃষ—সহর্ষ।
সুন্দি বেত—এই জাতীয় বেত আসাম অঞ্চলে জন্মে। গাছ বড় হয় না; ইহাতে লাঠি হয়। প্রা° বে ত্ত।
উড়ি জাএ পক্ষিরাজ ইত্যাদি—আমার জ্ঞান কতটুক্খানি? পাখী উড়িয়া গেলে দেখিতে পাই না, তত্ত্বজ্ঞান জানিব কেমন করিয়া? আর জানিলেই বা কি হইবে? তুমি এমন যোগিনী মা, তোমার নিকট কি তত্ত্বজ্ঞান ব্যাখ্যা করিতে পারি?
পৃষ্ঠা ৩৪২
অবসরায়—অবসর মত।
খিলে—খেলি।
পূর্ব্বেত—পূর্ব্ব হইতে।
জতীশা—যতীশ্বর, শ্রেষ্ঠ যতি।
কবু—কোথাও। প্রা° পৈ°এ’ ক হু (কুত্রাপি)।
রথ—ব্যোমাচারী রথ।
ধর ধর—ধ্বন্যাত্মক শব্দ।
মুষ্টেক—বাঙ্গালা সন্ধি।
পাইল, দিলেন্ত—উত্তম পুরুষের ক্রিয়া।
বিচার—অন্বেষণ।
মলিয়া—বা° √ম ল মর্দ্দনে।
লাহুর—লাউএর।
পৃষ্ঠা ৩৪৩
জতেক—প্রা° জে ত্ত ক।
চৈত্র মাসের রৌদ্র ইত্যাদি—[তা ছাড়া] চৈত্র মাসের ধর্ম্মই এই যে সে সময়ে রৌদ্রতাপ অত্যন্ত প্রখর হয় এবং সেই জন্য বাতাসে তপ্ত ধূলি উড়িতে থাকে। কাজেই আমায় যার-পর-নাই আকুল করিয়া তুলিল। প্রথম পঙ্ক্তিতে ১৫ অক্ষর এবং দ্বিতীয় পঙ্ক্তিতে ১৬ অক্ষর।
আদ্য মাটী—নাথ-ধর্ম্মের প্রথম প্রচার ক্ষেত্র। পূর্ব্ব মাটীও তাই। স্বর্গীয় দাস মহাশয়ের ‘চট্টগ্রামের পুরাতত্ত্ব’ প্রবন্ধ হইতেও জানা যায় যে, তৎকালে চাটিগ্রাম মহাযান বৌদ্ধদিগের একটি প্রধান প্রচারকেন্দ্র ছিল। নিজ মাটী—গোরক্ষনাথ বিক্রমপুরে মঠাধ্যক্ষ ছিলেন। নিজ মাটী শব্দে তাহাই সূচিত করিতেছে।
যোগীঘাট—মুনশিগঞ্জের উত্তরে ইছামতী ও ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থলে অবস্থিত ছিল। ধলেশ্বরীর ভাঙ্গনে উহা এখন চরে পরিণত হইয়াছে।
বানাইল—নির্ম্মাণ করিল। √ব ন্ বা ব না নির্ম্মাণে।
আধারি—কাষ্ঠ-পীঠ সংলগ্ন দণ্ড বা যষ্টি (যোগী ফকিরের ব্যবহার্য্য), যা সাধারণতঃ আ সা নামে প্রসিদ্ধ। এই আসা অনেক সময় ফুলের মালা, কড়ি প্রভৃতি দিয়া সাজান দেখা যায়। হিন্দী পদুমাবতিতে অ ধা রী।
বিচারি—খুঁজিয়া, অন্বেষণ করিয়া।
বট—কড়ি।
দ্বাদশ দণ্ডের মধ্যে ইত্যাদি—মন্ত্রের প্রভাব। অথর্ব্ববেদে এইরূপ বহু প্রকার মন্ত্রের কথা আছে।
ঊন কোটী—অসংখ্য; অর্থটা বিরক্তিসূচক।
হাএয়াত—আয়। আ°।
অন্ধি আর সন্ধি—রন্ধ্র ও তৎপ্রতিষেধ।
জন্মে জন্মে কৈল ইত্যাদি—যাহাতে পীড়াদি কখন না হয় তাহার ব্যবস্থা করা হইল। খারা বন্দি—ঘেরা, বেষ্টন বা অবরোধ। ফা° খা র ব ন্দী।
পৃষ্ঠা ৩৪৫
খত—ছা’ড় সনন্দ। ফা°।
রাজা—সম্বোধনে।
অগ্নিএ—অগ্নিদ্বারা।
তল—তলস্থ।
বান্ধি মাঙ্গাইব—বাঁধিয়া আনাবই।
চন্দ্র সূর্য্য মরণে ইত্যাদি—দিনে বা রাত্রিতে মৃত্যু হইলে আড়াই প্রহর গত না হইতেই অর্থাৎ অচিরে বাঁচাইয়া দিব।
পৃষ্ঠা ৩৪৬
আমাদের—আমা-আদি-র।
গঙ্গাজল পাটী—গজ-দন্ত নির্ম্মিত পাটী।
গালিচা—carpet। ফা°।
বিছান—হি° বি ছৌ না।
চান্দয়া—হি°চ ন্দ ৱা।
হের—এখানে।
প্রভু গদাধর—সম্মানার্থক।
পৃষ্ঠা ৩৪৭
ঝি—প্রা° ধী আ, পা° ধি তা, ধী।
জে—পাদপূরণে।
গিরি—গৃহী, স্বামী।
দাবীদারী—সত্ত্বাধিকার, claim; abstract noun।
শেলাম—অহিন্দুর নমস্কার। আ° স লা ম্ (কুশল)।
প্রাণের কাতর—প্রাণ-রক্ষার্থ কাতর।
যজ্ঞ নষ্ট পুরুষ—পত্নীর নিকট দীক্ষা অশাস্ত্রীয়। সেই হেতু প্রত্যবায়-ভাগী।
হেন কালে তিন সন্ন্যাসী ইত্যাদি—প্রত্যাখ্যাত সন্ন্যাসীদের কৃত্যায় মাণিকচন্দ্র গতাসু হইলেন। সিদ্ধারা মারণউচাটনাদি ক্রিয়ায় পারদর্শী ছিলেন। কামেশ্বর বাণ—আভিচারিক ক্রিয়াভেদ, যাহকে তদ্জ্ঞাপক বাণ বলা হইত। গোপীচন্দ্রের গানে প্রজাদের অভিচার রাজার মৃত্যুর কারণ।
লোকে বুলিবেক করি ইত্যাদি—(১) লোকে পাছে কিছু মনে করে বলিয়া অধিক কাঁদিলাম না, (মনের দুঃখ মনে চাপিয়া রাখিলাম)। (২) লোক-লজ্জার খাতিরে একটু কাঁদিলাম নচেৎ কাঁদিতাম না। দ্ব্যর্থ। বুলিবেক—মন্দ বলিবে।
দুই আখর—আড়াই নয়। প্রা° অ ক্ খ র।
পৃষ্ঠা ৩৪৯
সমুদ্রের গঙ্গাদেবী—সমুদ্রবাসিনী গঙ্গা।
তিন পহরের পন্থ লই—তিন প্রহরের পথ জুড়িয়া অর্থাৎ বিস্তীর্ণ।
ব্রাহ্মণের কোলে—ব্রাহ্মণের নিকটে। তুল° ‘এত অন্ধকার যে কোলের মানুষ দেখা যায় না’।
নি—না। প্রা° ণ (স° ন নু) প্রশ্নে।
জানাও—জানান; abstract noun, ও’ কৃৎপ্রত্যয়। অথবা আনাও স্থানে জানাও হইতে পারে। পরে আনিয়া আছে। কৃ° কী°’এ জা ণা ওঁ ও জা ণো স্থানে যথাক্রমে আ ণা ওঁ ও আ ণো। প্রাকৃতেও আণাদি, আ ণা মি প্রভৃতি পদ বিরল নহে।
চাই—আবশ্যক অথবা ইহাই প্রার্থনা।
পৃষ্ঠা ৩৫০
সত্য যুগে—দীর্ঘকাল।
হাসিতে হাসিতে ইত্যাদি—সে কালের প্রমাণ পাওয়া অসম্ভব এই কথা ভাবিতে
ভাবিতে প্রমাণের সন্ধান হওয়ায় হাস্য। ইহার পূর্ব্বে দুই এক পঙ্ক্তি বাদ পড়িয়াছে বলিয়া মনে হয়।
মিথ্যা সাক্ষি দিতে—মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে অথবা তোমার মিথ্যা সাক্ষোর জন্য।
ইর্শ্বাদ—খোস যৌতুক, উপায়ন। A. irshād, marzi।
আধা বস তোর—তোমার অল্প বয়স, সুতরাং এরূপ গুরুতর কথা ইত্যাদি। অথবা তোমার বয়স কম নহে। এরূপ অসঙ্গত কথা।
পৃষ্ঠা ৩৫২
সম্ভাসা—সম্ভাষণ, সম্বর্ন্ধনা।
দিজ—দ্বিজ। প্রা°।
জেরূপে রহিতে পারি ইত্যাদি—যাহাতে সিংহাসনে থাকিতে পারি অর্থাৎ সন্ন্যাস লইতে না হয় তাহার ব্যবস্থা কর। প্রকারান্তরে ব্রাহ্মণ সন্ধিহরকে মিথ্যা বলিতে অনুরোধ করা হইতেছে।
তাম্বরী—প্রা° তা ম্বূ লি অ (তাম্বূলিক); হি° ত মো লী, ম° তা ম্বো লী।
পৃষ্ঠা ৩৫৪
ছারে খারে—অধঃপাতে। মহারাষ্ট্রী ছা র এবং শৌরসেনী খা র।
বালাই—বিপদ, অমঙ্গল। আ° ব লা; হি° ব লা য়।
বাসি—প্রা° বা সি অ (বাসিত)।
পাত্যর—প্রান্তর।
সুরজ কানিয়া—কাণ-খড়কে, তীক্ষ্ণ শ্রবণশক্তিযুক্ত।
পৃষ্ঠা ৩৫৫
গেলাপ করিয়া—ঢাকিয়া, আবরণ দিয়া। আ° গি লা ফ।
বাটার পান খাও—পান খাইতে দেওয়া শিষ্টাচার। আজকালকার মত পান তৈয়ার করিয়া দেওয়া হইত না; পান, চুন, সুপারি প্রভৃতি মশলা সহ আধার সম্মুখে ধরিয়া দেওয়া হইত। যাঁহাকে দেওয়া হইত তিনি ইচ্ছামত প্রস্তুত কবিয়া লইতেন।
নারাঙ্গি—নাগ-বসতি রঞ্জিত করে বলিয়া কমলা লেবুর না গ র ঙ্গ, সংক্ষেপে না র ঙ্গ, না র ঙ্গি নাম হইয়া থাকিবে। নাগজাতির বাস মধ্যভারতের নাগপুর এবং আসামের নাগা পর্ব্বতে।
খাঞ্জা—খুঞ্চা, small tray। ফা° খা ঞ্চা।
শাইল ধান—শালী ধান্য।
বিন্নি ধান—শৃন্য-পুরাণের দীর্ঘ তালিকায় ‘বিন্ধসালী’ ধানের নাম পাওয়া যায়। ফা° বি র ঞ্জ তুল°।
দই—প্রা° দ হি, দ হি অ।
বেগার—বিনা বেতনের চাকর, a person forced to work and carry burdens। ফা°।
অন্তরে—দূরে।
উনমত বেশ—অন্যমত বেশ, ভিন্ন সাজে।
সন্দেশ—দুগ্ধবিকারজাত মিষ্টান্নভেদ; এখানে উপচার। আহিরী শব্দ (কনহ্মালা)।
কিসের কারণ—কোন প্রয়োজনে।
পৃষ্ঠা ৩৫৭
তিন কোণ পৃথিবী ইতাদি—পৃথিবীর কোথায় কি আছে এবং হইতেছে সমস্তই গণিয়া দিতে পারি।
বারিসা—প্রা° পৈ°এ’ ব ব রি সা (বর্ষা)।
ফোটা—স° স্ফটিক অর্থে জলবিন্দু।
হইব না হৈব—হয়-নয়, সত্য মিথ্যা। কৃ° কী°এ’ ‘হএ নহে’।
পৃষ্ঠা ৩৫৮
হেরিয়া আছিল—হেরিতে আছিল, দেখিতেছিল।
দ্বাদশ—১২, ২২, ৩২, ৫২, ৬২ প্রভৃতি সংখ্যার ব্যবহার খুব বেশী।
সামাইল গামছা—পূর্ব্বে ‘সেঁওয়ালী গামছা’ (পৃ° ৯১)। লজ্জা নিবারণের উপযুক্ত বস্ত্র-খণ্ড। √সা মা ল বা সা মা লা; স° সম্-√ভৃ সম্বরণে।
গুরূ—প্রাকৃত সু’, ভিস্ এবং সুপ্ প্রত্যয় পরে থাকিলে ইকারান্ত ও উকারান্ত শব্দের অন্ত্য স্বর (বিকল্পে) দীর্ঘ হয়; ‘সুভিস্সুপ্সু দীর্ঘঃ’ (প্রা° প্র°, ৫।১৮)।
পৃষ্ঠা ৩৭৬
মা বোলাও তারে—তাহাদিগকে মাতৃসম্বোধন কর।
মহি—মুঞি।
গুরূ হিতাহিত—গুরুর আক্কেল বা বুদ্ধিবিবেচনা।
লগ্ন করি দিবা—শুভক্ষণ স্থির করিয়া দিবে।
প্রমাণ—প্রত্যয়ের হেতু, অনুজ্ঞা।
শীঘ্র তুরমান—One of these words may be dispensed with।
পৃষ্ঠা ৩৭৭
যুশি—জ্যোতিষী। হি°জো ষী। ‘An inferior tribe of Brahmans employed in casting nativities and fostering other superstitions practices of the natives. Their name is corrupted from জ্যোতিষী an astrologer.’ [Races of N. W. Provinces by Sir H. M. Elliot, Vol. I, p. 140.]
কালিনী জম—(১) জারজার্থক কানীন শব্দের বিকারে কালিনী হইতে পারে। (২) কালিন্দীর অপভ্রষ্ট কালিনী এবং যম ভগিনী যমুনার অপর নাম কালিন্দী। এখানে যমুনা (যমী) এবং যম উভয়কেই লক্ষ্য করা হইয়াছে কি না তাহাও বিবেচ্য। (৩) কালিনী শব্দে কৃষ্ণকায়ও হয়।
হাতে গলাএ বান্ধি—যে কোন প্রকারে।
দশ নৌক কাটি ইত্যাদি—অভীষ্ট-লাভ ও রোগ-মূক্তি জন্য ধর্ম্মরাজের নিকট নখ-চুল মানত এবং (গাজনে) জিহ্বাছেদন, বক্ষঃ বিদারণ প্রভৃতি কৃচ্ছ্রসাধন বা তাহার অনুকল্প আজও কোথাও কোথাও দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে রঞ্জাবতীর ‘শালে ভর’ স্মরণীয়। মানাইমু—সম্মত করিব, সান্ত্বনা করিব। সামী—প্রা°। হৃদয়বিদারী—বুক চিরিয়া রক্ত (দেওয়া)।
পৃষ্ঠা ৩৮০
লাচাড়ী—সাধারণতঃ ত্রিপদী ছন্দকে নাচাড়ী বা লাচাড়ী বলে; যথা—