ছন্দ/বাংলা ছন্দে স্বরবর্ণ
বাংলা ছন্দে স্বরবর্ণ
স্বরবর্ণের কোঠায় আমরা ঋ-কে ঋণস্বরূপে নিয়েছি বর্ণমালায়, কিন্তু উচ্চারণ করি ব্যঞ্জনবর্ণের রি। সেইজন্যে অনেক বাঙালি ‘মাতৃভূমি’কে বলেন ‘মাত্রিভূমি’। যে-কবি তাঁর ছন্দে ঋ-কারকে স্বরবর্ণরূপে ব্যবহার করেন তাঁর ছন্দে ঐ বর্ণে অনেকের রসনা ঠোকর খায়।[১]
সাধারণত বাংলায় স্বরের দীর্ঘ উচ্চারণ নেই, তবু কোনো কোনো স্থলে স্বরের উচ্চারণ কিছু পরিমাণে বা সম্পূর্ণ পরিমাণে দীর্ঘ হয়ে থাকে। হসন্তবর্ণের পূর্ববর্তী স্বরবর্ণের দিকে কান দিলে সেটা ধরা পড়ে।[২] যেমন ‘জল’। এখানে জ-এ যে অকার আছে তার দীর্ঘতা প্রমাণ হয় ‘জলা’ শব্দের অ-এর সঙ্গে তুলনা করে দেখলে। ‘হাত’ আর ‘হাতা’য় প্রথমটির ‘হা’ দীর্ঘ, দ্বিতীয়টির হ্রস্ব। ‘পিঠ’ আর ‘পিঠে’, ‘ভূত’ আর ‘ভূতো’, ‘ঘোল’ আর ‘ঘোলা’ তুলনা করে দেখলে কথাটা স্পষ্ট হবে। সংস্কৃতে দীর্ঘস্বরের দীর্ঘতা সর্বত্রই, বাংলায় স্থানবিশেষে। কথায় ঝোঁক দেবার সময় বাংলা স্বরের উচ্চারণ সব জায়গাতেই দীর্ঘ হয়। যেমন— ভা- রি তো পণ্ডিত, কে- বা কার খোঁজ রাখে, আ- জই যাব, হল- ই বা, অবা- ক্ করলে, হাজা- রো লোক, কী- যে বকো, একধা- র থেকে লাগা- ও মার।[৩] যুক্তবর্ণের পূর্বে সংস্কৃতে স্বর দীর্ঘ হয়, বাংলায় তা হয় না।[৪]
- ↑ বস্তুত ঋ-কার বাংলাছন্দে বিকল্পে স্বরবর্ণ বলে গণ্য হয়ে থাকে। গ্রন্থপরিচয় দ্রষ্টব্য।
- ↑ দ্রষ্টব্য পৃ ৫-৬, ৫৩।
- ↑ তুলনীয়: ও- ই দেখ...বুঝি পৃ ৫৫, আমরা দ্রুত লয়ে... ‘এ- ই রে’ পৃ ৬১-৬২।
- ↑ দ্রষ্টব্য পৃ ১৮১ পাদটীকা ১, ২। বাংলা মাত্রাবৃত্ত ছন্দে যুক্তবর্ণের পূর্ববর্তী ধ্বনি দীর্ঘ বলেই গণ্য হয়। আধুনিক কালে ‘মানসী’ কাব্যে এই নিয়ম প্রথম প্রবর্তিত হয়।