চিত্রা/জীবন দেবতা
ওহে অন্তরতম,
মিটেছে কি তব সকল তিয়াষ,
আসি অন্তরে মম?
দুঃখ সুখের লক্ষ ধারায়
পাত্র করিয়া দিয়েছি তোমায়,
নিঠুর পীড়নে নিঙাড়ি বক্ষ
দলিত দ্রাক্ষাসম!
কত যে বরণ, কত যে গন্ধ,
কত যে রাগিণী, কত যে ছন্দ,
গাঁথিয়া গাঁথিয়া করেছি বয়ন
বাসর শয়ন তব,—
গলায়ে গলায়ে বাসনার সোনা
প্রতিদিন আমি করেছি রচনা
তোমার ক্ষণিক খেলার লাগিয়া
মুরতি নিত্যনব!
আপনি বরিয়া লয়েছিলে মোরে
না জানি কিসের আশে!
লেগেছে কি ভাল হে জীবননাথ
আমার রজনী আমার প্রভাত,
আমার নর্ম্ম, আমার কর্ম্ম
তোমার বিজন বাসে?
বরষা শরতে বসন্তে শীতে
ধ্বনিয়াছে হিয়া যত সঙ্গীতে
শুনেছ কি ভাহা একেলা বসিয়া
আপন সিংহাসনে?
মানস কুসুম তুলি অঞ্চলে
গেঁথেছ কি মালা, পরেছ কি গলে,
আপনার মনে করেছ ভ্রমণ
মম যৌবনবনে?
কি দেখিছ বঁধু মরম-মাঝারে
রাখিয়া নয়ন দুটি?
করেছ কি ক্ষমা যতেক আমার
স্খলন পতন ত্রুটি?
পূজাহীন দিন, সেবাহীন রাত
কত বারবার ফিরে গেছে নাথ,
অর্ঘ্যকুসুম ঝরে পড়ে গেছে
বিজন বিপিনে যুটি।
যে সুরে বাঁধিলে এ বীণার তার
নামিয়া নামিয়া গেছে বারবার,
হে কবি, তোমার রচিত রাগিণী
আমি কি গাহিতে পারি?
তোমার কাননে সেচিবারে গিয়া
ঘুমায়ে পড়েছি ছায়ায় পড়িয়া,
সন্ধ্যাবেলায় নয়ন ভরিয়া
এনেছি অশ্রুবারি!
এখন কি শেষ হয়েছে প্রাণেশ
যা কিছু আছিল মোর?
যত শোভা যত গান যত প্রাণ,
জাগরণ, ঘুমঘোর?
শিথিল হয়েছে বাহুবন্ধন,
মদিরাবিহীন মম চুম্বন,
জীবনকুঞ্জে অভিসার-নিশা
আজি কি হয়েছে ভোর?
ভেঙ্গে দাও তব আজিকার সভা,
আন নব রূপ, আন নব শোভা,
নূতন করিয়া লহ আরবার
চির-পুরাতন মোরে।
নূতন বিবাহে বাঁধিবে আমায়
নবীন জীবন ভোরে।
২৯ মাঘ,
১৩০২।