শনির দশা

আধবুড়ো ঐ মানুষটি মাের  নয় চেনা—
একলা বসে ভাবছে কিংবা  ভাবছে না,
মুখ দেখে ওর সেই কথাটাই ভাবছি,
মনে মনে আমি যে ওর মনের মধ্যে নাবছি।

বুঝিবা ওর মেঝেমেয়ে পাতা ছয়েক ব’কে
মাথার দিব্যি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল ওকে।
উমারানীর বিষম স্নেহের শাসন,
জানিয়েছিল চতুর্থীতে খােকার অন্নপ্রাশন—
জিদ ধরেছে, হােক-না যেমন ক’রেই
আসতে হবে শুক্রবার কি শনিবারের ভােরেই।
আবেদনের পত্র একটি লিখে
পাঠিয়েছিল বুড়াে তাদের কর্তাবাবুটিকে।
বাবু বললে, ‘হয় কখনাে তা কি,
মাস-কাবারের ঝুড়িঝুড়ি হিসাব লেখা বাকি,
সাহেব শুনলে আগুন হবে চ’টে,
ছুটি নেবার সময় এ নয় মােটে।’
মেয়ের দুঃখ ভেবে
বুড়াে বারেক ভেবেছিল কাজে জবাব দেবে।
সুবুদ্ধি তার কইল কানে রাগ গেল যেই থামি,
আসন্ন পেনসনের আশা ছাড়াটা পাগলামি।
নিজেকে সে বললে, “ওরে, এবার না হয় কিনিস
ছােটোছেলের মনের মতাে একটা-কোনাে জিনিস।
যেটার কথাই ভেবে দেখে দামের কথায় শেষে
বাধায় ঠেকে এসে।
শেষকালে ওর পড়ল মনে জাপানি ঝুম্ঝুমি,
দেখলে খুশি হয়তাে হবে উমি।
কেইবা জানবে দামটা যে তার কত,
বাইরে থেকে ঠিক দেখাবে খাঁটি রুপাের মতাে।
এমনি করে সংশয়ে তার কেবলই মন ঠেলে,
হাঁ-না নিয়ে ভাব্নাস্রোতে জোয়ার-ভাঁটা খেলে।

রােজ সে দেখে টাইম্টেবিলখানা,
ক’দিন থেকে ইসটিশনে প্রত্যহ দেয় হানা।
সামনে দিয়ে যায় আসে রােজ মেল,
গাড়িটা তার প্রত্যহ হয় ফেল।
চিন্তিত ওর মুখের ভাবটা দেখে
এমনি একটা ছবি মনে নিয়েছিলেম এঁকে।


কৌতূহলে শেষে
একটুখানি উসখুসিয়ে একটুখানি কেশে
শুধাই তারে ব’সে তাহার কাছে,
‘কী ভাবতেছেন, বাড়িতে কি মন্দ খবর আছে?’
বললে বুড়াে, ‘কিচ্ছুই নয়, মশায়,
আসল কথা— আছি শনির দশায়।
তাই ভাবছি কী করা যায় এবার
ঘােড়দৌড়ে দশটি টাকা বাজি ফেলে দেবার।
আপনি বলুন, কিনব টিকিট আজ কি।’
আমি বললেম, ‘কাজ কী?’
রাগে বুড়াের গরম হল মাথা;
বললে, ‘থামাে, ঢের দেখেছি পরামর্শদাতা!
কেনার সময় রইবে না আর আজিকার এই দিন বৈ!
কিনব আমি, কিনব আমি, যে করে তােক কিনবই।’


৪|৬।৩৭
আলমােড়া