গ্রহ-নক্ষত্র (১৯১৫)/চাঁদের কলঙ্ক

চাঁদের কলঙ্ক

এখানে চাঁদের আর একটা ফোটোগ্রাফ-ছবি দিলাম। ছবিটা বোধ ছয় শুক্লপক্ষের সপ্তমী বা অষ্টমী তিথিতে উঠানো হইয়াছিল। এজন্য চাঁদের সব অংশ উহাতে দেখিতে পাইবে না।


অষ্টমীর চন্দ্র

 ছবির বামদিকে যে বড় বড় কালো দাগগুলি দেখিতেছ, এগুলি কি বলিতে পার কি? এগুলিই চাঁদের কলঙ্ক। খালি চোখে ইহাদিগকে মোটা রেখার মত দেখায়, কিন্তু দূরবীণ দিয়া দেখিলে কালো


রাত্রে সূর্য্যের আলো চাঁদের উপরে পড়িয়া চাঁদকে উজ্জ্বল দেখাইতেছে

কালো চওড়া দাগের মত দেখায়। চাঁদের কদমগাছ ও তাহার তলাকার বুড়ীর আকৃতি আমরা ঐ সব রেখা দিয়াই কল্পনা করিয়া লই।

 জ্যোতিষীদিগকে এই কালো দাগের কথা জিজ্ঞাসা করিলে তাঁহারা বড় অদ্ভুত জবাব দেন। তাঁহাদের মতে এগুলি চাঁদের জলশূন্য সমুদ্র। গ্রীষ্মকালে পুকুর শুকাইয়া গেলে যেমন এক-একটা গর্ত্তই দেখা যায়, এগুলি সেই রকমের গর্ত্ত। তবে পুকুরের গর্ত্ত যেমন ছোট, চাঁদের সমুদ্রগুলির গর্ত্ত সে রকম নয়। এগুলি খুব গভীর এবং শত শত মাইল জায়গা জুড়িয়া থাকে।

 চাঁদের অপর অংশের তুলনায় এই শুক্‌নো সমুদ্রগুলি কেন এত কালো, এ কথাটা বোধ হয় তোমাদের মনে হইতেছে। জ্যোতিষীরা ইহারও কারণ স্থির করিয়াছেন। সূর্য্যের যেমন নিজেরই আলো আছে, চাঁদের তাহা নাই, একথা তোমাদিগকে আগেই বলিয়া রাখি। একখানা আয়না রৌদ্রে ধরিলে, তাহা যেমন সূর্য্যের আলোতে ঝক্‌মক্ করে, চাঁদে সূর্য্যের আলো পড়ে বলিয়া চাঁদও ঝক্‌মক্ করে। এই রকম ধার-করা আলোতে উজ্জ্বল হইলে চাঁদের যে একটু আলো পৃথিবীর উপরে আসিয়া পড়ে, তাহাই আমাদের কাছে জ্যোৎস্নার আলো হইয়া দাঁড়ায়। সূর্য্য ডুবিয়া গেলে পৃথিবীতে যখন রাত্রি হয়, তখনো চাঁদে কি রকমে সূর্য্যের আলো পড়ে এখানে তাহার একখানি ছবি দিলাম। ইহা দেখিলেই আমার কথাটি বুঝিবে।

 কিন্তু মনে করিয়া দেখ, সূর্য্যের আলোতে ধরিলে সকল জিনিসই আয়নার কাঁচের মত ঝক্‌মক্ করে না। একখানা শাদা রঙ্-করা কাঠ রৌদ্রে ফেলিয়া রারিলে যতটা উজ্জ্বল দেখাইবে, কালো রঙ্-করা কাঠ ততটা দেখাইবে না॥ চাঁদের সমুদ্রগুলির রঙ্ কেন তাহার পাহাড়-পর্ব্বতের চেয়ে কালো দেখায় এখন তোমরা বুঝিরে। চাঁদের শুষ্ক সমুদ্রগুলির তলায় এমন কতকগুলি জিনিস জমাট বাঁধিয়া আছে যে, তাহা কালো পাথর বা কালো রঙ্-করা কাঠের মত। কাজেই সূর্য্যের আলো পাইলে তাহা ঝক্‌মক্ করে না। এই জন্যই চাঁদের উঁচু স্থলভাগের তুলনায় সমুদ্রের তলাগুলোকে কালো দেখায়।