চিত্রা/রাত্রে ও প্রভাতে

রাত্রে ও প্রভাতে।

কালি মধু যামনীতে জ্যোৎস্না নিশীথে
কুঞ্জকাননে সুখে
ফেনিলোচ্ছ্বল যৌবন সুরা
ধরেছি তোমার মুখে।
তুমি চেয়ে মোর আঁখিপরে
ধীরে পাত্র লুয়েছ করে,
হেসে  করিয়াছ পান চুম্বনভরা
সরস বিম্বাধরে,


কালি মধু যামিনীতে জ্যোৎস্না নিশীথে
মধুর আবেশ ভরে।
তব অবগুণ্ঠন খানি
আমি খুলে ফেলেছিনু টানি’;
আমি কেড়ে রেখেছিনু বক্ষে, তোমার
কমল-কোমল পাণি।
ভাবে নিমীলিত তব যুগল নয়ন
মুখে নাহি ছিল বাণী!
আমি শিথিল করিয়া পাশ
খুলে দিয়েছিনু কেশরাশ,
তব আনমিত মুখখানি
সুখে থুয়েছিনু বুকে আনি,
তুমি সকল সোহাগ সয়েছিলে, সখি,
হাসি-মুকুলিত মুখে,
কালি মাধুবামিনীতে জ্যোৎস্না-নিশীথে
নবীন মিলন সুখে।


আজি নির্ম্মলবায়ু শান্ত ঊষায়
নির্জ্জন নদীতীরে


স্নান অবসানে শুভ্রবসনা
চলিয়াছ ধীরে ধীরে!
তুমি বামকরে লয়ে সাজি
কত তুলিছ পুষ্প রাজি,
দূরে দেবালয় তলে উষার রাগিণী
বাঁশিতে উঠিছে বাজি,
এই নির্ম্মলবায় শান্ত উষায়
জাহ্নবী তীরে আজি!
দেবি, তব সীঁথিমুলে লেখা
নব অরুণ সিঁদূর রেখা,
তব বাম বাহু বেড়ি শঙ্খ বলয়
তরুণ ইন্দুলেখা।
একি মঙ্গলময়ী মুরতি বিকাশি’
প্রভাতে দিয়েছ দেখা।
রাতে প্রেয়সীর রূপ ধরি
তুমি এসেছ প্রাণেশ্বরি,
প্রাতে কখন্ দেবীর বেশে
তুমি সমুখে উদিলে হেসে!
আমি সন্ত্রমভরে রয়েছি দাঁড়ায়ে
দূরে অবনত শিরে

আজি নির্ম্মলবায় শান্ত উষায়
নির্জ্জন নদীতীরে!

১ ফাল্গুন,
১৩০২।