এড্রিয়ন

হলণ্ডের অন্তঃপাতী ইউট্রিক্ট নগরে এড্রিয়নের জন্ম হয়। ইঁহার পিতা অতি দুঃখী ছিলেন; নৌকানির্মাণের ব্যবসায় করিয়া, কষ্টে সংসারনির্বাহ করিতেন। তাঁহার নিতান্ত ইচ্ছা, পুত্ত্রকে ভাল করিয়া লেখা পড়া শিখান। কিন্তু, লেখা পড়ার ব্যয় নির্বাহ করেন, এমন সংস্থান ছিল না। লুবেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে কতকগুলি বালককে বিনা ব্যয়ে শিক্ষা দিবার নিয়ম ছিল, সুযোগ করিয়া তিনি এড্রিয়নকে তথায় প্রবিষ্ট করিয়া দিলেন।

 এই স্থলে অধ্যয়নকালে, এড্রিয়নের রাত্রিতে প্রদীপ জ্বালিয়া পড়িবার সঙ্গতি ছিল না। কিন্তু, লেখা পড়ায় অত্যন্ত অনুরাগ ছিল বলিয়া, তিনি আলস্যে কালহরণ করিতেন না। গিরজার দ্বারে ও পথের ধীরে সমস্ত রাত্রি আলোক জ্বলিত। তিনি পুস্তক লইয়া তথায় গিয়া, সেই আলোকে পাঠ করিতেন। এড্রিয়ন, এইরূপ কষ্টে থাকিয়াও কেবল আন্তরিক যত্নের গুণে অসাধারণ বিদ্যা উপার্জ্জন করিলেন এবং পাদরির কর্ম্মে নিযুক্ত হইলেন। উত্তরোত্তর তাঁহার পদবৃদ্ধি হইতে লাগিল। বিদ্বান্ ও সচ্চরিত্র বলিয়া, তিনি স্পেনের রাজকুমারের শিক্ষকতাকার্ষ্যে নিযুক্ত হইলেন, এবং সেই রাজকুমার সম্রাট্ হইলে পর, তাঁহার সহায়তায়, পরিশেষে পোপের সিংহাসনে অধিরূঢ় হইলেন।

 লেখা পড়ায় আন্তরিক যত্ন থাকার কি অনির্বচনীয় গুণ! দেখ, যে ব্যক্তি অতি দুঃখীর সন্তান; যাঁহার রাত্রিতে প্রদীপ জ্বালিয়া পড়িবার সঙ্গতি ছিল না; সেই ব্যক্তি কেবল আন্তরিক ষত্ন ছিল বলিয়া, কেমন অসাধারণ বিদ্যা উপার্জন করিয়াছিলেন, এবং সেই অসাধারণ বিদ্যার বলে কেমন উচ্চ পদে অধিরূঢ় হইয়াছিলেন।