চিঠিপত্র (দশম খণ্ড, ১৯৬৭)/দীনেশচন্দ্র সেনকে লিখিত/১৫

১৫

[অক্টোবর ১৯০৩]

ওঁ

প্রিয়বন্ধুবরেষু

 আপনার লেখাগুলি ভাল করিয়া পড়িয়া আমার পেন্সিলে লেখা মন্তব্যসহ আপনার কাছে পাঠাইয়া দিয়াছি। আজ দ্বিপেন্দ্রনাথ কলিকাতায় গেলেন তাঁহারই হাতে দিলাম— আশা করি যথাসময়ে হস্তগত হইতে কোন বিলম্ব হয় নাই।

 লক্ষ্মণ ভরত কৌশল্যা, প্রবন্ধগুলির মধ্যে সর্ব্বোত্তম হইয়াছে। [তাহার] পরে যথাক্রমে সীতা ও [রাম] এবং দশরথ ক্লাসের মধ্যে [সর্ব্ব] নিম্নে।

 লক্ষ্মণ, ভরত কৌশল্যা পাঠকের চিত্তকে অভূতপূর্ধ্বভাবে আঘাত করিতেছে। পূর্ব্বে তাহাদের প্রতি আমাদের যে ভাবটি ছিল তাহা ঘনীভূত এবং অনেকাংশে নবীভূত হইয়াছে। সীতা ও রাম সম্বন্ধে সেরূপ হয় নাই। সীতা ও রামচরিত্রের যে বিশেষত্ব গভীর ভাবে কাব্যে নিহিত আছে তাহাকে আপনার লেখনী অগ্রে নূতন আলোকে ধরিয়া দেখান দরকার হইয়াছে। রাম সীতার চরিত্র সর্ব্বজনের অতিশয় সুপরিচিত বলিয়াই ইহাদের বিশেষ একটি নব পরিচয় অত্যাবশ্যক। দশরথ কৈকেয়ীর মধ্যে দাম্পত্যবিকৃতি প্রকাশ পাইয়াছে তাহারই কালিমাকে পশ্চাতে রাখিয়া রাম-সীতা দাম্পত্যের ঊষালোকের ন্যায় রামায়ণে উদ্ভাসিত। এই দাম্পত্য নির্ব্বাসনকে সুমধুর করিয়াছে। সিংহাসনে অভিষেক অপেক্ষা অরণ্যচারণ কোন অংশে হেয় হয় নাই— বরঞ্চ তাহা এই প্রেমকে নিবিড়ভাবেই দোহন করিয়াছে— দাম্পত্যকে পরিস্ফুট করিবার এমন উপায় আর ছিল না— সীতাহরণও এই প্রীতিকে বীর্য্যের দ্বারা উজ্জ্বল করিয়াছে। দাম্পত্যর এই মাধুর্য্য ও বীর্য্য দশরথ কৈকেয়ীর কাম-[···] আসক্তির মসীলেপের উপর কেমন করিয়া চিরন্তন দীপ্তিলাভ করিয়া উঠিয়াছে তাহাই সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত হওয়া চাই। দশরথের পক্ষাবলম্বন করিতে গিয়া আপনি সেই রসটিকে কিছু ভাঙিয়াছেন। একটু ভাবিয়া দেখিবেন। রাম সীতার কাহিনী অংশ কিছু কমাইয়া আপনার মন্তব্য কিছু ফলিত করিয়া বলিলে আমার বোধ হয় ঐ দুটি রচনাও বিশেষ উপাদেয় হইবে। একটু সময় পাইলেই আমি ভূমিকা লিখিতে প্রবৃত্ত হইব। বিদ্যালয়ের কাজ অত্যন্ত বাড়িয়াছে— সময় পাইনা। ইতি ২৮শে আশ্বিন— [১৩১০]

আপনার
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর