চয়নিকা (১৯৪১)/সোনার তরী
সোনার তরী
গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা।
কুলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা ধান কাটা হোলো সারা,
ভরা নদী ক্ষুর-ধারা খর-পরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।
একখানি ছোটো ক্ষেত আমি একেলা,
চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা তরুছায়ামসীমাখা
গ্রামখানি মেঘ-ঢাকা প্রভাত বেলা।
এ পারেতে ছোটো ক্ষেত আমি একেলা।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে।
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা-পালে চ’লে যায়, কোনোদিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায় ভাঙে দু-ধারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ওগো তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে।
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও, যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কৃূলেতে এসে।
যত চাও তত লও তরণী ’পরে।
আর আছে?—আর নাই, দিয়েছি ভ’রে।
এতকাল নদীকূলে যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে থরে বিথরে,
এখন আমারে লহ করুণা ক’রে।
ঠাই নাই, ঠাই নাই। ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি’।
শ্রাবণ-গগন ঘিরে’ ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি’,
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।