চূর্ণ প্রতিমা/প্রথম পরিচ্ছেদ

চূর্ণ প্রতিমা।

(বা, পাগলের অদ্ভুত পাগলামি)

প্রথম পরিচ্ছেদ।

 রথযাত্রার পরদিন বেলা এগারটার সময়, আমার অফিস-ঘরে বসিয়া আছি, এমন সময়ে আমার উপরিতন কর্ম্মচারী সাহেব— একটী বাঙ্গালী বাবুকে লইয়া সেখানে উপস্থিত হইলেন। আমি তাড়াতাড়ি চেয়ার ছাড়িয়া দাঁড়াইয়া উঠিলাম।

 আমার অফিস-ঘরটী নিতান্ত ছোট নয়। দৈর্ঘে প্রায় বার হাত, প্রস্থেও আট হাতের কম নয়। ঘরটী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। একটা টেবিল, তাহার চারিপার্শ্বে খানকতক চেয়ার; দেওয়ালের নিকট দুইটী আলমারী, তাহার মধ্যে নানাপ্রকার পুস্তক ও অফিসের কাগজ-পত্র স্তরে স্তরে সজ্জিত।

 বাঙ্গালী বাবুকে একখানি চেয়ারে বসিতে বলিয়া সাহেব আমার সম্মুখে আসিলেন এবং আমাকে বসিতে ইঙ্গিত করিয়া স্বয়ং একখানি চেয়ারে বসিয়া পড়িলেন।

 কিছুক্ষণ পরে সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি এই বাবুটীকে চেন?”

 আমি বাবুর দিকে ভাল করিয়া চাহিলাম। দেখিলাম, তাঁহার দেহ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, হৃষ্টপুষ্ট ও বলিষ্ঠ; বয়স প্রায় চল্লিশ বৎসর, তাঁহার চক্ষুদ্বয় আয়ত, ভ্রু যুগ্ম। তাঁহার পরিধানে নরুনপেড়ে শান্তিপুরের একখানি পাত লা ধুতি, একটা চুড়ীদার পিরাণ, অতি সুন্দর তসরের চাদর, পায়ে কানপুরের জুতা। কিছুক্ষণ ভাল করিয়া দেখিয়াও আমি বাবুকে চিনিতে পারিলাম না। অপ্রতিভ হইয়া সাহেবকে বলিলাম, না মহাশয়! আমি বাবুকে চিনিতে পারিতেছি না।”

 সাহেব গম্ভীরভাবে বলিলেন, “ইঁইার নাম রায় পার্ব্বতীচরণ দেব—পূর্ব্ববঙ্গের একজন প্রসিদ্ধ জমীদার।”

 আমি ইতিপূর্ব্বে তাঁহার নামও শুনি নাই, সাহেবকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “এখানে থাকা হয় কোথায়?”

 সাহেব ঈষৎ হাস্য করিয়া উত্তর করিলেন, “বাগবাজারে।”

 আমি আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিলাম, “এখানে আগমন কিসের জন্য?”

 সাহেব বলিলেন, “বড় বিপদে পড়িয়াই উনি আমাদের এখানে আসিয়াছেন। সকল কথা ইহাঁরই মুখে শুনিতে পাইবেন।”

 আমার হাতে অনেক কাজ ছিল। সাহেব আবার একটা কাজ আমার ঘাড়ে চাপাইবার যোগাড় করিতেছেন দেখিয়া, আমি আন্তরিক দুঃখিত হইলাম; এবং কাষ্ঠহাসি হাসিয়া, মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে বলিলাম, “আমার হাতে যথেষ্ট কাজ আছে।”

 সাহেব আমার মনোভাব বুঝিতে পারিলেন। হাসিতে হাসিতে উত্তর করিলেন, “তা আমি জানি। সেগুলি দুই চারিদিন দেরী হইলেও কোন ক্ষতি হইবে না। সকল কর্ম্ম ত্যাগ করিয়া, তুমি জমীদার মহাশয়ের কাজটা আগে শেষ কর। ব্যাপারটী নিতান্ত সহজ বলিয়া বোধ হয় না; সুতরাং এই কার্য্যের জন্য একটু বিশেষ পরিশ্রম করিবার গ্রয়োজন।”

 সাহেবের কথা শুনিয়া বলিলাম, “যে আজ্ঞা, তাহাই হইবে।”

 সাহেবও আমার কথায় আনন্দিত হইয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন।

 পার্ব্বতী বাবু এতক্ষণ আমার কাছে আসিবার জন্য চঞ্চল হইয়াছিলেন। তিনি আমার দিকে ঘন ঘন দৃষ্টিপাত করিতেছিলেন কখন দাঁড়াইতেছিলেন, কখন বা বসিতেছিলেন, যেন কোন কথা বলিবার জন্য নিতান্ত ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন। কিন্তু এতক্ষণ আমাকে সাহেবের সহিত কথা কহিতে দেখিয়া, তিনি সাহস করিয়া আমার নিকটে আসিতে পারেন নাই।

 সাহেব প্রস্থান করিবামাত্র পার্ব্বতী বাবু আমার নিকটে আসিলেন এবং আমার সম্মুখস্থ চেয়ারে বসিয়া কহিলেন, “অনেক আশা করিয়া আপনার নিকট আসিয়াছি। এখন আপনিই আমার ভরসা। স্থানীও পুলিস ত একরকম হাল ছাড়িয়াই দিয়াছে।”

 আমি ঈষৎ হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “আপনি কতদিন কলিকাতায় বাস করিতেছেন?”

 পার্ব্বতী বাবু সসম্ভ্রমে উত্তর করিলেন, “অনেক দিন—দশ বার বৎসর হইবে। আপনি আমায় না চিনিলেও আমি আপনাকে চিনি।”

 আমি। আপনার কি হইয়াছে বলুন?

 পার্ব্বতী বাবু উত্তর করিলেন, “রথযাত্রা উপলক্ষে কাল বৈকালে পুত্ত্র-কন্যাগণকে লইয়া কুমারটুলীর দিকে বেড়াইতে গিয়াছিলাম। পথে একটা কুমারের দোকানে কয়েকজন কারিগর বসিয়া মাটীর পুতুল গড়িতেছিল। আমার জ্যেষ্ঠ কন্যা সুহাসিনীর ইচ্ছা, দোকানের ভিতর গিয়া পুতুলগুলি দেখিয়া আইসে; এবং এই অভিপ্রায়ে সে আমকে বারম্বার অনুরোধ করিতে লাগিল। দুই একবার তাহার কথায় অস্বীকৃত হইলেও অপরাপর পুত্ত্র কন্যাগণের ইচ্ছায় আমি গাড়ী থামাইতে বলিলাম এবং সকলে মিলিয়া দোকানের ভিতর প্রবেশ করিলাম। দোকানদারও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে গেল। দোকানের ভিতর গিয়া দেখিলাম, পাঁচজন কারিগর নানা রকমের পুতুল গড়িতেছে। তাহাদের মধ্যে দুইজনকে ভাল কারিগর বলিয়া বোধ হইল। উভয়ের মধ্যে একজন কতক গুলি শিবমূর্ত্তি, অপর ব্যক্তি কতকগুলি শ্যামামূর্ত্তির গঠন করিতেছিল। সুহাসিনীর পুতুল গড়িবার বড় সখ্। সে দোকানের ভিতর গিয়া একবার এদিক একবার ওদিক করিয়া বেড়াইতে লাগিল। তাহার সঙ্গে অন্যান্য বালক-বালিকাগণও অত্যন্ত আহ্লাদিত হইল। কিছুক্ষণ এইরূপ দেখিবার পর সুহাসিনীর গলার দিকে আমার নজর পড়িল। দেখিলাম, তাহার গলার জড়োয়া কণ্ঠির ধুক্‌ধুকিকখানি নাই। ধুক্‌ধুকিখানি অত্যন্ত দামী। উহাতে একখানা বড় হীরা বসান ছিল। সে রকম হীরা আজ-কাল পাওয়া দায়। আর যদিও পাওয়া যায়, তাহা হইলে তাহার দাম এখন দশ হাজার টাকার কম নহে। আমি আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “তোর কণ্ঠির ধুকধুকিখানা কোথায় সুহাস?”

 “সে কি!” বলিয়া সুহাসিনী তাহার গলায় হাত দিল। দেখিল, সত্য সত্যই ধুক্‌ধুকিখানি নাই। তাহার হাসি হাসিমুখ তখনই মলিন হইয়া গেল। সে আর কোন কথা কহিতে পারিল না।

 আমি মনে করিয়াছিলাম, সুহাসিনী হয়ত উহা বাড়ীতে রাখিয়া আসিয়াছে। কিন্তু বাস্তবিক তাহা নহে বুঝিতে পারিয়া, আমারও অত্যন্ত ভাবনা হইল। ধুকধুকিখানিতে আধ ভরির অধিক সোনা ছিল না। কিন্তু সেই হীরাখানির দাম পাঁচ হাজার টাকার কম নহে। আমি তখন সুহাসিনীর দিকে চাহিয়া অতি কর্কশভাবে জিজ্ঞাসা করিলাম, “চুপ করিয়া রহিলি যে? কোন্‌ খানে লাফাইতেছিলি? কোথায় হেঁট হইয়াছিলি মনে কর। ও রকম হীরা আজকাল পাওয়া দায়।”

 আমায় রাগান্বিত দেখিয়া সুহাসিনী আরও ভীত হইল। ইচ্ছা থাকিলেও সে কোন কথা বলিতে পারিল না। সুহাস আমার বড় আদুরে মেয়ে। আমি তাহাকে আর কখনও তিরস্কার করি নাই। আমার ধমকে সে কাঁদিয়া ফেলিল; কিন্তু তাহার ক্রন্দনে কোনরূপ শব্দ হইল না—সে নীরবে অধোমুখে অশ্রু বিসর্জ্জন করিতে লাগিল। আমি তখন তাহাকে আর কোন কথা না বলিয়া দোকান-ঘরটী পাঁতি পাঁতি করিয়া অন্বেষণ করিলাম। দোকানদার স্বয়ং আমার কার্য্যে যথেই সাহায্য করিল। কারিগরগণও সকলে চারিদিক দেখিতে লাগিল। অতি অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘরটী তোলপাড় করা গেল। কিন্তু বাহিরের কোন লোককে ভিতরে আসিতে দেওয়া হইল না।

 এইরূপে প্রায় আধঘণ্টা অন্বেষণের পর আমি ধুক্‌ধুকিখানি দেখিতে পাইলাম। দেখিলাম একটা চৌকির পায়ার কাছে উহা পড়িয়া রহিয়াছে। আমি শশব্যস্তে উহাকে তুলিয়া লইলাম। মনে করিয়ছিলাম, আমাদের পরিশ্রম সফল হইল। কিন্তু না, তাহা হইল না! জগদীশ্বরের সেরূপ ইচ্ছা নহে। ধুকধুকিখানি পাইলাম বটে, কিন্ত উহার মধ্যস্থ হীরাখানি দেখিতে পাইলাম না। তখন আবার সকলে মিলিয়া ভাল করিয়া চারিদিক দেখিতে লাগিলাম, কিন্ত কিছুতেই হীরাখানিকে বাহির করিতে পারিলাম না।

 ক্রমে সন্ধ্যা হইল। ঘরে ঘরে আলোক জ্বলিল, দোকানদার ঘর হইতে বাহিরে যাইবার উদ্যোগ করিল। আমি তাহাকে বাধা দিয়া বলিলাম, “কোথায় যাইতেছ বাপু?”

 দোকানদার সসম্ভ্রমে উত্তর করিল, “ঘরের আলো আনিতে যাইতেছি। সন্ধা উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে, সকল ঘরে আলো জ্বালা হইয়াছে, কেবল আমার দোকানে এখনও ধূনা গঙ্গাজল দেওয়া হইল না।”

 আ। আমি তাহার বন্দোবস্ত করিতেছি। এখন এঘর হইতে কাহাকেও বাহির হইতে দিব না। যখন আমার পাঁচ হাজার টাকার জিনিষ হারাইয়াছে, তখন আমি সহজে ছাড়িব না, এখনই পুলিসে খবর দিব। পুলিস আসিয়া যাহা ইচ্ছা করুক।

 দো। স্বচ্ছন্দে—আমি তাহাতে কিছুমাত্র ভীত নহি। আর যখন এই ঘরের মধ্যেই আপনার দামী হীরাখানি হারাইয়া গিয়াছে, তখন আপনিই বা সহজে ছাড়িবেন কেন? কিন্তু হয় আগে আমার দোকানে আলোকের বন্দোবস্ত করুন, না হয় পাঁচ মিনিটের জন্য আমায় ছাড়িয়া দিন, আমিই আলোক আনি।

 আ। বাপু! আমি এখন কাহাকেও এ ঘর হইতে ছাড়িতে পারিব না। তুমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর, আমি তোমার দোকানে আলোক দিতেছি।

 দোকানদার আর কোন কথা কহিল না। আমি তখন সহিসকে ডাকিলাম এবং গাড়ী হইতে একটা লণ্ঠন আনিতে আদেশ করিলাম।

 লণ্ঠনটা আনিত হইলে আমি সহিসকে উহা জ্বালিতে বলিলাম। তাহার পর কোচমানকে ডাকিয়া বলিলাম, “গাড়ী লইয়া শীঘ্র থানায় যাও। ইন্সপেক্‌টার বাবুকে আমার নমস্কার জানাইয়া এই গাড়ীতে লইয়া আইস। আমিই যাইতাম, কিন্ত আমি না থাকিলে হীরাখানি আর পাওয়া যাইবে না”

 “যো হুকুম মহারাজ!” এই বলিয়া কোচমান গাড়ীর অপর লণ্ঠনটা জ্বালিয়া ফেলিল এবং তৎক্ষণাৎ গাড়ী থানার দিকে লইয়া গেল।

 আধ ঘণ্টার মধ্যেই ইন্সপেক্টার বাবু দুইজন কনষ্টেবল লইয়া তথায় উপস্থিত হইলেন এবং আমার মুখে সমস্ত কথা শুনিয়া কনষ্টেবল দুইজনকে ঘরটী আবার ভাল করিয়া অন্বেষণ করিতে আদেশ করিলেন।

 ইন্সপেক্টার বাবুর সহিত আমার অনেক দিনের আলাপ। আমাদের উভয়ের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব ছিল। আমায় বিমর্ষ দেখিয়া তিনি বলিলেন, “পার্ব্বতী বাবু! আপনার কোন চিন্তা নাই। যখন ধুকধুকিখানি এই ঘরে পাওয়া গিয়াছে, তখন হীরাখানিও এখানে আছে।”

 আমি অতি বিমর্ষভাবে উত্তর করিলাম, “আপনার কথাই যেন সত্য হয়। কিন্তু আমরা সকলে মিলিয়া এই ঘরটি তন্ন তন্ন করিয়া অনুসন্ধান করিয়াছি।”

 ইন্‌সপেক্টর বাবু অনেক দিন পুলিসের চাকরি করিতেছেন। অনেক কার্য্যে সুখ্যাতি লাভ করিয়াছেন। তাঁহার মনে মনে কেমন এক প্রকার অহঙ্কার জন্মিয়াছিল। তিনি আমার কথায় হাসিয়া উঠিলেন। বলিলেন, “পুলিসের লোকে আর সাধারণ লোকে অনেক গ্রভেদ। আপনার কোন চিন্তা নাই; দেখুন না, আমি এখনই আপনার হীরা বাহির করিয়া দিতেছি।”

 আমি কোন উত্তর করিলাম না, চুপ করিয়া বসিয়া কনেষ্টবল দ্বয়ের কার্য্য দেখিতে লাগিলাম। রাত্রি সাড়ে আটটা বাজিয়া গেল, তখনও হীরা বাহির হইল না। যত সময় যাইতে লাগিল, ইন্‌স্পেক্টর বাবু ততই গম্ভীর হইতে লাগিলেন। শেষে আর স্থির থাকিতে না পারিয়া স্বয়ং অনুসন্ধানে নিযুক্ত হইলেন।

 আরও আধ ঘণ্টা কাটিয়া গেল। রাত্রি নয়টা বাজিল, কিন্তু কোথাও সেই হীরা পাওয়া গেল না। কনষ্টেবলদ্বয় হতাশ হইয়া একস্থানে দাঁড়াইয়া রহিল। আমি ইনম্পেক্টারের দিকে দৃষ্টিপাত করিলাম। দেখিলাম, তিনিও গম্ভীরভাবে একটা বেতের মোড়ার উপর বসিয়া কি চিন্তা করিতেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “এখন কি করা যায়?”

 আমার প্রশ্ন শুনিয়া তিনি আমার দিকে চাহিলেন। বলিলেন, “এই ছোট ঘরের মধ্যে ধুক্‌ধুকিখানি পাওয়া গেল, অথচ উহার মধ্যস্থ হীরাখানি পাওয়া গেল না; এ বড় আশ্চর্য্যের কথা! আপনি এ দোকানে কখন আসিয়াছিলেন?”

 আ। বেলা পাঁচটার পর।

 ই। কখন ধুকধুকিখানি হারাইয়াছিল?

 আ। কখন হারাইয়াছিল, ঠিক বলিতে পারি না, তবে আমি যখন জানিতে পারি, তখন বেলা প্রায় ছয়টা।

 ই। দোকানে কয়জন লোক ছিল?

 আ। পাঁচজন কারিগর আর স্বয়ং দোকানদার।

 ই। এখনও কি সে সকল লোক আছে?

 আ। আজ্ঞা হাঁ।

 ই। ইহার মধ্যে কোন লোক এই ঘরের বাহির হইয়াছিল?

 আ। না। আমি আগেই সে বিষয়ে সাবধান হইয়াছিলাম। এমন কি, দোকানদারকে এ ঘরের আলোক পর্য্যন্ত আনিতে দিই নাই।

 ই। ভালই করিয়াছেন।

 এই বলিয়া ইনস্পেক্টার বাবু দোকানদারকে নিকটে ডাকিলেন এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কি বাপু?”

 দোকানদার নির্ভয়ে উত্তর করিল, “আমার নাম নফর।”

 ই। নফর কি? তোমার পদবী কি?

 ন। নফরচন্দ্র পাল।

 ই। কতদিন এ কাজ করিতেছ?

 ন। জন্মাবধি। আমার বয়স যখন বার বৎসর, তখন আমার পিতা মারা যান। সেই সময় হইতেই আমি এই দোকান চালাইয়া আসিতেছি।

 ই। তোমার কারিগর কয় জন?

 ন। এই পাঁচজন।

 ই। ইহারা মাহিনা হিসাবে কাজ করে, না ফুরণ কাজ করিয়া থাকে?

 ন। আজ্ঞা, সকলেই আমার মাহিনা খায়।

 ই। ইহারা লোক কেমন?

 ন। এ পর্য্যন্ত কোন দোষ দেখিতে পাই নাই।

 ই। ইহারা কতদিন তোমার কাছে চাকরি করিতেছে?

 ন। সকলে এক সময় হইতে চাকরি করিতেছে না বটে, কিন্তু ইহারা সকলেই পাঁচ বৎসরের অধিক এখানে কাজ করিতেছে।

 “আমি সকলকেই ভাল করিয়া পরীক্ষা করিতে চাই।”

 এই বলিয়া ইনস্পেক্টার বাবু কনষ্টেবল দুইজনকে ইঙ্গিত করিলেন। তাহারা এক একজন কারিগরের কাছে গিয়া রীতিমত কাপড় ঝাড়া লইতে লাগিল।

 আরও আধ ঘণ্টা এইরূপে কাটিয়া গেল। রাত্রি দশটা বাজিল। সকলকেই বিশেষ করিয়া পরীক্ষা করা হইল, কিন্তু কাহারও নিকট হইতে হীরা বাহির হইল না। তখন ইনস্পেক্টর বাবু বলিয়া উঠিলেন, “এখন এই ছয়জনকেই থানায় লইয়া যাওয়া যাউক। সেখানে যাইলে অতি সহজেই সকল কথা বাহির হইয়া পড়িবে।”

 ইনস্পেক্টার বাবুর কথা শুনিয়া একজন কনষ্টেবল তখনই একখানি গাড়ী ডাকিয়া আনিল, এবং তাহাতে সকলকে তুলিয়া দিয়া থানায় লইয়া গেল। দুইজন কনষ্টেবল গাড়ীর উপরে বসিল।

 আমিও ইনস্পেক্টার বাবুর সহিত থানায় গেলাম, ও পরিশেষে আপন বাসায় প্রত্যাগমন করিলাম।

 আজ প্রাতে সংবাদ পাইলাম, অনেক উৎপীড়ন করা হইলেও কোন লোক সেই হীরার কোন সন্ধান বলিতে পারে নাই। এখন আপনিই আমার একমাত্র ভরসা। আশা করি, আপনিই আমায় এই বিপদ হইতে উদ্ধার করিবেন।