ছিল—√'আছ (প্রাকৃত অচ্ছ, সংস্কৃত অ স্)-ল’ বা ই ল (ক্ত)> আ ছি ল এবং আ’ লোপে ছি ল। কেহ কেহ এই ল’-মূলে প্রাকৃত আ ল, ই ল্ল প্রত্যয়ের উল্লেখ করেন।
বড়—প্রাকৃত রূপ।
ময়নাক—বাঙ্গালার প্রদেশ বিশেষে দ্বিতীয়ার চিহ্ন কে’ স্থানে ক’ প্রচলিত।
বিবা—বিবাহ। প্রাচীন বাঙ্গলায় বি ভা।
করিল—মাগধী ক লি দে (কৃতঃ)।
তার—প্রাকৃত ত (তদ) শব্দ ষষ্ঠীর বহুবচনে তা ণং, তা ণ; এই তাণ হইতে তাঁর। পরে অনুনাসিকের চিহ্নটি বিলীন হইয়া গিয়াছে। আজও স্থানে স্থানে তা ন, তা না র শব্দ প্রচলিত। বাঙ্গালা ও অসমীয়া প্রাচীন সাহিত্যে তাঁহার অর্থে তা ন, তা হা ন শব্দের প্রয়োগ আছে। ষষ্ঠীর চিহ্ন ণ’র এই রকারে পরিণতি প্রায়শঃ সর্ব্বনাম শব্দে দেখা যায়।
নও বুড়ি ভারজা—মাণিকচন্দ্র রাজার ১৮০ রাণীর উপর ময়নামতীকে মহিষী করিলেন; তাহাতেও সাধ মিটিল না। অবশ্য রাজারাজড়ার কথা। নও—নয় সংখ্যা। প্রাকৃত ন অ, সংস্কৃত ন ৱ; হিন্দী নৌ।
বুড়ি—সংস্কৃত বো ড্রী।
করি—শৌরসেনী ভাষায় ক রি অ; প্রাকৃত পৈঙ্গলে ক রি (১।৯৭, ১।৯৯)। অনন্তরাদি অর্থে ধাতুর উত্তর ই’ বা ই অ প্রত্যয় প্রাকৃতের অনুরূপ।
রাজার—ষষ্ঠীর উত্তর এই র’ প্রত্যয় অপভ্রংশ ভাষার অনুকৃতি। মতান্তরে উহা প্রাকৃত স্ স (স্য) বিভক্তি চিহ্নের রূপান্তর মাত্র।
না পুরিল—আধুনিক বাঙ্গালায় ক্রিয়ার নেতিবাচক (negative) এর ব্যবহার হয়। কিন্তু প্রাচীন বাঙ্গালা, প্রাকৃত, সংস্কৃত এবং হিন্দী, মরাঠী প্রভৃতি ভাষায় হয় না; ইংরাজিতেও না। প্রাকৃতে ‘ণ’, ‘ণা’। চর্য্যাপদে ‘ণ’, ‘ণা’, ‘ন’, ‘না’ এই চারিটি রূপই পাওয়া যায়। শূন্যপুরাণে ‘ন’, ‘না’।
ডাহিনী—ডাকিনী। তন্ত্রে অনেক প্রকার সিদ্ধি আছে; তাহার মধ্যে দুই প্রকার প্রধান। বামাচারে যাঁহারা সিদ্ধ হন, তাঁহাদিগকে বী র বলে। ইঁহাদের মধ্যে যাঁহারা প্রধান হন, তাঁহাদিগকে বী রে শ্ব র বলে এবং বীরেশ্বরদের মধ্যে যাঁহারা প্রধান, তাঁহাদেব দেশী নাম ডা ক। যে সকল স্ত্রীলোক বামাচারে চরম সিদ্ধি লাভ করেন, তাঁহাদের নাম ডা কি নী। ডাকিনী, ডাকের স্ত্রী নহে। ইঁহাদের অলৌকিক ক্রিয়াকলাপের কথা বেশীর ভাগ বৌদ্ধগণের লিখিত পুঁথিতে পাওয়া যায়। ডা ই ন, ডা ই নী প্রভৃতি শব্দ ডাকিনীরই রূপভেদ।
[শাস্ত্রী মহাশয়]
দেখিবার—শ্রীযুক্ত যোগেশ বাবুব মতে দেখিবা শব্দের উত্তর নিমিত্তার্থে ক’ বিভক্তি যোগে দে খি বা ক হয় এবং এই ক’ হইতে র’ আসিতে পারে। শ্রীযুক্ত বিজয় বাবু বলেন, উহা তব্য প্রত্যয় যোগে নিষ্পন্ন।
ব্যাগল—পৃথক, ভিন্ন। পশ্চিম-রাঢ়ে বে ল গ, হিন্দী ও মরাঠী বি ল গ, অসমীয়া বে লে গ।
দিল—শৌরসেনী ভাষার √দা স্থানে দে’ আদেশ হয়; তাহার উত্তর ই ল প্রতায়।
কারও পুস্কনির জল ইত্যাদি—পুষ্করিণী বাহুল্য। গোরক্ষ-বিজয়ে ‘কার পখরির পানি কেহ নহি যাএ।’ (পৃ৹ ৫৪)। শুনিয়াছি, কুচবিহার অঞ্চলে কেহ কেহ এখনও অপরের পুকুর ব্যবহার করে না।
আথাইলের ধন কড়ি ইত্যাদি- মর্ম্মার্থ, অনায়াসলব্ধ টাকা কড়ি যেখানে সেখানে ফেলিয়া রাখা হইত। মাণিকচন্দ্র রাজার গানে ‘অ থা ই লা পা তা ই লা চৌকা নেও বল আরোপিয়া।’ (পৃ৹ ৫৪); আ থা লি-পা থা লি, আ তা ল-পা তা ল (at random, without any system) শব্দ তুল৹। গোপীচন্দ্রেরর পাঁচালীতে 'হীরা মন মাণিক্য লোক তলিতে সুখাইত।' আমরা বাল্যকালে জকের (যক্ষের) তালায়ে কবিয়া টাকা শুখাইতে দিবার কথা শুনিয়াছি।
সোনা—প্রা৹ সো ণ্ণ, সো ণ্ণ অ।
ছাওআলে—রাঢ়ের পশ্চিম প্রান্তেও সন্তান অর্থে ছাওআল শব্দ প্রচলিত। প্রা৹ ছা ৱ(ল); অস৹ ছা ৱ ল। এ’ কর্তৃকারকের চিহ্ন। মাগধী ভাষায় (পুং-নপুংসক উভয় লিঙ্গেই) অকারান্ত শব্দের উত্তর সু প্রত্যয়ের স্থানে ইকার বা একার হয়, এবং পক্ষে সু প্রত্যয়ের লোপ হয়; 'অত ইদেতৌ লুক্চ (প্রা৹ প্র৹ ১১।১০)। বাঙ্গালা প্রভৃতি ভাষায় ক্রমে বচননির্ব্বিশেষে এই এ’ প্রচলিত হইয়া থাকিবে।
খ্যালায়-প্রা৹ খে ল্ল ই (ক্রীড়তি)।
হ্যান—অপ৹ প্রা° হি ণ্ণি, হে ণ্ণ (এবং, অনেন); বৈদিক এ না (ঈদৃশ)। দুক্খি—প্রা৹ দু ক্ খ-ই (ঈ) অস্ত্যর্থে।
বান্দি—ইংরাজি slave অর্থে যাহা বুঝায় এদেশে দাস বা বান্দা তাহা ছিল না, দাসেরা পরিবার মধ্যে গণ্য হইত এবং তাহাদের প্রতি সদয় ও সস্নেহ ব্যবহার করা হইত। স্ত্রীলিঙ্গে বা ন্দী, ফা’ বা ন্দা হ হইতে।
হাল খানাএ খাজনা ইত্যাদি—১০-২৩ পঙ্ক্তি মৃকুল বা মেহারকুলবাসীর সুখ সমৃদ্ধির কথা বর্ণিত। ভূমিকর নাম মাত্র ছিল। দেশে চোর ডাকাইতের ভয় আদৌ ছিল না
পাঁঠা—ওড়িয়া রূপ পাণ্ঠা; ছাগ অর্থে মেচ ও কোচ ভাষায় যথাক্রমে ফা ণ্টা মাসে, গোইশা পা ন্থা। স্ত্রীলিঙ্গে ফা ণ্টি মাসে, গোইশা পা ন্থি;
গোঠে—গোটা গুটি প্রভৃতি শব্দের তেলিগু রূপ ও ক টি।
বদলী—আ’ ব দ লা ই।
পাল খায়—বোধ হয় ‘পাণ খায়’ অর্থ—রেহাই দেওয়া হয়।
সুক্খ সএ—সুখ সহা আবার কেমন? সুখ উপভোগ করা এবং দুঃখ সহ্য করাই রীতিসিদ্ধ।
কুমড়া—মাগধী ক ম ঢ় এ (কমঠকঃ), প্রা’ কু ষ্ম ণ্ড।
গুলা—বহুবচনার্থক গুলা, গুলি প্রভৃতি শব্দের প্রা তথা তামিল রূপ গ ল, স’ কু ল। ব্রহ্মপুত্রের উপত্যকায় গি লা ক, অস বি লা ক।
ঐত—ওরূপ, such
সরুয়া—কৃষ্ণকীর্ত্তনে স রু অ (সূক্ষ্ম।
একতন যেকতন—এমন যেমন, যেমন তেমন অর্থাৎ কোন প্রকারে।
পৃষ্ঠা ৩
দক্খিন—প্রা’ দ ক্ খি ণ।
হৈতে—পঞ্চমীর চিহ্ন (ইহার সহিত √হ’র কোন সম্বন্ধ নাই); প্রাচীন বাঙ্গালায় হ ন্তে, হৈ তেঁ, হ তেঁ প্রভৃতি। প্রাকৃতরূপ হিং ত।
বাঙ্গাল—মুসলমান অর্থে প্রযুক্ত।
দরবার—ফা’।
দাড়ি—প্রা’ দা ঢি আ (দংষ্ট্রীকা)।
মুলুকত্ কৈল্ল কড়ি—মর্ম্মার্থ, পড়া-পতিত ভূমি হইতেও কর সংগ্রহ করা হইতে লাগিল। গ্রীয়ারসন সাহেব তর্জ্জমা করিয়াছেন, made money from the country। পরে পাওয়া যাইবে, করের হারও দ্বিগুণ করা হইল। মুলুক—দেশ, রাজ্য। আ’ মু ল্ ক্।
দেওআনগিরি—ফা’ দা ৱা ন, মন্ত্রিসভা এব গ র-ই’ (ঈ)।
চাকরি—প রি চা র ক হইতে।
পোন্দর—প্রা’ প ণ্ণ র হ; প্রাচ্য হি’ প ন্দ র হ।
নিল—মাগধী ল হি দে (লব্ধঃ)।
রাম লক্খন দুটা গোলা—প্রাচীন বাঙ্গালাতে দুই মুঠ শাঁখারও রাম-লক্ষ্মণ নাম পাওয়া যায়। লক্খন—প্রা’ ল ক্ খ ণ।
দুটা—প্রা’ দু (দ্বে) এবং টা (তেলেগু টি)।
গোলা—স’ গোল হইতে।
দুআরে—৭মীতে এ’ প্রাকৃতের অনুকরণ।
ছান্দিল—√ছান্দ্ (স’ ছ ন্দ্ বন্ধনে)-ল।
মারি—প্রা’ মা রি অ (মারয়িত্বা)।
ছাচিল—সঞ্চয় করিল, সাধিল। প্রাচীন বাঙ্গালায় শাঁ চে, সাঁ চি প্রভৃতি শব্দের প্রয়োগ লক্ষণীয়।
খানে খানে—এক এক করিয়া বা প্রত্যেক খানি।
তালুক—ভূ-সম্পত্তি। আ’ তা আ লু ক।
ছন—উচ্ছিন্ন।
সাদিতে নাগিল—সংগ্রহ করিতে লাগিল।
সুখিত—সম্পন্ন।
দুক্খিতা—দরিদ্র। গ্রাম্য প্রয়োগ: দয়াযুক্তা, বিষ্ণুভক্তা প্রভৃতি পদ তুল।
দুধের ছোআল—কোলের ছেলে, দুগ্ধ পোষ্য শিশু, children at the breast; অদ্ভূতাচার্য্যের আদ্যকাণ্ডে ‘স্তনের ছাওয়াল’। দুধ—প্রা’ দু গ্ধ। ছোআল—ছাওআল শব্দেরই রূপভেদ।
হাকিম—শাসন-বিভাগের কর্ম্মচারী। আ’।
মালগুজার—মালগুজারি, ভূমিকর। ফা’।
ছোট—প্রা’ ছু ট্ট, ছু ট্ট অ।
উঠি—প্রা’ উ ট্ ঠি (উত্থায়)।
বলে—প্রা’ √বো ল্ল কথনে।
ভাই—প্রা’ ভা আ, ভা য়া (ভ্রাতা)।
ভাটি— সুন্দরবন ও সমুদ্র সমীপবর্ত্তী ভূভাগ এক সময়ে ভাটি বা ১৮ ভাটি নামে পরিচিত ছিল। উহাব পূর্ব্বসীমা মেঘনা নদ এবং পশ্চিমে হিজলি-পরগণা বর্ত্তমানে বাখরগঞ্জ ও খুলনা জেলার দক্ষিণাংশকে ভাটি বলে। ভাটি অর্থে নিম্নভূমি, দক্ষিণ দেশ। বুন্দেল খণ্ড অঞ্চলে প্রচলিত ভা টি য়া (অনুর্ব্বর ভূমি) শব্দ তুলনীয়।
আফিন্না বিন্নার খোপ····অঞ্চল পাতিয়া—গ্রীয়ারসন অর্থ করিয়াছেন,— They rooted up unblown ‘'binna'’ grass and brought it. And then wringing out his ‘'langati'’ he (Siva gave vent to the curse; and that curse they (the raiyats) took up in the corner of their garments.
দাদা—প্রা° তা দ (তাত)।
মেলি—প্রা° মে লি অ।
পরামানিক—(গ্রামের) প্রধান, সচরাচর নাপিত।
আমাকে—নিমিত্তার্থ নাগিয়া শব্দের যোগে ষষ্ঠী।
এক বাজ্ঞা ইত্যাদি—একবার বল। একাধিক বার বলার সমান হইল। বাজ্ঞা—আজ্ঞা; প্রাদেশিক উচ্চারণ।
মহলক—বাসভবনের; নাগি (লাগি) শব্দের যোগে ষষ্ঠী, ক’ বিভক্তি-চিহ্ন।
হাতে মাতে—সর্ব্বাঙ্গে। প্রা° হত্থ ও মত্থ হইতে যথাক্রমে হাত ও মাত।
শুন হিয়া—শুনসিয়া অর্থাৎ অসিয়া শুন।
আমরা—সম্বন্ধের র’তে আকার যোগ করিয়া কর্ত্তৃকারক বহুবচনের চিহ্ন রা’ হইতে পারে। শ্রীযুক্ত বিজয় বাবু বলেন, তামিল অ র এরা প্রাকৃতের আ’ মিলিয়া এই রা’ হইয়াছে।
পানি—পানীয়, জল। Specialization of meaning; এখন অপেয় দুর্গন্ধ জলকেও পানি বলে। প্রা° পা ণি অ। বর্ত্তমানে শব্দটি হি°, ম°, গু° প্রভৃতি ভাষায় সুপ্রতিষ্ঠিত, বাঙ্গালায় অনাদৃত।
গুরু ছাড়িল—চৈতন্য হারাইল, gave up the ghost i.e. lost the power of sensation।
চিত্রগোবিন্দ—চিত্রগুপ্ত চতুর্দ্দশ যমের অন্যতম।
দফ্তর নাগাইল পাইল—খাতাপত্রে বা হিসাবের কাগজে দেখিল, দফ্তর—নেকড়ায় বাঁধা বই প্রভৃতি। আ°।
বেন্নামুখ—বিমুখ।
সমন—প্রা° স ম ণ (শমন)।
যমালয়—ঋগ্বেদ, ১ মণ্ডল, ৩৫ সূত্রে যমভবনের উল্লেখ দেখা যায়, যথা—‘দ্যুলোক প্রভৃতি তিনটী লোক আছে, দুইটী (দ্যুলোক ও ভূলোক) সূর্য্যের সমীপস্থ; একটী (অন্তরীক্ষ) যমের ভবনে গমনকারীদিগের পথ;[১] বিবস্বানের দ্বারা সরণ্যুর গর্ভে যম ও তাঁহার ভগ্নী যমীর জন্ম হয়। বিবস্বান সূর্য্য (বা আকাশ) এবং সরণ্যু শব্দে প্রভাত বা উষা। আচার্য্য Max Muller যমজ ভাই-বোন যম ও যমীকে দিবা ও রাত্রি বলিয়াছেন। পরে যম যেমন করিয়া মৃত্যুর রাজা হন, তাহারও আভাস দিয়াছেন। তাঁহার মতে প্রাচীন ঋষিগণ যেরূপ পূর্ব্বদিক্কে জীবনের উৎপত্তিস্থল মনে করিতেন, পশ্চিমদিককে সেইরূপ জীবনের অবসান ভাবিতেন। সূর্য্য পূর্ব্ব দিকে উদিত হইয়া পশ্চিমদিকে অন্তর্হিত হইতেন,
অর্থাৎ জনের পথ ভ্রমণ করিয়া পরলোকের পথ দেখাইতেন। এইরূপ অনুভব হইতে যমের পরলোকে আধিপতা লাভ ঘটে।
বৈদিক যমকে লইয়া পুরাণে নানা গল্প রচিত হইয়াছে। ইরানীয় ধর্ম্মপুস্তকে ইনি যিম্ এবং ইঁহার পিতা বিবঙ্ঘৎ বা বিবঙ্ঘন্ত নামে পরিচিত। যিম প্রথম রাজ্য ও সভ্যতার প্রবর্ত্তক। পুণ্যবানেরা ইঁহার সহিত পরম উপাস্য অসুরের সাক্ষাৎ পায় এবং সুখে বাস করে। ঋগ্বেদের যমপুরীতেও পুণ্যাত্মার বাস।
প্রসিদ্ধ পারসীক কবি ফের্দুসী তাঁহার ‘শাহনামা’য় প্রাচীন ‘অবস্থার যিমকে পরাক্রান্ত সম্রাট্ যমশিদ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। [দত্ত মহোদয় কৃত তরজমার টীকা]
রামায়ণে, রাবণের দিগ্বিজয়কলে নারদ ঋষি রাবণকে যমের সহিত যুদ্ধ করিতে পরামর্শ দিয়া যমকে সংবাদ দিতে আসিলেন,—রক্ষোরাজ আসিতেছে। যমালয়ে আসিয়া দেখিলেন, যম অগ্নিকে পুরোবর্ত্তী করিয়া প্রাণিপুঞ্জের যাহার যেরূপ উচিত ব্যবস্থা করিতেছেন। সেখানে প্রাণিগণ স্ব স্ব সুকৃত ও দুষ্কৃতের ফলভোগ করিতেছেন।— উ° কা° ২১ স
পৌরাণিক যমপুরী পাপীদিগের নরক এবং দক্ষিণে অবস্থিত।
আবাল—শিশু শিক্ষানবিশ। কৃ° কী° এ বালক ও বালিকা অর্থে আ বা ল, আ বা লী শব্দের প্রয়োগ আছে।
অগ দুয়াবে—সম্মুখ দ্বারে, and not inside the door। প্রা° অ গ গ এবং দু আ র, দু য়া র; এ বিভক্তি-চিহ্ন।
পসার খেলায়—পাশা খেলা করে। পাশা খেলা অতি প্রাচীন। ঋগবেদ সংহিতার ১০ মণ্ডল ৩৪ সূক্তে পাশা-খেলায় আসক্তি ও তাহার বিষম পরিণামের কথা সুন্দভাবে বর্ণিত হইয়াছে। কিন্তু যজুর্ব্বেদীয় মাধ্যন্দিন শাখা ১০ম অধ্যায় ২৮-২৯ কণ্ডিকাতে অক্ষপাত বিহিত। স্মৃতি ও পুরাণে অক্ষক্রীড়ার উল্লেখ আছে। রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ড ৭৫ সর্গে আছে। মহাভারতীয় দ্যূতক্রীডার উপাখ্যানে সকলেরই সুপরিচিত। নীতিশাস্ত্রে উহার দোষ কীর্ত্তিত। প্রাচীন কালে মাটিতে ঘর আঁকিয়া বহেড়া ফলের সাহায্যে খেলা হইত। পরে কড়ি এব সর্ব্বশেষে নেকড়ায় ঘর কাটা পালি ও হাতীর দাঁতের পাটি প্রবর্ত্তিত হইয়া থাকিবে। এখনও মাটিতে ঘর আঁকিয়া কড়িতে জুআ খেলা প্রচলিত।
খিরকির দুয়ারে দিয়া—পাশের দুয়ার দিয়া, and not through the lattice। খিরকি—‘পক্ষদ্বার দ্বয়’ খড়কীতি খ্যাতে দ্বারে’—টীকাসর্ব্বস্ব। প্রা° খ ড় ক্কী, খ ড় কি আ।
যাত্রা করা—দেশান্তরে গমন জন্য শুভক্ষণে হরি স্মরণাদি পূর্ব্বক প্রস্তুত হওয়া।
উত্তরিল—পৌঁছিল। স° উৎ√তৃ অবতরণে হি° উ ত র না।
তত্ত—পাঠ সমীচীন মনে হয়। অর্থ—তবু।
তত্ত—প্রা°।
আমার সরীরের জ্ঞান······ঘর জুয়ান হইয়া— আমার নিকট মন্ত্র-তন্ত্র শিখিয়া লও, দেখিবে আমাদের বয়সে কত নদী প্রবাহিত হইয়া শুকাইয়া যাইবে, কত বট গাছ জন্মিবে এবং কালে মরিয়া যাইবে। কিন্তু আমরা উভয়ে পূর্ণ যৌবন লইযা রাজত্ব করিতে থাকিব অর্থাৎ আমরা দীর্ঘজীবী হইয়া ভোগ সুখ রত থাকিতে পারিব। সরীর—প্রা°। বোল—বাক্য প্রা°। বসের—বয়সের। কন্দে—কোন দিক দিয়া। বড় বৃক্ষ—দীর্ঘকাল স্থায়ী বলিয়া বট বৃক্ষের উল্লেখ। রাজকি—রাজত্ব। রাজ এবং ফা° গী র হইবে বোধ হয়। করিম—করিব। প্রাচীন
বাঙ্গালাতে ক রি মু, ক রি বু, ক রি বোঁ।
ঘর জুয়ান—‘ভর জুয়ান’ হইবে প্রা° জু অ ণো (যুবা)।
এখনি মোর মাণিকচন্দ্র ইত্যাদি—আমি মাণিকচন্দ্র রাজা, আমার এখনই মরণ হউক (সেও ভাল) কিন্তু স্ত্রীলোকের বা পত্নীর জ্ঞান যেন লইতে না হয়। মোর—মোরে আমায়, তুল ‘অকারণে রাধা মোর না কর নিরাশ। জ্ঞান গরবে—জ্ঞান গর্ভ।
হেলা—প্রা° ও স°।
ভাড়ুয়া—বেশ্যার পোষ্য। স° ভ ট শব্দের বিকারে এ বা উয়া প্রত্যয় যোগে বোধ হয়।
করিয়া গেল মেলা—Cদখা দিয়া গেল, হামলা দিয়া গেল।
মরে—প্রা° ম র ই (ম্রিয়তে)।
নাক—নাসা। প্রা° ন ক্ক।
বেটা—প্রা° বি ট্টো (পুত্রঃ)।
তখন—প্রা° ত ক্ খ ণ।
কার প্রানে চাও—কাহার অনুমতিয অপেক্ষা করিতেছ, কি দেখিতেছ।
অমর গিয়ান—সজীব সিদ্ধ-মন্ত্র অথবা যে জ্ঞানে অমর হওয়া যায়।
এড়াই—অতিক্রম করি।
বাই—সন্ত্রান্ত। স্ত্রী। মরাঠী ভাষায় সাধারণতঃ মাতা অথবা বয়োধিকা স্ত্রীলোক। হি° তে নর্ত্তকী অর্থেও প্রযুক্ত হয়।
এমনি—অমনি শব্দেরই রূপভেদ।
জাহান—প্রাণ। ফা° জা ন্।
মাইয়া—স্ত্রীলোক; রাঢ়ের পশ্চিম প্রান্তে শব্দটি পত্নী অর্থে প্রচলিত। প্রা° মা ই আ (মাতৃকা)।
পৃষ্ঠা ১৫
ডাকাবেন হামাক—আমায় সম্বোধন করিবে।
নিগি—লইয়া গিয়া।
তুই—অপ° প্রা° ত ই (ত্বম্); অস° ত ই।
ঝন—জন অর্থে।
ওয়ার—প্রা° অমু (অদস্) শব্দের প্রথমার একবচনে তিন লিঙ্গেই অ হ; উহাতে ষষ্ঠ্যন্ত আর (ডার) প্রতায় করিলে অ হা র পদ হয়। এই অহার হইতে উ হা র, ও হা র, ও য়া র প্রভৃতি হওয়া সম্ভব।
জার--প্রা° সম্বন্ধবাচক জা ণ শব্দ হইতে জার এবং জাহাণ তথা জাহার হওয়া অসম্ভব নহে। অপভ্রংশ ভাষায় যুষ্মবাদি শব্দের উত্তর ঈ য় প্রত্যয় স্থানে ডা র আদেশের বিধান আছে (হেম° ৮।৪।৪৩৪)।
ওঝা বৈদ্য হৈয়া ইত্যাদি—ময়না ওঝা সাজিয়া মন্ত্রচিকিৎসায় প্রবৃত্ত হইল, আর ঔষধ করিবার এই ছলে বা অবসরে যে যে দিকে পারিল পলাইল। ওঝা—গ্রাম্য চিকিৎসক। প্রা° ও জ্ ঝা য়, উ অ জ্ ঝা য় (উপাধ্যায়); সি° ৱ। ঝো।
কেহ ঝাড়িবার লাগিল—মন্ত্রাদির সাহায্যে কাহারও বিষ অপসারিত করিতে লাগিল। কেহ—‘কাহো’ হইবে বোধ হয়। আলে—ছলে, অবসরে।
ঝোলঙ্গা—ঝুলি।
বৃধুমাতা—বুড়ো মা।
বিলাতক—নাগিয়া শব্দের যোগে ষষ্ঠী।
ঘুলা—দিশা-হারা হইয়া একই পথে পুনঃপুন ভ্রমণ। প্রা° √ঘু ল্ ঘূর্ণনে।
সুবুদ্ধ—সুবুদ্ধি।
কুবোধ নাগাল পাইল—দুর্ব্বুদ্ধি ঘটিল।
একটু—অল্পার্থে টু’।
কিছু করি—যৎকিঞ্চিৎ। কিছু—প্রাচীন বাঙ্গালার কি ছ, কি ছো; পদুমাবতিতে কি ছু; প্রা° পৈ° এ কিছু, কি চ্ছ, কু ছ; ও ভাগবত কি ছি। প্রা° কিং চি হু (স° কিঞ্চিৎ খলু)।
শুব শুব--শুভ-শুভ।
বোলে রাও দিয়া—ডাকিয়া বলে।
বালা—বলুক।
ভরন হাড়ির—ভরা হাড়ির, পূর্ণ ভাজনের। হাঁড়ি—হাঁড় (ভাঁড় শব্দের উত্তর ক্ষুদ্রার্থে ই প্রত্যয়)।
কুণ্ঠি—কোন্-টি। প্রাচীন পুঁথিতে কোন্ স্থানে কু ন্ শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়; রাঢ়ের পশ্চিম প্রান্তে আজও কু ন্ প্রচলিত। হি° তে কোন অর্থে কু ণ শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়।
হয়—কু° কী° এ হ এ। প্রা° হো ই।
গলি—হি° গ লী, ম° গ ল্লী।
জান--প্রাণ। ফা°।
গলা--প্রা° গ ল অ।
পৃষ্ঠা ২৯
কোদ্দ—ক্রুদ্ধ, রুষ্ট।
মাও দায় দিয়া—মাতৃ সম্বোধনে। মাও—শূন্য-পুরাণ, কৃত্তিবাসী রামায়ণ প্রভৃতিতে; কৃ° কী° এ মা অ। প্রা° মা আ, মা উ (মাতৃ); সি° মা উ।
কবুল—স্বীকার। আ° ক বু ল।
লক্খি রাই—লক্ষ্মী মা বা লক্ষ্মী রাণী; কামতা বিহারী ভাষায় মাতা অর্থে রা ই শব্দের প্রয়োগ আছে। শূ° পু° এ ‘লক্ষ্মী চারি জুগের রাই.......’ (পৃ ১৩৪), কৃ° কী° এ ‘কদম তলাত রাধা রাহী।’ (পৃ ৩৪৮)।
জদিকালে—যদিস্যাৎ।
পেণ্ঠি—পাঁচনী, পশুতাড়ন যষ্টি: টাঙ্গাইল অঞ্চলে পাণ্ঠী।
জুখিয়া—ব্যাপিয়া। √জু স্ পরিতকণে।
আইয়ত—রাইয়ত।
জাগা—স্থান। ফা° জায়গা।
মাসিয়া—প্রা° মাসি অ।
ছেলে—দেশী প্রা° চিল্ল; স ছ ল্লী।
হিদ্দের—গর্ভের, উদরের।
করবু—মধ্যম পুরুষের ক্রিয়া।
নাম কলম লিখিয়া দিনু—নাম ধামাদি আবশ্যক বিবরণ লিখিয়া দিলাম অথবা কলমের সাহায্যে লিখিয়া দিলাম, তাহার আর নড়-চড় নাই। কলম—আ° ক লা ম অর্থে সন্দভ, স ক ল ম্ব, ক ড় ম্ব শব্দ তুল।
আটিয়া বজ্জর—বজ্রের মত দৃঢ়. mighty as the thunderbolt।
ডাইন পিড়ের দণ্ড—ডা’ন পিঠের পাঁজরা।
লড়—√ল ড্ চলনে।
ছেপলা মৎস্য—চেলা মাছ, ইং প্রতিশব্দ minnow।
পানকাউড়ি—পানিকাক; ক্ষুদ্রার্থে ড়ি’ প্রত্যয়।
বানোয়ার—এক প্রকার মৎস্যজীবী পক্ষী।
পাখা—প্রা° প ক্ খ।
সাটতে—তাড়নে। প্রা° স ট্ ঠি (ষষ্টি হইতে)।
ঠোকাইয়া—ঠোঁট দিয়া চাপিয়া।
ঢেকেয়া—ধাক্কা মারিয়া। স° √ধ ক্ক ধ্বংসে।
কোন কাম করিল—পুরান ছড়া, গাথা প্রভৃতিতে এই প্রশ্নাত্মক বাক্যাংশের বহুল প্রয়োগ দেখা যায়। কৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিণীতে ‘তৃণাবর্ত্ত মহাদৈতা কোন কর্ম্ম করে।’ (১০স্ক° ৭ অ°)।
গচি মচ্ছ—ছোট বাইন বা পাঁকাইল মাছ। মচ্ছ—প্রা° রূপ।
ঘুগড়ি—পতঙ্গভেদ, (ক্ষুদ্র জাতীয় কপোত নহে)।
পাতালক লাগিয়া—পাতালের উদ্দেশে।
মোচড়ায় দাড়ি—তুল মোছে চাড়া দেওয়া।
সালী—প্রা° সা লি আ (শ্যালিকা)।
পৃষ্ঠা ৩৪
লাগ্য—লাগ, সন্ধান।
বিলই—বিড়াল।
তেলঙ্গা—তেলাপোকা।
উপর কৈরে—অধোমুখ করিয়া। উদ্বর্ত্তিত প্রাকৃতে উ ব্ব ড়ি অ শব্দ পাওয়া যায়।
হাপসাইল—অসাড় হইল। মৌলিক অর্থ কণ্ডিত হইল, আহত হইল। কৃ° কী° এ আ পো ঙ ষ; কৃষ্ণপ্রেম-তরঙ্গিণীতে আ প সে, আ প সি তে; বাঘের দেবতা সোনারায়ের গানে, ‘মধ্যপথে লাগাইল পায়া বাঘে আ প চা য়’। রাঢ়ের পশ্চিম প্রান্তে ঠেঙ্গান অর্থে আ প সা ন বা হা প সা ন শব্দ প্রচলিত।
চিতর—চিত্, উত্তানভাবে। পূর্ব্ববঙ্গে চি ত্ত র।
নেদাবার—লাথাইবার লাথি মারিতে।
ঘড়ানী—গৃহপালিত বা গ্রাম্য।
সিকিরা—ফা°।
বাজ—শ্যেন, (hawk)। ফা°।
টালিয়া—ঠেলিয়া।
সালেয়া—ছোট ইন্দুর।
কাঠিয়া তেলী—রাড়ের ‘বীচতলা’ আসামে ‘কাঠীয়াতলী’, land on which rice is grown for transplanting।
বান পুটি—বাহান্ন পুটি। বান—প্রা বা ব ণ্ণ (দ্বিপঞ্চাশৎ)। পুটি—১৬ কুড়িতে এক পুটি।
কুচনি পাকায় তেপথীত বসিয়া—তে মাথা পথ আভিচারিক ক্রিয়ার পক্ষে বিশেষ উপযোগী। ঐরূপ বিশ্বাস ইউরোপেও আছে। কুচনি—চড়া।
কমড়—ফা° ক ম র্।
লাঠি—প্রা° ল ট্ ঠি (যষ্টি)।
বসতে—বয়সে।
পৃষ্ঠা ৩৭
মুনিমন্ত্র—মহামন্ত্র, ইষ্টমন্ত্র; বাঙ্গালা সাহিত্যে ‘মণি-মন্ত্র’ ও পাওয়া যায়।
মইস—প্রা° ম হি স।
জাবুরা—জঙ্গল; পশ্চিম রাঢ়ে জঞ্জাল অর্থে জ ব রা শব্দ প্রচলিত।
পুষ্পরথ—বিমান-যান। বেদসংহিতায় সর্ব্বত্রগামী অবাধগতি, ইচ্ছানুসারে নিয়মিত এবং সপ্তচক্র ও পঞ্চপক্ষবিশিষ্ট বিচিত্র বিমানের উল্লেখ দেখা যায় (ঋক্ ২।৪০।৩)। রাজা পুরুরবা (বৈবস্বত মনুর কন্যা ইলার পুত্র) বিমানে আরোহণ করিয়া অন্তরিক্ষে ভ্রমণ করিতেন (ঋক্ ১০।১২১।৫)। কুবেরের পুষ্পক লোকপ্রসিদ্ধ (সুন্দরকাণ্ড ৭৮, উত্তরকাণ্ড ১৫ ও ৪১ সর্গ) কথাসরিৎসাগরে বায়ু-যন্ত্র বা যন্ত্র-বিমান নির্ম্মাণের প্রসঙ্গ আছে (২৯, ৪৩ তরঙ্গ)।
[ময়নার বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ তথা গোদা যমের পশ্চাৎ ধাবন—Folk Literature of Bengal পৃ° ১৫-১৬ দ্রষ্টব্য। তষ্টাকন্যা সরণ্যুর অশ্বিনী রূপ ধরিয়া পলায়ন এবং বিবস্বানের অশ্বরূপে তাঁহার অনুসরণ, শিবি রাজার উপাখ্যানে ইন্দ্র ও যমের যথাক্রমে শ্যেন ও কপোত রূপ স্বীকার, ধর্ম্মগুপ্তকন্যা সোমপ্রভার কথা প্রসঙ্গে অগ্নিদেব ও গুহচন্দ্রের ভৃঙ্গরূপ ধারণ এবং মহর্ষি গৌতমের ভয়ে ইন্দ্রের বিড়াল রূপ অঙ্গীকার (কথা-সরিৎ-সাগর, ১৭শ তরঙ্গ) প্রভৃতি বহু দৃষ্টান্তের উল্লেখ করা যাইতে পারে।]
আঠারো জনম ইত্যাদি—আঠার বৎসর আয়ু অথবা ১৮ মাসে জন্ম, ১৯ বৎসৱে মৃত্যু। জনম—ন্ম’ এই যুক্ত বর্ণের বিপ্রকর্ষ বা ‘অ’ এই স্বরবর্ণের যোগে স্বরভক্তি প্রভাবে উচ্চারণ সৌকর্ষ হইয়াছে। ভাষা তত্ত্বে ইহাকে vowel augmentation বা Swarabhakti বলে। প্রাচীম বা° ও হি°তে জ র ম।
দোকলম করিয়া জদি দ্যায়—যদি (কাটিয়া) পুনরায় লিখিয়া দেয়।
আড়াই—প্রা° অ ড্ ঢ অ ই আ (অর্দ্ধ তৃতীয়া)।
শস্—মৃতের সৎকার।
গঙ্গাক—ক’ সপ্তমীর অর্থে প্রযুক্ত।
বাঙ্গলা—দুই চালবিশিষ্ট ঘর।
খুটা খড়ি—কাট-খড়।
কড়া—কড়া, কড়ি, কৌড়ি একই শব্দের বিভিন্ন রূপ।
পৃষ্ঠা ৪৩
রাম খুডা ব্যাল খডা—আম ও বেল কাঠ।
সরিসা—প্রা° স বি স ৱ (সর্ষপ)।
ত্যাল—প্রা° তে ল্ল (তৈল)।
ঘি—প্রা° ঘি অ (ঘৃত)।
কোডোরা—কাটোরা, কাঠের বাটী।
মছলি—মাচুলি, ছোট খাট, bier। ম° মা চো।
নও কড়া কড়িইত্যাদি—নিজের জায়গায় মৃতের সৎকার এদেশের একটি প্রাচীন রীতি।
বুড়া ঘর—পুরান ঘর।
বেগারি—বিনা বেতনের জন। ফা°।
সগ—সকল। প্রা° অপ° স গ লং (সকলম) হি° স গ র।
রাও দিয়া—ডাক দিয়া।
কাওয়াইর—প্রা° ক বা ড (কপাট) > কবাডী, কবাইড়, কওয়াইর প্রভৃতি; হি° কে বা র।
হরিগুন গান ইত্যাদি—ভগবানের গুণগান ও সংকীর্ত্তন, অথবা রাজা মাণিকচন্দ্র বৈষ্ণব ছিলেন, অথবা পরবর্ত্তী প্রভাব হইতে পারে।
পাহার—পাড়।* অপ মাগধী পা ঢ অ অ ঢে (প্রথিতক; lit. Apread out); অথবা পার শব্দ হইতে।
চিতা—‘চিতায়ামুদ্ধানে’—মেদিনী।
আরোপিল—স্থাপন করিল, রচনা করিল।
খুটি—প্রা° খু ণ্ট (স্তম্ভ)।
বগল—পার্শ্ব। ফা°।
হাড়ি—হাঁড় (ভাঁড়) শব্দের উত্তর ক্ষুদ্রার্থে ই’ প্রত্যয়। অর্দ্ধমাগধী ভং ড।
মৎস্য পরশ করিল—আদ্য শ্রাদ্ধের পর কর্ম্মকর্ত্তার জ্ঞাতিদের সহিত পঙক্তিতে বসিয়া মাছ ভাত খাওয়া এদেশের লৌকিক আচার। ইহাকে সাধারণতঃ ‘নিয়ম-ভঙ্গ’ বলে। কিন্তু বিধবা ময়নামতীর মৎস্যস্পর্শ একটু বিচিত্র।
বাদে--পরে।
চারি কলমে রাজাক ইত্যাদি—চারি কথার অর্থাৎ অনায়াসে ও অল্প সময়ে রাজাকে লিখিতে পড়িতে শিখাইল। অথবা চারি শাস্ত্রে শিক্ষা দিল।
আজি কালী করিয়া ইত্যাদি——সাত বৎসর বয়সে রাজার নাম রাখা হইল। যজুর্ব্বেদী ব্রাহ্মণের একাদশ দিবসে এবং ক্ষত্রিয়াদি বর্ণের যথাক্রমে ত্রয়োদশ, ষোড়শ ও একত্রিশ দিনে নামকরণ বিহিত। কিন্তু এদেশে সাধারণতঃ অন্নপ্রাশনের কালেই নামকরণ হইয়া থাকে।
খেতুয়া লঙ্কেশ্বর—কুমিল্লার প্রাচীন নাম কমলাঙ্ক। কমলাঙ্ক সম্পর্কে খেতুয়া লঙ্কেশ্বর হইয়া থাকিবে।
পৃষ্ঠা ৫৩
মাই—মাগধী মা ই আ। প্রাচ্য হি° মা ঈ।
সেঞেরা—বিবাহের টোপর।
দরগুআ—বিবাহের কথাবার্ত্তা পাকা করিয়া প্রকাশ করা উপলক্ষে ওয়া-পান খাওয়ান।
বিবাহ সাজাইল—বিবাহ-সজ্জা করিল।
রদুনাক বিবাও কৈল্লে ইত্যাদি--গোবিন্দচন্দ্র গীতে, ‘উদুনা করিয়া বিভা পুদুনা পাইল দান।’ (পৃ° ৫৮); গোপীচন্দ্রের পাঁচালীতে, ‘মোর ভৈন অদুনারে পাইলা বেভার।’ (পৃ° ৩৩৪)। চারিশত বর্ষ পূর্ব্বে এ প্রদেশেও একটি কন্যা বিবাহ করিয়া আরও ২।১টি যৌতুক স্বরূপ পাওয়া যাইত। নিত্যানন্দের বংশ বিস্তার গ্রন্থে, ‘যৌতুকে লইলাম তোমার কনিষ্ঠ দুহিতা॥’ (পৃ° ১২)। [সূর্য্যদাসের জ্যেষ্ঠা কন্যা বসুধা এবং কনিষ্ঠা জাহ্নবা।] জলপাইগুড়ি অঞ্চলে নাকি এমনই একটা প্রথা প্রচলিত।
বন্দুকের জয় জয় ইত্যাদি—গ্রীয়ারসন সংগৃহীত পাঠে ‘বন্দুকের ধুরা ধুরি ধুমায় অন্ধকার।’
গমন—আগমন অর্থে।
যা যা বলিয়া ইত্যাদি—যাও আমি [এই বিবাহে] সম্মত।
গুয়া পান কাটিবার গেল—গুরা পান কাটা দেশাচার, বিবাহের পূর্ব্বে অনুষ্ঠেয়।
সনিবার দিনা ময়না ইত্যাদি--শনিবারে রাণী গন্ধ মাল্যাদি দ্বারা পুত্রের সংস্কার করাইলেন অথবা গন্ধ মাল্যাদি সংস্কার দ্রব্য কন্যার বাড়ী পাঠাইলেন এবং রবিবারে বিবাহ-সজ্জা করিলেন।
গাছি--ঝাড়। গাছ—অপ° প্রা° গ চ্ছ, গা ছ। অস° ও ও° গ ছ, সিংহলীতে গ ছ বা গ স।
সোনালী চালুন বাতি—বরণ ডালার সোনার প্রদীপ।
পৃষ্ঠা ৫৫
গছি—গাছি দ্র°।
ত্যার—প্রা° তে র হ।
সুর—প্রা° সুং ড; প্রাচ্য হি° সূঁ ড়।
বৈরাতী—আয়ো, আয়তি।
গাবি—প্রা° গ বী, গা বী, গা ঈ। গাভী শব্দ সংস্কৃত নহে। যেমন নৌ>নাব>নায়, তেম্নি গৌ>গাব>গাঅ; স্ত্রী গাঈ। Aspirated it becomes গাভী।
উয়ার—প্রা° অমু (অদস্) শব্দের প্রথমার একবচনে তিন লিঙ্গেই অ হ; উহার উত্তর ষষ্ঠ্যন্ত আ র (ডরি) প্রত্যয় করিয়া অ হা র পদ হয়। এই অহার হইতে উ হা র, ও হা র প্রভৃতি হওয়া সম্ভব।
সুপারি—কেহ কেহ মনে করেন, শব্দটি অতি অল্প দিন হইল বাঙ্গালা ভাষায় গৃহীত হইয়াছে। In 1442 Abdur Razzak in describing the method of eating pān says “The bruise of portion of faupal otherwise called ‘Sipari’ and put it in the mouth.”--Dictionary of Products.
পাক পাড়িতে পাক পাড়িতে ইত্যাদি—হেমাই পাত্র দেশ-বিদেশ ঘুরে গুআ কেটে এসে বিধাতার নির্ব্বন্ধ যাচাই করে দিলে।
রাজা দান পড়িবারে ইত্যাদি—রাজা হরিশ্চন্দ কন্যাদানের মন্ত্র পাঠ করিতে গিয়া......।
রদুনাক নাম থুইলে ইত্যাদি—ছোট বোনকে সঙ্গে দাসী দিয়া বড় অদুনার সম্ভ্রম রক্ষা করা হইল।
পৃষ্ঠা ৫৭
মাঝার—দেশীনামমালাতে ম জ্ ঝ আ র।
ঘিরি—√ঘি র্ (স° ঘ্ন) বেষ্টনে।
বৈদ্য ব্রাহ্মনে—শ্রীযুক্ত বিজয় বাবুর অভিপ্রায়, দক্ষিণ ভারতে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম্মের প্রথম প্রতিষ্ঠাকালে ইঁহারা বৈদিক বৃত্তি অবলম্বন করেন। ৱেল্লাল উপাধিক এই সম্প্রদায় পূর্ব্বাপর পৌরহিত্য পেশা হইলেও রাজাদের অধীনে বিচার ও সৈনিক বিভাগে কর্ম্ম করিতেন। যাঁহারা রাজ সেবা করিতেন না তাঁহারা চিকিৎসা ব্যবসায়ী হইতেন। বেদে অধিকার হেতু তাঁহারা বৈদ্য। কর্ণাট দেশ হইতে আগত ৱেল্লাল বা বৈদ্য-ব্রাহ্মণেরাই এদেশীয় বৈদ্যগণের পূর্ব্বপুরুষ। [History of Bengali Language, pp. 50-53] বৈদ্য এবং ব্রাহ্মণ এ অর্থও হইতে পারে।
ভাট—বংশচরিত কীর্ত্তনকারী, স্তুতি-পাঠক।
বুঝান্তের কাষ্টে—সচীবের আসনে।
হাতে পদ্দ পাএ পদ্দইত্যাদি—রাজ-চিহ্ন।
টলমল—ঝলমল। অদ্ভুতাচার্য্যের আদ্যকাণ্ডে।
আরানি—বড় ছাতা বা পাখা; আড় করে বলিয়া আড়ানি।
লসেক্কর—লস্কর, সেনা। ফা° ল শ্ ক র্।
খাসা মলমল্—খাস মহলমল, personal attendant। আ° খা স অর্থে নিজস্ব, বিশেষ উদ্দেশ্যে রক্ষিত।
পাত্তর—পাত্র, সভাসদ্।
পুব—প্রা° পু ব্ব।
বৈসে—প্রা° ব ই স ই (উপবিশতি)।
পির পয়গম্বর—সাধু ও মহাপুরুষ। ফা° পীর্ এবং পয়গম্বর।
বালা—প্রাচীন বাঙ্গালাতে বালকার্থক বালা শব্দের প্রয়োগ অবিরল। প্রাকৃতপৈঙ্গলে বা লা (বালকঃ) ২।১৪৭।
জোড় বাঙ্গালা—একখানি ঘরের সম্মুখে আর একখানি এরূপ ভাবে নির্ম্মিত হইত যে গৃহদ্বয়ের মধ্যে ব্যবধান থাকিত না। উহা সেকালে ঐশ্বর্য্যের জ্ঞাপক ছিল। গোপীচন্দ্রের পাঁচালীতে ‘জোড় মন্দির’ (পৃ ৩২৪,৩৩৫)।
আশপর্শি—পাশ-পড়সী। বেদের ভাষায় আ শ অর্থে পার্শ্ব এবং প্রা° প ডি বে শ (প্রতিবেশ)। প্রাচ্য হি° প রো স।
গুন--পৈশাচী প্রা°।
কুকিধন্নি—কুক্ষিধারিণী, গর্ভধারিণী।
ওলা ঝোলা—দরদরিত।
ঘাম—প্রা° ঘ ম্ম; পারসিক গ রে ম শব্দ তুল°।
জাবত ব্যারায় কাম—যাবৎ প্রয়োজন। কাম—প্রা° ক ম্ম।
জপ্তে—যাবৎ।
বেসেবার—এখানে মশলার দোকান। বেসবারের মৌলিক অর্থ ঝাল-বাটনা। ‘হরিদ্রা সর্ষপং পিষ্টমার্দ্রকঞ্চ মরীচকং। জীরকং শুষ্কপত্রঞ্চ বেসবারঃ প্রকীর্তিতঃ॥’—ইতি সূদশাস্ত্রম্।
কোচ—বস্ত্রাঞ্চল। ক চ্ছ শব্দ তুল°।
এছিলা—ঈদৃশ।
গাবুরা—যুবক। পূর্ব্বকালে গ র্ভ রা নামে এক প্রকার নৌকা ছিল। গর্ভরার মাঝিরাই গাভুর বা গাবর হইবে। ভৃত্য অর্থেও গাবুর শব্দের ব্যবহার আছে। Eliot সাহেব গবর শব্দে an infidel in general বুঝিয়াছেন।
জোলা—মৌলিক অর্থ মুসলমান তন্তুবায়। তত্ত্ববায়েরা নির্ব্বুদ্ধিতার জন্য প্রসিদ্ধ।
তাহা হইতে নির্ব্বোধ অর্থে প্রযুক্ত। ফা° জো লা হা।
বনুস—স্ত্রী।
পৃষ্ঠা ৭৬
সোনার বউঙ্কে কামাই করে ইত্যাদি—মর্ম্মার্থ, যথেষ্ট উপার্জ্জন করে, কিন্তু অন্ন সংস্থান হয় না। কামাই—কাম-আই। আটে—আঁটে, সংঙ্কুলান হয়।
চিন্তিনি—চিত্রাণী নারীর লক্ষণ,—
প্রমাণ শরীর সর্ব্ব কর্ম্মে স্থির নাভি সুগভীর মৃদুহাসিনী। সুকঠিন স্তন চিকুর চিকণ শয়ন ভোজন মধ্যচারিণী॥ তিন রেখাযুত কণ্ঠ বিভূষিত হাস্য অবিরত মন্দগামিনী। কামিনীর কায় অল্প লোম হয় ক্ষার গন্ধ কয় সেই চিত্রাণী॥
ভবতি রতিরসজ্ঞা নাতি খর্ব্বা ন দীর্ঘা
তিলকুসুমসুনাসা স্নিগ্ধনীলোৎপলাক্ষী।
ঘনকঠিনকুচাঢ্যা সুন্দরী বদ্ধশীলা
সকল গুণবিচিত্রা চিত্রিণী চিত্রবক্ত্রা॥
আগ্গল—প্রথম বা উত্কৃষ্ট।
ভুঞ্জায়—ভোজন করায়।
থাক পরে লবি ইত্যাদি—পয়গম্বরের কথা কি স্বয়ং লক্ষী ইত্যাদি। লবি—নবী, ঈশ্বরের প্রেরিত দূত। আ° ন বী হ্। লক্খি—ধনৈশ্বর্য্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। ব্রহ্মবৈবর্ত্তের মতে সৃষ্টির অগ্রে রাসমণ্ডলস্থিত পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের বাম ভাগ হইতে লক্ষ্মী দেবী উৎপন্ন হন। পুছে—প্রা° পু চ্ছ ই (পূচ্ছতি)।
গিত্তানি—গৃহিনী, কর্ত্রী। কোচ ও রাজবংশী ভাষায় গি র থা নী।
সন্দায় বানে বাড়া—সন্ধ্যাকালে ধান ভানে।
বাশের তলে কান্দে ইত্যাদি—(সন্ধ্যাকালে ধান ভানিলে) লক্ষ্মী দেবী খিন্না হন; কিন্তু (পরিশ্রমী গৃহস্থকে ত্যাগ করিয়া) অন্যত্র যাইতে পারেন না। হাবাতি পাড়া—নিরন্নের পল্লী।
প্রবোধ—পরিচয়, অভিজ্ঞান।
চারি চকরি পুকুর খানি ইত্যাদি—৩৬৪ হইতে ৩৮০ পঙ্তি তত্ত্বজ্ঞান বিষয়ক প্রশ্ন। চারি চকরি পুকুর—বৌদ্ধমতে ক্ষিতি, অপ্, তেজ ও মরুৎ এই ধাতু চতুষ্টয় হইতে বিশ্ব চরাচরের রচনা কল্পিত। প্রাচীনগণের মতে পৃথিবী চতুষ্কোণ। প্রপঞ্চসার তত্ত্বে মহাভূতের অন্যতম ক্ষিতিকে চতুরস্র বলা হইয়াছে। পুকুর—প্রা° পো ক্ খ র। মধ্যে ঝলমল—সাংখ্যাচার্য্যেরা বলেন, ‘জগতের অব্যক্তাবস্থা প্রকৃতি এবং তাহারই ব্যক্তাবস্থা জগৎ।’ বোধ হয় ঝলমল শব্দে এই ব্যক্তাবস্থাই লক্ষিত হইয়াছে।
কোন বিরিখের বোটা ইত্যাদি—আমার নিমিত্ত ও উপাদান কারণ কি? বিরিখ—(বৃক্ষ), যথাক্রমে মন ও তনু। বোটা—প্রা° বে ণ্ট,বো ণ্ট, (বৃন্ত)।
পৃষ্ঠা ৭৭
কেবা আন্ধি কেবা বাড়ি ইত্যাদি—কর্ত্তা এবং ভোক্তা কে? স্বপ্ন ও নিদ্রা কাহাকে বলে? জগতে সমস্তই চঞ্চল, স্থির কোন্টি? গয়াগঙ্গাদি ক্ষেত্রের অবস্থান
কোথায়? নামজপাদির কারণ কি? পর দেবতা কোন স্থানে থাকেন? যোগের প্রধান সহায় কি কি? ক্ষুৎপিপাসাদি শারীরিক চেষ্টা ও তাহার শান্তি কেমন করিয়া হয়? বিনা বাতাসে নড়ে কোনটা? ইত্যাদি। সপ্তহাজার আনল—যাবতীয় তেজ-পদার্থ। হাজার—ফা° হ জা র। নিনড়—অটল, স্থির। বানারসি—বরণা ও নাসী (বা অসি) এই নদীদ্বয়ের মধ্যবর্ত্তী বলিয়া ক্ষেত্রের নাম বারাণসী। প্রা° ৱা ণা র সী; প্রাচ্য হি° ব না র স। তুলসী—এখানে উপাস্য অর্থে প্রযুক্ত মনে হয়। তুলসীর উৎপত্তি সম্বন্ধে বিবিধ পৌরাণিক উপাখ্যান প্রচলিত দেখা যায়। একটি এইরূপ—গোলকে ইনি রাধার সহচরী ছিলেন; পরে শঙ্খচূড় দৈত্যের পত্নী হন। শঙ্খচূড় শ্রীকৃষ্ণ কর্ত্তৃক নিহত হইলে ইনি সহমৃতা হন এবং কৃষ্ণের বরে ইঁহার কেশ হইতে তুলসী বৃক্ষের জন্ম হয়। তদবধি জগতে তুলসীর পূজ়া ও প্রতিষ্ঠা। বড়সি—বড়সি শব্দে নাড়ীত্রয়ের অন্যতম সুযুম্না লক্ষিত হইয়া থাকিবে। সুতা—বায়ু। প্রা° সু ত্ত (সূত্র)। বড়সির ছিপ—মেরুদণ্ড। স° ব ড়ি শী। ফুলতা—ফাতনা; চোখের পারিভাষিক শব্দ। হানে—হইতে। ফুটিক—টুকু বা বিন্দু। পাতা—চোখের পাতা।
দুই বিরিখের একটি ফল ইত্যাদি—পিতার রেত ও মাতার রজে সন্তানের উৎপত্তি এবং মাতৃগর্ভে স্থিতির কথাই ইঙ্গিত করা হইয়াছে।
কলু কলু কথা জাদু ইত্যাদি—বাবা, উত্তম প্রসঙ্গ করিয়াছ; কথার মত কথা বলিয়াছ। রাজা হইলেই সকল বিষয়ে অভিজ্ঞ হওয়া যায় না। রাজাকেও হস্তিপকের পশ্চাতে বসিতে হয়। মাঞ্জা—স° ম জ্জা। মাহুত—প্র° ম হা ম ত্ত (মহামাত্র), অপ° ম হা বঁ ত্তু; প্রাচ্য হি° ম হৌ ত।
টারি টারি—টাঁড়ি টাঁড়ি পাড়ায় পাড়ায়; মানভূম অঞ্চলে ডাঙ্গা অর্থে টাইড শব্দ প্রচলিত।
পৃষ্ঠা ১০৯
খুট—?
সয়াল—সকল।
ডিয়া—ঠোনা।
পৃষ্ঠা ১১০
বৈতরনি নদি—নরকদ্বারস্থিত নদী, এই নদীর বেগ অতি প্রবল, জল অতিশয় তপ্ত ও অতি দুর্গন্ধ এবং ইহা অস্থি, কেশ ও রক্তে পরিপূর্ণ। মৃত্যুর পরে এই নদী পার হইয়া যমভবনে যাইতে হয়।
নদী বৈতরণী নাম দুর্গন্ধা রুধিরাবহা।
উষ্ণতোয়া মহাবেগা অস্থিকেশাতরঙ্গিণী॥
—প্রায়শ্চিত্তবিবেকধৃত জমদগ্নিবচন।
পাপী সকল মৃত্যুর পর এই নদী পার হইবার সময় অশেষ প্রকার কষ্ট পাইয়া থাকে। এই জন্য শাস্ত্রে লিখিত আছে যে, যমদ্বারে অবস্থিত বৈতরণী নদী সুখে সন্তরণ কামনায় মুমূর্ষু ব্যক্তি সবৎসা কৃষ্ণা গাভী দান করিবে। সেই দান-পুণ্য-ফলে মৃত ব্যক্তি এই নদী অনায়াসে পার হইয়া থাকে। ইহা হইতে গাভীর লাঙ্গুল ধরিয়া বৈতরণী পারের কল্পনা।
উড়িষ্যা রাজ্যে প্রবাহিত বৈতরণীও যমদ্বারস্থ তপ্তস্রোতের ন্যায় পাপ মোচনকারিণী এবং পবিত্র তীর্থ বলিয়া গণ্য।
ডারি মাজি—দাঁড়ী মাঝি সহচর শব্দ। চীনারাও বঙ্গদেশের উপর এক সময় কম উপদ্রব করে নাই। যে সকল চীনা নৌকাযোগে বাঙ্গালা আক্রমণ করিত, তাহারা মা ঝি নামে খ্যাত ছিল। কেহ কেহ মনে করেন, বাঙ্গালার নৌকার মাঝি শব্দের উৎপত্তি এইখানে। সাঁওতালদের প্রধানকে মাঝি বলে। সিন্ধী-ভাষায় মা ন্ ঝী শব্দে সাহসী পুরুষ।
মা বাপ জনমনা ছিল যখন আমার জনম হল।
দাদার জনমনা ছিল যখন পাকিল মাথার চুল॥
ভগ্নীর জনমনা ছিল যখন ভাগিনা হল বুড়া।
অনিত্য কুলেতেএকি বিপরীত ন মাতান পিতা খুড়া॥
শ্বশুর শাশুড়ীনা ছিল যখন তখন হয়েছে বউ।
ঘরের ভিতরেবসিয়া রয়েছে ইহা না বুঝয়ে কেউ॥
মাটির জনমনা ছিল যখন তখন করেছি চাস।
দিবস রজনীনা ছিল যখন তখন গণেছি মাস।
পৃষ্ঠা ১২৫
বাস—বাজ, ধ্বনি।
বহু বহু করি—হু হু শব্দে।
করাল—আ° ক রা র্।
চরিৎকার--আচরণ, সিদ্ধাই।
জোগার—প্রা° জো ক্কা র (জয়কার)।
পৃষ্ঠা ১২৬
রহোবন মন্ত্র--পানি-সার মন্ত্র।
নিরাসি সকল—পূর্ব্বে ‘নিরাসী সুকল’ (পৃ° ৮৭)।
তবুনি—তবেই।
ডাহায়—মায়ায়। প্রা° ডা হো (দাহঃ)।
পৃষ্ঠা ১২৭
তুল পরিক্খা—প্রাচীন কালে কি সভ্য কি অসভ্য সকল সমাজেই ক্ষেত্রবিশেষে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে স্বীয় নির্দ্দোষিতা প্রমাণ করিতে কতকগুলি পরীক্ষার অধীন হইতে হইত। স্মৃতিশাস্ত্রে তুলা, অগ্নি, জল প্রভৃতি নয় প্রকার পরীক্ষার উল্লেখ দেখা যায়। সীতার অগ্নি-পরীক্ষা বিশ্ব-বিশ্রুত। চার্লশ (Charles the Fat)-পত্নী রিচার্ডীশ (Richardis)’ এর অগ্নি-প্রবেশ অন্যতম উদাহরণ। চণ্ডীমঙ্গলে ধনপতি সদাগরের নবোঢ়া বধূ খুল্লনাকে এইরূপ পরীক্ষা দিতে হইয়াছিল। এখানে জ্ঞান-পরিচয় উপলক্ষ করিয়া ময়নামতীর পরীক্ষা লওয়া হইতেছে।
নিত্তি—সূক্ষ্ম তুলাদণ্ড। হি° নি ক্ তি।
বানিয়া—প্রা° বা ণি অ, ব ণি অ।
পৃষ্ঠা ১২৮
পোস্ত—আফিম-বীজ। ফা°।
রোজন—ওজন। আ° ৱ জ ন্।
পৃষ্ঠা ১২৯
এক পাক—এক দিক্ বা পাশ।
কোন্ বা ঠাকার—কোথাকার।
হুস্কিয়া—গলিয়া বা ঝরিয়া।
কানা পিক—ভাঙ্গা পাল্লা; পূর্ব্বে ‘পাক’।
পৃষ্ঠা ১৩০
তেউনিয়া—তবেই।
পণ্ডিত খণ্ড
পৃষ্ঠা ১৩২
খোসা—ঘোসা, উৎকোচ।
ছোট রানির অবশ্যাসে—ছোট রাণী গত হইলে।
পৃষ্ঠা ১৩৩
সাইবানি—ফা° সাহেবা হইতে সাহেবানী।
বিচিতে বাইগন—জড়-পড়, বংশ। টী° স° এ বা তি ঙ্গ ণ; মাগধী বং গ ন।
চটকিয়া—তাড়াতাড়ি।
পৃষ্ঠা ১৩৪
সিয়ান—চতুর। স° স জ্ঞা ন; হি° স য়া ন।
আক—অপর।
সুকিয়া—সুখী।
পৃষ্ঠা ১৩৫
শুয়া—শুকপক্ষী। প্রা° সু অ।
এলকার মোনে—আপাততঃ, সম্প্রতি।
পৃষ্ঠা ১৩৬
কানি নঙ্গুল—কনিষ্ঠাঙ্গুলি।
ব্যালকা—বেলার।
চাল—স° শা লা হইতে কি? টী° স°।
কুসাইত—কুযোগ। আ° সা অ ৎ।
ধরম স্মহরিয়া—ধর্ম্ম (দেব)-কে স্মরণ করিয়া।
শালকিরানি—শালপেড়ে।
শালবন—শালবন্ধ।
পেটুকা—পেটী।
চাল্লিশ পাগড়ি—চল্লিশ হাত লম্বা কাপড়ের অথবা ৪০ পেঁচের পাগড়ি। প্রা° চ ত্তা লী সা।
উয়া—রুয়া, মটকা তুলিয়া ধরিবার নিমিত্ত সাঙ্গার উপর স্থাপিত লম্বমান কাঠ, তীর। স° রো প।
বারে—বাহিরে।
পাউচান—পশ্চাৎগমন।
পৃষ্ঠা ১৩৮
হয় নানে—হয় না কেন।
পুথি—প্রা° পো ত্থী।
খনে—প্রাণে।
বেরন—গাছ।
পৃষ্ঠা ১৩৯
তিন কোন পৃথিবি—ভগবান্ ক্ষীরোদ-সাগরে বটপত্রের উপর শয়ান ছিলেন। অপর কিছুই ছিল না। একদা তাঁহার সৃষ্টি করিবার বাসনা জন্মিল। অমনি নাভিকমলের কিঞ্চিৎ মল তুলিয়া ফেলিলেন। তাহা হইতে ক্ষিতির উৎপত্তি হইল। কিন্তু শক্তি ব্যতীত সৃষ্টি করে কাহার সাধ্য, ইহা ভাবিয়া নারায়ণ পুনরায় ললাট ফলক হইতে এক বিন্দু স্বেদ ত্যাগ করিলেন। তাহাতেই আদ্যাশক্তির উদ্ভব। আদ্যার গর্ভে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর তিন পুরুষ-রত্ন জাত এবং যথাক্রমে সৃজন, পালন ও সংহার কার্য্যে নিযুক্ত হইলেন। তখন শক্তি ভগবান্কে কহিলেন, ঠাকুর, আমায় কি অনুমতি করেন, আমি কাহার আশ্রয় লইব? উত্তরে ভববান্ বলিলেন, তোমার তিন জনের যাহাকে অভিরুচি তাহাকে ভজনা কর। তাহা শুনিয়া শক্তি একে একে দেবত্রয়ের নিকট গমন করিলেন। দেবগণ ত্রাসে তিন দিকে পলাইলেন। এই হেতু পৃথিবী ত্রিকোণ।
[ নারদ-সংবাদ ]
ঠাঞতে—দেশ ও কাল উভয়ই লক্ষিত হইয়াছে; then & there।
গব্ভ—প্রা° রূপ।
রাও দিয়া—ডাক দিয়া।
দখল—সঙ্কীর্ণ গণ্ডি, চত্বর। আ° দা খি ল।
কুরসিত—কুর্ণিস?
পৃষ্ঠা ১৪০
সিলাব—সেলাই করিব।
ভুসঙ্গ—ভস্ম।
পৃষ্ঠা ১৪২
মইসাসুরা—হাড়িকাঠ।
বদ্দ—বধ।
পৃষ্ঠা ১৪৩
খিল—প্রা° কী ল অ (কীলক)।
অক্থা—রক্ষা।
মৈসুরা—হাড়িকাঠ।
মরিম বলিয়া—প্রাণপণে।
জোর—ফা°
পৃষ্ঠা ১৪৪
কাতরা—হাড়িকাঠ।
ছচি—ছিচ, শিষ্য।
হেটাউছল—তল-উপর, ওলট-পালট।
নাবালক—ফা° না বা লি গ্।
পৃষ্ঠা ১৪৫
তবনিসে—তবে তো।
মোড়া—বেত্রাসন ভেদ। হি°।
তাজি—আরব দেশীয় ঘোড়া। ফা°।
পৃষ্ঠা ১৪৬
এমন হ্যামন—যা-তা।
কবে—কভু, কখন।
পৃষ্ঠা ১৪৭
হাউক দাউক—অস্তেব্যস্তে।
সত্যরু—প্রকৃত।
থির—প্রা°।
আস্তে—ধীরে। ফা° আ হি স্তা।
শন্য—শূন্য।
পর—প্রহর।
পৃষ্ঠা ১৪৮
ভিক্খা—পুরস্কার অর্থে। প্রা° রূপ।
কাগজ—অপ্রাচীন তান্ত্রিক গ্রন্থে কা গ দ নাম পাওয়া যায়। ইংরাজ ঐতিহাসিকেরা স্থির করিয়াছেন যে, প্রায় খ্রীষ্টীয় ৯৫ অব্দে চীনেরাই অংশুমান পদার্থ হইতে সর্ব্ব প্রথম কাগজ প্রস্তুত করে।
কিন্তু পঞ্চাব-বিজয়ী গ্রীক্সম্রাট আলেক্জেণ্ডারের সেনাপতি নিয়ার্কস লিখিয়া গিয়াছেন যে, তৎকালে তিনি ভারতবর্ষে উত্তম মসৃণ চিক্কণ ও দীর্ঘকালস্থায়ী তুলোট কাগজের অনুরূপ পদার্থ দেখিয়াছিলেন। ফা° কা গ য; ম° কা গ দ।
তোর আমার বড়ুআর ইত্যাদি—ওগো বড় লোকের মেয়ে, তোমার আমার [আর] কিছুই বলিবার থাকিবে না। সাহেব অর্থ
করিয়াছেন, গৃহস্থ লোক তোমার আমার কথায় বিশ্বাস করিবে না। বড়ুআ— সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি।
মাল—ধন, অর্থ। আ°।
দায়—ঋণ।
জাঁয়—যে।
আরতি—আদেশ।
বংস হরির গুয়া ইত্যাদি—বংশহরি গুয়া খাইয়া দাঁত শোলার মত সাদা করিয়াছ। কথা বলিতে দন্ত-বিকাশ হয়, শ্বেত পুষ্প ভ্রমে ভ্রমর আসিয়া গুঞ্জন করিতে থাকে। [কিন্তু সুপারি চিবাইলে দাঁতে কষ ধরিবার কথা এবং স্ত্রীলোকের মধ্যে ‘মিশি’ লইবার প্রথাও ছিল।]
পৃষ্ঠা ১৭৭
তোকে মোকে শোবা করি ইত্যাদি—গৃহপালিত কপোত কপোতীরাও আমাদের অপেক্ষা সুখী। তাহারা কেহ কাহাকে ত্যাগ করিয়া অন্যত্র যায় না। কিন্তু তুমি নীড় শূন্য করিয়া বিদেশে চলিয়াছ। তাহারাও ঠোঁটে ঠোঁটে মিলাইয়া ও শব্দ করিয়া প্রণয় জ্ঞাপন করিতে জানে। আর তুমি! খোপ—বোধ হয় স° গ হ্ব র। ঠোট—প্রা° তোং ডং (তুণ্ডম); ও° থ ণ্ট। তাওঁরা—তাহারা। বাটে—স° √ব ট্ বিভাজনে। নালি—লালা, (এখানে) অধরামৃত। বাকে—বাকম্ বাকম্ শব্দ করে।
এমন পিরিতি ঘর ইত্যাদি—ডা° গ্রীয়ারসনের তর্জ্জমা, The king spoke: How can I break such love in my house? 28. I will take alms from one door, and will go to the door of another; esily will I lose my Kshetri birth and my Baniyā Caste.’ কিন্তু রাণীর উক্তি মনে করিলে উহার নিম্নলিখিত রূপ অর্থ হইবে। কেমন করিয়া এই সুখের সংসার ভাঙ্গিবে? কোথায় দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা মাগিয়া বেড়াইবে? তুমি জাতিতে ক্ষেত্রীকুলের বেণিয়া, কেন হেলায় জাতিটা হারাইবে?’
কাড়িলু কাল রাও—(এমন) নিদারুণ কথা মুখ হইতে বাহির করিলে।
চেঙ্গড়া কালে—শৈশবে। ছা ব ড়া হইতে চেঙ্গড়া আসিতে পারে।
ডাব—দর্ভের ন্যায় বর্ণ বলিয়া বোধ হয় কচি নারিকেলকে ডাব বলা হয়। প্রা° দ র্ব্ভ।
নারিকল—Dravidian ‘'nil'’ (good) ‘'kel'’ in response. [History of Beng. Lang.]
আছিল ফল ইত্যাদি—কর্ত্তব্যের অবহেলনে ৫৬ পুরুষ নরকে গমন করে। স্মৃতি শাস্ত্রেও উহা প্রত্যবায় বলিয়া গণ্য।
পৃষ্ঠা ১৮৪
কাকে। আটে ইত্যাদি—তুল° ‘যার ভাগ্যে যা লিখেছ হে সখা’ ইত্যাদি। নছিব—ফা° ন সী ব। দোস—প্রা°।
ডিঙ্গা—স° দ্রে ণী হইতে বোধ হয়।
ছ্যাক—দোহন কর।
অসুৎ—অশুদ্ধ, অস্পৃশ্য।
থোব—ঝাড়। থোপ শব্দ দ্র°।
ছাড়ঙা হাড়ির ঝ্যাটা—মেথরের ঝাঁটা।
হাট খোলা—হাটের আবর্জ্জনা।
বড় বাঙ্গলা—তীর্থক্ষেত্র (গ্রীয়ারসন)।
পৃষ্ঠা ১৮৫
দলিচা—দাওয়া বা সদর দরজার পার্শ্বস্থ বসিবার স্থান। ফা° দ হ্ লী জ্।
দাও—কাতি। স° দা ত্র।
পাসরিব—ভুলিব। √পা স র (বিসর)।
মহাদেই—মহাদেবী, প্রধানা মহিষী।
রঙ্গ তামাসা—কৌতুক বিলাস, কেলি রহস্য। তামাসা—আ° ত মা শা।
ছাওয়া—প্রা° ও স° ছ ল্লী।
ছাওয়া—প্রা° ছা ব অ।
সুমরনে মরি—নদী স্রোতে ভাসিয়া যাওয়াও স্পৃহনীয়।
মিছা থাকি ইত্যাদি—আমার কেবল কর্ম্ম-ভোগ। গ্রীয়ারসন সাহেব অপর একটি গানের উল্লেখ করিয়া বলেন, এইখানে যেন খেতুয়া লঙ্কেশ্বর সম্পর্কে রাণীদের চরিত্রে কটাক্ষ করা হইতেছে। ভেরন—বাঁকুড়া অঞ্চলে বে রু ন; স° ভ র ণ (বেতন)।