গ্রহ-নক্ষত্র (১৯১৫)/সূর্য্য
সূর্য্য
একা সূর্য্য মাঝে দাঁড়াইয়া বুধ শুক্র পৃথিবী ইত্যাদি ছোট-বড় আট্টি গ্রহকে নিজের চারিদিকে ঘুরাইতেছে। ইহা দেখিয়াই আমরা মনে ভাবিয়া লইতে পারি, সূর্য্য কম জিনিস নয়। কোলের কাছে যে বুধ গ্রহটি আছে, তাহাকে টানিয়া শাসনে রাখা সহজ। কিন্তু দুই শত আশী কোটি মাইল তফাতে, নেপ্চুন্ নামে যে গ্রহটি রহিয়াছে, তাহাকেও টানিয়া ঘুরাইতে থাকা বড় কম কথা নয়।
সত্যই সূর্য্য অতি প্রকাণ্ড জিনিস। আমাদের পৃথিবী যে কত বড় তোমরা তাহা জান। সেইরকম তেরো লক্ষ পৃথিবী জোড়া দিলে তবে সূর্য্যকে নির্ম্মাণ করা যায়। মনে কর, কুমারের দোকানে ফর্মাইস্ দিয়া একটা মাটির জালা তৈয়ার করানো গেল। ইহার ভিতরকার ফাঁক্ সব জায়গাতেই যেন দেড় হাত। এখন যদি এই জালাকে সূর্য্য বলিয়া মনে করা যায়, তাহা হইলে আমাদের পৃথিবী হইয়া দাঁড়ায় একটা ছোট মটরের মত। এই রকম জালায় কত মটর রাখা যায় মনে করিয়া দেখ। হয় ত সেই মটরের ডালে তোমাদের বাড়ীর চার পাঁচটি লোকের এক বৎসরের খাওয়াই চলিয়া যাইবে। সূর্য্য যদি একটা বড় জালা হয়, তবে আমাদের পৃথিবী হয় একটা ছোট মটর, এখন ভাবিয়া দেখ সূর্য্য কত বড়!
আর একটা হিসাবের কথা বলি। পৃথিবী যতই বড় হউক, তাহাকে ঘুরিয়া আসা আজকাল শক্ত নয়। কলিকাতা হইতে জাহাজে বাহির হইয়া ভারত মহাসাগর পার হওয়া গেল; তার পরে সুয়েজ খালের ভিতর দিয়া ও ভূমধ্য-সাগর অতিক্রম করিয়া ইংলণ্ডের কাছে এট্লাণ্টিক্ মহাসাগরে পড়া গেল। তার পরে আমেরিকা পার হইয়া প্রশান্ত মহাসাগরের জাপান চীন ইত্যাদি ছাড়িয়া আবার কলিকাতায় পৌঁছানো গেল। পৃথিবীকে বেষ্টন করিয়া অনেকেই আজকাল এই রকমে ভ্রমণ করেন। অবশ্য জাহাজে করিয়া যাইতে সময় বেশি লাগে। মনে কর, পৃথিবী ঘিরিয়া একটা প্রকাণ্ড রেলের লাইন গিয়াছে এবং আমরা সেই লাইনের যেন একটা ডাক-গাড়ীতে চাপিয়াছি। গাড়ী কোনো ষ্টেশনে না থামিয়া যেন ঘণ্টায় পঞ্চাশ মাইল বেগে দিবারাত্রি হু হু করিয়া চলিয়াছে। এ রকমে পৃথিবী ঘুরিয়া আসিতে কত সময় লাগে বলিতে পার কি? আমরা হিসাব করিয়া দেখিয়াছি, তিন সপ্তাহের অর্থাৎ একুশ দিনের বেশি সময় লাগে না।
এখন মনে কর, যেন আমাদের সূর্য্যকে ঘিরিয়াও ঐ রকম একটা রেলের লাইন আছে এবং আমরা কয়েক জন তাহারি এক ডাকগাড়ীতে চাপিয়া বসিয়াছি। গাড়ী বাঁশী বাজাইয়া হু হু করিয়া অবিরাম দিনরাত্রি চলিতে লাগিল। আমরা কত দিনে সূর্য্যের উপরে একবার বেড় দিয়া চলিয়া আসিব বলিতে পার কি? আমরা ইহারো একটা হিসাব করিয়া দেখিয়াছি। গাড়ীখানা ঠিক সাত বৎসর ধরিয়া দিবারাত্রি না চলিলে সূর্য্যকে বেড় দিতে পারিবে না, অর্থাৎ আমাদের সাত বৎসরের খাবার ও কাপড়-চোপড় ডাকগাড়ীর পিছনের একখানি মাল-গাড়ীতে বোঝাই দিয়া তবে যাত্রা আরম্ভ করিতে হইবে। পৃথিবীর উপর দিয়া ঘুরিয়া আসিতে কুড়ি একুশ দিন লাগে, আর সূর্য্যের উপর দিয়া ঘুরিয়া ফিরিতে সাত বৎসর লাগে! ভাবিয়া দেখ পৃথিবী কত ছোট এবং সূর্য্য কত বড়!
আমরা কিন্তু এত বড় সূর্য্যকেও পৃথিবী হইতে একখানি রেকাবির মত দেখি। কাজেই বুঝা যাইতেছে, সূর্য্য পৃথিবী হইতে অনেক দূরে আছে। অনেক দূর হইতে দেখিলে, সব জিনিসকেই ছোট দেখায়। খুব বড় ঘুঁড়িতে শক্ত সূতা বাঁধিয়া যখন উড়ানো যায়, তখন সেটি কত ছোট দেখায় দেখিয়াছ কি? বোধ হয় তাহা যেন তোমার এই বইখানির মত ছোট। কিন্তু নীচে নামাইয়া দেখিলে বুঝা যায়, ঘুঁড়ি কত বড়। তাই তোমাদের বলিতেছিলাম, সূর্য্য যে অনেক দূরে আছে, তাহা উহার রেকাবির মত ছোট আকারটি দেখিলেই বুঝা যায়। অনেক দূরে না থাকিলে, এত বড় প্রকাণ্ড জিনিসটাকে কেন এত ছোট দেখাইবে?
যাহা হউক, জ্যোতির্ব্বিৎ পণ্ডিতেরা পৃথিবী হইতে সূর্য্যের দূরত্ব স্থির করিয়াছেন। তাঁহাদের মোটামুটি হিসাবে এই দূরত্বের পরিমাণ নয় কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল। সূর্য্য পৃথিবী হইতে কত দূরে আছে বুঝিলে কি? এক শতের দশ গুণে হাজার হয়, হাজারের এক শত গুণে এক লক্ষ হয় এবং এক লক্ষের এক শত গুণে এক কোটি হয়। আমাদের কাছ হইতে সূর্য্য এই রকম নয় কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল দূরে আছে। এবার বুঝিলে কি?—বোধ হয় বুঝিলে না। পৃথিবীতে আমরা দুই মাইল, চার মাইল, না হয় হাজার মাইল লইয়া হিসাব করি। এখান হইতে ইংলণ্ড মোটে দশ হাজার মাইল দূরে, তাই শুনিয়াই আমরা মনে ভাবি, এত দূর দেশ বুঝি আর নাই। কাজেই নয় কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল যে কত দূর, আমরা তাহা কল্পনাই করিতে পারি না।
আচ্ছা, একটা উদাহরণ দিয়া সূর্য্যের দূরত্বটা বুঝাইবার চেষ্টা করা যাউক। আগেকার মত মনে কর, যেন আমাদের পৃথিবী হইতে একটা রেলের লাইন শূন্যের উপর দিয়া আকাশ ভেদ করিয়া সূর্য্যে পৌঁছিয়াছে এবং এই লাইনে যেন একটা গাড়ী সূর্য্যে পৌঁছিবার জন্য ঘণ্টায় ত্রিশ মাইল বেগে দিবা-রাত্রি হুস্ হুস্ করিয়া চলিয়াছে। কত দিনে ইহা সূর্য্যে গিয়া পৌঁছিবে, এখন বলিতে পার কি?—আমরা হিসাব করিয়া দেখিয়াছি, এই রকমে সূর্য্যে পৌঁছিতে গেলে তিনশত পঞ্চাশ বৎসর রেলের গাড়ীতে থাকিতে হইবে, অর্থাৎ মোগল বাদসাহ আকবর যে দিন সিংহাসনে আরোহণ করেন, সেই দিন যাত্রা সুরু করিলে গাড়ীখানা সম্রাট পঞ্চম জর্জ্জের দিল্লীতে অভিষেকের পূর্ব্বে কখনই সূর্য্যে পৌঁছিতে পারিবে না। কি ভয়ানক দূরত্ব!
কিন্তু এত দূরে থাকিয়াও ত সূর্য্যের তেজ কম নয়! চৈত্র-বৈশাখ মাসে সূর্য্যের তেজের কথা মনে কর দেখি;—সূর্য্য যেন তখন আগুন বৃষ্টি করিতে থাকে এবং তার আলোই বা কত!
চাঁদকে আমরা দূর হইতে সূর্য্যের মতই বড় দেখি, কিন্তু চাঁদ ত এত আলো দেয় না এবং তার কিরণও ত গরম নয়। এই সব দেখিলে মনে হয় না কি যে সূর্য্যটা আগুন দিয়া গড়া?
সত্যই সূর্য্যকে আগুনে ঘিরিয়া আছে। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বৎসর ধরিয়া এই প্রকাণ্ড আগুন সূর্য্য-লোকে জ্বলিতেছে। তাহারি তাপ আমরা এত দূরে পৃথিবীতে থাকিয়া বুঝিতে পারিতেছি এবং তাহারি আলোক আমাদের নিকট আসিয়া পৌঁছায় বলিয়া, আমরা পথ ঘাট মাঠ দেখিয়া চলিয়া-ফিরিয়া বেড়াইতেছি। ভাবিয়া দেখ, সেই প্রকাণ্ড সূর্য্যকে ঘিরিয়া কি আগুনই জ্বলিতেছে! আমাদের রান্নাঘরের উননে যখন আগুন জ্বলে, তখন তাহার তাপ হয় ত দু-হাত কি দশ-হাত তফাৎ হইতে বুঝিতে পারি। কোটি কোট মাইল দূরের তাপ যখন আমাদের কাছে এত অধিক বলিয়া বোধ হয়, তখন সূর্য্যের উপরকার সেই তাপ কত বেশি, মনে মনে ভাবিয়া দেখ।
কিছু না জ্বলিলে আগুন হয় না। উননে কাঠ প্রভৃতি পুড়িলে তাপ জন্মে এবং তাপে কাঠের ছোট ছোট অণু কয়লা ও নানা রকম গ্যাস্ জ্বলিয়া লাল হয়, তাই উননের কাঠ বা কয়লা আলো ও তাপ দেয়। বিদ্যুতের ল্যাম্পের ভিতরে যে একটা খুব সরু তার থাকে, তাহার ভিতর দিয়া বিদ্যুৎ গেলেই সেটা গরম হয় এবং সেই গরমে তাহা লাল হইয়া বা সাদা হইয়া জ্বলিতে থাকে। ইহাতেই আমরা বিদ্যুতের ল্যাম্প্ হইতে আলো পাই এবং তাহার কাছে হাত রাখিলে তাপ পাই।
ইহাই যদি ঠিক হয়, তাহা হইলে সূর্য্যে কি জ্বলিতেছে বলিতে পার কি?—জ্যোতির্ব্বিৎ পণ্ডিতেরা ইহার উত্তর দিয়াছেন। তাঁহারা স্থির করিয়াছেন যে, আমাদের পৃথিবীর উপরে যেমন মাটি পাথর বালু কাঁকর আছে, সূর্য্যে তাহার কিছুই নাই। তাহাতে আছে কেবল বাষ্প; এই বাষ্পই জ্বলিয়া এত তাপ ও আলোক দেয়। সমস্ত সূর্য্যটা এই রকম বাষ্প দিয়া প্রস্তুত বলিয়া, সূর্য্য পৃথিবীর চেয়ে যত গুণ বড়, উহার ওজন তত গুণ অধিক নয়। সূর্য্য যে বাষ্প দিয়া প্রস্তুত, তাহা আনিয়া যদি একটা হাঁড়ির মধ্যে রাথিয়া ওজন কর এবং তার পরে সেই হাঁড়ি খালি করিয়া তাহাতে আমাদের পৃথিবীর মাটি লইয়া ওজন কর, তাহা হইলে দেখিবে পৃথিবীর মাটির ওজন সূর্য্যের বাষ্পের ওজনের প্রায় চারিগুণ বেশি হইয়াছে। সূর্য্য দূরে থাকিয়া এত জাঁক-জমক দেখাইলেও, তাহার দেহটা খুব হাল্কা!
সূর্য্যের দেহ জ্বলন্ত বাষ্প দিয়া গড়া, কিন্তু তাই বলিয়া যেন মনে করিও না, আমাদের আকাশের বাতাস যেমন বাষ্প, সেই-রকম বাষ্প দিয়া সূর্য্যের শরীরখানি গড়া হইয়াছে। বাষ্পকে ছোট পাত্রে আট্কাইয়া চাপ দিলে তাহা আকারে ছোট হইয়া যেমন খুব ঘন হয়, সূর্য্যের গোলাকার যে অংশটাকে আমরা চোখে দেখিতে পাই, তাহা ঐ-রকম ঘন বাষ্প দিয়াই প্রস্তুত। মাটি পাথর বালু কাঁকর জমাট বাঁধিয়া পৃথিবীকে যেমন একটা গোলাকার বস্তু করিয়া তুলিয়াছে, খুব ঘন জ্বলন্ত বাষ্প একত্র হইয়া সেই রকমে সূর্য্যকে একটা ভয়ানক বড় গোলাকার বস্তুর মত করিয়া গড়িয়াছে।
কেবল মাটি পাথর বালু ও কাঁকর লইয়াই পৃথিবী নয়, পৃথিবীর ঠিক উপরে প্রায় পঁচিশ ক্রোশ পর্য্যন্ত বাতাস আছে। ইহাকেও পৃথিবীর অংশ বলিয়া ধরা উচিত, কারণ পৃথিবীর গায়ে লাগিয়া থাকিয়া ইহা পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গেই ঘোরা-ফেরা করে। পৃথিবী বায়ুরাশিকে এমন জোরে নিজের চারিদিকে টানিয়া রাখে যে, কোনোক্রমে একটুও বাতাস পৃথিবী ছাড়িয়া পলাইতে পারে না। কাজেই আমাদের আকাশের বাতাসকে কখনই পৃথিবী-ছাড়া জিনিস বলা যায় না।
আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কি-রকম, তাহা তোমাদের জানা আছে। বাতাস জিনিসটা একেবারে স্বচ্ছ; কাঠ পাথর ইট্ প্রভৃতি জিনিস যেমন আমাদের দৃষ্টি আটকাইয়া দেয়, বাতাস সে রকমে দৃষ্টি আটকায় না। কাঠের ভিতর দিয়া বা ইটের দেওয়ালের ভিতর দিয়া আমরা কোনো জিনিস দেখিতে পাই না, কিন্তু বায়ুর ভিতর দিয়া সব জিনিসই দেখিতে পাই। এই জন্যই চন্দ্রসূর্য্যের আলো ও নক্ষত্রদের আলো পঁচিশ ক্রোশ গভীর বায়ুর আবরণ ভেদ করিয়া আমাদের পৃথিবীর উপরে আসিয়া পড়ে। কিন্তু বাতাস লইয়াই আমাদের বায়ুমণ্ডল নয়, ইহার মধ্যে আবার মেঘ আছে। মেঘ জিনিসটা বাতাসের মত স্বচ্ছ নয়। তাই মেঘ উঠিলে চন্দ্র সূর্য্য নক্ষত্র সকলি ঢাকা পড়িয়া যায়। তার পরে আবার সেই মেঘে বৃষ্টি হয়; বাতাস ছুটাছুটি করিয়া ঝড় তোলে। সূর্য্যের চারিদিকেও আমাদের বায়ুমণ্ডলের মত বাষ্পের আবরণ আছে। কিন্তু পৃথিবীকে ঘিরিয়া যেমন একটা আবরণ রহিয়াছে, সূর্য্যকে ঘিরিয়া সেই-রকম তিনটা আবরণ আছে। এই তিনটা লইয়াই সূর্য্যের আকাশ। আমাদের পৃখিবী সূর্য্যের মত জ্বলে না, ইহার উপরটা বেশ ঠাণ্ডা এই জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলও ঠাণ্ডা। কিন্তু সূর্য্য দিবারাত্রি জ্বলিতেছে, এই জন্য ইহার বাষ্পের তিনটা আবরণও জ্বলিয়া-পুড়িয়া সর্ব্বদা তাপ ও আলোক দিতেছে।
দূরবীণ দিয়া সূর্য্যকে দেখিলে ইহার প্রথম আবরণটা স্পষ্ট দেখা যায়। পৃথিবীর বাষ্প-আবরণকে আমরা যেমন বায়ুমণ্ডল বলি, জ্যোতিষীরা সূর্য্যের এই প্রথম বাষ্প-আবরণকে আলোক-মণ্ডল (Photosphere) বলেন। সূর্য্যের যত আলো এই আলোক-মণ্ডল হইতে আসিয়া আমাদের কাছে পৌঁছায়। আমাদের নদী-সমুদ্রের জল যেমন বাষ্প হইয়া আকাশের উপরে উঠে এবং সেখানে ঠাণ্ডা হইয়া মেঘ উৎপন্ন করে, জ্যোতিষীরা বলেন, সূর্য্যের আলোকমণ্ডল ঐ মেঘেরই মত কিছু। সূর্য্যের দেহের জ্বলন্ত বাষ্প উপরে উঠিয়া একটু জমাট বাঁধিয়া গেলে আলোক-মণ্ডলের সৃষ্টি হয়।
কিন্তু আমাদের মেঘ যেমন আলো দেয় না এবং তাপও দেয় না, সূর্য্যের আকাশের মেঘ সেই-রকম নয়। উহা সর্ব্বদাই উজ্জ্বল থাকে এবং খুব তাপ দেয়। সূর্য্যের আলোক-মণ্ডলে যে মেঘের মত জিনিসই অধিক আছে, দূরবীণ দিয়া দেখিলে তাহা বুঝা যায়। দূরবীণে আলোক-মণ্ডলের সকল অংশকে সমান উজ্জ্বল দেখায় না। ড্রয়িং কাগজকে যেমন দানা-দানা উঁচু-নীচু দেখায়, সূর্য্যের আলোক-মণ্ডলকে দেখিতে কতকটা সেই রকম; জ্বলন্ত মেঘগুলি সূর্য্যের আকাশে ভাসিয়া ভাসিয়া ঐ রকম উজ্জ্বল দানাগুলির সৃষ্টি করে।
আমাদের বায়ুমণ্ডলের বড় বড় ঝড়ে কত গাছ উল্টাইয়া যায়, কত বাড়ী পড়িয়া যায়, তাহা তোমরা দেখিয়াছ। সূর্য্যের আলোক-মণ্ডলেও প্রায়ই ঝড় হয়। লক্ষ লক্ষ মাইল ব্যাপিয়া এই ঝড় পনেরো দিন, কুড়ি দিন, কখনো কখনো এক মাস ধরিয়া চলিতে থাকে। আগুনের মত জ্বলন্ত বাষ্পরাশি এই রকমে আলোড়িত হইয়া সূর্য্য-লোকে কি ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড উপস্থিত করে, মনে করিয়া দেখ।