গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক)/গোপালদেব-নামাঙ্কিত প্রস্তরলিপি ১

গোপালদেব-নামাঙ্কিত প্রস্তর-লিপি।

(১)
[বাগীশ্বরী-প্রস্তরলিপি]
প্রশস্তি-পরিচয়।

 ১৮৬২ খৃষ্টাব্দে নালন্দার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে একটি বাগীশ্বরী-মূর্ত্তির পাদপীঠে পংক্তিদ্বয়-বিন্যস্ত এই ক্ষুদ্র প্রস্তর-লিপির সন্ধান প্রাপ্ত হইয়া, কনিংহাম তাহার চিত্র,[১] এবং কিয়ৎকাল পরে,আবিষ্কার-কাহিনী। তাহার [শেষ দুইটি শব্দ ভিন্ন] পাঠ-সংযুক্ত ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশিত করিয়াছিলেন।[২] এই লিপিটি বাগীশ্বরী-মূর্ত্তির পাদপীঠে ক্ষোদিত রহিয়াছে বলিয়া, ইহা “বাগীশ্বরী-লিপি” নামে পরিচিত হইয়াছে। যে প্রস্তরখণ্ডে ইহা উৎকীর্ণ হইয়াছিল, তাহা কলিকাতার যাদুঘরে দেখিতে পাওয়া যায়।

 কনিংহাম সমগ্র লিপিটির পাঠোদ্ধার করিতে পারেন নাই। অপঠিত অংশ মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এম-এ কর্ত্তৃক পঠিত হইবার পর, সমগ্র লিপিটির প্রতিকৃতি এবং উদ্ধৃতপাঠোদ্ধার-কাহিনী। পাঠ শ্রীযুক্ত নীলমণি চক্রবর্ত্তী, এম-এ কর্ত্তৃক প্রকাশিত হইয়াছে।[৩] এই লিপি যে শ্রীমূর্ত্তির পাদপীঠ অলংকৃত করিতেছে, তাহা [শতাধিক বৎসর পূর্ব্বে] ডাক্তার বুকানন কর্ত্তৃক প্রথম আবিষ্কৃত হইয়াছিল, এবং তাঁহার গ্রন্থে[৪] তাহার একটি প্রতিকৃতিও প্রকাশিত হইয়াছিল।

 এই ক্ষুদ্র প্রস্তর-লিপির শেষাংশে [২ পংক্তিতে] “শ্রীবাগীশ্বরী-ভট্টারিকা সুবর্ণ-ব্রীহিসক্তা[?]” এই কয়টি কথা উৎকীর্ণ রহিয়াছে। ইহার প্রকৃত ব্যাখ্যা কি, তৎসম্বন্ধে এখনও কোন মীমাংসাব্যাখ্যা-কাহিনী। হইয়াছে বলিয়া বোধ হয় না। চক্রবর্ত্তী মহাশয় বলেন,—“সুবর্ণব্রীহিসক্তা” এইরুপ বর্ণনায় শ্রীমূর্ত্তিকে সুবর্ণ-পাত্রে মণ্ডিত করিবার প্রথা সূচিত হইয়া থাকিতে পারে।

 এই প্রস্তর-লিপিটি প্রথম গোপালদেবের শাসন-সময়ের লিপি বলিয়াই অনেক দিন পর্য্যন্ত সুপরিচিত ছিল। কিন্তু ইহার অক্ষর প্রথম গোপালদেবের পুত্র ধর্ম্মপালদেবের শাসন-সময়েরলিপি-পরিচয়। প্রচলিত অক্ষরের অনুরূপ বলিয়া বোধ হয় না। তজ্জন্য চক্রবর্ত্তী মহাশয় ইহাকে দ্বিতীয় গোপালদেবের শাসনসময়ের লিপি বলিয়া সিদ্ধান্ত করায়, তাহাই বিদ্বৎসমাজে সমাদর লাভ করিয়াছে।

 ইহাতে পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ পরমেশ্বর শ্রীগোপালদেবের রাজ্যাব্দের প্রথম বৎসরে আশ্বিন মাসের শুক্লাষ্টমীতে লিপি উৎকীর্ণ হইবার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। দ্বিতীয় গোপালদেবেরলিপি-বিবরণ। শাসন-সময়ের বহু পূর্ব্বকাল হইতেই, নালন্দায় পালবংশীয় নরপালগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত ছিল; তাহার পরিচয় দেবপালদেবের শাসন-সময়ের “বীরদেব-প্রশস্তিতে” প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে।


প্রশস্তি পাঠ।

सम्वत् १ आश्विन सुदि ८ परमभट्टारक-महाराजाधिराज-
परमेश्वर-श्रीगोपाल-राजनि श्रीनालन्दायां
श्रीवागीश्वरी-भट्टारिका-सुवर्णव्रीहि-सक्ता


বঙ্গানুবাদ।

(১)

 পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ পরমেশ্বর শ্রীগোপাল রাজার [রাজ্য-] সম্বৎ ১ আশ্বিন শুক্ল পক্ষ ৮ শ্রীনালন্দা [নামক স্থানে]।

(২)

শ্রীবাগীশ্বরী ভট্টারিকা সুবর্ণব্রীহিসক্তা (?)

———):(٭):(———

  1. Archæological Survey Report, Vol. I, plate XIII, 1.
  2. Archæological Survey Report, Vol. III, p. 120.
  3. Journal and Proceedings A. S. B. Vol. IV (New series), p. 105.
  4. Martin’s Eastern India Vol. I, Plate XV, Figure 4.