ছন্দ/পয়ার ও দ্বাদশাক্ষর ছন্দ (সংযোজন)
সংযোজন
পয়ার ও দ্বাদশাক্ষর ছন্দ
বাঙ্গলা ভাষায় সংস্কৃত কাব্যগ্রন্থের অনুবাদ করা নিরতিশয় কঠিন কাজ; কারণ সংস্কৃত কবিতার শ্লোকগুলি ধাতুময় কারুকার্যের ন্যায় অত্যন্ত সংহতভাবে গঠিত,[১]—বাঙ্গলা অনুবাদে তাহা বিশ্লিষ্ট এবং বিস্তীর্ণ হইয়া পড়ে। কিন্তু নবীন[২] বাবুর রঘুবংশ অনুবাদখানি পাঠ করিয়া আমরা বিশেষ প্রীতিলাভ করিয়াছি। মূল গ্রন্থখানি পড়া না থাকিলেও এই অনুবাদের মাধুর্যে পাঠকদের হৃদয় আকৃষ্ট হইবে সন্দেহ নাই। অনুবাদক সংস্কৃত কাব্যের লাবণ্য বাঙ্গলা ভাষায় অনেকটা পরিমাণে সঞ্চারিত করিয়া দিয়াছেন। ইহাতে তাঁহার যথেষ্ট ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু পঞ্চদশ সর্গে তিনি যে দ্বাদশাক্ষর ছন্দ[৩] ব্যবহার করিয়াছেন তাহা আমাদের কর্ণে ভালো ঠেকিল না। বাঙ্গলার পয়ার ছন্দে প্রত্যেক ছত্রে যথেষ্ট বিশ্রাম আছে, তাহা চতুর্দশ অক্ষরের হইলেও তাহাতে অন্যূন ষোলটি মাত্রা আছে।[৪] এই জন্য পয়ার ছন্দে যুক্ত অক্ষর ব্যবহার করিবার স্থান পাওয়া যায়; কিন্তু দ্বাদশাক্ষর ছন্দে যথেষ্ট বিশ্রাম না থাকাতে যুক্ত অক্ষর ব্যবহার করিলে ছন্দের সামঞ্জস্য নষ্ট হইয়া যায়;[৫] যেন কুঠির পানসিতে মহাজনী নৌকার মাল তোলা হয়। দ্বাদশাক্ষর ছন্দে ধীর গমনের গাম্ভীর্য না থাকাতে[৬] তাহাতে সংস্কৃত কাব্যসুলভ ঔদার্য নষ্ট করে। আমরা সমালোচ্য অনুবাদ হইতে একটি পয়ারের এবং একটি দ্বাদশাক্ষরের শ্লোক পরে পরে উদ্ধৃত করিলাম।—
শেষোদ্ধৃত শ্লোকটির প্রত্যেক যুক্ত অক্ষরে রসনা বাধা প্রাপ্ত হয়।[৯] কিন্তু পূর্বোদ্ধৃত পয়ারে প্রত্যেক যুক্ত অক্ষরে ছন্দের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করিয়াছে। এমন কি, দ্বিতীয় ছত্রে আরএকটি যুক্ত অক্ষরের জন্য কর্ণের আকাঙ্ক্ষা থাকিয়া যায়।
গ্রন্থপরিচয়
- ↑ তুলনীয়; প্রত্যেক শ্লোকটি স্বতন্ত্র হীরকখণ্ডের ন্যায় উজ্জ্বল। —প্রাচীন সাহিত্য, কাদম্বরীচিত্র।
- ↑ নবীনচন্দ্র দাস।
- ↑ সংজ্ঞাপরিচয় দ্রষ্টব্য।
- ↑ দ্রষ্টব্য ৪১, ৪৬, ৭১ এবং ১১৮-১৯ পৃষ্ঠা। ‘অন্যূন’ কথার দ্বারা বোঝা যায় পয়ারে ষোলর বেশি মাত্রাও ধরা যায়। তার প্রমাণ দ্রষ্টব্য ১২০ পৃষ্ঠায়। পয়ারে চোদ্দর বেশী মাত্রার স্থান হয়, কারণ এ ছন্দ ‘স্থিতিস্থাপক’।
- ↑ দ্রষ্টব্য ৪০, ৫৪-৫৫, ৬৬-৬৭, ৯৭, ১২৪-২৫, ১৪৬ এবং ১৭৭-৭৮ পৃষ্ঠা।
- ↑ দ্রষ্টব্য ৩৯-৪০, ৯৭, ১২৪-২৫, ১৮০ এবং ২১৪-১৬ পৃষ্ঠা।
- ↑ রঘুবংশ ১০।৬৯
- ↑ রঘুবংশ ১৫।৮৩
- ↑ দ্রষ্টব্য ৫, ৫৪, ৬৬-৬৭, ১২৪-২৫ এবং ২১৪-১৫ পৃষ্ঠা।