চরিতাবলী/উইলিয়ম পষ্টেলস
উইলিয়ম পষ্টেলস
ফ্রান্সের অন্তঃপাতী মর্ম্মণ্ডি প্রদেশে ডলেরি নামে গ্রাম আছে। পষ্টেলস সেই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একে অতি দুঃখীর সন্তান; তাহাতে আবার নিতান্ত শৈশব অবস্থায় পিতৃবিয়োগ হয়; সুতরাং, ইঁহার প্রতিপালনের অথবা লেখা পড়া শিখিবার কোন উপায় ছিল না। যাহা হউক, সুযোগমতে কিঞ্চিৎ শিক্ষা করিয়া, ইনি লেখা পড়ায় এমন অনুরক্ত হইয়াছিলেন যে, পুস্তক লইয়া পড়িতে বসিলে ক্ষুধা তৃষ্ণ কিছুই থাকিত না; তিনি আহারের সময় আহার করিতে ভুলিয়া যাইতেন। কিন্তু, দুঃখীর সন্তান বলিয়া, ভাল করিয়া লেখা পড়া শিখিবার সুবিধা হয় না। পারিস নগরে গেলে, লেখা পড়ার সুবিধা হইতে পারিবেক, এই ভাবিয়া তিনি পারিস যাত্রা করিলেন।
দুর্ভাগ্যক্রমে পথে দস্যুদলে আক্রমণ করিল, সঙ্গে যা কিছু ছিল, সমুদয় কাড়িয়া লইল এবং অত্যন্ত প্রহার করিল। শরীরে এত আঘাত লাগিয়াছিল যে, তাঁহাকে এক হাঁসপাতালে গিয়া আশ্রয় লইতে হইল। তিনি তথায় দুই বৎসর থাকিয়া সুস্থ হইলেন এবং সুস্থ হইয়া পুনরায় পারিস যাত্রা করিতে উদ্যত হইলেন। কিন্তু, কি খাইয়া ও কি পরিয়া পারিস যান, তাহার কোন ঠিকানা ছিল না। সেই সময়ে ক্ষেত্রের শস্য পাকিয়া উঠিয়া ছিল। শস্য কাটিবার নিমিত্ত, অনেকের ঠিকা লোক নিযুক্ত করিবার আবশ্যকতা দেখিয়া, তিনি ঐ ঠিকা কর্ম্ম করিতে লাগিলেন; এবং কয়েক দিন কর্ম্ম করিয়া, পাথেয়ের সংস্থান ও পরিধেয় বস্ত্র সংগ্রহ পূর্ব্বক পারিস যাত্রা করিলেন। তথায় উপস্থিত হইয়া, তিনি লেখা পড়া শিখিবার ভাল সুযোগ করিতে পারিলেন না; পরিশেষে, অন্য কোন উপায় না দেখিয়া, এক বিদ্যালয়ে পরিচারক নিযুক্ত হইলেন। এখানে থাকিলে লেখা পড়ার অনেক সুবিধা হইবেক, এই ভাবিয়া তিনি ঐ নীচ কর্ম্মে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। ফলতঃ, তিনি ভাল করিয়া লেখা পড়া শিথিবার নিমিত্ত এত উৎসুক ছিলেন যে, ঐ নীচ কর্ম্ম পাইয়াও সৌভাগ্য জ্ঞান করিয়াছিলেন। তিনি যে কর্ম্মে নিযুক্ত হইলেন, তাহাতে অবসর পাওয়া দুর্ঘট। অত্যল্পমাত্র যে অবসর পাইতেন, তাহাতেই তিনি কিছু কিছু শিক্ষা করিতেন।
কিন্তু, লেখা পড়ায় আন্তরিক যত্ন থাকার এমনই গুণ যে, এই ব্যক্তি ক্রমে ক্রমে এক জন অতি প্রধান পণ্ডিত হুইয়া উঠিলেন। তাঁহার অসাধারণ বিদ্যার বিষয় ফ্রান্সের অধিপতি প্রথম ফ্রান্সিসের গোচর হইলে, তিনি তাঁহাকে, আরবী পারসী প্রভৃতি পুস্তক সংগ্রহের ভার দিয়া, লিবাণ্ট প্রদেশে প্রেরণ করিলেন। তিনি তদ্বিষয়ে সবিশেষ বিবেচন ও নৈপুণ্য প্রদর্শন করাতে, প্রধান রাজমন্ত্রী তাঁহার প্রতি অতিশয় সন্তুষ্ট হইলেন। তিনি, লিবাণ্ট হইতে প্রত্যাগমন করিয়া, ঐ রাজ মন্ত্রীর অনুগ্রহে, এক অতি প্রধান পদে নিযুক্ত হইলেন।