গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড)/টীকাটিপ্পনী/গোপীচন্দ্রের পাঁচালী

গোপীচন্দ্রের পাঁচালী

কলিকাল—চারিযুগের অন্যতম; বর্ষ-পরিমাণ ৪,৩২,০০০। এক্ষণে উহার ৫০২৪ বৎসর অতীত হইয়াছে। পুরাণাদিতে কলির নিন্দাপ্রশংস৷ উভয়ই পাওয়া যায়। [গোপীচন্দ্রের গানে কলিকালকে মন্দ বলা হইয়াছে। পৃ° ৬৯] পাপের প্রাবল্য হেতু উহার নিন্দা এবং অল্পায়াসে মোক্ষ বা মুক্তির সম্ভাবনা বলিয়া উহার প্রশংসা। পাপ ও পুণ্য পরস্পরের প্রতিক্রিয়া মাত্র। অতিবৃদ্ধিতে অন্যের উৎপত্তি। সেই জন্য শাস্ত্রকারেরা ক্রমান্বয়ে চারি যুগের আবির্ভাব ও তিরোভাব কহেন। কলিকাল শব্দ তৎসম। কাল—পঞ্জাবী ক ল।
না রহিব—থাকিবে না। ক্রিয়ার পূর্ব্বে নেতিবাচক (negative)-এর উদাহরণ। স° √র হ ত্যাগে বা বর্জ্জনে; র হ তি, র হ য় তি। রহিত—জ্ঞান-রহিত। ‘রহয়ত্যাপদুপেতমায়তি’—কিরাত, ২।১৪। [আয়তি অর্থাৎ ভাগ্যলক্ষ্মী আপদ গ্রস্তকে ত্যাগ করেন।] শ্রীযুক্ত যোগেশ বাবু ‘শব্দকোষ’এ লিখিয়াছেন, অ-স্থানে র’ ও স-স্থানে হ’ করিয়া √অ স>√র হ উদ্ভূত। ভাষাতত্ত্বে এরূপ কল্পনা সমীচীন নহে। স° √র হ সকর্ম্মক, বাঙ্গালায় তাহা অকর্ম্মক। অর্থও একটু বিভিন্ন। Sayce—‘Words change their signification according to their use as active or passive, as subjects or as objects.’ Cf. ‘The sight of a thing’ and ‘The enjoyment of sight.’ [বস্তু বিশেষ দর্শন ও দৃষ্টি জন্য আনন্দ।] স° √র হ’রও ক্রমে অকর্ম্মকত্ব প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে অর্থ পরিবর্ত্তন ঘটিয়াছে। প্রাকৃত পৈঙ্গলে,
‘সুরসরি সিরমহ রহই’ (১।১১১), [সুরসরিৎ শিরোমধ্যে বসতি]; ‘সুপুরুস গুণেণ বদ্ধা থির রহই কিত্তি সুদ্ধা’ (২।৮৫), [সুপুরুষগুণেনবদ্ধা স্থিরাবতিষ্ঠতে কীর্ত্তিঃ শুদ্ধা]। এই অর্থই বাঙ্গায় আসিয়াছে। একটা কথা মনে রাখিতে হইবে—√র হ অসম্পূর্ণ ধাতু। যেমন √আছ বা স° √অ স্ বা ইংরাজি to be verb’ এর সর্ব্বকালে রূপ পাওয়া যায় না, ইহারও সেই প্রকার ‘রহিয়াছিলাম’, ‘রহিতেছিলাম’, ‘রহিতে থাকিব’ প্রভৃতি রূপ হয় না। ‘রহিবে’ স্থানে ‘ররিব’ প্রাচীন ব্যালার রূপ। পূর্ব্বে বঙ্গের গ্রাম্য ভাষায় এখনও এইরূপ প্রচলিত।
 প্রথম পঙ্‌ক্তি খণ্ডিত; ‘কলিকালে না রহিব ধর্ম্ম ধরা মাঝ।’ এইরূপ কিছু ছিল।
প্রণাম করি—আধুনিক; যুক্ত-ক্রিয়া (compound verb)। প্রাচীন বাঙ্গালায় করি ক রোঁ হইত।
চরণ—স° সম। বিকল্পে চ ল ন; যাহা দ্বারা চলা যায়। শব্দটির অর্থ-পরিবর্ত্তন লক্ষণীয়। (1) walking (2) foot (3) foot of a metre, (4) conduct, আচরণ, (5) root of & tree। সমাস--চরণকমল, চরণামৃত ইত্যাদি।
নাথ—বিভু; শিবের এক নাম। গোরক্ষবিজয়ে ‘নাথ নিরঞ্জন’। কর্ত্তৃকারকের চিহ্ন-বিলোপ মাগধীর অনুমত।
কহিব—স° ক থ স্থানে প্রাকৃতে ক হ আদেশ হয়। ভবিষ্যতে ই ব বা ব’। প্রাচীন রূপ ক হি বোঁ।
পাচালী—তান-লয় যোগে গান করিবার উপযোগী রচনা। স° পঞ্চালী অর্থে a system of singing। প্রকৃতেও প ঞ্চা ল ছন্দ ছিল। প্রাচীন ও মধ্য যুগের বাঙ্গালা সাহিত্যে ‘পাঁচলি প্রবন্ধ’, ‘পাঁচালির ছন্দ, পাঁচালির গাথা,’ ‘পাঁচালির কথা’ এবং ‘পাঞ্চালী’, ‘পাঞ্চালিকা’ ও ‘পাঁচালী’র প্রয়োগ অবিরল। শূন্য পুরাণে,—
শ্রীজুত রামাই রচিত পাঁচালী সঙ্গীত॥
(পৃ° 8০)

গোরক্ষবিজয়ে,—

গৌর্খের বিজয় কথা কবিন্দ্র রচিল।
সঙ্গিত পাচলা করি প্রচারিয়া দিল॥

(পৃ° ১৫৩)
 কেহ কেহ মনে করেন, পাঁচজ়নে মিলিয়া যাহা গান করা যায় তাহাই পাঁচালী। বিশ্বকোষ এই মতের সমর্থক। অপরে কহেন গান, সাজ-বাজান, ছড়া-কাটান, গানের লড়াই এবং নাচ এই পঞ্চাঙ্গবিশিষ্ট গীতি-কৌতুক পাঁচালীর বাচ্য। অবশ্য ১৯শ শতাব্দীর পাঁচালীই উহা দ্বারা লক্ষিত।
 এক সময়ে এদেশের সর্ব্বত্র ‘পুতলো নাচ’ প্রচলিত ছিল; এখনও কোথাও কোথাও আছে। পুতলো-নাচে পুত্তলির সাহায্যে প্রধানতঃ পৌরাণিক উপাখ্যান বিশেষের অভিনয় দেখান হয়, এবং বিষয়ের অনুরূপ গীত ও তৎসহ বাদ্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রকার গানের পরিণতি পা ঞ্চা লী বা পাঁ চা লী হইতে পারে। চৈতন্য-ভাগবতের ‘পুত্তলি করয়ে কেহ দিয়া বহু ধনে॥’ উক্তি যেন তাহাই সূচিত করে।
তোহ্মার—কুমারপালচরিতে তু ম্ হা র (যুষ্মদীয়), ৮।৭৪। অপভ্রংশ ভাষায় যুষ্মদাদি শব্দের উত্তর ভা র আদেশ হয়; ‘যুষ্মদাদেরীয়স্য ডারঃ’ সিদ্ধহেম° ৮|৪|৪৩৪। প্রাকৃত ম্ হ স্থানে বাঙ্গালা সাহিত্যে হ্ম’ পরিদৃষ্ট হয়। প্রাকৃত পৈঙ্গলে তু হ্মা ণ (বেঙ্গল এসিয়াটিক সোসাইটির সংস্করণ,
পৃ° ৩৪৬)। বস্তুত এরূপ বর্ণবিন্যাস বঙ্গীয় উচ্চারণের অনুকূল নহে।
গতি—(১) গমন, (২) উপায়, (৩) লক্ষ্য। এখানে গমন-কার্য্য বা গমনের ভাব অর্থ নহে। অর্থ—চরম-লক্ষ্য (abstract for concrete, part for whole) অথবা ভর-পারের উপায়। শেষের অর্থ গ্রহণ করিলে চরণ শব্দের লক্ষ্যার্থ ‘চরণে আশ্রয়’ করিতে হয়। কিন্তু ঐ চরণই একান্ত আরাধ্য, লক্ষ্য, সর্ব্বশেষ উদ্দেশ্য Summum bonum এইরূপ অর্থই ভাল; কবির উদ্দেশ্য যাহাই হউক।
দিব্যজ্ঞান—[দিবি ভবং দিব্যং], দিব্ শব্দের অর্থ দীপ্তিমান্ আকাশ; আমরা উহাকেই স্বর্গ অথবা দেবতাদিগের দেশ বলিয়া কল্পনা করিয়া লইয়াছি। তাই দেবতাদিগের নাম দিবিস(ষ)দ, দিবৌকস্ (সঃ), দিবোকস্, দিবিজ, দিবিষ্ঠ, দিবিস্থ ইত্যাদি। দিব্য—স্বর্গীয়, অতি-প্রাকৃত, উজ্জ্বল। জ্ঞান—philosophy which teaches a man how to understand his own nature and how he may be re-united with the Supreme Spirit: Cf জ্ঞান-যোগ। এখানে philosophy নহে, মন্ত্র বিশেষ। অথর্ব্ববেদের মন্ত্র, ভূত-প্রেত-সিদ্ধি এই ধর্ম্মের অঙ্গ; ‘আড়াই অক্ষর জ্ঞান রাখ ধড়ের ভিতর॥’ (পৃ° ৩৪৬)। দিব্যজ্ঞান—অ-মর্ত্ত্য-সম্ভব অতি দুর্ল্লভ জ্ঞান-মন্ত্র, যাহার সহায়তায় ভব-পারে যাওয়া যায়, যমকে ফাঁকি দেওয়া যায়।
সাক্ষাতে—প্রত্যক্ষে, সম্মুখে। আবার সাক্ষাতে পদটিকে পোতা পদের বিশেষণ করিলে সাক্ষাৎ পোতা, ‘মূর্ত্তিমান্, প্রত্যক্ষীভূত’ অর্থ হয়; যেমন ‘সাক্ষাৎ যম’, ‘সাক্ষাৎ ধর্ম্ম’ ইত্যাদি।
পোতা—পারের তরণী। স° পোত; পোতা শব্দের অন্ত্য আকার একটি লুপ্ত
ক-কারের জ্ঞাপক। কবিকঙ্কণে ‘পো তা মাঝি’। পোতা শব্দের অপরাপর অর্থ, (১) ভিটা, ঘরের মেজে, (২) পৌত্র, (৩) মুষ্ক (ফা° ফোতা), (৪) প্রাচীন সাহিত্যে পুস্তক অর্থে পোতা, পোথা।
দিব্য জ্ঞান দিয়া ইত্যাদি—গুরুদেব জ্ঞানমন্ত্র উপদেশ করিয়া ভবপারে যাইবার (যম এড়াইবার) তরণী দান করিয়াছেন। আড়াই অক্ষরের মন্ত্রই তরণী তুল্য।
পুত্র—‘পুন্নামো নরকাদ্ যস্মাৎ ত্রায়তে পিতরং সুতঃ। তুস্মাৎ পুত্র ইতি প্রোক্তঃ স্বয়মেব স্বয়ম্ভূবা॥’ বংশরক্ষা বা সংসার বন্ধনের পবিত্র কারণ। প্রকৃতির নিয়মে এইরূপ জ্ঞানকে instinct for the preservation of the species বলা হয়। এই জ্ঞান সর্ব্ব জীবেই সমান। ইহার অভাবে সৃষ্টি নাম।
গুবিচন্দ্র—প্রাচীন বাঙ্গালায় ও-কার স্থানে উ-কার এবং প-কার স্থানে ব-কার বিরল নহে।
যোগ—[চিত্তবৃত্তির নিরোধ। ‘সতী সতী যোগবিসৃষ্টদেহা’—কুমার, ১।২১; ‘যোগেনাস্তে তনুত্যজাম্’--রঘু, ১।৮।] এখানে মুক্তির উপায় বা তদ্বিষয়ক ধ্যান।
কর মন—যুক্ত ক্রিয়া, comp. verb। মনোযোগ কর, মন দাও। বাঙ্গালাভাষায় মন শব্দ সকারান্ত বা বিসর্গান্ত নহে। সুতরাং মনান্তর, মনাগুন, মনানন্দ, মনাতঙ্ক মন-গড়া প্রভৃতি যে সকল শব্দ এতকাল বাঙ্গালা ভাষার সম্পত্তিরূপে প্রতিষ্ঠালাভ করিয়া আসিয়াছে, সংস্কারের ধুয়ায় তাহাদিগের ত্যাগ করা অনুচিত। তাহাতে আমাদের ক্ষতি ভিন্ন লাভ নাই। মনোযোগ মনোভিনিবেশ, মনশ্চক্ষু প্রভৃতি সংস্কৃত সমাসনিস্পন্ন শব্দ সংস্কৃত হইতে গৃহীত হইয়াছে। এ উপায়েও ভাষার সম্পদ এ বাড়িয়াছে।
ধর্ম্মরাজ—ধার্ম্মিক রাজা। এখানে মাতা ধর্ম্মরাজ সম্বোধনে পুত্রের সৎপ্রবৃত্তি জাগাইতেছেন।
শুনহ—প্রা° সু ণ হ (শৃণুস্ব)।
ব্রহ্মজ্ঞান—আত্মতত্ত্ব জ্ঞান, ‘এই সমস্ত জগৎ ব্রহ্ম বা ব্রহ্মময়’ এই জ্ঞান। এখানে মন্ত্র-মাত্র (যোগের অঙ্গ বিশেষ)।
হইবার—হইবারে, হইবার নিমিত্ত। এইরূপ নিমিত্তার্থ কৃৎ প্রত্যয়ের বহু দৃষ্টান্ত এই গ্রন্থে এবং প্রাচীন বাঙ্গালা সাহিত্যে পাওয়া যায়।
নাহিক—ক্রিয়ার উত্তরেও এককালে স্বার্থে প্রত্যয়ের ছড়াছড়ি হইয়াছিল। তাহার ফলে অনুজ্ঞার্থক দিউক, যাউক, প্রভৃতিতে ক আসিয়াছে। ইহাদের প্রাকৃতরূপ ক-বিহীন। বাঁকুড়া-মেদিনীপুরের ভাষায় ভবিষ্যৎ কালেও ক-প্রত্যয়ের ব্যবহার আছে। বিদ্যাসাগরী বাঙ্গালার ইহা একটি বিশিষ্টতা। নাহিক মরণ—মৃত্যু হইবে না। প্রা° √ম র (স° মৃ)।

পৃষ্ঠা ৩১৪

বাপু—পুত্রার্থে বাপ শব্দের প্রয়োগ আদরে; তুল° স° তাত। উ-প্রতায়ও আদরে। হি°, ম°, গু° প্রভৃতি ভাষাতেও বাপ। প্রা° ব প্ প (বপ্র); Cf. Eng. papa।
গোবিন্দাই—যোগেশ বাবু বলেন আদরে আ ই প্রত্যয় (বা° ব্যা°, পৃ° ১১৪)।
তোহ্মারে—তোমাকে।
পন্থের—পরপারের পথের।
সম্বল—
सऺवल, পথের খাদ্য; provisions for a journey। গৌণ অর্থ (secondary meanings) —পথ-খরচা, পাথেয়; পুঁজি, মূল-ধন। সাধারণ ব্যবহার ‘পথের
সম্বল’। জীবিকা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ঘরে এক কড়ার সম্বল নাই। নিঃস্বম্বল, স্বরলহীন।
ধন—অর্থ, মূল্যবান বস্তু, সঞ্চয়। স° সম।
রাখিবা—সঞ্চয় করিবে। অন্তে আকার প্রাচীন। প্রা° √র ক্ খ। জ্ঞান-মন্ত্রের উপদেশ লইয়া যোগী না হইলে তুমি যমের হাত এড়াইবে কি করিয়া?
রতন—রত্ন, সার পদার্থ; এখানে রেত বোধ হয়। সৎনামী সম্প্রদায়ের মধ্যে কএকটি সাঙ্কেতিক শব্দের ব্যবহার আছে। ‘মণি’ তাহার একটি; অর্থ—শুক্র। ত্ন’ এই যুক্ত বর্ণের বিপ্রকর্ষণ ও আকারাগম স্বরভক্তি।
হারাইবা প্রাণ—স° √হৃ-ণিচ্ হারয়তি, প্রা° হা রে দি (ই), বা° হারায়। এখানে ণ্যন্ত অর্থ নহে। প্রয়োজক কর্ত্তার অজ্ঞাতসারে এ কাজটি হইয়া থাকে; rather passive (neuter)। প্রাণ শব্দে হৃদয়স্থ বায়ু; লক্ষ্যার্থ জীবন।
রতন খুশিরা গেলে ইত্যাদি—গোরক্ষ বিজয়ে,—

শনিবারে বহে বায়ু শূন্যে মহাতিথি।
পূর্ব্বে উলে ভাস্কর পশ্চিমে জ্বলে বাতি॥
নিবিতে না দিও বাতি জ্বাল ঘন ঘন।
আজুকা ছাপাই রাখ অমূল্য রতন॥
রবিবার বহে বাউ লৈয়া আদ্য মূল।
আগুন পানিএ গুরু এক সমতুল॥
আগুন পানিয়ে জদি হএ মিলামিলি।
নিবি জাইব আগুনি রইয়া জাইব ছালী॥

(পৃ° ১৪০)
পলিও—স° √পা-ণিচ্ পালয়তি; অর্থ রক্ষা করা, to preserve। এখানে কিন্তু অর্থ ‘মানা’, to observe। প্রা° পা লি হ>বা° পা লি অ, পা লি ও। পূর্ণিমা—কর্ম্মকারক; বিভক্তি-চিহ্নের অভাব।
না জাইয়—ক্রিয়ার পূর্ব্বে নেতিবাচকের প্রয়োগ। প্রা° জা ই হ>বা° জা ই অ, জা ই ও।
সাক্ষাৎ—সমক্ষে, দৃষ্টিপথে। অব্যয়; স° সম।
অমাবস্যা পালিও ইত্যাদি—গোরক্ষবিজয়ে—

রবি শশী অমাবস্যা এ তিথি পূর্ণিমা।
প্রতিপদ নবমী না জাইয় নারী সীমা॥
জতনে মাসান্ত [পাল] দশমীরে।
বাঘিনী শোয়াসে আউ জায় ধীরে ধীরে॥ (পৃ ১৮৮)

অমাবস্যা, পূর্ণিমা, প্রতিপদ, শনিবার ও রবিবার পর্ব্বদিন বলিয়া গণ্য হইত। এইজন্য স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ।
শনিবার রবিবার ইত্যাদি—এই দুইটি মিলনের দিন। মুসলমানগণ যেরূপ শুক্রবারে সম্মিলিত হইয়া ধর্ম্ম-চেষ্টা করেন ইঁহাদের সেইরূপ শনি-রবিবার। ‘কিশোরী ভজনী’-দের উপাসনা-সভার নাম মে লা।
বর্ব্বর—অসভ্য, নির্ব্বোধ। ‘বর্ব্বরস্য ধনক্ষয়ঃ’।
পাশে—নিকট। প্রা° প্ স্ স (পার্শ্ব); বা° পা শ। তালব্য শকার মাগধীর প্রভাব অথবা সংস্কৃতের অনুরূপ বর্ণবিন্যাস।
রএ—রহে; disaspiration। প্রা° র হ ই। পূর্ব্বে দ্র°।
দিনখানি—Peculiar idiom। কৃ° কী°এ ‘নাতিনি খানি’, শ্রীকৃষ্ণ বিজয়ে ‘পোখানি’, কৃত্তিবাসী রামায়ণে ‘কন্যা একখানি’, কবিকঙ্কণে ‘চলন খানি’।
গৃহস্থাপনা—গৃহস্থালি, গৃহস্থের আচরণ।
ভহৃচে [মাপা]—রাশিচক্রে সুনির্দ্দিষ্ট। ভহৃচ, বু রু চ, প্রভৃতি আ° বু র্জ (sign of the Zodiac) শব্দের বিকার।
ঘাগহৃ, ঘাগরি—যাগরা।
উন্না, উনা—উল্লা। ফরিদপুর-পাবনা অঞ্চলে খুলিয়া ফেলা অর্থে উ দ্ লা শব্দ প্রচলিত।
দণ্ডেক—ক্ষণেক, বারেক, জনেক দিনেক, অর্দ্ধেক প্রভৃতি বাঙ্গালা সন্ধি। পালি ও প্রাকৃতের ন্যায় বাঙ্গালা-সন্ধিতে সন্নিহিত স্বরঘরের একটির লোপ ও একটির প্রতিষ্ঠা হয়। অকার সাধারণতঃ লোপ পায়, কারণ ইহার উচ্চারণ আমরা করি না।

পৃষ্ঠা ৩১৫

অখন—এখন, এক্ষণে।
না বুঝ—যদি না বুঝ, সংযত না হও। Mark the Bengali idiom that না can not here (subjunctive) be used after the verb। প্রা° √বু জ্ ঝ (স° √বু ধ্)।
পহৃনামে—পরিণামে, ভবিষ্যৎ কালে, কৃতকর্ম্মের পরিণতি কালে। Aspiration।
সুখুনাএ—শুষ্ক স্থানে, ডাঙ্গায়। প্রা° সু ক্ খা ণ (শুষ্ক)।
ডুবাইলা—পালি ভাষায় √ম স্ জ স্থানে ডু বব্ব আদেশ হয়।
ভরম—ভ্রম, ভ্রান্তি। বিপ্রকর্ষণ।
টলমল—অস্থিরতা, অর্থাৎ ক্ষণস্থায়িতা প্রকাশক।
তেনমতে—কৃ° কী°’এ তেহ্ন মতেঁ।
যৌবন সকল—সমগ্র যৌবন। No idea of plurality but of locality। Note the সকল is now invariably used with plural nouns। কচু পাতার জল যেমন চঞ্চল তোমার যৌবন সেইরূপ; Cf ‘নলিনীদলগত জলমতি তরলং তদ্বজ্জীবন মতিশয় চপলং’।
নল খাগ—নল ও খাগ (খাগড়া), শূন্যগর্ভ তৃণভেদ।
পড়ে—প্রা° প ড় ই (পততি); হি° প ড়ৈ।
নল খাগ কাটিলে ইত্যাদি—খাগড়ার পর্ব্বে পর্ব্বে জল সঞ্চিত থাকে। কাটিলে জল পড়িয়া যায় ও নলটি এক দিনেই শুকাইয়া যায়। যৌবনের অপব্যবহার করিলে তাহাও শীঘ্র বিনষ্ট হয়। এই কয় পঙক্তির বাচ্যার্থ অপেক্ষা বঙ্গ্যার্থের চমৎকারিত্ব। ইহাকে উত্তম কাব্য বলে।
বধু—পত্নী। সমাস ভিন্ন অন্যত্র বধূ শব্দের পত্নী অর্থে প্রয়োগ সংস্কৃতে দেখা যায় না। সমাসে মৃগবধূ, ব্যাধবধূ, গোপবধূ ইত্যাদি।
রূপ—সৌন্দর্য্য, গঠন-সৌন্দর্য্য।
দেখি—প্রা° দে ক্ খি অ।
রোল—মৌলিক অর্থ কোলাহল। বিক্ষোভ, চাঞ্চল্য।
হলদির ফুল—অ-ফল-প্রসবী কুসুম। সেই হেতু অশুভশংসী ও বৃথা। রমণীর রূপও তদ্রূপ।
কলা—হাব-ভাব, ঠাট-ঠমক।
ভটরি—জাদু, সম্মোহন। হি° ভ ড় রী।
দেখন্তি—দেখ বা দেখিতেছ অর্থে।
কুমারের কাটারি—কামারের কাটারিই অধিকতর সঙ্গত মনে হয়।
কেন্দা ফল—স° কাকেন্দু, a species of ebony (Diospyros melanoxylon)।
খাইলে—মাগধী খা ই দে (খাদিতঃ)। যোগেশ বাবু বলেন, ভূত কালের ইল বিভক্তির উত্তর কারকের এ’ বিভক্তি যোগে ইলে প্রত্যয় (ব্যাকরণ, পৃ° ১৪৯)।

পৃষ্ঠা ৩১৬

অনলে ডুবি মরিবা—শ্রীকৃষ্ণের দাবানল পান স্মরণীয়।
অব্রেথা—বৃথা; গ্রাম্য ভাষা।
পিহৃতি—পিরীতি, প্রীতি, প্রণয়; দাম্পত্য প্রেম। Aspiration and vowel augmentation। বৈষ্ণব-সাহিত্যে পিরীতি শব্দের অর্থসংকীর্ণতা ঘটিয়াছে।
আগে তিতা পাছে মিঠা ইত্যাদি—দুঃখ-লেশ-সংস্পর্শ প্রীতি প্রীতিই নহে। নিরবচ্ছিন্ন সুখই জীবের ঈপ্সিত।
সর্ব্বজএ—যাহা ধারণে সর্ব্বত্র উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়।
দণ্ডবত—উপমাগর্ভ অর্থ। দণ্ড বা যষ্টি সদৃশ সরল হইয়া পতন। অর্থ সংকীর্ণতা ব্যবহারে।
মাএর—প্রা° মা আ (মাতৃ); এ র বিভক্তি চিহ্ন।
জিয়া থাক—বাঁচিয়া থাক।
চারি বধূর দুগ্ধ ইত্যাদি—পত্নী চতুষ্টয়কে মাতৃজ্ঞানে সংসার ত্যাগ কর। গোরক্ষপন্থী সম্প্রদায়ে প্রবেশ-কালে বিবাহিত ব্যক্তিকে গুরুর নির্দ্দেশ মত মাতৃসম্বোধনে স্বীয় পত্নীর নিকট ভিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা ছিল। খাএ্যা—প্রা° খা ই অ (খাদিত্বা); পান অর্থে বাঙ্গালা ভাষায় √খা’র প্রয়োগ লক্ষণীয়।
ঘোষা—ধুআ, ধ্রুবপদ, chorus of a song। মাধবাচার্য্যের জাগরণে ধুয়ার পরিবর্ত্তে ‘বিষ্ণুপদ’ ও ‘গোপীভাব’ এই দুইটি শব্দ পাওয়া যায়। বাসু ঘোষের গৌরাঙ্গ চরিতে ‘ঠাট’। অসমীয়াতে ঘো ষা শব্দ প্রচলিত।
অগ—ওগো। দেশী প্রা° আ গ।
মাএ পুত্রে কথা কৈতে ইত্যাদি—মাতা ও পুত্রে উত্তর-প্রত্যুত্তর দোষাবহ নহে। তুমি দশ মাস দশ দিন আমায় গর্ভে স্থান দিয়াছ, সুতরাং তোমায় আমায় বড় অধিক
পার্থক্য নাই। মাএ পুত্রে—দ্বন্দ সমাসের দুই দুই পদেও বিভক্তি থাকিতে পারে; যথা—আগে-পাছে, বুকে-পিঠে, কোলে-কাঁখে, চোখে-মুখে, ঘরে-বাহিরে ইত্যাদি। [যোগেশ বাবুর ব্যকরণ, পৃ° ২১৪] এখানে সহার্থ পরিস্ফুট।
সহজে—স্বভাবতঃ।
উনাহি, উনাই—উষ্ণ হইয়া। প্রা° উ হ্না ব ই (উষ্ণায়তে)।
পশর—আলোক। চট্টগ্রামের প্রচলিত ভাষায় ‘পঅর’, অস° পোহর। প্রভা>পরভা>(পোহর)>পহর>পশর।
প্রশনে—পরশনে, স্পর্শে।
গিহ—ঘৃত। Vowel augmentation।
পুনি—পুনঃ। প্রা° পু ণি, পু ণী।
ঘৃতেতে রাখিয়া ইত্যাদি—ঘৃতের প্রদীপ লক্ষ্য কর, [ক্ষুদ্র] দীপ-শিখায় ঘৃত উনাইয়া পড়ে। [বৃহত্তর] অগ্নি-সংস্পর্শে ঘৃত উনাইয়া পড়িবে তাহাতে আর কথা কি? [তুল° ‘অবশ্য উনাইব ঘৃত আনল পরশে।’—দৌলত উজীর কৃত লয়লী মজনুর পুঁথি] এক্ষেত্রে ভাণ্ডে লবনী অর্থাৎ ঘনীভূত ঘৃত রক্ষা করা এক প্রকার অসম্ভব। মর্ম্মার্থ—যৌবনে ব্রহ্মচর্য্য সাধন সহজ সাধ্য নহে।
লনি—নবনীত; ঘৃত। প্রা° লো ণী, লো ণী অ।
বুজাই—disaspiration; প্রাচীন রূপ বু ঝা ওঁ।
নিবিলে—স° নির্ব্বাপিতে সতি; ভাবে ৭মী।

পৃ ৩১৭

ছুটি গেলে—নিষ্কাশিত হইলে, having escaped। ছুটি—শৌরসেনী √ছূ ঢ (ক্ষিপ্); বিক্ষিপ্ত হওয়া, বেগে বহির্গত হওয়া।
শিখড়—‘শিফাদ্বয়ং শিহর ইতি খ্যাতে’—সর্ব্বানন্দ।
কথাতে—কোন স্থানে। The suffix তে’ is altogether redundent।
প্রদীপ নিবিলে ইত্যাদি—প্রদীপ নিবিয়া গেলে স্নেহ পদার্থ আলোক দান করিতে পারে না। জীবন না থাকিলে রক্তরসাদি পদার্থ বৃথা। দৃষ্টান্ত অনেক--জমির জল নিষ্কাশনের পর আলি বন্ধনে কি লাভ? মুলচ্ছেদন করিলে বৃক্ষ বিনষ্ট হয়। বিনা জলে মৎস্য জীবিত থাকে না। গোরক্ষ বিজয়ে,—

প্রদিব নিবিলে বাপু কি করিব তৈলে।
কি কাজ বান্ধিলে য়াইল জল না থাকিলে।
শিখড় কাটিলে তবে পড়ে গাছ।
বিনি জ্বলে কথাতে জিএ মাছ।

(পৃ ১০৮)
তুল° ‘নির্ব্বাণ দীপে কিমু তৈল দানম্’ ইত্যাদি।
রাজা নহে আপনা ইত্যাদি—রাজা, রাজকর্ম্মচারী কেহই আত্মীয় নহে। পত্নীও সদা আত্মসুখে রত। চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রচলিত প্রবাদ,—

রাজা নহে আঅনা কোট্টাল নয় মিতা।
ঘরর স্তিরী আঅনা নয়......।

স্তিহৃ—অপ্রচলিত রূপ; aspiration and vowel augmentation।
আপনসুক্য—আত্মসুখী।
ছিরি—শ্রী। প্রা° সি রী, সি রি।
নারী সবে—সব শব্দের যোগে বহুবচন; দৃষ্টান্ত—

কছবি সবে বাপে পুত্রে শৃঙ্গার মাগিব।

(পৃ° ৩২৩)

মহা মহা সতী সব হৈব মিথ্যাকার।

(ঐ)

অকুমারী নারী সবে মাগিব শৃঙ্গার।

(ঐ)

এহি সব এড়ি জাবে আপনে জানিয়া।

(পৃ° ৩২৫)

এরূপ যৌবন সব চারি গুন হেরি।

পৃ ৩৩৮)
ইত্যাদি।
তোই—অসম্ভ্রমে; তুই শব্দ দ্র°।
হএ—হয়। বা° √হ; এই এ’ প্রত্যয় প্রা° হ স এ, ক র এ, প ঢ় এ প্রভৃতি ন্যায় (প্রা° প্র°, ৭।৫ ও সিদ্ধ হেম°, ৮।৩।১৪৫)।
নিত্যএ—নিত্যই, প্রত্যহ।
বিকল—অবিকল, অবিমিশ্র।
কপাল তুলিয়া—মাথা তুলিয়া বা ভ্রূকুটি করিয়া।
আএউ—আয়ু।
টুটি জাএ—কমিয়া যায়, হ্রাস হয়। √টু ট্ (স° ত্রু ট্) ভঙ্গে।
আজু কাইল—অদ্য কিম্বা কল্য, সত্বর। অপ° অ জ্জু; সি° অ জু।
ভাবি চাহ—ভাবিয়া দেখ, বিচার কর।
রাজার পাপে ইত্যাদি—তুল°।

রাজার পাপে রাজ্য নষ্ট প্রজা কষ্ট পায়।
গিন্নীর পাপে গৃহস্থ নষ্ট লক্ষ্মী ছেড়ে যায়।

রজু—রজ্জু, শৃঙ্খল, মিল, discipline, control।
কুকুর বরণ—কুকুরের জাতি।
চারি জাতি নারীর লক্ষণ—পূর্ব্বে দ্রষ্টব্য।

পৃষ্ঠা ৩১৮

খাছিয়ত—স্বভাব, লক্ষণ Per. Khassiyat, peculiar nature, natural disposition।
কহিমু—কহিব। চৈ° ভা° প্রভৃতিতে; কৃ° কী°’এ ক হি বোঁ।
এহি—এই। অপ° প্রা° এ হি, এ হী।
হস্তিয়া—হস্তিতুল্য ধীর (গমন)। হস্তী শব্দের উত্তর ঈয় প্রত্যয়।
জানেন্ত—জানে, মনে করে। প্রা° জা ণ ত্তি (জানন্তি)। প্রাচীন বাঙ্গালায় এই ন্ত-ভাগান্ত ক্রিয়া পদের প্রচুর প্রয়োগ দৃষ্ট হয়।
জে—পাদপূরণে। প্রা°।
দন্দ—দন্দ্ব, বিবাদ, কলহ।
নিত্য প্রতি—নিয়ত, সতত।
হস্তিনী নারী সবের ইত্যাদি—হস্তিনী রমণীর (স্থূল দেহ হেতু) গতি হস্তিসদৃশ মবথর। সে পতি সেবার সুখ না পাইয়া পরপুরুষ কামনা করে। এবং সে কলহপ্রিয়া।
নরক—মৃত্যুর পর যে স্থানে যাইয়া দুষ্কৃতি জন্য শাস্তি ভোগ করিতে হয়। মন্বাদিতে নরক-সংখ্যা একবিংশ; যথা—তামিস্র, অন্ধতামিস্র, মহারৌরব, নরক, কালসূত্র, মহানরক, সঞ্জীবন প্রভৃতি। নরকের নাম ও সংখ্যা লইয়া শাস্ত্রকারগণের মধ্যে মতভেদ দৃষ্ট হয়। [বিস্তৃত বিবরণ ভাগবত, ৫ম স্ক° ২৬ শ অ° ও ব্রহ্মবৈবর্ত্ত প্রকৃতি খণ্ড ২৭-২৮ শ অ° দ্র°।] খ্রীষ্ট ধর্ম্মাবলম্বীদের জে হে ন্না (Gehenna) এবং মুসলমানগণের জা হা ন্ন ম্।
অনুদিন—প্রতিদিন, দীর্ঘকাল; অর্থ বৈচিত্র।
গোঁআইব—√গো আ, যাপন করা, কাটান; ভবিষ্যতে ই ব প্রতায়।
তোর—পাদপূরণে অথবা প্রকৃত পাঠ ‘তার।
শঙ্ক৷ শঙ্কা চিত্ত—সর্ব্বদা সশঙ্কচিত্ত। বীপ্সা (দ্বিরুক্তি) উৎকণ্ঠাব্যঞ্জক।
দিবা রাত্রি—সর্ব্বদা, ২৪ ঘণ্টা। বাঙ্গলায় দিবারাত্র ও দিবারাত্রি উভয়ই প্রচলিত।
বিদিত—বিদ্যমান, নিকটে।
খিন্য মাঞ্জা—ক্ষীণ মধ্য। টী° স°’এ মাঝা।
লম্পা তন—তুল° ‘স্থূলকুচা’।
আউল—আকুল, অবিন্যস্ত। লুপ্ত ককারের প্রভাবে আকার।
শঙ্খিনী নারী তোর ইত্যাদি—শঙ্খিণী রমণী পতিকে বিশ্বস করিতে না পারিয়া অনুক্ষণ পতির নিকটে থাকে। তাহার শরীর দীর্ঘ, মধ্যদেশ ক্ষীণ। সে ‘সম্ভোগ-কেলি-রসিকা’।
পদ্মতলে বাস—গায়ের গন্ধ পদ্ম তুল্য এইরূপ অর্থ বোধ হয়। একখানি রতিশাস্ত্রের পুঁথিতে, ‘পদ্মিনীর শরীরে লাগে পদ্মের সমান। পদ্ম প্রায় অঙ্গ তার দেখি অনুপাম॥’
আশ—আশা, কামনা, উপভোগের স্পৃহা।
আপনা—লুপ্ত ককারের প্রভাবে আকার। প্রা° অ প্ প ণো।
প্রণতি—প্রণয়, প্রীতি।
বেগনা—অপরিচিত। ফা° বে গা ন হ।
পদ্মিনী নারী তোর ইত্যাদি—‘পদ্মিনী পদ্মগন্ধা’। সে আপন পতির সহিত প্রণয় অক্ষুণ্ণ রাখিয়া পরকীয়া প্রীতি উপভোগ করে। পরপুরুষ দেখিলেই কামতৃষ্ণায় উৎকণ্ঠিতা হয়।

পৃ ৩১৯

কৌড়ি—কড়ি ও কড়া শব্দ দ্র°।
করেন্ত জতন—যত্ন করে।
চিত্রাণী নারী তোর ইত্যাদি—চিত্রাণী রমণী (নাতিদীর্ঘ, নাতিস্থূলা) সর্ব্বদা স্বামীর মঙ্গল কামনা এবং সংসারের হিত চিন্তা করে।
বৈকুণ্ঠ ভুবন—স্বর্গ।
লাগল—নাগাল, সন্ধান; বিবরণ। স° √ল গ্ স্পর্শে।
মুখে মধু দিয়া ইত্যাদি—মিষ্ট কথায় (ও রূপের মোহে) মুগ্ধ করিয়া যথাসর্ব্বস্ব হরণ করে।
ব্যাঘ্র দৃষ্টে—শিকারীর ন্যায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে।
জোখের মতন হবে—জোঁকের ন্যায় অজ্ঞাতে রক্ত শোষণ করে।
মেউরের ফেঁকা ধরে—ময়ূরের ন্যায় (রোষে) পক্ষ বিস্তার করে অর্থাৎ বিরক্তি প্রকাশ করে। মেউর—প্রা° ম ঊ র। ফেঁখা—প্রা° প খ ম; °পা পে ক্ খু ণ।
অক্ষি ঠাএরে—আঁখি ঠারে, নয়ন সঙ্কেতে।
ভাল কোন চাই—শ্রেষ্ঠ কে?
মোটা—তামিল মোট অর্থে কাপড়ের বস্তা।
গমন—সহবাস; mark the sematology।

পৃষ্ঠা ৩২০

আর্জ্জিয়া—অর্জিয়া, উপর্জ্জন করিয়া।
সুখাএ—সুখী হয়; তল° দুখাএ (গো° বি°)।
জনম—আজন্ম, মৃত্যুকাল পর্য্যন্ত।
নামে—মোটেই, আদৌ।
উঠিয়া পড়ে—উড়িয়া পড়ে।
শঙ্খিনী—শকুনী।
মহামুনি—পুত্রের প্রশংসা। খণ্ডিত স্থলে ‘করে পরিধান’ এইরূপ কিছু ছিল বোধ হয়।
শাড়ী—সাড়ী শব্দ দ্র°।
শোয়াস—শ্বাস। বিপ্রকর্ষে।
মহা হএ—গন্ধে ভুর ভুর করে। অনন্ত দাসের পদে, ‘যতনে সাজানু ফুলের সেজ গন্ধে মোহ মোহ করে।’ কথ্য ভাষায়
‘মহ মহ কর্‌তেছে’। প্রা° ম হ ম হ ই (অতি সৌরভমুদ্বহতি)।
সেই সে—সেই-ই। সেহি হি (হি অবধারণে)>সেহি সি>সেই সে; সেই<সহি। সে’ is due to attempt at corrections। Cf. ‘তুমি সে শ্যামের সরবস ধন শ্যাম সে তোমার প্রাণ।’; ‘যাকে যার অভিরুচি সেসি তারে ভায়।’ (কবিশেখরের গোপাল-বিজয়); ‘সিসি ধন্য সিসি শুদ্ধ সেহি-সে পণ্ডিত।’ (কীর্ত্তন ঘোষা)। অন্যথা সে শব্দ অনর্থক।
প্রাণ—প্রাণ-সমা।
আহ্মি—প্রা° অ ম্ হি (অহম্)।
তুহ্মি যারে চিন্ত ইত্যাদি—‘ভাল কোন চাই’ বলিরা প্রশ্ন করা হইরাছিল, চারি জাতীয় রমণীর মধ্যে কে উত্তমা। তদুত্তরে এখানে চিত্রাণী নারীর প্রশংসা করিয়া বলা হইতেছে গোবিন্দচন্দ্র চিত্রাণীতে অনুরক্ত তাহা ময়নামতীর অবিদিত নাই। ইহার অব্যবহিত পূর্ব্বে পদ্মিনীর শ্রেষ্ঠত্ব সূচিত হইয়াছে।
চন্দ্রে—চন্দ্ররূপ তোমাকে।
ষোল কলায় বেড়ি লৈল—ষোলকলায় পরিপূর্ণ, পূর্ণ যৌবন সম্পন্ন। ষোল—ম° সো ळा, গু° স ळ। কলা—A digit বেড়ি—প্রা° √বে ঢ় বেষ্টনে।
যম ঘর—যমালয় দ্র°।

পৃষ্ঠা ৩২১

পৌরুষ—পুরুষোচিত কর্ম্ম। পরের পুত্রকন্যার বিবাহের ব্যয় নির্ব্বাহ করা ও ব্যবস্থাদি করিয়া দেওয়া পূর্ব্বে পুরুষোচিত কার্য্য বলিয়া গণ্য হইত।
শূন্য প্রান্ত পাইয়া ইত্যাদি—পথ-পার্শ্বে বা প্রান্তরে বৃক্ষ রোপণ, পুষ্করিণী খনন,
রথ্যাদি নির্ম্মাণ প্রভৃতি এক সময়ে ধর্ম্ম-কর্ম্মের অঙ্গ ছিল। রুইলা—বা° √রু (স° রু হ)।
লাগি—অব্যয়। নিমিত্ত। অপ° ল গ্ গি (স° ল গ্নে)।
জাঙ্গাল—উচ্চ আলি বা পথ। অর্ব্বাচীন স° জ ঙ্গা ল।
হীরা মন মাণিক্য—হীরা-মণি-মাণিক্য। এই বাক্যাংশ প্রাচীন বাঙ্গালা সাহিত্যে অবিরল। প্রা°হী র অ।
তলি—চেটাই; বাকুড়া অঞ্চলে তালাই, তেলাই।
উদার—ধার, ঋণ স° উ দ্ধা র; হি° উ ধা র।
ঢেপুয়া—মুদ্রার পরিবর্ত্তে প্রচলিত তাম্রখণ্ড; the unstamped lumps of copper used in Northern India as pice। হি° ঢে বু আ।
এমতে—শৃ° পু°’এ এ ম ন্ত।
গোআইল—কাটাইল, যাপন করিল।
হরিস অপার—অপার আনন্দ, immense pleasure। সমুদ্রের সহিত উপমাগর্ভ অর্থ।
মুলি বাস—পাইয়া বাঁশ বা তল্লা (তলদা) বাঁশ। প্রা° রং স।
বেড়া—hedge। প্রা° বে ঢ়ো (বেষ্টঃ)।
গরিব—আ°।
ফিরে—প্রা° ফি র ই, ফে র ই (স° পর্যেতি; পরি-√ই)।
খাশা—উৎকৃষ্ট। আ° খা স, বিশেষ; প্রা° উ ক্কো স, উ ক্ক স শব্দ তুল°।
গাহে—গায়ে, গাত্রে: aspiration।
কাপড় জোড়া—দোপাট্টা।
মুজুরি—ফা° ম জ্ দু র হইতে।
আরঙ্গি ছত্র—রাজ-ছত্র। ফা° আ উ র ঙ্গ, a throne।

পৃষ্ঠা ৩২২

পিড়িতে—প্রা° পী ঢ়, পী ঢ়ি য়া (পীঠ); তে’ দ্বিতীয়ার অর্থে প্রযুক্ত।
পাতর—প্রান্তর।
কানি খেত—এক বিঘা সাড়ে চারি কাঠা ভূমি। প্রা° খে ত্ত।
মোহর—নিরুপিত মূল্য। আ° ম ক র র?
দশ টাকার ইত্যাদি—যে বাড়ীর মূল্য দশ টাকা, তাহার রাজস্ব ছিল দেড় পয়সা। খাইত—ভোগ করিত; sematology।
বার মাস ইত্যাদি—বৎসরের বার মাস ধরিয়া অর্থাৎ প্রতি মাসে।
লাড়ি—নাড়িয়া, পরিবর্ত্তিত করিয়া, বর্দ্ধিত করিয়া।
খেত পিছে—কানি প্রতি।
এক পোন কৌড়ি—এক আনা। পোন—স° প ণ।
এহার—প্রা° এ আ ণ (এতেষাম্)।
সুখ সম্পদ—উপচর শব্দ।
জানিয়া নিশ্চয়ে—নিশ্চিতরূপ অবগত হইয়া।
এ কারণে—অতিরিক্ত পদ।

পৃষ্ঠা ৩২৩

অনাচার—যথেচ্ছাচার, কুব্যবহার নঞ বৈপরীত্যে।
কছবি—কশবি, বারনারী। আ°ক স্ বী, ব্যবসায়ী।
বাপে পুত্রে—পিতা পুত্র উভয়কে।
ব্রাহ্মণ আলিম—ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত। আ° আ লে ম, জ্ঞানী।
জে—পাদপূরণে।
মিথ্যা সাক্ষি—মিথ্যা সাক্ষ্য, false witness।
হরিব—অপহরণ করিবে। বলপূর্ব্বক বা গোপনে সহবাস করিবে; sematology।
হিংসিব—হিংসা করিবে, will be jealous of। হিংসা—হননেচ্ছা; sematology।
বাদ পরিবাদ—বাদ-প্রতিবাদ, বিবাদবিসম্বাদ।
অকুমারী—কুমারী, অবিবাহিত কন্যা। অঘোর, অমন্দ প্রভৃতি শব্দ তুল°। আবার অমূল্য, মূল্যের অধিক; অপর্য্যাপ্ত, পর্য্যাপ্তের অতিরিক্ত। সেইরূপ অকুমারী, কুমারী অপেক্ষা অল্প পক্ষে অধিক বয়স্কা।
মাগিব—চাহিবে, প্রার্থনা করিবে।
ভক্তিএ মাঙ্গিব ইত্যাদি—লোকে সম্মান পাইবার লোভে শ্রদ্ধাযুক্ত হইয়া (স্পৃহা সহকারে:) কদাচার, খুঁজিবে অথবা লোকে ভক্তি ও মান্য চাহিবে, কিন্তু পাইবে না। লোভবশতঃ কদাচার অনুষ্ঠিত হইবে।

পৃষ্ঠা ৩২৪

তার অধিক নাই—সেটা আর বেশী কথা কি? idiom।
আমি রাজা যোগী ইত্যাদি—মাতার কথায় অসম্মত হইতে না পরিয়া গোপীচাঁদ নানা আপত্তি উত্থাপন করিতেছেন। বলিতেছেন, আমার অতুল সম্পত্তি কাহার নিকট দিয়া যাইব? এ বিরাট রাজ্যভার কে গ্রহণ করিবে? তরুণী পত্নী চতুষ্টয়ের দশা কি হইবে? বিদেশে আমার সোশুশ্রূষা কে করিবে? যদি প্রত্যয় না হয়
তবে আমার প্রতাপ প্রত্যক্ষ কর। এই বলিয়া তিনি সাজ-সাজ আদেশ করিবা মাত্র অপার বাহিনী মাতা-পুত্রের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল।
হংসরাজ ঘোড়া—রাজহংসের সদৃশ শ্বেতবর্ণ ঘোড়া। গ্রাম্য ছড়াতে ‘হাঁসা ঘোড়া জামা জোড়া উত্তম পাগুড়ি’।
লেঞ্জা—ভল্লভেদ। ফা° নে জা।
কাতে—কাহাতে, কাহার নিকট।
তাম্বু বাণ—অর্দ্ধচন্দ্র বাণ; তাম্বু অর্থে চন্দ্র।
ঝাকে ঝাকে—অসংখ্য।
গাঙ্গেত—নদীতে। গঙ্গা>গাঙ্গ, গাঙ; ত’ প্রতায় অতিরিক্ত।
এড়িয়া জাবে—ত্যক্ত হইবে। Passive voice।
বত্তিস কাহন নাও—অসংখ্য নৌকা। বত্তিস—প্রা°।
ফিলঘর—পিলখানা দ্র°।
হাতী—প্রা° হ ত্থী।
কে ধরিবে ছাতি—রাজা, রাজপুত্র বা তৎসদৃশ ব্যক্তি ঘরের বাহির হইলে ভৃত্য ছত্র ধারণ করিত।
আস্তবিলা—আ° ই স্ত্ ব ল্।
শাহেমানি—সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির যোগ্য। আ° সা হ ব বা সা হি ব শব্দের উত্তর আনি প্রত্যয়।
দোলা—প্রা° দো ল অ।
পঞ্চ পাত্রবর—পঞ্চ সভাসদ্‌বর, উৎকৃষ্ট সভাসদ্‌বর্গ। বোধ হয় পাঁচ জনে রাজ-সভা গঠিত হইত; তুল° পঞ্চায়েত্। ঋগ্বেদে ‘পঞ্চজন’ (৯ম°, ৬৫সূ°) অর্থাৎ পঞ্চজনপদের লোক।
পান জোগানি—যে সকল কন্যা রাজা বা কুমারগণের সঙ্গে থাকিয়া পান যোগায়।
[৩৭২ পৃ° য় ‘তাম্বুলী’ এবং ৩৭৩ পৃ° য় উহাকে ‘স্তিহৃ’ বলা হইয়াছে।] স° প্রতিশব্দ তাম্বুলকরঙ্কবাহিনী।
উনশত—এক কম শত বা শতকল্প।
শেত বান্দা—ইরাণীয় ভৃত্য। ফা° বা ন্দা হ্।
হারিয়া ছোঁহর—বড় চামর ৷ হারিয়া অথাৎ হাঁড়ীর মত। গো° বি°’এ চো য় র, চো ও র, চে৷ ম র। তুল° ‘ফুল্লরা পসরা করে নগর চাতরে। হাঁড়িয়া চামর বেচে চারি পণ দরে॥’ ক° ক°চ°।
বাতান—গোষ্ঠ। স° অবস্থান কি?
সত্তর—প্রা° স ত্ত রী (সপ্ততি); ম° স ত্ত র।
বেত—প্রা° বে ত্ত (বেত্র)।
গোঞাইল—গোশালা। ও° গো হা ळ।

পৃষ্ঠা ৩২৫

জানিয়া—প্রা° জা ণি অ (জ্ঞাত্বা)।
মিরাশ—পৈত্রিক সম্পত্তি। আ°।
চল্লিশ—প্রা° চা লী শা, মাগধী চ ত্ত লী সা (চত্বারিংশৎ); গু° চা লী স।
কোন—কৃ° কী°’এ কোণ; ম° কো ণ, ও° ক ণ।
আইল—মাগধী আ বি দে (আপ্তঃ, come)।
বাসত্তৈর—প্রাচ্য হি° ব হ ত্ত র, বা হ ত্ত র, ও° বা আ স্ত রি, সি° বা হ ত্ত রি।
মহা মহা বীর—বড় বড় [বহু] বীর; repetition for plurality।
অপার সৈন্য—উপমাগর্ভ অর্থ। এক প্রান্ত হইতে দেখিলে অপর প্রান্ত দেখা যায় না, এমন বাহিনী। সৈন্য—Colective noun।
বাসট্টি—প্রা° বা স ট্ ঠি (দ্বাষষ্টি); প্রাচ্য হি° বা স ঠি, ও° বা আ স ঠি।
শিকদার—যাঁহাদের উপর ভূমির রাজস্ব আদায়ের ভার থাকিত, তাঁহারা মুসলমান অধিকারে শিকদার উপাধিতে খ্যাত ছিলেন। অপরাপর উপাধির ন্যায় শিকদারও বংশগত হইয়া পড়িয়াছে। ফা°।
হস্তে ঢাল—বহুব্রীহি সমাস; তুল° মাথায় পাগড়ি ঙ, কাঁধে বাড়ি ঝ।
ধনুকি—ধাহুকী, ধনুর্ধারী।
টঙ্কারিয়া—ধ্বন্যাত্মক শব্দ; গুণ টানিলে যে শব্দ হয় সেই শব্দ করিয়া অর্থাৎ আস্ফালন করিয়া।
বন্দুকি—বন্দুকচি, বন্দুকধারী।
পলিতা—প্রা° প লি ত্তং (প্রদীপ্তম্)।
ধরিল জোগান—অনুগমন করিল।
তা—তাহা। প্রা°।

পৃষ্ঠা ৩২৬

বসেত—বয়সে।
দুনিয়া—ফা°।
কায়া মায়া ইত্যাদি—শরীরের প্রতি (কিঞ্চিৎ মাত্র) মমতা না দেখাইয়া।
থাক—মাটি। ফা°।
[দেহ] কৈলা পাত—Comp. v.। পরিশ্রম করিয়া অবসন্ন হওয়া।
কি বুলি জোয়াব ইত্যাদি—প্রভু অর্থাৎ ধর্ম্মের নিকট কি কৈফিয়ৎ দিবে।
লেঙ্গটা—লংগোট (প্রা° লিং গ ব ট্ট) আছে যার সে লংগোটিয়া বা লেঙ্গটা; প্রায় নগ্ন।
জাবা শূন্য—শুধু হাতে আসিয়াছ শুধু হাতে ফিরিবে। পাপ পুণ্য ভিন্ন অন্য কোন সম্পদ সঙ্গে যাইবে না। তুল° ‘ভল মন্দ দুই সঙ্গ চলি যায়র পর উপকার সে লাভ।’ বিদ্যা°।

পৃষ্ঠা ৩২৭

টঙ্গি—উচ্চ (বিলাস)—ভবন। স° ট ঙ্ক (শিখর); ম° টং, ট ঙ্গ, ট ঙ্।
দিল—দিলাম; প্রাচীন রূপ দি লোঁ।
ভেট ঘাট—উপহারাদি। ভেটি দ্র°, পৃ°১৬।
চরন—চড়ন, চড়িবার।
বাঁউর পরে—ভাঁউর পাড়ে, চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়ায়। ভৌঁরি ছান্দে দ্র°, পৃ ৬৮।
আই—আঞি দ্র°।
জোলা—ঝোলা, বিত্তমাত্রা। দেশী প্রা° ঝো লি আ।

পৃষ্ঠা ৩২৮

বাত—কথা। প্রা° ৱ ত্তা (বার্ত্তা)।
মাহে—মায়ে; aspiration।
ধনের কাতর—ধনাকাঙ্ক্ষী, দারিদ্র-ক্লিষ্ট: sematology।
পাপিষ্ঠ—নৃশংশ।
মাগ—ওগো মা। প্রা° মা আ এবং আ গ (সম্ভাষণে)।
সাচানি—সত্যই না? [প্রা° স চ্চ, স চ্চ অ এবং ণ (ননু)।] নি’ অবধারণে বা প্রশ্নে।
লোহাএ বান্ধিবে পুনি—যমের ন্যায় ভয়ঙ্কর শত্রুর হাত এড়াইবার উপায় এইরূপই কল্পনায় আসে। লখিন্দরের লোহার বাসর মনে পড়ে। বাসর—শোবার ঘর, শয়ন গৃহ। এখন যে ঘরে বর-বধূ সর্ব্ব প্রথম শয়ন করে; sematology ‘গর্ভাগারদ্বয়মীশ্বরাণাং ৱাসহর ইতি খ্যাতে। দেবস্থান ইতি কেচিৎ। বাসস্য শয়নস্য গৃহং বাসগৃহং।’—টী° স°। বাসঘর>বাসহর>বাসঅর>বাসর।
জাতনি—জাফরি।
পশর—প্রহরী।
মুহি—মুই।

পৃষ্ঠা ৩২৯

রূয়া—উয়া দ্র°, পৃ° ১৩৭।
শাল—শল্য অথবা শূল। প্রা° স ল্ল।
জমেতে—যম হইতে।
পাই ভাহঙ্কার—ভয় পাইয়া।
অনদেখা—অদৃশ্য।
সাচন রূপে জাএ—শয়চান সদৃশ বেগে ফিরিয়া যায়।
সামাএ—প্রবেশ করে। চর্য্যাপদ ও বিদ্যাপতিতে স মা য়, কৃ° কী°’এ সা ম্বা এ, কৃত্তিবাসী উত্তরাকাণ্ডে সা ম্ভা ই, কবিকঙ্কণে স ম্ভা য়। স° √স ম্ব্ অথবা √সা ম্ব্ গমনে।
তাহাতে—তাহা সত্ত্বে, inspite of that।
ভৈন—বৈন দ্র°, পৃ° ৩১।

পৃষ্ঠা ৩৩০

হিন্দুগণ—মেরুতন্ত্রে ‘হীনঞ্চ দূষয়ত্যেব হিন্দুরিত্যুচ্যতে’ (one who does not appreciate the acts of the base)। হিব্রু হ ন দ (গৌরবান্বিত রাজ্য) <আবেস্তা হি ন্দ অ। হেন্দুস্থানি দ্র°।
করে খাটী আর পাটি—খড়-কাঠ দিয়া জ্বালাইয়া ফেলে।
মাটী দেএ—সমাধি দেয়।
আর্জ্যনিয়া—অর্জ্জন-ক্ষম, উপার্জ্জনশীল।
বেইলের আড়াই পহর—আড়াই প্রহর বেলা পর্য্যন্ত অর্থাৎ স্নানাহারের সময় পর্য্যন্ত। বেইল—প্রাচীন বাঙ্গালায় বে লি।
লোকের আস পাস—লোক-দেখানী [একটু আধটু কাঁদিবে]।
শঙ্খ সোনা সাড়ি ইত্যাদি—যে রমণীকে পুরুষ কত উপহার দিয়া বিবাহ করে সে যদি স্নেহপরায়ণা হয় তবে চারি দিন পর্য্যন্ত কাঁদিবে। [স্নানাহার বর্জ্জন পূর্ব্বক?] বড় দয়ার—অতি সহৃদয়হৃদয়া।
ফিরি বর লএ—বিধবা-বিবাহ। পূর্ব্বে ‘এছিলা গাবুবাক দেখি খসম পাকড়িবে!’ (পৃ° ৭২)। ভারতীয় আর্য্যগণও বিধবাবিবাহ অনুমোদন করিতেন বলিয়া মনে হয়। অথর্ব্ববেদে একটি মন্ত্র আছে তাহার অর্থ,—‘হে মর্ত্য, তুমি মৃত। পতিলোক প্রার্থিনী হইয়া এই নারী পুরাতন ধর্ম্ম পালন করিবার জন্য তোমার পার্শ্বে শয়ন করিয়াছে। তুমি ইহলোকে ইহাকে সন্তান এবং ধন প্রদান কর।’ [১৮।৩।১] বিধবার সন্তান ও ধন-প্রাপ্তি কিরূপে হইবে? তাৎপুর্য্য—বিধবা পুনরায় পরিণীতা হউক। পরবর্ত্তী মন্ত্র আরও সুস্পষ্ট, ‘হে নারি, জীবলোকের অভিমুখে (অর্থাৎ জীবিত মানবগণের মধ্যে) আইস। তুমি যাহার পার্শ্বে শয়ন করিয়াছ, সে গতাসু। যে তোমার হস্তগ্রহণ করিতেছে, সে তোমার দ্বিতীয় স্বামী, তাহার সহিত আইস; তাহার সহিত পতিপত্নী সম্বন্ধ হইয়াছে।’ [১৮৩।২] ‘নষ্টে মৃতে প্রবজিতে’ প্রভৃতি স্মৃতিবাক্যে বিধবার পত্যন্তর গ্রহণের ব্যবস্থা পাওয়া যায়। আর্য্যেতর সমাজে বিধবা বিবাহের দৃষ্টান্ত লক্ষণীয়।
প্রাণি—প্রাণ, জীবন।
উচ খোচ—উঁচু-নীচু। তুল° গুলিঘুঁজি।
নাল—নালা, জল নিকাশের পথ; drain।
সে—সি; কি (নিশ্চয় বা অবধারনার্থক অব্যয়)। Popular attempt at correction।
বেদন—বেদনা, দরদ; স্নেহ।
গর্ব্ভের সাল—গর্ভশল্য, গর্ভযন্ত্রণা। গর্ভে পুত্রকে ধারণ করিয়া মাতা যে কষ্ট সহ্য করেন তাহার ফলে তাঁহার পুত্রস্নেহ গভীরতা প্রাপ্ত হয়। এতটা অন্য কাহারও হইতে পারে না।
পুত্র, কন্যা নাই ইত্যাদি—গোপীচন্দ্র ময়নামতীর একমাত্র সন্তান। অন্যত্র ‘বড় ভাই আছে মোর মাধাই তাম্বরী।’ (পৃ° ৩৫৩)। মাধবচন্দ্র গোপীচন্দ্রের বৈমাত্রেয় ভাই হইবেন।

পৃষ্ঠা ৩৩১

খুড়া—প্রা° খু ল্ল অ (ক্ষুদ্রক)।
জেঠা—প্রা° জে ট্‌ ঠ অ (জোষ্ঠক)।
কথ সা—কত মত। তুল° হি° কি ত্তা সা, কে তা সা। In Hindi সা means like, resembling (most commonly by way of adjunet; like the English ish), as Kala-sa, blackish; an adjunet the meaning of which is at times scarcely perceptible, though often it seems to give intensity to the preceding word as bahut-sa, much, many, very much।
মাণিকচান্দ গোসাই—No case-suflix, apposition with পিতাকে; idiom।
আলাপ—পরামর্শ, পাত্রমিত্র সহ মন্ত্রণা।
তে কারণে—সেইজন্য।
তবে কেনে বালক কালে ইত্যাদি—বাল্যবিবাহ। তুল° ‘তুমি সাত আমি পাচ এমত কালের বিয়া।’ (পৃ° ৩৩৪)।
চান্দে—গোপীচন্দ্র। মাএর সাক্ষাতে ইত্যাদি পঙ্‌ক্তি অতিরিক্ত।
এক বিভা করাইলা ইত্যাদি—বহু-বিবাহ।
আর বিভা ইত্যাদি—কন্যাপক্ষকে প্রহারাদি করিয়া বলপূর্ব্বক কন্যা হরণকে স্মৃতিতে রাক্ষস-বিবাহ বলে। খাণ্ডাএ—অস্ত্রে।
উরয়া রাজার—উড়িষ্যার রাজার। হইতে পারে রাজেন্দ্র চোলকে লক্ষ্য করা হইয়াছে।
লড়াই—স° √ল ড্ বিবাদে।

পৃষ্ঠা ৩৩২

মহিম—যুদ্ধ। আ° মু হি ম, a dangerous enterprise।
এ চারি সুন্দরী বধূ ইত্যাদি—পুরীর মধ্যে চারি বধূকে রাখিয়া একা আমাকে দেশান্তরে বিদায় করিবে।
পয়ার ছন্দ—দুই চরণের চতুর্দ্দশ অক্ষরে মিলযুক্ত পদবন্ধ ছন্দ। প্রা° প অ (পদ) শব্দের উত্তর আ ল বা আ র প্রত্যয়।
গাব—প্রা° গ ব্ভ।
মেদিনী যায় চির—পৃথিবী দু-ফাঁক হয়।

পৃষ্ঠা ৩৩৩

জে দেশে জাইবা ইত্যাদি—অদুনা প্রমুখ রাণীদিগের উক্তি।
প্রিয়া—অন্ত্য আকার লুপ্ত ককারের প্রভাব।
সঙ্গতি—সংহতি।
সে—অবধারণে।
সে পন্থে বাঘের ভয় ইত্যাদি—রামচন্দ্র এক দিন বনপথ শ্বাপদসঙ্কুল বলিয়া সীতাকে ঐরূপ ভয় দেখাইয়াছিলেন।
খাউক—অপ° খা উ।
মোহর—আমার। প্রা° ম হা র।
চুলে ধরি মারিবারে ইত্যাদি—রাজপরিবারে এরূপ আচরণ অসঙ্গত। কবি আপন সময়ের লোকব্যবহার লক্ষ্য করিয়া এ কথা লিখিয়া থাকিবেন।
পান ফুল—উপহার। তুল° ‘আহ্মার হাতত দেহ কিছ ফুল পানে।’ কৃ° কী° পৃ° ১৪।

পৃষ্ঠা ৩৩৪

জোড়৷ দিল—পূর্ব্বে ‘কন্যা যুড়িয়া আইস’ (পৃ° ৫৩)। বিবাহের সম্বন্ধ স্থির হইয় গেলে বরের বাড়ী হইতে কনাকে বস্ত্রালঙ্কার প্রভৃতি উপহার প্রেরণ পূর্ব্বাঞ্চলে ‘জুড়নী’ বা ‘জোরণ নামে পরিচিত। ইহা কতকট৷ ‘গায়ে হলুদ’ পাঠানর অনুরূপ। নবম বৎসরের ইত্যাদি—দ্বিরাগমন।
মোর ভৈন অদুনারে ইত্যাদি—পূর্ব্বে রদুনাক বিবাও কৈল্পে ইত্যাদি দ্র° পূ° ৫৩।
তৈল গিলা—তুল° ‘তেল-হলুদ’। গিলা—আবাটা জাতীয় পদার্থ। হি° গী লা, আর্দ্র।
আবের কঙ্কই—অভ্রনির্ম্মিত কাকুই। আব—প্রা° অ ব্ভ। কঙ্কই—কাকই দ্র°, পৃ° ১০৩।
কেশ বিলাসিলে—কেশ বিন্যাস করিয়া দিলে।
জাদ—কেশ-বন্ধন-রজ্জু, রেশমী ফিতা। তুল° আ° জা দ্ ব ল, প্রত্যন্ত রেখা, border line।
পিন্ধিবারে—পরিধান করিবার নিমিত্ত।
মেঘনাল সাড়ি—অভ্রখচিত শাড়ী, (মেঘের ন্যায় না রঙ্গের বা লাল মেঘের বর্ণ বিশিষ্ট শাড়ী নহে)। অভ্রের অপর নাম মেঘনাল বা মেঘলাল। লৌকিক বিশ্বাস মেঘ পাহাড়ে পালা (পাতা) খাইতে আইসে, এবং পত্র-ভক্ষণ-কালে উহার মুখ হইতে
প্রচুর লালা নির্গত হয়। ঐ লালাই অভ্র। কবিকঙ্কণে ‘মেঘ ডম্বরু কাপড়’।
নেপুর—গুজরাটীতেও।
ঝামুর জুমুর—ধ্বন্যাত্মক শব্দ।
কাম সিন্দুর—উদ্দীপক সিন্দুর-বিন্দু। কৃ° কী°’এ ‘শিশত শোভএ তোর কাম সিন্দুর।’ (পৃ° ৬৮), বিজয় গুপ্তেব পদ্মাপুরাণে ‘আর এক আইও বলে আপন কপাল নিন্দ। কাম-সিন্দুর হয় লখাই কপাল ভরিয়া পিন্ধ॥’ (পৃ° ১৭৭)। হিন্দুসমাজে সধবা স্ত্রীলোকদিগের সীমন্তে সিন্দুর ধারণ একটি প্রাচীন প্রথা। গোভিলগৃহ্যসূত্র ও সংস্কার তত্ত্বাদিতে উহার উল্লেখ আছে। পতিব্রতা ভর্ভতার আয়ু ইচ্ছা করিলে সিন্দুর, করভূষণ প্রভৃতি কখন ত্যাগ করিবে না।

হরিদ্রাং কুমকুমঞ্চৈব সিন্দুরং কজ্জলং তথা।
কার্পাসকঞ্চ তাম্বুলং মাঙ্গল্যাভরণং শুভম্॥
কেশসংস্কার-কবরী করকর্ণ-বিভূষণম্।
ভর্ত্তুর্ আয়ুষ্যম ইচ্ছন্তী দরয়েন্ ন পতিব্রতা॥

—স্কন্দপুরাণ, কাশীখণ্ড, ৪ অধ্যায়।
 আবার বিধবার পক্ষে ঐ ঐ দ্রব্য-ধারণ বা উহার ব্যবহার নিষিদ্ধ।

ন ধত্তে দিব্যবস্ত্রঞ্চ গন্ধদ্রবং সুতৈলকন।
স্রজঞ্চ চন্দনঞ্চৈব শঙ্খ-সিন্দূর-ভূষণম॥

—ব্রহ্মবৈবর্ত্ত, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড, ৮৩ অধ্যায়।

পৃষ্ঠা ৩৩৫

জোড় মন্দির ঘর—পূর্ব্বে ‘জোড় বাঙ্গালা’ (পৃ° ৬৭, ২৪৯, ২৫২)।
রূপ রঙ্গ—রূপের লীলাবৈচিত্র বা সুরতশোভা।
দয়ার বন্ধু—সোহাগের স্বামী।
তোমার আমার—আমাদের তোমায়।
তার—তারে, তাহাকে।
প্রভু নিরঞ্জন—‘নিরঞ্জন’ শব্দ বৌদ্ধ ত্রিরত্নের অন্যতম ধর্ম্মের তথা শিবেরও দ্যোতক।
আহে—সম্ভাষণে।
পরাণি—প্রাণ, জীবন; বিপ্রকর্ষ।
চরা করে—বিচরণ করে, ঘাস খায়।
হরিণা—প্রা° হ রি ণ অ।
পাসরএ—প্রা° প স্ স র ই (প্রস্মরতি)।
সেই পশুর বুদ্ধি ইত্যাদি—তুমি রাজা, কিন্তু তোমার পশুর ন্যায় বুদ্ধিও নাই। ভর্ৎসনা।
এতবারে—পুনঃ পুন।
আঠার বৎসর হল ইত্যাদি—এখানে রাজা ও রাণীদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছয় বৎসর; কিন্তু ‘তুমি সাত আমি পাচ’ ইত্যাদি চরণে মাত্র দুই বৎসরের তফাৎ হয়।
বিমশিল—বিচার করিল, চিন্তা করিল।

পৃষ্ঠা ৩৩৬

অদুনাএ বোলে বৈন গ ইত্যাদি—ভগিনি পদুনা সুন্দরি, ভাবনা কি? আমি কম বুদ্ধিমতী নহি। কায়স্থ জাতি বুদ্ধিজীবী বলিয়া প্রসিদ্ধ, কিন্তু তুলনায় তাহাদের প্রতিভাও আমার নিকট হারি মানে।
অদুনাএ—nom. sing, মাগধী ‘ইদেৎসৌ’; বাঙ্গালায় আকারান্ত শব্দেও প্রযুক্ত হয়। সুন্দর—বিশেষ্য-পদ, স্ত্রী-প্রত্যয়ের অভাব। সুন্দরী রমণী। সাত অঙ্কের বিশিষ্টতা লক্ষণীয়: ‘সাত রাজার ধন এক মাণিক’, ‘সাতেও হুঁ পাঁচেও হুঁ’, ‘সাতেও নাই পাঁচেও নাই’, ‘সাত নকলে আসল খাস্ত', ‘সাত চড়ে রা নাই’, ‘সাত সমুদ্র তের নদী', ‘সাত পাঁচ’, ‘সাত সতের', ‘সাত কাণ্ড', ইত্যাদি। কাইত—ধর্ম্মশাস্ত্র ও পুরাণে
কায়স্থ-জাতি সম্বন্ধে নানা কথাই পাওয়া যায়। তাহার মধ্যে অল্প কএকটি এই:—‘রাজ সভায় রাজা কর্ত্তৃক নিযুক্ত কায়স্থ দ্বারা লিখিত এবং প্রাড়্ বিবাকের কর চিহ্নিত অথবা রাজমুদ্রাঙ্কিত যে লেখা তাহাই রাজসাক্ষিক।’[১] চাট, তস্কর, দুর্বৃত্ত, মহাসাহিক, বিশেষতঃ কায়স্থদিগের হস্ত হইতে রাজা পীড্যমান্ প্রজাদিগকে রক্ষা করিবেন।’[২] ১১শ শতকে রচিত বিজ্ঞানেশ্বরের যাজ্ঞবল্ক্য-টীকায় লিখিত হইয়াছে, ‘গণক ও লেখকগণই কায়স্থ। তাহারা রাজবল্লভ, অতিশয় মায়াবী ও দুর্নিবার বলিয়া তাহাদের কবল হইতে উৎপীড়িত প্রজাবৃন্দকে বিশেষভাবে রক্ষা করিবেন।’[৩]‘অপরাদিত্য কৃত যাজ্ঞবল্ক্য ভাষ্যে কায়স্থগণকে করাধিকারী (Revenue officer) বলা হইয়াছে।[৪] শূল্পাণির দীপকলিকাতে ‘রাজবল্লভ প্রযুক্ত কায়স্থ প্রভাবশালী।’[৫]
 পদ্মপুরাণ পাতাল খণ্ডে পথিবীতে ব্যবহারোপজীবী অনেক ক্ষত্রিয় আছে, অক্ষরোপজীবী কায়স্থ তাহার অন্তর্গত এইরূপ উক্ত হইয়াছে।
অশোক-অনুশাসনে ‘রাজূক’-গণ শাসন ও রাজস্ব বিভাগের শ্রেষ্ঠাধিকারী। মৌর্য্যসম্রাট্ কর্ত্তৃক ইঁহারা ‘ধর্ম্মমহামাত্র’ পদেও প্রতিষ্ঠিত হইতেন। প্রসিদ্ধ প্রত্নতত্ত্ববিদ্ ডাক্তার বুল্‌হার (Dr. Bülhler) ‘রাজূক’ শব্দে কায়স্থ বুঝিয়াছেন। আবার কেহ কেহ যাজ্ঞবল্ক্যের ‘রাষ্ট্রাধিকৃত’ (১।৩৮) এবং ‘রাজূক’ ও ‘রাজবল্লভ’ একই অর্থে প্রযুক্ত মনে করেন।
 সান্ধিবিগ্রহিক (Minister of War & Peace) পদ যে এক সময়ে কেবল কায়স্থ দ্বারা পূর্ণ হইত তাহা ‘সন্ধিবিগ্রহলেখক’ (অপরার্ক ৩।৮৬, বীরমিত্রোদয় ও কেশববৈজয়ন্তী অ° ৬), ‘সন্ধিবিগ্রহকায়স্থ’ (কথাসরিৎসাগর ৪২।৯১) প্রভৃতি পারিভাষিক সংজ্ঞাতে সুব্যক্ত।
রাজতরঙ্গিণীতে লেখক ও গণকেরা ‘দিবির’ নামে পরিচিত (৮।১৩১)। কাশ্মীর-কবি ক্ষেমেন্দ্র কৃত লোক-প্রকাশে আয়ব্যয় লেখকের পারিভাষিক আখ্যা ‘দিবির’ (৩য় প্র°); এবং তাঁহারা কায়স্থ।
 তাম্রশাসনাদিতে ‘সন্ধবিগ্রহাধিকরণাধিকৃত দিবিরপতি’, ‘জেষ্ঠকায়স্থমহামহত্তরদশ গ্রামিকাদিবিষয়ব্যবহারিক’, ‘জেষ্ঠ কায়স্থ······· প্রমুখমধিকরণ’, ‘মহাকায়স্থ’ এই প্রকার উল্লেখ বিরল নহে।
 কায়স্থের মধ্যে ‘রাজধানা’ (রাজস্থানীয়), ‘রাজু’ (রাজূক) প্রভৃতি শ্রেণী-বিভাগ আছে। এবং রাজে, বায়, চৌধুরী, রায় চৌধুরী, পাত্র, মহাপাত্র, মুন্‌শী চাকি, শিকদার প্রভৃতি পদবী যাহা এখন বংশগত হইয়া পড়িয়াছে, তাহারও ইয়ত্তা নাই।
 গুণ-কর্ম্ম-ভেদ যদি জাতি-বিভাগের মূল কারণ হয় তাহা হইলে এখন নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে যে, এক্ষণকার কায়স্থ নামধারী অক্ষরোপজীবিগণের পূর্ব্বপুরুষেরা সামান্য লেখকের কর্ম্ম হইতে রাজপ্রতিনিধিত্ব পর্য্যন্ত করিয়া গিয়াছেন।
 ২২৫ বৎসরের উপর কাশ্মীর-রাজ্য কায়স্থ রাজগণের শাসন কর্ত্তৃত্বে ছিল। আবুল ফজল বলেন, সুবে বাঙ্গালার ভূস্বামী প্রায় সকলেই কায়স্থ। মুসলমান আগমনের বহু পূর্ব্ব হইতে এই প্রদেশ বিভিন্ন কায়স্থরাজবংশের শাসনাধীনে ছিল।
 কায়স্থের বিদ্যা চর্চ্চা লোক-প্রসিদ্ধ। তাঁহাদের ‘মহাসিদ্ধাচার্য্য,’ উপাধ্যায়’, ‘মহামহোপাধ্যায়’ প্রভৃতি উপাধিও ছিল।
[কায়স্থ-সম্বন্ধে যাহা কিছু লিখিত হইল তাহার অধিকাংশেই ‘বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস’ হইতে গৃহীত।]
নানা বর্ণে—বর্ণ-প্রিয়তা।
সহহৃষ—সহর্ষ।
সুন্দি বেত—এই জাতীয় বেত আসাম অঞ্চলে জন্মে। গাছ বড় হয় না; ইহাতে লাঠি হয়। প্রা° বে ত্ত।
তসর—মোটা রেসমী কাপড়। স° ত্র স র (সূত্র-বেষ্টন-ভেদ)।
খিরবলি [কাপড়]—পূর্ব্বে ধুতি’ (পৃ° ৬৫)।
অলি—পীর, মুনি-ঋষি। আ° ৱ লী, saint।
রাম লক্ষণ দুই মুট শঙ্খ—পূর্ব্বে ‘রাম লক্‌খন দুটা গোলা’ (পৃ° ৩) পাওয়া গিয়াছে।
উলিল—উদিত হইল, প্রকাশিত হইল। গো° বি°’এ ‘পূর্ব্বে উলে ভাঙ্গাব’ (পৃ° ১৪০)।
খঞ্জন গমন—গো° বি°’এ ‘ময়ূর গমনে’।
হালিয়া ডুলিয়া—হেলে-দুলে।

পৃষ্ঠা ৩৩৭

কত কাল রাখিবে ইত্যাদি—কৃ° কী°’এ ‘কত না রাখিব কুচ নেতে ওহাড়িআঁ।’ (পৃ° ৩৯২)।
বাহের হৈল যৌবন ইত্যাদি—মুকুলিত যৌন প্রস্ফুটিত হইয়া বক্ষোজরূপে প্রকাশ পাইল।
স্বামী এ দিছে কাপড় ইত্যাদি—স্বামী গ্রাসাচ্ছাদনের ভার লইয়া বস্ত্র দেন; কিন্তু সকলে কিছু তাহাতে পরিতৃপ্ত হয় না।
না শোনএ বোল—কথা শুনে না, যৌবন ঢাকিয়া রাখিতে পারে না।
চটকিয়া—ফাটিয়া চটিয়া। হি° চ ট ক্ না, to crack।
কবু—কখন। অপ° ক ব হু (কদাপি); হি° ক ভী।
টুটে—প্রা° টু ট্ট ই (ক্রটয়তি)।
রাজাএ রাজাএ ইত্যাদি—রাজয় রাজায় লড়াই নয় যে অর্থ যোগাইয়া নিষ্কৃতি পাইব।
দাবিদার—স্বত্ব-প্রার্থী। আ° দা আ বী এবং ফা° দা র।
খোশাইয়া দিমু—মুক্ত করিয়া দিব, মিটাইয়া দিব।
বাদসাই জাচক—রাজদ্বারে প্রার্থী। ফা° বা দ শা হী।
আবের কাঞ্চলি—অভ্র-খচিত কাঁচুলী প্রা° ক ঞ্চু লি আ।
ঝাড়া বদলিমু—ছাড়িয়া দ্বিতীয় বস্ত্র পরিধান করিব। আ° ব দ ল শব্দের উত্তর ভবিষাতের ই মু প্রত্যয়।

পৃষ্ঠা ৩৩৮

ধর্ম্মঘটী—ধর্ম্মের আধার। ঘট শব্দের উত্তর ক্ষুদ্রার্থে ঈ’ প্রত্যয়।
হস্তী ঘোড়া জাএ—হাতী ঘোড়া প্রভৃতি রাজপরিচ্ছদ যাহাতে অথবা রাজপরিচ্ছদের বিস্তৃত বিবরণে। হি° জায় অর্থে যত সংখ্যা হিসাব।
ভূঞা—ভৌমিক, ভূস্বামী।
চারি ভৈন ইত্যাদি—(মর্ম্মার্থ) যুবতীর গৌরব প্রথম যৌবন।
হেরি—দেখিয়া। প্রা° নি ভা লিয়; বা° √নে হা র বা নে হা ল, হি° নি হা র, ম° নি হা ळ।
দিন দুনিয়া—ধর্ম্ম ও পৃথিবী। আ° দী ন্ ও দুনিয়া।
হাড়িয়ার লগে ইত্যাদি—এখানে ময়নামতীকে কটাক্ষ করা হইয়াছে। হাড়িয়া শব্দে হাড়িফা লক্ষিত হইয়াছেন। খাএ—খায়। প্রা°।
বেবুদ্ধিয়া—নির্ব্বোধ।
বৃদ্ধ মাএর ইত্যাদি—বুড়ী মা’র কথা মনে স্থান দাও কেন?

পৃষ্ঠা ৩৩৯

ধরাধরি করি—সকলে মিলিয়া ধরিয়া।
নিকুঞ্জ মন্দির—বিলাস-ভবন।
দণ্ডকে দণ্ডকে—ক্ষণে ক্ষণে।
চওরের বাও—চামরের বাতাস।

পৃষ্ঠা ৩৪০

আরের মাহে বেটা ইত্যাদি—সুকুর মামুদে ‘নিশ্চয় জানিলাম তোমার পুত্রের দয়া নাই’ ইত্যাদি (পৃ° ৪৩৫)।
নাতি পতি—নাতি-পুতি, পুত্র-পৌত্র। প্রা° পু ত্ত; নাতি’র সাদৃশ্যে পতি।
যেহেন—যেমন।
গর্ভশোগা—ব্যর্থ-গর্ভ বা গর্ভস্রাব।
হাবুদ্ধিয়া—অবোধ, অল্পধুদ্ধি, পূর্ব্বে ‘বেবুদ্ধিয়া’।
দিল—হৃদয়। ফা°।
ভোল—মোহ, ভ্রম।
সে সমে—সে সকল; প্রাচীন বা স হ্মে।
নাঙ্গল গড়াএ জে ইত্যাদি—গোপীচন্দ্রেব সন্ন্যাসে ‘লোহা দিয়া বান্ধে লাঙ্গল মাটিতে যায় ক্ষয়’ ইত্যাদি (পৃ° ৪৩৮)।
খএ—প্রা° খ অ (ক্ষয়)।

পৃষ্ঠা ৩৪১

থোড়—কচি, ক্ষুদ্র। প্রা° থো ড় অ (স্তোকম্)।
জস—প্রা°।
নারীর সনে সংগ্রাম—নিধুবন, সহবাস।
মহারস—রসের সার, বীর্য্য।
বব্বরের চাস—নির্ব্বোধের কাজ।
জিব—বাঁচিয়া থাকিবে।
ব্যাঘ্রের সাক্ষাতে জেন ইত্যাদি—
গোরক্ষ-বিজয়ে—

পকরির মৎস্য সব সপিআছ উদে।
বিড়াল পহরি দিলা ঘন বর্ণ দুধে॥
সুথারের হস্তে তুহ্মি সমর্পিলা তরু।
ব্যাঘ্রেয় সমুখে জেন সমর্পিলা গরু॥
ডাকাইতের হাতে গুরু সমর্পিছ ধন।
সাপের মুখেত দিলা বেঙ্গ ততক্ষণ॥
শূকরের হাতে তুমি সপিআছ গেজা।
মানকচু সপিআছ জখ সব সেজা॥
ধান্যের গোলতে মুসিক পহরি থুইলা।
কাকের মুখে সমর্পিলা রত্তন সম কলা॥

(পৃ ১২১-১২২)
উদ—উদ্বিড়াল। স° উদ্র। পশরি—প্রহরী। হেঁজা—সেজা, হেঁজা শশারু শব্দেরই রূপভেদ। খিঞ্জির—শূকর। আ° খি ন যি র। গেজা—কন্দ। আ°। উদুর—ইন্দূর।
উড়ি জাএ পক্ষিরাজ ইত্যাদি—আমার জ্ঞান কতটুক্‌খানি? পাখী উড়িয়া গেলে দেখিতে পাই না, তত্ত্বজ্ঞান জানিব কেমন করিয়া? আর জানিলেই বা কি হইবে? তুমি এমন যোগিনী মা, তোমার নিকট কি তত্ত্বজ্ঞান ব্যাখ্যা করিতে পারি?

পৃষ্ঠা ৩৪২

অবসরায়—অবসর মত।
খিলে—খেলি।
পূর্ব্বেত—পূর্ব্ব হইতে।
জতীশা—যতীশ্বর, শ্রেষ্ঠ যতি।
কবু—কোথাও। প্রা° পৈ°এ’ ক হু (কুত্রাপি)।
রথ—ব্যোমাচারী রথ।
ধর ধর—ধ্বন্যাত্মক শব্দ।
মুষ্টেক—বাঙ্গালা সন্ধি।
পাইল, দিলেন্ত—উত্তম পুরুষের ক্রিয়া।
বিচার—অন্বেষণ।
মলিয়া—বা° √ম ল মর্দ্দনে।
লাহুর—লাউএর।

পৃষ্ঠা ৩৪৩

জতেক—প্রা° জে ত্ত ক।
চৈত্র মাসের রৌদ্র ইত্যাদি—[তা ছাড়া] চৈত্র মাসের ধর্ম্মই এই যে সে সময়ে রৌদ্রতাপ অত্যন্ত প্রখর হয় এবং সেই জন্য বাতাসে তপ্ত ধূলি উড়িতে থাকে। কাজেই আমায় যার-পর-নাই আকুল করিয়া তুলিল। প্রথম পঙ্‌ক্তিতে ১৫ অক্ষর এবং দ্বিতীয় পঙ্‌ক্তিতে ১৬ অক্ষর।

চৈত্র| মাসের | রৌদ্র | তাপে | ধর্ম্ম | ধূলি | উড়ে।
মাথার |ঘাম | মৈনা | মতির| পদ | তলে|পড়ে।

আদ্য মাটী—নাথ-ধর্ম্মের প্রথম প্রচার ক্ষেত্র। পূর্ব্ব মাটীও তাই। স্বর্গীয় দাস মহাশয়ের ‘চট্টগ্রামের পুরাতত্ত্ব’ প্রবন্ধ হইতেও জানা যায় যে, তৎকালে চাটিগ্রাম মহাযান বৌদ্ধদিগের একটি প্রধান প্রচারকেন্দ্র ছিল। নিজ মাটী—গোরক্ষনাথ বিক্রমপুরে মঠাধ্যক্ষ ছিলেন। নিজ মাটী শব্দে তাহাই সূচিত করিতেছে।
কুদাইয়া—খেদাইয়া। √কু ন্দ্ উল্লম্ফনে; প্রাকৃতে কু ন্দ ই। (স্কন্দতি)

পৃষ্ঠা ৩৪৪

যোগীঘাট—মুনশিগঞ্জের উত্তরে ইছামতী ও ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থলে অবস্থিত ছিল। ধলেশ্বরীর ভাঙ্গনে উহা এখন চরে পরিণত হইয়াছে।
বানাইল—নির্ম্মাণ করিল। √ব ন্ বা ব না নির্ম্মাণে।
আধারি—কাষ্ঠ-পীঠ সংলগ্ন দণ্ড বা যষ্টি (যোগী ফকিরের ব্যবহার্য্য), যা সাধারণতঃ আ সা নামে প্রসিদ্ধ। এই আসা অনেক সময় ফুলের মালা, কড়ি প্রভৃতি দিয়া সাজান দেখা যায়। হিন্দী পদুমাবতিতে অ ধা রী।
বিচারি—খুঁজিয়া, অন্বেষণ করিয়া।
বট—কড়ি।
দ্বাদশ দণ্ডের মধ্যে ইত্যাদি—মন্ত্রের প্রভাব। অথর্ব্ববেদে এইরূপ বহু প্রকার মন্ত্রের কথা আছে।
ঊন কোটী—অসংখ্য; অর্থটা বিরক্তিসূচক।
হাএয়াত—আয়। আ°।
অন্ধি আর সন্ধি—রন্ধ্র ও তৎপ্রতিষেধ।
জন্মে জন্মে কৈল ইত্যাদি—যাহাতে পীড়াদি কখন না হয় তাহার ব্যবস্থা করা হইল। খারা বন্দি—ঘেরা, বেষ্টন বা অবরোধ। ফা° খা র ব ন্দী।

পৃষ্ঠা ৩৪৫

খত—ছা’ড় সনন্দ। ফা°।
রাজা—সম্বোধনে।
অগ্নিএ—অগ্নিদ্বারা।
তল—তলস্থ।
বান্ধি মাঙ্গাইব—বাঁধিয়া আনাবই।
চন্দ্র সূর্য্য মরণে ইত্যাদি—দিনে বা রাত্রিতে মৃত্যু হইলে আড়াই প্রহর গত না হইতেই অর্থাৎ অচিরে বাঁচাইয়া দিব।

পৃষ্ঠা ৩৪৬

আমাদের—আমা-আদি-র।
গঙ্গাজল পাটী—গজ-দন্ত নির্ম্মিত পাটী।
গালিচা—carpet। ফা°।
বিছান—হি° বি ছৌ না।
চান্দয়া—হি°চ ন্দ ৱা।
হের—এখানে।
প্রভু গদাধর—সম্মানার্থক।

পৃষ্ঠা ৩৪৭

ঝি—প্রা° ধী আ, পা° ধি তা, ধী।
জে—পাদপূরণে।
গিরি—গৃহী, স্বামী।
দাবীদারী—সত্ত্বাধিকার, claim; abstract noun।
শেলাম—অহিন্দুর নমস্কার। আ° স লা ম্ (কুশল)।
প্রাণের কাতর—প্রাণ-রক্ষার্থ কাতর।
যজ্ঞ নষ্ট পুরুষ—পত্নীর নিকট দীক্ষা অশাস্ত্রীয়। সেই হেতু প্রত্যবায়-ভাগী।
হেন কালে তিন সন্ন্যাসী ইত্যাদি—প্রত্যাখ্যাত সন্ন্যাসীদের কৃত্যায় মাণিকচন্দ্র গতাসু হইলেন। সিদ্ধারা মারণউচাটনাদি ক্রিয়ায় পারদর্শী ছিলেন। কামেশ্বর বাণ—আভিচারিক ক্রিয়াভেদ, যাহকে তদ্‌জ্ঞাপক বাণ বলা হইত। গোপীচন্দ্রের গানে প্রজাদের অভিচার রাজার মৃত্যুর কারণ।

পৃষ্ঠা ৩৪৮

নিশাভাগে—অর্দ্ধরাত্রে।
পাইল—উত্তম পুরুষের ক্রিয়া। কৃ°, কী° অস° রামায়ণ, চৈ° ভা° প্রভৃতিতে পা ই লোঁ।
রায়—প্রা° রা ৱ, রা অ।
হস্তে গলে দড়ি ইত্যাদি—রাজার মৃত-দেহ হাত-পা বাঁরিয়া সৎকারার্থ লইয়া যাওয়া নিতান্ত বিসদৃশ।
পুড়িবারে—Cansative।
গাছ গাছেরা—কাঠ-কুটা।
লোকে বুলিবেক করি ইত্যাদি—(১) লোকে পাছে কিছু মনে করে বলিয়া অধিক কাঁদিলাম না, (মনের দুঃখ মনে চাপিয়া রাখিলাম)। (২) লোক-লজ্জার খাতিরে একটু কাঁদিলাম নচেৎ কাঁদিতাম না। দ্ব্যর্থ। বুলিবেক—মন্দ বলিবে।
দুই আখর—আড়াই নয়। প্রা° অ ক্ খ র।

পৃষ্ঠা ৩৪৯

সমুদ্রের গঙ্গাদেবী—সমুদ্রবাসিনী গঙ্গা।
তিন পহরের পন্থ লই—তিন প্রহরের পথ জুড়িয়া অর্থাৎ বিস্তীর্ণ।
সুতিলাম—শয়ন করিলাম। কৃ° কী°’এ সু তি লোঁ।
কাঁচা হইআ ইত্যাদি—রাজার অঙ্গ সরস হইয়া থর থর করিয়া (অগ্নিস্পর্শে) গলিয়া পড়িতে লাগিল। প্রা° থরতরেদি (প্রকম্পতে)।
ব্রাহ্মণের কোলে—ব্রাহ্মণের নিকটে। তুল° ‘এত অন্ধকার যে কোলের মানুষ দেখা যায় না’।
নি—না। প্রা° ণ (স° ন নু) প্রশ্নে।
জানাও—জানান; abstract noun, ও’ কৃৎপ্রত্যয়। অথবা আনাও স্থানে জানাও হইতে পারে। পরে আনিয়া আছে। কৃ° কী°’এ জা ণা ওঁ ও জা ণো স্থানে যথাক্রমে আ ণা ওঁ ও আ ণো। প্রাকৃতেও আণাদি, আ ণা মি প্রভৃতি পদ বিরল নহে।
চাই—আবশ্যক অথবা ইহাই প্রার্থনা।

পৃষ্ঠা ৩৫০

সত্য যুগে—দীর্ঘকাল।
হাসিতে হাসিতে ইত্যাদি—সে কালের প্রমাণ পাওয়া অসম্ভব এই কথা ভাবিতে
ভাবিতে প্রমাণের সন্ধান হওয়ায় হাস্য। ইহার পূর্ব্বে দুই এক পঙ্‌ক্তি বাদ পড়িয়াছে বলিয়া মনে হয়।
একেত ছাওালে ইত্যাদি—রাজার আদেশ পাইবামাত্র রাজভৃত্য ব্রাহ্মণের নিকট চলিল। অর্থট৷ এইরূপ,—একেত ছাওালে (page), তাহাতে রাজাদেশ; সুতরাং সত্বর প্রতিপালিত হইল।
তে কাজে—সেই কারণে। কাজ—নিমিত্ত; sematology।
চল জাই—আমার সঙ্গে এস, let us come।

পৃষ্ঠা ৩৫১

কাষ্ঠ কৈল—দাহ-কার্য্য করিল।
মিথ্যা সাক্ষি দিতে—মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে অথবা তোমার মিথ্যা সাক্ষোর জন্য।
ইর্শ্বাদ—খোস যৌতুক, উপায়ন। A. irshād, marzi।
আধা বস তোর—তোমার অল্প বয়স, সুতরাং এরূপ গুরুতর কথা ইত্যাদি। অথবা তোমার বয়স কম নহে। এরূপ অসঙ্গত কথা।

পৃষ্ঠা ৩৫২

সম্ভাসা—সম্ভাষণ, সম্বর্ন্ধনা।
দিজ—দ্বিজ। প্রা°।
জেরূপে রহিতে পারি ইত্যাদি—যাহাতে সিংহাসনে থাকিতে পারি অর্থাৎ সন্ন্যাস লইতে না হয় তাহার ব্যবস্থা কর। প্রকারান্তরে ব্রাহ্মণ সন্ধিহরকে মিথ্যা বলিতে অনুরোধ করা হইতেছে।
চৌদ্দ গণ্ডা পুরুষ ইত্যাদি—মনে রাখিও মিথ্যা বলিলে তোমরে উর্দ্ধতন ছাপান্ন পুরুষের অধোগতি হইবে।
আগু—প্রা° অ গ্ গ; সি° অ গু।
লাঘব—অমর্য্যদা, অপমান।

পৃষ্ঠা ৩৫৩

এক প্রাণি নিয়া ইত্যাদি—আমি একা দেশান্তরী হইব।
খের্ত্তা—খেতুয়া শব্দেরই রূপভেদ।
তাম্বরী—প্রা° তা ম্বূ লি অ (তাম্বূলিক); হি° ত মো লী, ম° তা ম্বো লী।

পৃষ্ঠা ৩৫৪

ছারে খারে—অধঃপাতে। মহারাষ্ট্রী ছা র এবং শৌরসেনী খা র।
বালাই—বিপদ, অমঙ্গল। আ° ব লা; হি° ব লা য়।
বাসি—প্রা° বা সি অ (বাসিত)।
পাত্যর—প্রান্তর।
সুরজ কানিয়া—কাণ-খড়কে, তীক্ষ্ণ শ্রবণশক্তিযুক্ত।

পৃষ্ঠা ৩৫৫

গেলাপ করিয়া—ঢাকিয়া, আবরণ দিয়া। আ° গি লা ফ।
বাটার পান খাও—পান খাইতে দেওয়া শিষ্টাচার। আজকালকার মত পান তৈয়ার করিয়া দেওয়া হইত না; পান, চুন, সুপারি প্রভৃতি মশলা সহ আধার সম্মুখে ধরিয়া দেওয়া হইত। যাঁহাকে দেওয়া হইত তিনি ইচ্ছামত প্রস্তুত কবিয়া লইতেন।
আছি—আসিতেছি।
পান খাইবার—পুরস্কার।
কাপাই—কার্পাস-বস্ত্র। অস° ক পা হী (কার্পাস নির্ম্মিত)।
তুমি পিন্ধিবারে—idiom।
বোলএ—বলহ, বল।
সুমেরু পর্বত ইত্যাদি—বজ্রাহতের ন্যায় হইল, হতবুদ্ধি হইয়া পড়িল। তুল° ‘মাখায়
আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল। সুমেরু—সুবর্ণগিরি। রামায়ণে সুমেরু হিমালয়-পত্নী মেনকার পিতা। এই পর্য্যন্ত সূর্য্য বিচরণ করেন (বালকাণ্ড, ৩৫ সর্গ)। বিশ্বদেব, বসু ও মরুদ্গণ এই পর্ব্বতে সন্ধ্যার সময় উপাসনা করিয়া থাকেন। (কিষ্কিন্ধ্যা ৪২ সর্গ)।

পৃষ্ঠা ৩৫৬

একেত বানিয়ার পুত্র ইত্যাদি—একে গতিতে বেণে তাহাতে বিক্রয়ের সুযোগ উপস্থিত। বিকি—বিক্রয়; তুল° ‘বিকি কিনি’।
তরাজু—তুল-দাঁড়ি, তুলাদণ্ড। ফা° তেলেগু ত্রা সু।
ভাণ্ডার—ভাণ্ডাগার হইতে।
হরিনা বিস—হন্যা (হননিয়া) বিষ, প্রাণ ঘাতক তীব্র বিষ।
লাড়ু—প্রা° ল ড্ ডু, ল ড্ ডু অ।
তোলা—প্রা° তো ল অ।
আলওা চাউল—হি° আরোৱা চাবল।
কুলপিত কলা—কবরী কলা।
সেবা—ভোজন; sematology।
নারাঙ্গি—নাগ-বসতি রঞ্জিত করে বলিয়া কমলা লেবুর না গ র ঙ্গ, সংক্ষেপে না র ঙ্গ, না র ঙ্গি নাম হইয়া থাকিবে। নাগজাতির বাস মধ্যভারতের নাগপুর এবং আসামের নাগা পর্ব্বতে।
খাঞ্জা—খুঞ্চা, small tray। ফা° খা ঞ্চা।
শাইল ধান—শালী ধান্য।
বিন্নি ধান—শৃন্য-পুরাণের দীর্ঘ তালিকায় ‘বিন্ধসালী’ ধানের নাম পাওয়া যায়। ফা° বি র ঞ্জ তুল°।
দই—প্রা° দ হি, দ হি অ।
বেগার—বিনা বেতনের চাকর, a person forced to work and carry burdens। ফা°।
অন্তরে—দূরে।
উনমত বেশ—অন্যমত বেশ, ভিন্ন সাজে।
সন্দেশ—দুগ্ধবিকারজাত মিষ্টান্নভেদ; এখানে উপচার। আহিরী শব্দ (কনহ্‌মালা)।
কিসের কারণ—কোন প্রয়োজনে।

পৃষ্ঠা ৩৫৭

তিন কোণ পৃথিবী ইতাদি—পৃথিবীর কোথায় কি আছে এবং হইতেছে সমস্তই গণিয়া দিতে পারি।
বারিসা—প্রা° পৈ°এ’ ব ব রি সা (বর্ষা)।
ফোটা—স° স্ফটিক অর্থে জলবিন্দু।
হইব না হৈব—হয়-নয়, সত্য মিথ্যা। কৃ° কী°এ’ ‘হএ নহে’।

পৃষ্ঠা ৩৫৮

হেরিয়া আছিল—হেরিতে আছিল, দেখিতেছিল।
দ্বাদশ—১২, ২২, ৩২, ৫২, ৬২ প্রভৃতি সংখ্যার ব্যবহার খুব বেশী।
দশ দ্বার—চক্ষুর্দ্বয়, কর্ণদ্বয়, নাসাদ্বয়, মুখ, পায়ু, ও উপস্থ এই নব-দ্বার। গো° বি°’এ ‘ভেদিয়া দশমী দ্বার খোলে জোর ভর।’ (পৃ° ১৩৯), ‘দশমীর দ্বাব ভেদি ঢোকে ঢোকে তোল।’ (পৃ° ১৪৫), মাধব-আচার্য্যের কৃ° ম°’এ ‘নিরোধিল দৈত্য দশ দ্বার’ (পৃ° ৩৯); কৃ° কী°’এ দশমী দুয়ারে দিলোঁ কপাট।’ (পৃ° ৩৫৯); চর্য্যাপদে ‘দশমি দুআরত চিহ্ন দেখই আ আইল গরাহক অপণে বহিআঁ॥’ (পৃ° ৭)। টীকায় নবদ্বারের অতিরিক্ত দশমি দুআর-কে বিরোচন দ্বার বলা হইয়াছে। দশম দ্বার
ব্রহ্মরন্ধ্র। কঠোপনিষৎ ৫মী বল্লীতে ‘পুরমেকাদশদ্বারম’ [শরীরাখ্যাং পুরমেকাদশদ্বারমেকাদশদ্বারাণাস্য সপ্তশীর্ষণ্যানি নাভ্যা সহাব্বাঞ্চি ত্রীণি শিরস্যেকং তৈরেকাদশদ্বারং পুরম্]।
মৈল করি—মৃতের ভাণ করিয়া বা মৃতবৎ।
কথখানি গুড় ইত্যাদি—রাজনীতিকুশল চাণক্যও নাকি এইরূপ উপায়ে কুশতৃণের বিনাশ সাধনে প্রযত্ন করিয়াছিলেন।
চাহে—পরীক্ষা করিয়া দেখে। প্রা° উ চ্ছা হ ই (উৎসাহয়তি)।

পৃষ্ঠা ৩৫৯

লক্ষ্মীবিলাস শাড়ি—বহুমূল্য বস্ত্রভেদ।
ছইল—ছাইল, আবর্জ্জনা, আপদ। পরে ছা লি।
প্রসাদ কৈল—পুরস্কার দিল। আনন্দের দান প্রসাদ।
বৈল—গরু। প্রা° ব ই ল্ল (বলীর্ব্বদ)।
হাতাহাতি করি—একের হাত অপরে সরাইয়া অর্থাৎ ঠেলাঠেলি করিয়া।
দম নাহি লড়ে—শ্বাস বহে না।
টোকর—অঙ্গুলিসন্তাড়ন। কৃ° কী°’এ টা কা র; অস° টো ক র।
উলু—স° উ লু ক।
কাছরা—কচড়া, কাছি। টী° স°’এ কচ্ছ রজ্জু।

পৃষ্ঠা ৩৬০

একেত ময়নামতি ইত্যাদি—একে ময়নামতী [সতর্ক] তাহাতে আবার ব্রহ্ম জ্ঞান জানা আছে। তুল° ‘একেত ছাওালে জে রাজাএ হুকুম পাএ। (পৃ° ৩৫০), ‘একেত বানিয়ার পুত্র বিকির লাগল পাএ।’ (পৃ° ৩৫৬)। জানে—প্রা° জা ণ ই (জান্যতি)।
লাথি—অর্ব্বাচীন স° ল ত্তা।
ততৈক্ষণ—প্রাচীন বাঙ্গালায় ‘ততিখণ’; অস° ‘তেতিক্ষণ’।
চেচাএ—ছেঁচড়ে বা হেঁচড়ে লয়।
খেনে—প্রা° খ ণে।
সঙ্গারি—সংহারি, সংহার করিয়া।
গজ—দুই হাত পরিমাণ। ফা°।
খুদ—খনন কর। স° √খু ড্।
তুরমান—ত্বরমান, সত্বর।

পৃষ্ঠা ৩৬১

খুর—নাপিতের অস্ত্রভেদ। প্রা°।
চোক্কাইয়া—ছুঁচাল করিয়া, তীক্ষ্ণাগ্র করিয়া।
আড় চৌক্ষে—আড়চাহনি, বক্রদৃষ্টি।

পৃষ্ঠা ৩৬২

এবে—আব প্রা° এ ব হিং।
সাগর দীঘি—ময়নামতীর পূর্ব্বাংশে।
দিব্ব শাড়ি বধূ প্রতি ইত্যাদি—এ প্রসাদের অর্থ কি?
খাই—অপ°; প্রা° খা ই অ (খাদিত্বা)।
বাদ—অপবাদ।

পৃষ্ঠা ৩৬৩

তলওার—হি° ত ল ৱা র।
পেলা বধূ—পুত্রবধ, অথবা বালিকা-বধূ। টী° স°’এ পো হা ল (স° পোতাধান, পোনা)।
সউক—সহ্য হউক।
ফজর—সকাল, শীঘ্র। আ° ফ জ র্ (প্রত্যুষ)।
হেষ্টমুখী—অধোমুখ; সংস্কৃত করিবার প্রয়াস।

পৃষ্ঠা ৩৬৪

তোমা সঙ্গে প্রীতি ইত্যাদি—তুল° ‘এ তোর আড় নয়নে আল পাঞ্জর বেধিল ঘুনে পাঞ্জর বেধিয়াঁ বুকত লাগিল ঘুনে।’ (কৃ° কী° পৃ° ১৩২)।
নয়ান হইয়া গেল ঘোর—চোখে ঘোলা পড়িয়া গেল, দৃষ্টিশক্তি খাট হইল।
বিধি বর ইত্যাদি—শ্লেষ।
গেল গঞিয়া—গত হইল।

পৃষ্ঠা ৩৬৫

তাপ দুঃখ—আধুনিক ‘দুঃখ তাপ’।
বিমর্শিব—বিমর্শ অর্থে যুক্তি দ্বারা পরীক্ষা করণ। [বি° √মৃ শ্-অ]।
সাছা মিছা—সত্য-মিথ্যা। প্রা° স চ্চ এবং মি চ্ছ।

পৃষ্ঠা ৩৬৬

জৈতা—জতু, লাক্ষা।
জৈতার আটনি ঘর ইত্যাদি—তুল° ‘জৌয়ের ছাটনী দিল জৌয়ের বান্ধনি। ষোল (সোল) পাট দিয়া কৈল জৌয়ের ছাউনী॥’ ক° ক° চ°।
আনাবান্ধে—বিনা বন্ধনে। টাউনি—ঘরের চাল টাঙ্গন।
আগর—অগুরু। প্রা° অ গ রু।

পৃষ্ঠা ৩৬৭

ছালি—ছাই।
হোন্তে—হইতে। প্রাচীন বাঙ্গালায় ‘হস্তে’ ‘হতেঁ’, ‘হনে’ প্রভৃতি।
ছালা—স° স্যূত।
তানে—তাহাকে।
ছালাতে—তে’ পঞ্চমী অর্থে প্রযুক্ত।
বিচারউক—অন্বেষণ করুক।

পৃষ্ঠা ৩৬৮

আগুবাড়ি নিল—প্রত্যুদ্গমন করিল।
টেপা মৎস্যের জ্ঞান—মাছ জলের ভিতর থাকে, শ্বাসরোধে হইয়া মরে না। তন্ত্র-মন্ত্রও জানে না।
সাকোয়া—চর্য্যাপদে সা ঙ্ক ম, টী° স°’এ সং ক্রা ম; স° সং ক্র ম; ও° শ ঙ্খ।
খুরের ধারনি—দড়ির সাঁকোতে হাটিতে হইলে হাতে ধরিবার নিমিত্ত যাহা আবশ্যক হয় তাহাকে ধরণী বলে। ক্ষুরের ধারের সদৃশ সূক্ষ্ম অথবা তীক্ষ্ণ ধরণী।
এহি বড় কাম—চট্টগ্রামের প্রাদেশিক।

পৃষ্ঠা ৩৬৯

লেখাএ ডাঙ্গর—গণনায় বড়।
সাত পাঞ্চ ঘর—সাত হাত লম্বা ও পাঁচ হাত চওড়া ঘর। পশ্চিম রাঢ়ে ‘আটপাঁচী’ ঘর।
চারি সিদ্ধা এ ইত্যাদি—শাপ-বৃত্তান্ত গোরক্ষবিজয়ে দ্রষ্টব্য।
খাটে—মৌলিক অর্থ কৃচ্ছ কর্ম্ম করে। এখানে মেথরের কাজ করে।

পৃষ্ঠা ৩৭০

পোশাইয়া—পোহাইয়া, প্রভাত হইয়া।
খলা—জঞ্জাল, আবর্জ্জনা।
টুকরি—বেত বা বাঁশের ঝুড়ী। হি° টো ক রী।
খনার কারবার—খনন কার্য্য। ফা° কা র ও বা র।
ঢুলিবার—ঝিমাইতে, নিদ্রাকর্ষণ বশতঃ চক্ষুনিমীলন ও শিরঃ কম্পন।

পৃষ্ঠা ৩৭১

পাঞ্চ কামিনী—শক্তি লইয়া সাধনের ইঙ্গিত করা হইয়াছে।
গুড়ি—স° গু ণ্ড, গু ণ্ডি ক।
রাজ নারিকেল—রাজোদ্যানের নারিকেল।
শ্রধা—শ্রদ্ধা, ইচ্ছা।
বাগ—উদ্যান। ফা°।
শোঁড়িয়া—ছাড়িয়া। তুল° ম° সো ড়ূ ণ (ত্যক্ত্বা)।
কাটোআল—কাঁটাল শব্দ দ্র° পৃ° ২২০।
শাশ, সাস—শস্য। প্রা° স স্ স।
পোলাপান—ছেলেপুলে। টী° স°’এ পো হা ল (পোতাধান)।
মালা—নারিকেলের খোলা। স° ম ল্ল, ম ল্ল ক।
হাত ঠারি—হস্ত-সঙ্কেতে।
ছোলা—ছাল। প্রা° ছ ল্লী।

পৃষ্ঠা ৩৭২

খরছি—খরচা, সম্বল। ফা° খ র চ।
গুরুজি—গুরুঠাকুর, গুরুমহাশয়। হি° জীউ, জী (জীব)।
তাম্বুলী—দাসী, পান সাজা ও পান যোগানই ইহাদের প্রধান কাজ।
লীলাএ—অবলীলাক্রমে, কিছুমাত্র ইতস্ততঃ না করিয়া।

পৃষ্ঠা ৩৭৩

পাদ লাড়ি ইত্যাদি—মন্ত্রের প্রভাবে হাড়িফা পা নাড়িতে নাড়িতে অর্থাৎ অনায়াসে উহাকে বাঁচাইয়া দিবে।

পৃষ্ঠা ৩৭৪

মএনন্দি সাগর—মহানদী। [?]
আঠু—স° অ ষ্ঠী ৱা ন; ও° আ ণ্ঠু।
খাঞ্জা—গলার নীচের শরীরাংশ, ধড়, head-less trunk।
সোঁরণ—স্মরণ। অপ° প্রা° সু ম র ণু।
খিচিয়া—√খি চ্, হি°√খে চ্ <স° কৃষ্।

পৃষ্ঠা ৩৭৫

দাএ—বস্তু-জ্ঞান, ক্ষতি-বৃদ্ধি।
জীবন উপাএ—জীবন রক্ষার অর্থে।
সামাইল গামছা—পূর্ব্বে ‘সেঁওয়ালী গামছা’ (পৃ° ৯১)। লজ্জা নিবারণের উপযুক্ত বস্ত্র-খণ্ড। √সা মা ল বা সা মা লা; স° সম্-√ভৃ সম্বরণে।
গুরূ—প্রাকৃত সু’, ভিস্ এবং সুপ্ প্রত্যয় পরে থাকিলে ইকারান্ত ও উকারান্ত শব্দের অন্ত্য স্বর (বিকল্পে) দীর্ঘ হয়; ‘সুভিস্‌সুপ্‌সু দীর্ঘঃ’ (প্রা° প্র°, ৫।১৮)।

পৃষ্ঠা ৩৭৬

মা বোলাও তারে—তাহাদিগকে মাতৃসম্বোধন কর।
মহি—মুঞি।
গুরূ হিতাহিত—গুরুর আক্কেল বা বুদ্ধিবিবেচনা।
লগ্ন করি দিবা—শুভক্ষণ স্থির করিয়া দিবে।
প্রমাণ—প্রত্যয়ের হেতু, অনুজ্ঞা।
শীঘ্র তুরমান—One of these words may be dispensed with।

পৃষ্ঠা ৩৭৭

যুশি—জ্যোতিষী। হি°জো ষী। ‘An inferior tribe of Brahmans employed in casting nativities and fostering other superstitions practices of the natives. Their name is corrupted from জ্যোতিষী an astrologer.’ [Races of N. W. Provinces by Sir H. M. Elliot, Vol. I, p. 140.]
খড়ি—প্রা° খ ড়ি আ (খটিকা)।
তার তোররি—কুণ্ডলাকার কর্ণভূষণ।
মদন কৌড়ি—মাক্‌ড়ী।
তাড়—তাটঙ্ক, বলয়।
সাত ছড়া হার—সাতকণ্ঠী হার; তুল° ‘সাতেসরী হার’। ছড়া<প্রা° স ট্ ঠি (যষ্টি)।

পৃষ্ঠা ৩৭৮

জগত শ্রবণ—বিশ্ব-বিশ্রুত।
বাহুখানি নেত—[?]
শিখনী—শিকলী [?]।
বাদ্যধ্বনি—নপুরাদি পদাভরণ; metonymy।
নানা বর্ণে—বিবিধ বেশে।

পৃষ্ঠা ৩৭৯

কালিনী জম—(১) জারজার্থক কানীন শব্দের বিকারে কালিনী হইতে পারে। (২) কালিন্দীর অপভ্রষ্ট কালিনী এবং যম ভগিনী যমুনার অপর নাম কালিন্দী। এখানে যমুনা (যমী) এবং যম উভয়কেই লক্ষ্য করা হইয়াছে কি না তাহাও বিবেচ্য। (৩) কালিনী শব্দে কৃষ্ণকায়ও হয়।
হাতে গলাএ বান্ধি—যে কোন প্রকারে।
দশ নৌক কাটি ইত্যাদি—অভীষ্ট-লাভ ও রোগ-মূক্তি জন্য ধর্ম্মরাজের নিকট নখ-চুল মানত এবং (গাজনে) জিহ্বাছেদন, বক্ষঃ বিদারণ প্রভৃতি কৃচ্ছ্রসাধন বা তাহার অনুকল্প আজও কোথাও কোথাও দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে রঞ্জাবতীর ‘শালে ভর’ স্মরণীয়। মানাইমু—সম্মত করিব, সান্ত্বনা করিব। সামী—প্রা°। হৃদয়বিদারী—বুক চিরিয়া রক্ত (দেওয়া)।

পৃষ্ঠা ৩৮০

লাচাড়ী—সাধারণতঃ ত্রিপদী ছন্দকে নাচাড়ী বা লাচাড়ী বলে; যথা—

বাল্মীকি জে মহাশয় ভাঙ্গিবেন সুসংশয়
নাচাড়ি রচিল কৃত্তিবাস॥

[উত্তরাকাণ্ড]

জানকীর পতি গতি আন না লয় মতি
নাচাড়ি রচিল কৃত্তিবাস॥

[ঐ]
কিন্তু ইহার অন্যথা ও দেখা যায়। যথা—

সুকবি নারায়ণ দেবের সরস পাঁচালী।
পয়ার প্রবন্ধে বলি এক লাচাড়ী॥

[ পুঁথি ]

অপূর্ব্ব পুরাণ গীত রচি পদবন্ধে।
দ্বিজ বংশীদাসে গায় লাচাড়ীর ছন্দে।

গঙ্গাদাস সেনের আদিপর্ব্বে,—

কহিব নাচাড়ি এক পয়ারের চন্দে॥

কোষান্তরে লাচাড়ী এক প্রকার নাচুনী ছন্দ। বংশীদাসের পদ্মাপুরাণে ‘লাচাড়ী—রাগ লহরী’ এইরূপ আছে। সুতরাং উহা লহরী শব্দজাতও মনে হয় না।
আমাতর—চট্টগ্রামের কথ্য ভাষায় আঁ রা র্ তে (আমাদিগেতে)।
আমা—আমরা অর্থে। তুল° ‘আ হ্মা ছাড়ী তাক আন কেহো নাহি জানে॥’ কৃ° কী°, পৃ° ২০৯।
কথাএ—এ’ অতিরিক্ত।
আমি হেন সুন্দরী ইত্যাদি—আবার আমাদের মত সুন্দরী স্ত্রীর হাতে যদি সর-ননী না রুচিল, তবে অপরের হাতে কেমন করিয়া খাইবে?
ধজ—ধ্বজ। গা°।
কাহাতে—কাহা হইতে। তুল° ‘জ ল তে উঠীলী রাহী আধ করি তলে।’ কৃ° কী°, পৃ° ২৬১।

পৃষ্ঠা ৩৮১

দেওার—দেবতার, মেঘের। প্রা° দে ৱ আ।
বরিসণ—বর্ষণ। প্রা°।
টেফান্যা পানি—টোপ টোপ অর্থাৎ ফোঁটা ফোঁট৷ কুরিয়া পড়ে যে জল।
আমি সবে—প্রাচীন বাঙ্গালাতে ‘গণ’, ‘সব’ ‘সকল’ ‘যত’ প্রভৃতি শব্দের যোগে বহুবচনের অর্থ প্রকাশ করা হইত।
জীবের জীবন—জীবনের জীবন অর্থাৎ অতি প্রিয়।
কাতে ঢালি জাও—কাহার হাতে সমর্পণ করিয়া যাও।
পসু—প্রা°।

পৃষ্ঠা ৩৮৩

পুছিয়া—প্রা°, √পু ঞ্ছ (মৃ জ্)।
সেবা দিলু আমি—শরণ লইলাম।
মাটী হোতে গুবিচান্দের ইত্যাদি—পূর্ব্বেও ময়নামতীর দীক্ষা কালে এইরূপ ভাষা পাওয়া গিয়াছে (পৃ° ৩৪৪)।
খাড়া বন্দি—পূর্ব্বে ‘খারা বন্দী’ (পৃ° ৩৪৪)।

পৃষ্ঠা ৩৮৪

ঝুলি—পূর্ব্বের পাঠ ‘বুলি’ (পৃ° ৩৪৫)।
জোগাই—যোগী।
সিঙ্গাতে দিল ফুক—শৃঙ্গ ধমন করিলেন। আধুনিক ভাষায় ‘মরণ’ অর্থে ব্যবহৃত হয়।

পৃষ্ঠা ৩৮৫

টোন—পাত্রভেদ। স° ভূ ণ।
ত্রিশূল—শৈব যোগীদের ধারণীয়।
বীর—ডাহিনী শব্দের টীকা দ্রষ্টব্য (পৃ° ২)।
ভোর—বিহ্বল। বোলা শব্দের টিকা দ্র°।
গাছা—বড় কাঁটা।
পিচাস জে সুন ইত্যাদি—ইহা হইতে অনুমান হয় হাড়িফা পিশাচ-সিদ্ধ ছিলেন।
কাঁটা—মগধী ক ণ্ট এ।
দোহ—দুই জন। অপ° প্রা° দু হু।

পৃষ্ঠা ৩৮৬

মদ খাইবারে—পূর্ব্বে ‘ভাঙ্গ খাই সিদ্ধাএ লাগিল ঢুলিবার॥’ (পৃ° ৩৮৬)।
ঢালিয়া—প্রবেশ করাইয়া।
লইবা নি গ—লইবে না গো?
ঝিয়াই—মেয়ে। ঝি শব্দ দ্র°।
বিভোল—বিহ্বল। বোলা শব্দের টীকা দ্র°।

পৃষ্ঠা ৩৮৭

পালক—পালিত।
সুয়া—প্রা° সু অ (শুক)।
পুছে—প্রা° পু চ্ছ ই (পৃচ্ছতি); হি° পূ ছৈ, গু° পূ ছ ই।
বৈল বৃক্ষ—বিল্ববৃক্ষ। প্রা° বি ল্ল, বে ল্ল।
বৈসে—প্রা° ব ই স ই (উপবিশতি)।
মনহর—প্রাকৃতে ম ণ হ র, স র ব র প্রভৃতি।

পৃষ্ঠা ৩৮৯

খেড়য়াল—খেলার সাথী, ক্রীড়াসহচর। <প্রা° থে ট্ ঠু; হি° খে ল ৱা র।
তোমি—উত্তরচরিতে তু দ্ধি।
ভরশা—ভর, পূর্ণ এবং আশা। দুইটি স্বর সন্নিহিত হইলে একটির বিলোপ প্রাকৃতের অনুমত।
পোড়ে বনে—দাবদাহ।
একেশ্বর—একাকী।

পৃষ্ঠা ৩৯০

পক্ষী হইয়া দেখিমু উড়িয়া—তুল° ‘পাখি নহোঁ তার ঠাই উড়ী পড়ি জাওঁ।’ কৃ° কী°, (পৃ ২৯৪)।
কালি—শোক জন্য কামিলা।

পৃষ্ঠা ৩৯১

আমার প্রাণেশ্বর—ভাষাটা এখনকার কালে কেমন কেমন ঠেকে।

পৃষ্ঠা ৩৯৩

বর্ষিবা—মলত্যাগ করিবে। [বশ্চন, বশ্রান, পক্ষী প্রভৃতির পুরীয ত্যাগ।]
টাঙ্গনে—ঝুলান; শূন্যে।

পৃষ্ঠা ৩৯৪

চলি গেল আপনা দরশন—আপন চেষ্টা বা ধান্ধায় চলিয়া গেল। দরশন—lookout।
হাল চাস—কৃষিকর্ম্ম কর।
সিঙ্গাতে—কর্ম্মকারক।
পশ্চিম কুলের যুগী—গোরক্ষবিজয়ে ‘পশ্চিমে গেলেন গোর্খ উত্তরে মিনাই’ (পৃ° ১৫)। ইহা সম্প্রদায়গত পরিচয় বলিয়া মনে হয়।

  1. ‘রাজাধিকরণে তন্নিযুক্তকায়স্থকৃতং তদাধ্যক্ষকরচিহ্নিতং রাজসাক্ষিকম্।’ বিষ্ণুস্মৃতি ৭।২।
  2. ‘চাটতস্করদুর্বৃত্তমহাসাহসিকাদিভিঃ। পীড্যমানাঃ প্রজা রক্ষেৎ কায়স্থৈশ্চ বিশেষতঃ।’ যাজ্ঞবল্ক্য ১।৩৩।
  3. ‘কায়স্থা গণকা লেখকাশ্চ তৈঃ পীড্যমানাঃ বিশেষতো রক্ষেৎ তেষাং রাজবল্লভতয়াতিমায়াবিত্বাচ্চ দুর্নিবারতাৎ। মিতাক্ষরা
  4. কায়স্থাঃ করাধিকৃতাঃ অপরাক।
  5. ‘কায়স্থৈঃ রাজসম্বন্ধাৎ প্রভবিষ্ণুভিঃ।