কলম

কলম, তুমি কত না যুগ কত না কাল ধ’রে
অক্ষরে অক্ষরে
গিয়েছে শুধু ক্লান্তিহীন কাহিনী শুরু ক’রে,
কলম, তুমি কাহিনী লেখাে, তােমার কাহিনী কি?
দুঃখে জ্বলে তলােয়ারের মতন ঝিকিমিকি?

কলম তুমি, শুধু বারংবার
আনত ক’রে ক্লান্ত ঘাড়
গিয়েছে লিখে স্বপ্ন আর পুরানাে কত কথা,
সাহিত্যের দাসত্বের ক্ষুধিত বশ্যতা।
ভগ্ন নিব, রুগ্ন দেহ জলের মতাে কালি
কলম তুমি নিরপরাধ তবুও গালাগালি
খেয়েছাে আর সয়েছাে কতাে লেখকদের ঘৃণা,
কলম তুমি চেষ্টা করাে, দাঁড়াতে পারে কি না।

হে কলম! তুমি কতো ইতিহাস গিয়েছে লিখে,
লিখে লিখে শুধু ছড়িয়ে দিয়েছে চতুর্দিকে।
তবু ইতিহাস মূল্য দেবে না, এতােটুকু কোণ
দেবে না তােমায়, জেনাে ইতিহাস বড়ােই কৃপণ;
কত লাঞ্ছনা, খাটুনি গিয়েছে লেখকের হাতে
ঘুমহীন চোখে অবিশ্রান্ত অজস্র রাতে।
তােমার গােপন অশ্রু তাইতাে ফসল ফলায়
বহু সাহিত্য বহু কাব্যের বুকের তলায়।
তবু দ্যাখাে বােধ নেই লেখকের কৃতজ্ঞতা,
কেন চলবে এ প্রভুর খেয়ালে, লিখবে কথা?

হে কলম! হে লেখনী! আর কতোদিন
ঘর্ষণে ঘর্ষণে হবে ক্ষীণ?
আর কতো মৌন-মূক, শব্দহীন দ্বিধান্বিত বুকে
কালির কলঙ্ক চিহ্ন রেখে দেবে মুখে?
আর, কতাে আর
কাটবে দুঃসহ দিন দুর্বার লজ্জার?
এ দাসত্ব ঘুচে যাক, এ কলঙ্ক মুছে যাক আজ
কাজ করাে—কাজ।

মজুর দ্যাখােনি তুমি? হে কলম দ্যাখােনি বেকার?
বিদ্রোহ দ্যাখােনি তুমি? রক্তে কিছু পাওনি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তােমার দীর্ঘশ্বাস।
দিন নেই, রাত্রি নেই, শ্রান্তিহীন, নেই কোনাে ছুটি
একটু অবাধ্য হলে তখনি দ্রুকুটি;
এমনি করেই কাটে দুর্ভাগা তােমার বারাে মাস,
কয়েকটি পয়সায় কেনা, হে কলম, তুমি ক্রীতদাস।
তাই যতাে লেখাে, ততাে পরিশ্রম এসে হয় জড়ােত
—কলম! বিদ্রোহ আজ! দল বেঁধে ধর্মঘট করাে।
লেখক স্তম্ভিত হােক, কেরানীরা ছেড়ে দিক হাঁফ,
মহাজনী বন্ধ হােক, বন্ধ হােক মজুতের পাপ;
উদ্বেগ-আকুল হােক প্রিয়া যত দূর দূর দেশে,
কলম! বিদ্রোহ আজ ধর্মঘট হােক অবশেষে;
আর কালাে কালি নয়, রক্তে আজ ইতিহাস লিখে
দেওয়ালে দেওয়ালে এটে, হে কলম,
আনাে দিকে দিকে।