গ্রহ-নক্ষত্র (১৯১৫)/পৃথিবীর মৃত্যুভয়
পৃথিবীর মৃত্যুভয়
চাঁদ মরিয়াছে তাহাতে আমাদের বিশেষ ক্ষতি নাই, কিন্তু দিনে দিনে তাপ ত্যাগ করায় পৃথিবীরও ভিতর পর্য্যন্ত যে ক্রমে ঠাণ্ডা হইয়া আসিতেছে, ইহাই আমাদের ভয়ের কারণ। চাঁদের যেমন মৃত্যু হইয়াছে, পৃথিবীরও যে একদিন সেই রকমেই মৃত্যু হইবে, তাহা নিশ্চিত। দিনে দিনে পৃথিবী সেই মৃত্যুর দিকে চলিয়াছে।
এখনো পৃথিবী ভিতরে গরম আছে, কিন্তু তাহার উপরকার অনেক আগ্নেয় পর্ব্বতই নিভিয়া গিয়াছে, দুই চারিটি মাত্র জাগিয়া আছে। কিন্তু কিছু দিন পরে পৃথিবীর সমস্ত দেহ ঠাণ্ডা হইয়া যাইবে এবং আগ্নেয় পর্ব্বতও নিভিবে। পৃথিবীর টানে এখন চাঁদের একটা দিকই যেমন পৃথিবীর দিকে থাকে, মৃত্যুর পূর্ব্বে সেইরকম পৃথিবীরও একটা দিক সূর্য্যের পানে চিরদিনের জন্য তাকাইয়া থাকিবে। একদিকে সূর্য্যের আলো ও তাপ অবিরাম পড়িতে থাকিবে, অপর দিক চিরদিনের জন্য অন্ধকারে ডুবিয়া থাকিবে। তথন পৃথিবীতে জল বাতাস খুঁজিয়া মিলিবে না এবং গাছপালা পশুপক্ষী ও মানুষের চিহ্নও ধরাতলে থাকিবে না। থাকিবে কেবল শুষ্ক বড় বড় পাহাড়-পর্ব্বত এবং জলহীন সমুদ্রের গভীর গর্ত্তগুলি।
চাঁদ মরিয়া গিয়া আমাদের পৃথিবীকে যে মৃত্যুর ভয় দেখাইতেছে তাহা সত্য, কিন্তু ইহাতে তোমাদের ভয় পাইবার কিছুই নাই। কারণ কত হাজার হাজার বৎসর পরে এই মৃত্যু আসিয়া পৃথিবীকে গ্রাস করিবে তাহা হিসাব করিয়া আজও ঠিক করা যায় নাই। তবে মৃত্যু মিথ্যা হইবার নহে,—একদিন তাহা আসিবেই আসিবে।