৫৪

ভালোয়-মন্দয় দুই-তিন দিন রাজলক্ষ্মীর কাটিয়া গেল। একদিন প্রাতে তাঁহার মুখ বেশ প্রসন্ন ও বেদনা সমস্ত হ্রাস হইল। সেই দিন তিনি মহেন্দ্রকে ডাকিয়া কহিলেন, “আর আমার বেশিক্ষণ সময় নাই― কিন্তু আমি বড়ো সুখে মরিলাম মহিন, আমার কোনো দুঃখ নাই। তুই যখন ছোটো ছিলি তখন তোকে লইয়া আমার যে আনন্দ ছিল, আজ সেই আনন্দে আমার বুক ভরিয়া উঠিয়াছে— তুই আমার কোলের ছেলে, আমার বুকের ধন― তোর সমস্ত বালাই লইয়া আমি চলিয়া যাইতেছি, এই আমার বড়ো সুখ।

 বলিয়া রাজলক্ষ্মী মহেন্দ্রের মুখে গায়ে হাত বুলাইতে লাগিলেন। মহেন্দ্রের রোদন বাধা না মানিয়া উচ্ছ্বসিত হইতে লাগিল।

 রাজলক্ষ্মী কহিলেন, কাঁদিস নে মহিন। লক্ষ্মী ঘরে বহিল। বউমাকে আমার চাবিটা দিস। সমস্তই আমি গুছাইয়া রাখিয়াছি, তোদের ঘরকন্নার জিনিসের কোনো অভাব হইবে না। আর-একটি কথা আমি বলি মহিন, আমার মৃত্যুর পূর্বে কাহাকেও জানাস নে― আমার বাক্সে দু-হাজার টাকার নোট আছে, তাহা আমি বিনোদনীকে দিলাম। সে বিধবা, একাকিনী, ইহার সুদ হইতে তাহার বেশ চলিয়া যাইবে― কিন্তু মহিন, তাহাকে তোদের সংসারের ভিতরে রাখিস নে, তোর প্রতি আমার এই অনুরোধ রহিল।

 বিহারীকে ডাকিয়া রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “বাবা বিহারী, কাল মহিন বলিতেছিল, তুই গরিব ভদ্রলোকদের চিকিৎসার জন্য একটি বাগান করিয়াছিস― ভগবান তোকে দীর্ঘজীবী করিয়া গরিবের হিত করুন। আমার বিবাহের সময় আমার শ্বশুর আমাকে একখানি গ্রাম যৌতুক করিয়াছিলেন, সেই গ্রামখানি আমি তোকে দিলাম, তোর গরিবদের কাজে লাগাস, তাহাতে আমার শ্বশুরের পুণ্য হইবে।”