ছড়ার ছবি/বাসাবাড়ি
বাসাবাড়ি
এই শহরে এই তাে প্রথম আসা।
আড়াইটা রাত, খুঁজে বেড়াই কোন্ ঠিকানায় বাসা।
লণ্ঠনটা ঝুলিয়ে হাতে আন্দাজে যাই চলি,
অজগরের ভূতের মতন গলির পরে গলি।
ধাঁধাঁ ক্রমেই বেড়ে ওঠে, এক জায়গায় থেমে
দেখি পথে বাঁ দিক থেকে ঘাট গিয়েছে নেমে।
আঁধার-মুখােষ-পরা বাড়ি সামনে আছে খাড়া;
হাঁ-করা-মুখ দুয়ারগুলাে, নাইকো শব্দসাড়া।
চৌতলাতে একটা ধারে জানলাখানার ফাঁকে
প্রদীপশিখা ছুঁচের মতাে বিঁধছে আঁধারটাকে।
বাকি মহল যত
কালােমােটা ঘােমটা-দেওয়া দৈত্যনারীর মতাে।
বিদেশীর এই বাসাবাড়ি— কেউবা কয়েক মাস
এইখানে সংসার পেতেছে, করছে বসবাস;
কাজকর্ম সাঙ্গ করি কেউবা কয়েক দিনে
চুকিয়ে ভাড়া কোনখানে যায়, কেই বা তাদের চিনে।
সুধাই আমি, ‘আছ কি কেউ, জায়গা কোথায় পাই?’
মনে হল জবাব এল, ‘আমরা নাই না ই।’
সকল দুয়াের জানলা হতে, যেন আকাশ জুড়ে
ঝাঁকে ঝাঁকে রাতের পাখি শূন্যে চলল উড়ে।
একসঙ্গে চলার বেগে হাজার পাখা তাই
অন্ধকারে জাগায় ধ্বনি, ‘আমরা নাই না ই।’
আমি সুধাই, ‘কিসের কাজে এসেছ এইখানে?’
জবাব এল, ‘সেই কথাটা কেহই নাহি জানে।
যুগে যুগে বাড়িয়ে চলি নেই-হওয়াদের দল,
বিপুল হয়ে ওঠে যখন দিনের কোলাহল
সকল কথার উপরেতে চাপা দিয়ে যাই—
না ই, না ই, না ই।’
পরের দিনে সেই বাড়িতে গেলাম সকালবেলা—
ছেলেরা সব পথে করছে লড়াই-লড়াই খেলা,
কাঠি হাতে দুই পক্ষের চলছে ঠকাঠকি।
কোণের ঘরে দুই বুড়ােতে বিষম বকাবকি—
বাজিখেলায় দিনে দিনে কেবল জেতা হারা,
দেনা-পাওনা জমতে থাকে, হিসাব হয় না সারা।
গন্ধ আসছে রান্নঘরের, শব্দ বাসন-মাজার;
শূন্য ঝুড়ি দুলিয়ে হাতে ঝি চলেছে বাজার।
একে একে এদের সবার মুখের দিকে চাই,
কানে আসে রাত্রিবেলার ‘আমরা নাই না ই।
৯।৬।৩৭
আলমােড়া